পিটারের মতোই তিনি রাশিয়ার জমি পুনর্দখল করছেন বলে দাবি করেছেন পুটিন। এদিকে ডনবাস এখনো ইউক্রেনের হাতছাড়া হয়নি বলে দাবি সেনার।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার পিটার দ্য গ্রেটের ৩৫০ বছরের জন্মদিন উদযাপিত হয়েছে রাশিয়ায়। রাশিয়ার এই বিখ্যাত সম্রাট একসময় বিপুল পরিমাণ অঞ্চল দখল করেছিলেন। সে সময় যে অঞ্চলকে সুইডেন বলে মনে করা হতো। পিটারের গুণগান করতে গিয়ে এক সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বলেন, তিনিও পিটারের মতোই দেশের জমি পুনর্দখলের কাজে নেমেছেন। পিটার দ্য গ্রেট পরবর্তীকালে নিজের নাম সেন্ট পিটার্সবার্গ রাখেন। তার নামেই নামকরণ হয়েছে পুটিনের জন্মস্থান সেন্টপিটার্সবার্গ।
জার্মানিতে ইউক্রেনের নারীদের নতুন জীবন
রাশিয়া হামলা চালানোর পর প্রাণ বাঁচাতে নিজের দেশ ছেড়েছেন তারা৷ ইউক্রেন ছেড়ে আসা এমন কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ জার্মানিতে কষ্টের জীবন এবং স্বদেশ থেকে দূরে থাকার বেদনার হৃদয়স্পর্শী বর্ণনা দিয়েছেন তারা...
ছবি: DW
‘আমি বাড়ি ফিরতে চাই’
২৩ বছর বয়সি ওলেক্সান্দ্রা কিয়েভ ছাড়েন গত ২৩ মার্চ৷ জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর বার্গিশ গ্লাডবাখে তার ভালো লাগছে না, প্রতি মুহূর্তে দেশে ফিরতে ইচ্ছে করছে তার, ‘‘আমি বাড়ি ফিরতে চাই, কিন্তু এখন তো সেটা সম্ভব নয়৷ তবু মনে হয় সব ছেড়েছুঁড়ে কিয়েভে ফিরে যাই৷’’ পরদেশে থাকা খুব কষ্টের, তবু একটা কারণে জার্মানিতে থাকছেন ওলেক্সান্দ্রা, ‘‘ইউক্রেনকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য তো অনেক মানুষকে বেঁচে থাকতে হবে৷’’
ছবি: DW
‘ঈশ্বর, আরেকটা দিন আমাকে বাঁচিয়ে রাখো’
কিয়েভের এক সাবওয়ে ধ্বংস হয়ে গেল বোমায়৷ বোমার প্রচণ্ড আঘাতের ধাক্কা তার বাড়িতেও লাগলো৷ ঘরের দেয়াল এমন কেঁপে উঠলো যে আতঙ্কে জেগে উঠলেন ওলেক্সান্দ্রা৷ ২৩ মার্চ সেই যে কিয়েভ ছাড়লেন আর সেখানে ফেরা হয়নি৷ প্রথমে গিয়েছিলেন লভিভে৷ সেখানেও বোমাবর্ষন শুরু হলে ওলেক্সান্দ্রা আশ্রয় নেন সেলারে৷ সেদিন শুধু একটাই প্রার্থনা করেছিলেন ওলেক্সান্দ্রা, ‘‘ ঈশ্বর, আরেকটা দিন দেখার জন্য আমাকে বাঁচিয়ে রাখো৷’’
ছবি: DW
