ধর্মঘটে মিডিয়ার পূর্ণ সমর্থন পেয়েছিলেন সাকিব আল হাসান৷ তখন বিসিবির সমালোচনা ছিল যৌক্তিক৷ তবে সেই অবস্থান আর ধরে রাখতে পারেননি সাকিব৷ এখন তার কাজে ক্ষতি হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের৷এভাবে সাকিব শুধু নিজেকে ছোটই করছেন৷
বিজ্ঞাপন
শুরুতে বলে নেয়া ভালো, ক্রিকেটারদের ধর্মঘটের সময়ের মতো এখনো বিসিবি প্রধানের কথাবার্তার ধরন একেবারেই অভিভাবকসুলভ নয়৷ এজন্য তার সমালোচনা হচ্ছে, হবেও৷
তবে আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের সার্বিক স্বার্থের প্রশ্ন ছিল৷ তখন স্পষ্ট বলা গেছে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-র সর্বোচ্চ পদে আসীন নাজমুল হাসান পাপন অভিভাবকসুলভ সর্বোচ্চ উদারতা আর সহনশীলতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ এখন কিন্তু বিসিবি প্রধানের যুক্তি হতে পারে, একজন ক্রিকেটারের (সাকিব) অন্যায়ে যদি বাকি সবার ক্ষতি হয়, একজন ক্রিকেটারের নিয়মবহির্ভূত উপায়ে মোটা অঙ্কের অর্থ উপার্জন উদারমনে মানতে গিয়ে যদি ক্রিকেটের সার্বিক ক্ষতি করতে হয়, তাহলে সেই উদারতা কতটা কাম্য?
এর সদুত্তর আমাদের জানা নেই৷ একথা সত্যি যে, সাকিব যা করেছেন তাতে শুধু তারই লাভ হবে আর ক্ষতি হবে বিসিবি এবং অন্য ক্রিকেটারদের৷ এমন পরিস্থিতি কিন্তু সাকিবই সৃষ্টি করেছেন!
সাকিব কী করেছেন তা সবারই মোটামুটি জানা৷ বিসিবির সঙ্গে চুক্তির শর্ত না মেনে তিনি একটি টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছেন৷ চুক্তিটা করেছেনও এমন সময়ে যখন তার নেতৃত্বে ক্রিকেটারদের ধর্মঘট চলছে৷ ক্রিকেটে বিদ্রোহ বা দাবি আদায়ের আন্দোলন অনেক হয়েছে, কিন্তু আন্দোলন চলার সময়েই শীর্ষ নেতা কোনো পণ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হতে মোটা অঙ্কের চেকে স্বাক্ষর করছেন, এমন নজির কিন্তু আগে দেখা যায়নি৷
এভাবে ক্রিকেটারদের নেতা হিসেবে গড়ে ওঠা ভাবমূর্তিটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন সাকিব৷ তা করেই থেমে থাকেননি৷ বিসিবি তাকে নোটিশ পাঠানোর পর বিসিবি প্রধানের কাছে অভিভাবকসুলভ আচরণ প্রত্যাশা করে বক্তব্যও দিয়েছেন৷ অভিবাবকসুলভ আচরণের প্রত্যাশা তার থাকতেই পারে৷ কিন্তু সাকিব নিজে যা করছেন, তা কি ক্রিকেটারদের প্রতি অভিভাবকসুলভ? অন্যদের লাভ-ক্ষতি বিবেচনায় না নিয়ে নিজের লাভ আগে নিশ্চিত করা কি অভিভাবকের মতো?
আশার কথা, বিসিবির অনুমতি না নিয়ে টেলিকম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করলেও সাকিবের বিরুদ্ধে মামলা করবে না বিসিবি৷ বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন আহমেদ তেমনটিই জানিয়েছেন৷ তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, আদালতে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না হলেও নিয়মভঙ্গের জন্য সাকিবকে জবাবদিহি করতেই হবে৷
এটা কোনো অন্যায্য দাবি নয়৷ কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির নিজেকে জবাবদিহিতার ঊর্ধে ভাবাটাই বরং অন্যায়৷
ভারত সফরের আগে দু'টি অনুশীলন ম্যাচ খেলছেন না সাকিব৷ বলেছেন, অন্যদের পর্যাপ্ত সুযোগ করে দিতেই নাকি তার এই সিদ্ধান্ত৷ অতীতে কি তিনি কখনো এমনটি করেছেন? ভবিষ্যতেও সব সফরের আগে কি প্র্যাকটিস ম্যাচ থেকে নিজেকে এভাবে সরিয়ে নেবেন সাকিব? আশা করি, করবেন না৷ কারণ, ক্রিকেটারদের সবচেয়ে কাছের অভিভাবক কিন্তু অধিনায়ক৷ অনুশীলনে অভিবাবক পাশে না থাকলে প্রস্তুতিতে ঘাটতি থেকে যায়৷ তার প্রভাব টি-টোয়েন্টি বা টেস্ট ম্যাচে পড়তে পারে৷ তাতে বাংলাদেশের ক্রিকেটেরই ক্ষতি৷ বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি এবং টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের তা বোঝা দরকার৷
ধরাছোঁয়ার বাইরে সাকিব
ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত তিন ফরম্যাটে একই সময়ে সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার কীর্তি গড়েছেন সাকিব আল হাসান৷৷ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও তৈরি করেছেন এমন রাজত্ব, যেখানে সিংহাসনের অন্য সব দাবিদার পিছিয়ে যোজন যোজন৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
মুকুটবিহীন রাজা
