মিশরের সামরিক বাহিনী নিখোঁজ বিমানটি থেকে কোনোরকম ‘ডিস্ট্রেস সিগনাল' পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে৷ বিমানের খোঁজে যোগ দিয়েছে গ্রিস, ফ্রান্সও যোগ দিতে প্রস্তুত৷ কিন্তু কী ঘটেছে, তা এখনও অজানা৷
বিজ্ঞাপন
গোড়ায় শোনা গিয়েছিল যে, মিশরের মিলিটারি সার্চ টিমগুলি বৃহস্পতিবার সকালে স্থানীয় সময় ৪:২৬-এ নিখোঁজ বিমানটির সংকটকালীন প্রণালী থেকে একটি বিপদসংকেত পেয়েছে৷ বিমানটি কিন্তু তার দু'ঘণ্টা আগেই রাডার থেকে উধাও হয়েছে৷ এবার সামরিক বাহিনী এ ধরনের কোনো ডিস্ট্রেস সিগনাল পাবার কথা অস্বীকার করেছে৷
ইজিপ্টেয়ার-এর ৮০৪ নং উড়ালটি প্যারিস থেকে কায়রো যাবার পথে স্থানীয় সময় সকাল পৌনে তিনটে নাগাদ রাডার স্ক্রিন থেকে উধাও হয়; এর ৪৫ মিনিট পরেই বিমানটির কায়রোয় নামার কথা ছিল৷ উধাও হবার সময় এ৩২০ এয়ারবাস বিমানটি ৩৭,০০০ ফুট উচ্চতায় উড়ছিল ও ইতিমধ্যেই মিশরের বায়ু অঞ্চলের ১৬ কিলোমিটার অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছিল৷ স্থানটি মিশরের ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলবর্তী আলেক্সান্ড্রিয়া শহরের উত্তরে৷
বিমানে ৫৬ জন যাত্রী ও আরো দশজন ‘ক্রু' অর্থাৎ বিমানকর্মী ছিলেন, বলে জানিয়েছে ইজিপ্টেয়ার৷ বিমানচালক দৃশ্যত একজন অভিজ্ঞ পাইলট, যিনি ইতিমধ্যে ৬,০০০ ঘণ্টার বেশি বিমান চালিয়েছেন৷ বিমানের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের শেষ বেতার সংযোগ ঘটে বিমানটি রাডার স্ক্রিন থেকে মুছে যাওয়ার দশ মিনিট আগে৷
ইজিপ্টেয়ার বিমানের যাত্রীদের যে তালিকা দিয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রধানত মিশরীয় ও ফরাসি নাগরিকরাই আরোহী ছিলেন৷ যাত্রীদের মধ্যে একটি শিশু ও দু'টি কোলের শিশু থাকার কথা শোনা যাচ্ছে৷
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ ফরাসি প্রধানমন্ত্রী মানুয়েল ভাল্স বলেছেন যে, বিমানটি কী কারণে নিখোঁজ হয়েছে, সে ব্যাপারে কোনো সম্ভাবনাই আপাতত বাদ দেওয়া যাচ্ছে না৷
এসি/ডিজি (এপি, এএফপি, ডিপিএ)
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