মালয়েশিয়ার বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার ১২ দিন পর ভারত মহাসাগরের দক্ষিণে ভেসে উঠেছে দুটি বস্তু৷ এগুলো বিমানটির ধ্বংসাবশেষ বলেই মনে করছে অস্ট্রেলিয়া৷ নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা এরই মধ্যে একটি জাহাজ পাঠিয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টোনি অ্যাবট পার্লামেন্টে প্রথম এই খবরটি প্রকাশ করেন৷ সেখানে তিনি জানান, উপগ্রহ থেকে পাওয়া ছবি থেকে এই নতুন এবং বিশ্বাসযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে৷ তবে এটা আসলেই ফ্লাইট এমএইচ-৩৭০ বিমানের ধ্বংসাবশেষ কিনা সে সম্পর্কে এখনো তারা নিশ্চিত হতে পারেননি৷
অ্যাবট জানান, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেখানে দুটি বস্তু দেখা যাচ্ছে৷ বস্তু দুটি কী তা নিশ্চিত হতে হলে সেখানে অভিযান চালাতে হবে৷ পার্থ শহরের আড়াই হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম থেকে পথ পাল্টে চারটি দূর পাল্লার বিমান এখন দক্ষিণ ভারত মহাসাগরের দিকে রওনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
অস্ট্রেলিয়ার মেরিটাইম সেফটি অথরিটি বা এএমএসএ-এর কর্মকর্তা জন ইয়াং জানিয়েছেন, ‘‘বড় বস্তুটির দৈর্ঘ্য অন্তত ২৪ মিটার৷ অন্যটি এর চেয়ে সামান্য ছোট৷ আমার কাছে মনে হচ্ছে একটি এমন একটি আকার যা বিমানের হতে পারে এবং হয়ত কখনো কখনো এটির কোন একটি অংশ ভেসে উঠছে৷ কিন্তু নিশ্চিত হতে হলে সেখানে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই৷'' মার্চেন্ট শিপ এরই মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাওয়ার কথা৷ তবে অস্ট্রেলিয়ার উদ্ধারকারী জাহাজ এইচএমএএস-র পৌঁছাতে আরো কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷
এদিকে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ মন্ত্রী হিশামুদ্দীন হুসেইন জানিয়েছেন, এই তথ্যে তাঁরা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন৷ বিমানের আরোহীদের স্বজনরাও ভাবছেন প্রিয়জনদের খুঁজে পাবেন তারা৷
২৩৯ জন আরোহী নিয়ে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ৩৭০ উড়ালের বিমানটি নিখোঁজ হয় ৮ই মার্চ ভোরের দিকে৷ কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে বিমানটি হারিয়ে যাওয়ার কারণ এখনো জানা যায়নি৷ বিমানটিকে খুঁজে বের করতে চিরুনি অভিযান চলছে৷ ২৬টি দেশ স্থল, নৌ ও আকাশপথে এ অভিযান চালাচ্ছে৷