আন্ডারগ্রাউন্ড কারপার্কে কাটানো দিনগুলো
লভিভে বোমাবর্ষন শুরুর পর কিছুদিন এক আন্ডারগ্রাউন্ড কারপার্কে লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল৷ সঙ্গে যেটুকু খাবার ছিল, দুদিনেই সব শেষ৷ তারপর না খেয়ে থাকতে থাকতে শরীর এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে চুল বাঁধার শক্তিও ছিল না হাতে৷ কার পার্কের কয়েকদিনের জীবনের বর্ণনা দিতে গিয়ে ওলেক্সান্দ্রা আরো জানান, ‘‘ সেখানে একটা টয়লেট আর থালাবাসন ধোয়ার জন্য একটা বেসিন ছিল৷ গোসলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না সেখানে৷’’
ছবি: Privat
‘আবার যুদ্ধের কবলে পড়বো কখনো ভাবিনি’
ওলেনা নিজের সন্তানদের নিয়ে কিয়েভ ছেড়েছেন গত ১০ মার্চ৷ জার্মানির কোলন শহরে আশ্রয় নেয়া ওলেনা বললেন, ‘‘আমি এসেছি দনেৎস্ক অঞ্চল থেকে৷ আমার শহরের নাম আভদিভকা৷ ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে আট মাস আমরা হামলার কবলে ছিলাম৷ এবং তারপর এলো ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২৷ হায় ঈশ্বর, কখনো ভাবিনি আবার যুদ্ধ শুরু হবে৷’’
ছবি: DW
‘ওখানে থাকলে কী যে হতো!’
ওলেনা জানান, ‘‘কিয়েভের যে গ্রামে প্রথমে আশ্রয় নিয়েছিলাম, সেখানে কোনো রুশ সৈন্য ছিল না৷ কিন্তু খুব কাছের বুচা, মাকারিভ এবং বোরোদিয়ান্কায় ওরা ছিল৷ ওই জায়গাগুলোয় তুমুল বোমা আর গুলিবর্ষন চলছিল৷ তাই সিদ্ধান্ত নিলাম পালানোর, না পালালে কী যে হতো কে জানে, নিশ্চয়ই নিজের এবং বাচ্চাদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তো৷’’
ছবি: DW
‘আমি চাই আমার সন্তানরা শান্তিতে বেড়ে উঠুক’
দু’দুবার যুদ্ধের কবলে পড়তে হয়েছে ওলেনাকে৷ তাই তার আপাতত একটাই চাওয়া- শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সন্তানদের বেড়ে উঠতে দেয়া৷ ইউক্রেনীয় এই নারী জানালেন, জার্মানিতে এখন ভালো আছেন তিনি, ‘‘এখানে আমি একটা অ্যাপার্টমেন্টে আছি৷ সব মিলিয়ে ভালোই আছি৷ আমার সন্তানরা স্কুলে যাচ্ছে, জার্মান শিখছে৷ আমিও এখন জার্মান শিখছি৷ দু‘দুবার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে হয়েছে আমাদের৷ এখন আমি চাই আমার বাচ্চারা শান্তিতে বেড়ে উঠুক৷’’
ছবি: DW
‘মা, আমি কি এখন মারা যাবো?’
