নাইজেরিয়ায় শিশুদের অধিকার রক্ষায় শিশুরাই তৈরি করছে সংগঠন৷ শিশুশ্রম বন্ধ করা না গেলেও অন্তত কাজের ভালো পরিবেশ চায় শিশুরা৷ এ জন্য সংগঠন গড়া হচ্ছে৷ কিন্তু তাতে কাজ কি কিছু হচ্ছে?
বিজ্ঞাপন
গডউইন জেমসের সকালে স্কুলে থাকার কথা৷ কিন্তু স্কুল বাদ দিয়ে কাজে যেতে বাধ্য হয়েছে সে৷ তার বয়স মাত্র ১৪ বছর৷ তা সত্ত্বেও তার অনেক কাজ করতে হয়৷ নাইজেরিয়ার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত বাডাগ্রি-তে বাস করে গডউইন৷ অধিকাংশ সময় সে টিনের চাল তৈরির কাজ করে৷
তার বাবা-মাও কাজ করে৷ কিন্তু গডউইন এবং তার পাঁচ ভাইবোনের খরচ মেটাতে সে আয় যথেষ্ট নয়৷ তাই তাকেও সাহায্য করতে হয়৷ গডউইন জেমস বলেন, ‘‘আমি যদি তাদের সাহায্য করি, তাহলে তারা খুশি মনে আমাকে লেখাপড়ায় সহায়তা করবে৷''
মলদোভার নিঃসঙ্গ শিশুরা
মলদোভার হাজার হাজার শিশু বাবা, মা ছাড়া একাকী বসবাস করে, যখন ওদের মা, বাবা ওদেরই জন্য বিদেশে কাজ করতে যায়৷ ফটোগ্রাফার আন্দ্রিয়া ডিফেনবাখ এরকম বেশ কিছুকে কাছে থেকে দেখেছেন৷
ছবি: Andrea Diefenbach
পিতামাতাহীন দেশ
ওলগা, সাবরিনা এবং ক্যারোলিনা তিন বছর একা ছিল৷ ওদের মা তখন বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের সেবিকা হিসেবে কাজ করতো এবং একটি ইতালিয় পরিবারের সাথে বড় একটি ঘরের ছোট্ট একটি ভাজ করা খাটে ঘুমাতো৷ ‘পিতামাতাহীন দেশ’ নামক একটি ফটো সিরিজে আন্দ্রিয়া ডিফেনবাখ মলদোভার এরকম শিশু এবং বাবা মায়ের দূরে থাকার সম্পর্ক বর্ণনা করেন৷
ছবি: Andrea Diefenbach
বারো বছর বয়সেই সংসারের কর্তী
সবচেয়ে বড় বোন ওলগা পুরোপুরো মায়ের ভূমিকাই পালন করতো৷ পনির বানাতো, রুটি তৈরি করতো,এমনকি ছোট দুই বোন ঠিকমতো স্কুলে গেলো কিনা সেদিকেও খেয়াল রাখতো৷ বিজবাডেনের ফটোগ্রাফার ডিফেনবাখ বলেন, ‘এই পরিস্থিতি তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করে’৷
ছবি: Andrea Diefenbach
মা, আমাদের ভুলে যেওনা!
ওলগার ছোট বোন ওর মার সাথে টেলিফোনে কথা বলার সময় প্রায় প্রতিবারই একথাটা মনে করিয়ে দিত৷ যদিও ওদের দেখে মনে হতো ওরা এই পরিস্থিতির সাথে ভালোভাবেই খাপ খাইয়ে নিয়েছিল৷ ডিফেনবাখ আরো বলেন, পরিবার যে ভেঙে গেছে তা হয়ত লক্ষ্য করা যাবে আরো ২০ বছর পরে যখন বাচ্চারা বড় হয়ে যাবে৷
ছবি: Andrea Diefenbach
দাদা দাদীর সাহায্য
কাটালিনার বাবা, মাও বিদেশে কাজ করে কিন্তু এই মেয়েটি ভাগ্যবতী কারণ ওর সাথে থাকার জন্য ওর দাদী অন্য গ্রাম থেকে চলে এসেছে৷ সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র মলদোভার অনেক পরিবারই এভাবে ভেঙে গেছে৷ বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী মলদোভার জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ কাজ করে বিদেশে৷ এরকম অভিবাসী অনেক শ্রমিকেরই বৈধভাবে সেখানে থাকার অনুমতি নেই৷
ছবি: Andrea Diefenbach
দূর থেকে ভালোবাসার প্রকাশ
বাবা-মায়েরা বিদেশ থেকে নিয়মিতই বাচ্চাদের জন্য প্যাকেট পাঠাতো৷ মাঝে মাঝে সেসব প্যাকেটে ইতালির সুপার মার্কেট থেকে কেনা পপকর্ন বা আপেলও থাকতো৷ ডিফেনবাখ বলেন ওগুলো হয়তো মলদোভার আপেলের মতো সুস্বাদু বা তাজা নয়, কিন্তু এই প্যাকেটি ছিল দূর থেকে সন্তানদের প্রতি পিতামাতার ভালোবাসা দেখানোর মাধ্যম৷ যেন ডাকে পাঠানো ‘ভালোবাসার বাক্স’৷
