মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এমএইচ৩৭০ কেন নিখোঁজ হলো? সেটা কি বিস্ফোরণ কিংবা সন্ত্রাসের কারণে? নাকি বিমানটি অপহৃত হয়েছে? বিমানটি – অথবা তার ধ্বংসাবশেষের – অবস্থান দুর্ঘটনার পাঁচদিন পরেও অজ্ঞাত৷
বিজ্ঞাপন
পুরো ঘটনাটা একটা রহস্য৷ অথচ ২৩৯ জন আরোহী নিয়ে বোয়িং ৭৭৭-২০০ বিমানটির নিখোঁজ হওয়াটা একটা নির্মম ও বাস্তব সত্য৷ খোঁজ চলেছে থাই উপসাগর ও দক্ষিণ চীন সাগর থেকে শুরু করে ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছের জলধি অবধি৷ ১২টি দেশের ডজন-ডজন জাহাজ, প্লেন ও হেলিকপ্টার সেই খোঁজে সংশ্লিষ্ট৷ অথচ নিখোঁজ বিমানের কোনো হদিশই নেই৷
মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ যেভাবে এই দুর্ঘটনার জনসংযোগের দিকটা সামলাচ্ছেন, তা-তে ইতিমধ্যেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে৷ তার সর্বশেষ প্রমাণ: মালয়েশিয়ার মিলিটারি জানিয়েছে যে, বিমানটি তার উড়ালের পথ থেকে হঠাৎ পশ্চিমে মোড় নিয়ে থাকতে পারে৷ মিলিটারি রাডারে বিমানটিকে যদি সত্যিই দেখা গিয়ে থাকে, তাহলে তার নিখোঁজ হওয়ার কারণ বিস্ফোরণ কিংবা সন্ত্রাস কিংবা যান্ত্রিক গোলযোগ হতে পারে না – কেননা বিমানটির সঙ্গে শেষ বেতার সংযোগ ঘটে মালয়েশিয়ার পূর্ব উপকূলের শহর কোটা ভারু এবং ভিয়েতনামের উপকূলের ঠিক মাঝামাঝি; অথচ মিলিটারি রাডারে বিমানটি যেখানে ধরা পড়েছে, সেই স্থানটি এর ৫০০ কিলোমিটার পশ্চিমে৷ অর্থাৎ বিমানটি নিখোঁজ হবার পরেও এই ৫০০ কিলোমিটার উড়ে যাবার মতো অবস্থায় ছিল৷
কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনা ও তার কারণ
আজকের এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তির যুগেও কীভাবে একটি বিমান হারিয়ে যেতে পারে সেটা অনেকেই ভেবে পাচ্ছেন না৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের ক্ষেত্রে হয়েছে সেটি৷ ছবিঘরে থাকছে কয়েকটি বিমান দুর্ঘটনার কথা ও তার কারণ৷
ছবি: AP
মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্স
৮ই মার্চ, ২০১৪৷ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে কুয়ালালামপুর থেকে বেইজিং যাওয়ার পথে হারিয়ে যায়৷ এখনো সেই বিমানের হদিশ মেলেনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ফ্রান্স
বিমান হারানোর ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ১ জুনেও৷ সে সময় ব্রাজিল থেকে ফ্রান্স যাওয়ার পথে অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে হঠাৎ করে হারিয়ে যায় এয়ার ফ্রান্সের একটি বিমান৷ প্রায় দু বছর পর সাগরের নীচে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবস্থায় এর খোঁজ পাওয়া যায়৷ এতে ২২৮ যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বিমান চালানোর অত্যাধুনিক ব্যবস্থা কাজ না করায় বিমানটি দ্রুতগতিতে নীচে নেমে অ্যাটলান্টিকের পানিতে তলিয়ে যায় বলে পরবর্তীতে তদন্ত রিপোর্টে জানা গেছে৷
ছবি: dapd
ভোজা এয়ার
