জামাত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ইউরোপের ‘নিরবতার’ কঠোর সমালোচনা করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ তাঁর অভিযোগ, মৃত্যুদণ্ড ইস্যুতে ইউরোপ ‘দ্বৈত নীতি’ অবলম্বন করছে৷
এরপর রবিবার টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড নিয়ে আবারো কথা বলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান৷ তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘‘আপনারা যদি রাজনৈতিকভাবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী হন, তাহলে মতিউর রহমান নিজামী, যিনি কয়েকদিন আগে শহিদ হয়েছেন, তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের বিষয়ে কেন এখনও চুপ করে আছেন?’’
এর্দোয়ানের প্রশ্ন, ‘‘আপনারা কি ইউরোপ থেকে কিছু শুনেছেন?....না৷ তা এটাকে কি দ্বৈত নীতি বলে না?’’
তুর্কি রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহারের বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তখন বলেছিলেন, তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহারের তথ্যটি সঠিক নয়৷ তুরস্কের রাষ্ট্রদূত দেউরিম ওজতুর্ক কয়েক দিন আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দেওয়া চিঠিতে জানান যে, ১২ই মে তিনি ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন৷ তাঁর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেটিও তিনি উল্লেখ করেন৷ তাছাড়া কোনো দেশ তার রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর কথা৷ তুরস্ক কিন্তু তেমন কিছু বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি৷’’ পরবর্তীতে অবশ্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে আর কোনো কথা বলেননি৷
তুরস্কের এই অবস্থান এবং তৎপরতা প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দু’টি কারণে তুরস্কের এই অবস্থান৷ প্রথমত তুরস্কের ক্ষমতাসীনরা যে রাজনীতি করেন, তা জামায়াতের রাজনীতির চরিত্রের সঙ্গে মেলে৷ সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা ব্যর্থ হওয়ার পর মৌলবাদীরা ক্ষমতায়৷ আর দ্বিতীয়ত, তুরস্কের রাষ্ট্রপতি সুন্নি মুসলমানদের বিশ্ব নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন৷ প্রধানত এই দুই কারণেই তুরস্কের এই অবস্থান৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এই বিষয়টিকে তেমন আমলে নেয়ার কিছু নেই৷ তুরস্ক বা পাকিস্তান কী করল তা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়৷ গুরুত্বপূর্ণ হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ ঠিকমত চালিয়ে নেয়া৷ তুরস্কের সঙ্গে আমাদের অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক এমন নয় যে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর আমাদের ভয় দেখানো হতো যে, অনেক দেশ, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া বন্ধ করে দেবে৷ কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি৷’’
শান্তনু মজুমদারের কথায়, ‘‘শুধু তুরস্ক নয়, আরো কেউ কেউ বলছে যে বাংলাদেশে ইসলামিস্টদের ফাঁসি দেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু এটা অপপ্রচার৷ বাংলাদেশে শুধুমাত্র মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে দণ্ড দেয়া হচ্ছে৷’’
প্রসঙ্গত, নিজামীর ফাঁসি কার্যকরের পর তুরস্কে বিক্ষোভও হয়৷ আর সেই বিক্ষোভের খবর সেখানকার সংবাদমাধ্যম নিজামীর ছবিসহ ফলাও করে প্রচারও করে৷
শান্তনু মজুমদার
মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ সহ বিশ্বের অনেক দেশে এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রয়েছে৷ তবে চলতি শতকে কয়েকটি দেশ এই শাস্তি প্রথা বাতিল করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলবেনিয়া
বাতিল: ২০০০; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯৫
ছবি: Fotolia/Matthias Krüttgen
আর্মেনিয়া
বাতিল: ২০০৩; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: AP
ভুটান
বাতিল: ২০০৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৭৪
ছবি: DW
বুরুন্ডি
বাতিল: ২০০৯; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০০
ছবি: picture-alliance/Philipp Ziser
চিলি
বাতিল: ২০০১; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮৫
ছবি: picture-alliance/dpa
ফিলিপাইন
বাতিল: ২০০৬; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০০
ছবি: DW/P. Hille
গ্যাবন
বাতিল: ২০১০; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮১
ছবি: AP
কাজাখস্থান
বাতিল: ২০০৭; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০৩
ছবি: picture-alliance/dpa
মাদাগাস্কার
বাতিল: ২০১৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৫৮
ছবি: picture alliance / blickwinkel
মন্টোনেগ্রো
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: imago/P. Widmann
সেনেগাল
বাতিল: ২০০৪; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৬৭
ছবি: Alexander Joe/AFP/Getty Images
সার্বিয়া
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৯২
ছবি: picture-alliance/dpa
টোগো
বাতিল: ২০০৯; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৭৮
ছবি: DW/J. von Mirbach
তুরস্ক
বাতিল: ২০০২; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ১৯৮৪
ছবি: Bulent Kilic/AFP/Getty Images
উজবেকিস্তান
বাতিল: ২০০৮; সবশেষ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর: ২০০৫
ছবি: picture-alliance/dpa
15 ছবি1 | 15
এর্দোয়ান সুন্নি মুসলমানদের বিশ্ব নেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন৷ তাঁর এই স্বপ্ন কি সত্যি হবে? লিখুন নীচের ঘরে৷
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকা
২০১৩ সালে মোট ২২টি দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল৷ ছবিঘরে থাকছে সেসব কথা৷
ছবি: Fotolia/lafota
চীন
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, চীনে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ তবে ব্যাপারটিকে যেহেতু চীনে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় বিষয় হিসেবে দেখা হয় তাই অ্যামনেস্টির পক্ষে নির্দিষ্ট সংখ্যা জানানো সম্ভব হয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইরান
তিনভাবে ইরানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় – গুলি করে, পাথর ছুড়ে আর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে৷ ২০১৩ সালে এভাবে কমপক্ষে ৩৬৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে৷ সামান্য অভিযোগে সাংবাদিক সহ মানবাধিকার কর্মীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে মাঝেমধ্যেই সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটি৷
ছবি: ISNA
ইরাক
সাদ্দাম হুসেনের আমলে ইরাকে বেশি সংখ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা ঘটতো৷ ২০১৩ সালে ১৬৯ জনের বেশি বন্দিকে এই শাস্তি পেতে হয়েছে বলে জানিয়েছে অ্যামনেস্টি৷ এর মধ্যে বেশিরভাগই ছিল সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী৷
ছবি: picture alliance/dpa
সৌদি আরব
২০১৩ সালে ১৮ বছরের কম বয়সি তিনজন সহ কমপক্ষে ৭৯ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে সৌদি আরব৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Abir Abdullah
যুক্তরাষ্ট্র
ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরে বিষ ঢুকিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যদণ্ড কার্যকর করা হয়৷ এভাবে ২০১৩ সালে ৩৯ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ অবশ্য সে বছর কমপক্ষে ৮০ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যদণ্ডের রায় দেয়া হয়৷
ছবি: CHANTAL VALERY/AFP/Getty Images
বাংলাদেশ ১৮ নম্বরে
সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা দেশের তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে আছে সোমালিয়ার নাম৷ ২০১৩ সালে সেদেশে ৩৪ জনের বেশি বন্দির প্রাণ নেয়া হয়৷ তালিকায় বাংলাদেশের নাম রয়েছে ১৮ নম্বরে৷ অ্যামনেস্টির হিসেবে ঐ বছর বাংলাদেশে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়৷