বিশ্বকাপে মোট আট ম্যাচে মাঠে নেমেছে বাংলাদেশ৷ দুই সেঞ্চুরিসহ সাকিব করেছেন ৬০৬ রান৷ এর মধ্যে সাত ইনিংসেই ৫০-এর বেশি রান করেছেন তিনি৷ এর আগে ২০০৩ বিশ্বকাপে ভারতের শচীন টেন্ডুলকার সাত ইনিংসে ৫০-এর বেশি রানের রেকর্ড গড়েছিলেন৷ এবার সেই রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন সাকিব৷ তাও আবার শচীনের চেয়ে তিন ম্যাচ কম খেলে! বোলিংয়েও সমান ভূমিকা রেখেছেন তিনি৷ নিয়েছেন ১১ উইকেট৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
আফগানিস্তান
টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় আফগানিস্তান৷ আশা ছিল, স্পিন ঘূর্ণিতে কাবু করে বাংলাদেশকে কম রানে বেঁধে ফেলা৷ কিন্তু সাকিবের কথা হয়তো ভুলেই গিয়েছিল আফগানরা৷ বাংলাদেশের ২৬২ রানের সংগ্রহে সাকিব করেন ৫১৷ এরপর বল হাতে তার নেতৃত্বেই আফগানদের ৬২ রানে হারায় বাংলাদেশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Davy
রেকর্ডের ম্যাচ
আফগানদের বিরুদ্ধে বল হাতে সাকিব করেন একাধিক রেকর্ড৷ প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে এক ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি৷ যুবরাজ সিংয়ের পর কেবল দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে একই ম্যাচে অর্ধশত ও ৫ উইকেট এখন সাকিবের৷ সেই সঙ্গে কপিল দেব ও যুবরাজ সিংয়ের পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে একই বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি ও ৫ উইকেট পাওয়া খেলোয়াড় সাকিব৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
ভারত
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ২৮ রানে পরাজয়ের দিনে সাকিবের ব্যাট থেকে এসেছিল ৬৬ রান, যা অন্য সবার চেয়ে বেশি৷ বল হাতে সবচেয়ে কম ৪.১০ ইকোনমিতে উইকেট নিয়েছেন একটি৷
ছবি: Getty Images/D. Sarkar
অস্ট্রেলিয়া
টসে জিতে ব্যাটিং নেয় অস্ট্রেলিয়া৷ ডেভিড ওয়ার্নারের বিধ্বংসী ব্য়াটিংয়ে ৩৮২ রানের লক্ষ্য দেয় অজিরা৷ ওয়ার্নার করেন ১৬৬ রান৷ সাকিব বল হাতে খুব ভালে করেননি৷ উইকেটবিহীন থেকে ৬ ওভারে দেন ৫০ রান৷ ব্যাটিংয়ে এবার টিমওয়ার্ক দেখায় টাইগাররা৷ মুশফিক শতরান করেন, অর্ধশত করেন তামিম-মাহমুদুল্লাহ৷ সাকিবও সে ম্যাচে করেন ৪১ রান৷ তবে বাংলাদেশ ম্যাচ হারে ৪৮ রানে৷
ছবি: Getty Images/M. Steele
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেয় বাংলাদেশ৷ লিউয়িস আর পুরানের উইকেট নেন সাকিব৷ তবে লিউয়িস-হোপের নৈপূণ্যে ক্য়ারিবীয়রা ৩২২ রানের টার্গেট দেয়৷ বল হাতে অসাধারণ সাকিব ব্যাট হাতেও কান্ডারীর ভূমিকা নেন৷ দুর্দান্ত লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে অপরাজিত ১২৪ রানে বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে৷
ছবি: Getty Images/A. Davidson
ইংল্যান্ড
টসে জিতে ইংল্যান্ডকে ব্যাট করতে পাঠান টাইগার অধিনায়ক৷ শুধু সাকিব কেনো, বোলিংয়ে সুবিধা করতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো বোলার৷ ৩৮৭ রানের টার্গেটে চাপা পড়ে বাংলাদেশ৷ তবে ব্যাটিংয়ে এসে বরাবরের মতোই নেতৃত্বে সাকিব আল হাসান৷ দলকে জেতাতে না পারলেও নিজে করেন ১২১ রান৷
ছবি: Getty Images/H. Trump
নিউজিল্যান্ড
টসে হেরে ব্যাটিং করতে হয় বাংলাদেশকে৷ আগের ম্যাচের দুর্দান্ত বাংলাদেশ এই ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়ে৷ সাকিব ৬৪ রান করলেও বাকিরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারেননি৷ ৪ বল বাকি থাকতেই টাইগাররা অলআউট হয়৷ ২৪৫ রানের টার্গেটেও বিপদে পড়ে কিউইরা৷ গাপটিল ও মুনরোকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে মাঠে রাখেন সাকিব৷ আশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ২ উইকেটে হারে বাংলাদেশ৷
ছবি: Getty Images/D. Rogers
সাউথ আফ্রিকা
২ জুন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে৷ টস জিতে বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে পাঠায় সাউথ আফ্রিকা৷ মুশফিকের সঙ্গে মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৪২ রানের পার্টনারশিপ করেন সাকিব৷ তাঁর ব্যক্তিগত ৭৫ রান দলকে এনে দেয় ৩৩০ রানের বিশাল সংগ্রহ৷ বোলিংয়ে এসে প্রোটিয়া ওপেনার মারক্রামকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরান তিনি৷ ম্যাচটি ২১ রানে জেতে বাংলাদেশ৷