২০১২ সালের ২০শে এপ্রিল পাকিস্তানের বেসরকারি ‘ভোজা এয়ার’-এর একটি বিমান ল্যান্ডিং-এর সময় নামতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়লে ১২৭ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ার মধ্যে ইসলামাবাদ বিমানবন্দরে নামার চেষ্টাই দুর্ঘটনার কারণ বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে৷ বোয়িং ৭৩৭-২০০ বিমানটি করাচি থেকে ইসলামাবাদ যাচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
ইরান এয়ার
২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি ইরান এয়ারের একটি বোয়িং ৭২৭-২০০ বিমান তেহরান থেকে অরুমিয়ে যাওয়ার পথে নামতে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭৭ জন নিহত হন৷ বেঁচে যায় ২৮ জন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস
দুবাই থেকে ভারতের ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরের রানওয়েতে নামার পর এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের একটি বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে দূরের পাহাড়ে গিয়ে আঘাত করলে বিমানটিতে আগুন ধরে যায়৷ এতে ১৫৮ জন নিহত হন৷ আর বেঁচে যান আটজন৷ পাইলটের গাফিলতি দুর্ঘটনার কারণ বলে তদন্তে জানা যায়৷ ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের ২২শে মে তারিখে৷
ছবি: AP
আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজ
পাইলটের ভুলের কারণে ২০১০ সালের ১২ মে আফ্রিকিয়া এয়ারওয়েজের একটি বিমান লিবিয়ার ত্রিপোলিতে ল্যান্ডিং-এর আগে দুর্ঘটনায় পড়লে ১০৩ জন যাত্রী নিহত হন৷ তবে অবিশ্বাস্যভাবে বেঁচে যায় হল্যান্ডের নয় বছরের এক ছেলে!
ছবি: AP
প্রেসিডেন্টের মৃত্যু
২০১০ সালের ১০ই এপ্রিল পোল্যান্ডের বিমানবাহিনীর একটি বিমান দুর্ঘটনায় পড়লে দেশটির সে সময়কার প্রেসিডেন্ট সহ ৯৬ জন যাত্রীর সবাই নিহত হন৷ পোল্যান্ডের সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার জন্য পাইলটকে দায়ী করা হয়৷ বলা হয়, খারাপ আবহাওয়ায় ল্যান্ডিং এর পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছিল না পাইলটের৷
ছবি: AP
ইয়েমেনিয়া
ল্যান্ডিং এর আগে ইয়েমেনের এয়ারলাইন্স ‘ইয়েমেনিয়া’-র একটি বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে ১৫৩ জন যাত্রীর ১৫২ জনই মারা যান৷ শুধু বেঁচে যায় ১২ বছরের একটি মেয়ে৷ দুর্ঘটনার কারণ পাইলটের ‘ঝুঁকিপূর্ণ ম্যানুভার’৷
ছবি: AP
8 ছবি1 | 8
এই আকার ও আয়তনের একটি যাত্রীবাহী বিমান সাগরে ভেঙে পড়লে তার কোনো অবশেষ কিংবা কোনো চিহ্নই যে পানিতে ভেসে থাকতে দেখা যাবে না, সোটা অসম্ভব৷ তাহলে কি এবার স্থলভূমিতেও বিমানটির খোঁজ করার সময় এসেছে? ভিয়েতনাম কিংবা চীন কিন্তু এখনও তা করার কথা ভাবছে না৷ অপরদিকে বিমানটির সহকারী বিমানচালক যে অতীতে মহিলা যাত্রীদের ককপিটে নিয়ে গেছেন, তা থেকেও বিমানটির অন্তর্ধানের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না৷
সবশেষে বলা দরকার: যে সব বাণিজ্যিক বিমান আজ আকাশে ওড়ে, তাদের মধ্যে বোয়িং ৭৭৭ বিশেষভাবে নিরাপদ বলে পরিচিত৷ কাজেই ফ্লাইট এমএইচ৩৭০-এর ভাগ্যে সত্যিই কী ঘটেছে, তা জানার জন্য বিশ্বকে – বিশেষ করে নিখোঁজ যাত্রী ও ক্রু-র আত্মীয়স্বজনদের আরো অপেক্ষা করতে হবে৷