নিখোঁজ ১৭৬ জন কোথায়?
১৭ অক্টোবর ২০১৪ সম্প্রতি থাইল্যান্ডের উপকূল থেকে থাই কর্তৃপক্ষ ১৩৪ জনকে উদ্ধার করে৷ মানবপাচারকারীরা নাকি একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকা করে তাঁদের সেখানে নিয়ে যায়৷ তবে সেই নৌকায় আরো ১৭৬ জন ছিলেন, যাঁদের এখনও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না৷ বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে যাওয়া নৌকাটি ছেড়ে যায়৷ জানা গেছে, উদ্ধার হওয়া ১৩৪ জনের মধ্যে ১৬ জন রোহিঙ্গা৷ উদ্ধারকৃতরা থাই কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন যে, তাঁদের সঙ্গে আরো ১৭৬ জন ঐ একই নৌকায় ছিলেন এবং তাঁদের সকলকে একটি দুর্গম দ্বীপে রাখা হয়েছিল৷
নৌকায় মোট ৩১০ জন যাত্রীকে পাচারকারীরা কী কারণে এবং কোথায় নিয়ে যাচ্ছিল – তা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়৷ উদ্ধারকৃতদের দেয়া তথ্যমতে, পাচারকারীরা নিখোঁজদের মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মাছধরা ট্রলার ও কারখানায় দাস হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারে৷
উদ্ধার হওয়া ১৩৪ জনের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং নিখোঁজদের উদ্ধার করতে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের একটি দল এ মুহূর্তে থাইল্যান্ডে রয়েছেন৷ তাঁরা এরইমধ্যে উদ্ধার হওয়া ১৩৪ জনের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথাও বলেছেন বলে জানা গেছে৷ জিজ্ঞাসাবাদে দু'জন, যাঁদের মধ্যে একজন কিশোরও রয়েছেন, জনিয়েছেন যে তাঁদের বাংলাদেশ থেকে ‘অপহরণ' করে নিয়ে যাওয়া হয়৷ অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাঁদের অপহরণের পর প্রথমে মাছধরা জাহাজে আটকে রাখে, পরে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর এলাকা থেকে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল উপকূলের একটি দুর্গম দ্বীপের উদ্দেশ্যে রওনা হয়৷
থাইল্যান্ডের একটি দ্বীপে পাচারকারীরা একদল লোককে নিয়ে এসেছে বলে থাই কর্তৃপক্ষ জানতে পারার পর, পাচারকারীর ১৩৪ জনকে সমুদ্রে ফেলে দেয় এবং তারা সাঁতরে সমুদ্র উপকূলে পৌঁছাতে সক্ষম হয়৷ সেখান থেকেই তাঁদের উদ্ধার করা হয়৷ তবে বাকি ১৭৬ জনকে পাচারকারীর দল সরিয়ে নিতে সক্ষম হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
উদ্ধারকৃতরা জানান, তাঁদের জঙ্গলে আটকে রেখে ব্যাপক মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে এবং ঠিকমতো খাবার-দাবারও দেওয়া হয়নি৷
বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা থাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা এ ধরনের ঘটনা আর কখনো ঘটতে দেখিনি৷ কারণ বাংলাদেশ থেকে সাধারণত পাচারের ঘটনা ঘটে না৷''
এর আগে আরেকটি ঘটনায় থাইল্যান্ডের ফ্যাং এঙ্গা প্রদেশের তাকুয়া পা জেলায় ১৩০ জনকে উদ্ধারের ঘটনার পর, মানবপাচারের অভিযোগ এনে দুই থাই নাগরিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল৷ পুলিশ এ ঘটনায় অন্য অভিযুক্তদেরও খুঁজছে৷
মানবপাচার প্রতিরোধে থাইল্যান্ডের অবস্থা খুবই নাজুক৷ ২০১৪ সালে ইএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট মানবপাচার ইনডেক্স-এ থাইল্যান্ডের অবস্থার আরো নামিয়ে টায়ার ৩-এ রাখা হয়েছে৷ আর এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো যে, থাইল্যান্ডের দক্ষিণে মানবপাচার রুট পুরোপুরি খোলা রয়েছে এবং পাচারকারীরা সেখানে বেশ ভালোই সক্রিয়৷
এবার উদ্ধার হওয়া ১৩৪ জনের মধ্যে ১৬ জন রোহিঙ্গা আর নিখোঁজ ১৭৬ জনের মধ্যেও রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে জাতিগত দাঙ্গার কারণে ২০১২ সালে ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে পালান৷ এছাড়া সেই ঘটনায় কয়েকশ' নিহত এবং অন্তত এক লাখ ৪০ হাজার রোহিঙ্গা গৃহহীন হয়েছিলেন৷
সাধারণত অক্টোবর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসকে সমুদ্র যাত্রার জন্য সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয়৷ এ সময়ে আরো শত শত রোহিঙ্গা শরণার্থী মিয়ানমার ছেড়ে পালাতে পারে৷ তাঁদের গন্তব্য হতে পারে মালয়েশিয়া, কারণ সেখানে বহু রোহিঙ্গা বসবাস করেন৷