তাতিয়ানা ছিলেন খারকিভে৷ ৫ মার্চ শহর ছাড়ার আগের তিন সপ্তাহ প্রবল বোমাবর্ষনের মধ্যেই সেখানে থাকতে হয় তাকে৷ সেই সময়ের কথা স্মরণ করে তাতিয়ানা বললেন, ‘‘ আমার দশ বছর বয়সি মেয়েটা ভয়ে সারাক্ষণ কাঁদতো আর জানতে চাইতো, মা, আমি কি এখন মরে যাবো? সেখান থেকে পালিয়ে আসার সময়ও খুব ভয় পেয়েছি৷ আমার মেয়ে আবার সেরকম ভয়াল সময়ে পড়েছে- এমন কথা আমি ভাতেও চাই না৷’’
ছবি: DW
‘হৃদয় পড়ে আছে খারকিভে’
জার্মানি ও ইউরোপের কিছু দেশ যুদ্ধের সময় ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোয় তাতিয়ানা খুব কৃতজ্ঞ৷ তবে জার্মানিতে নিরাপদ জীবন স্বস্তি দেয়নি তাকে, ‘‘এখানে আমি নিরাপদে আছি, কিন্তু মনটা পড়ে আছে খারকিভে৷ প্রতি সন্ধ্যায় আমি বোমা হামলার খবর, মানুষের মৃত্যুর খবর, আহত হওয়ার খবর পড়ি৷ তাই প্রতি সকালে দুশ্চিন্তা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুদের ফোন করি৷ শুধু তারা ভালো আছেন- এই খবরটুকু জানার জন্য ফোন করি৷’’
ছবি: DW
কৃতজ্ঞ ইনা এবং জেনিয়া
ইনা আর তার বন্ধু জেনিয়া এসেছেন ওডেসা থেকে৷ তাদের সন্তানরা এখানে লেখাপড়া করছে৷ ইনা জানান, যুদ্ধের সময়ে জার্মানি তাদের জন্য্য যা করেছে তাতে তারা খুব কৃতজ্ঞ৷
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
পুটিনের এই বিতর্কিত মন্তব্য নিয়ে সরব হয়েছে ইউক্রেন। তাদের বক্তব্য, এ কথা বলে পুটিন দখল করা অঞ্চলকে বৈধতা দিতে চাইছেন। কিন্তু বিশ্ব কূটনীতি তা মানতে পারে না। কূটনীতিকদের ঠিক করে নিতে হবে, কোথায় তারা সীমান্ত চিহ্নিত করবেন। রাশিয়ার দাবি এভাবে মুখ বুজে মেনে নেওয়া ঠিক হবে না।
বন্দিদের মৃত্যুদণ্ড
সম্প্রতি দুই যুক্তরাজ্যের এবং এক মরোক্কোর বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলের আদালত। ওই তিন যোদ্ধাকে ইউক্রেন থেকে গ্রেপ্তার করেছিল রাশিয়ার সেনা। ওই তিন যোদ্ধাই স্বীকার করেছেন যে, তারা ইউক্রেনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তবে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন বলে তারা স্বীকার করেননি। মারিউপলের কারখানা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল বলে রাশিয়ার সেনার দাবি। চলতি সপ্তাহেই তাদের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা হয়েছে।
সিভিয়েরোদোনেৎস্ক দখলের চেষ্টায় রাশিয়া
00:47
ইউক্রেন এই রায়ের তীব্র বিরোধিতা করেছে। ইউক্রেনের দাবি, ওই তিন যোদ্ধাকেও ইউক্রেনের যুদ্ধবন্দিদের সমান মর্যাদা দিতে হবে। যুদ্ধবন্দিদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় না। সুতরাং ওই তিনজনকেও তা দেওয়া যাবে না। অবিলম্বে যুদ্ধবন্দিদের মুক্তির দাবি করেছে ইউক্রেন। দেশের দুই নাগরিককে বাঁচাতে চেষ্টা চালাচ্ছে যুক্তরাজ্যও।
সিভিয়েরোদনেৎস্কের যুদ্ধ
গত কয়েকসপ্তাহ ধরে ডনবাস অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ শহর সিভিয়েরোদনেৎস্কে প্রবল লড়াই চলছে। রাশিয়া দাবি করেছিল, ওই অঞ্চল তারা দখল করে নিয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবারও ইউক্রেনের সেনা দাবি করেছে, সেখানে ইউক্রেনের সেনা তীব্র লড়াই চালাচ্ছে। শহরটি এখনো রাশিয়ার দখলে চলে যায়নি। বস্তুত, ডনবাসের একটি বড় অংশ এখন রাশিয়ার দখলে। কিন্তু সিভিয়েরোদনেরস্ক শহরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্র্যাটেজিকও বটে।
আহত ইউক্রেনীয়দের চিকিৎসা
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল জার্মানি। দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আহত ইউক্রেনীয় যোদ্ধাদের সবরকম চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। বস্তুত, এর আগে ইউক্রেনের সেনাদের জার্মানিতে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল জার্মানি।