ছবি: Andrea Diefenbach
দীর্ঘদিনের বিচ্ছেদ
লাডমিলা ইতালির ৬টি বিভিন্ন এলাকায় ক্লিনার হিসেবে কাজ করতো এবং তার ছেলে স্লাভেকের কাছ থেকে ৭ বছর দূরে ছিল৷ সীমান্তে বৈধভাবে থাকার অনুমতি দেখাতে হতো বলে তখন যারা অবৈধভাবে বিদেশে থাকতো তারা সন্তানদের দেখতে যেতে পারতো না৷ এখন লাডমিলার থাকার জন্য বৈধ অনুমতি পাওয়ায় সে তার ছেলেকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে৷
ছবি: Andrea Diefenbach
বিদেশে কঠোর পরিশ্রম
ডিফেনবাখ পিতামাতাদের ভাগ্যের একটি বর্ণনা দেন৷ আলজোনা এবং ভাঞ্জা মেলনের ক্ষেতে কাজ করে যা রোজগার করেন তা তাদের দু’টি সন্তানের লালনপালনের জন্য যথেষ্ট৷ তারা প্রতিদিন দেশে টেলিফোনও করেন৷ তবে বৃষ্টির সময় ক্ষেতে কাজ হয়না বলে তাদের আয় কমে যাওয়ায় তখন চলতে অসুবিধা হয়৷
ছবি: Andrea Diefenbach
সহানুভূতির জন্য আবেদন
ডিফেনবাখ বলছেন, আমি আশাকরি আমার তোলা ছবিগুলো পশ্চিম ইউরোপের মানুষদের উৎসাহিত করবে, যাদের বাড়িতে বিদেশি মহিলারা কাজ করেন এবং যাদের সন্তান রয়েছে, তাদের কষ্ট এবং জীবনযাত্রা সম্পর্কে বুঝতে৷ ‘সন্তানকে ভালোবাসেন এমন পিতামাতার প্রতি যে কেউ সহানুভূতিশীল হতে পারেন’৷
ছবি: Andrea Diefenbach
ছবিই সম্বল
বাচ্চাদের ছবি দেখে প্রতিরাতেই বাবা-মায়ের ওদের কথা খুব মনে পড়ে৷ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণেই এই বাবা-মায়েরা বিদেশে কাজ করতে বাধ্য হয়৷ ডিফেনবাখ বলেন, এইসব বাবা মায়েরা জানেন না কিভাবে তারা সন্তানদের স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনবেন৷ মলদোভা ইউরোপের একটি গরীব দেশ, যে দেশের মানুষের গড় আয় মাসে ২০০ ইউরোর নীচে৷
ছবি: Andrea Diefenbach
মিথ্যে করুণা নয়
‘পিতামাতাহীন দেশ’ প্রকল্পের অধীনে ডিফেনবাখ পূর্ব ইউরোপের ওপর একটি বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির জন্য একটি পুরস্কার লাভ করেন৷ হানোফারের ফটো সাংবাদিকতার প্রফেসর ও প্রামাণ্য ফটোগ্রাফির বিচারক লার্স বাউয়ার স্মিড্ট বলেন এই ফটোগুলোতে করুণা প্রকাশ করা হয়নি, ইউরোপের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই ফুটে উঠেছে৷
ছবি: Andrea Diefenbach
জীবন ছেলে খেলা নয়
মলদোভার জনসাধারণও ডিফেনবাখের বইটি দেখার সুযোগ পায়৷ অনেকেই বিদেশে তাদের আত্মীয়স্বজনদের এত কষ্টে জীবন কাটানোর কথা জানতে পেরে বিস্মিত হয়৷ ডিফেনবাখ বলেন, তারা শুধু জানতো মাঝে মাঝে বিদেশ থেকে খাবার ও কাপড়ের প্যাকেট আসতো৷ তাঁর এই বইয়ের ছবিগুলো বিজবাডেনের সিটি মিউজিয়ামে দেখা যাবে আগামী ১২ মে পর্যন্ত৷
ছবি: Andrea Diefenbach
11 ছবি1 | 11
কাজ পাওয়ায় সে খুশি৷ তবে সে মনে করে, বাবা-মা তার কাছ থেকে অনেক বেশি আশা করছে৷ তাই গডউইন এবং অন্যান্য শিশু শ্রমিকরা একটি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করেছে, যা অনেকটা শ্রমিক ইউনিয়নের মতো৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা আমার পক্ষে দাঁড়ায় এবং আমার মায়ের কাছে গিয়ে অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানায়৷ আফ্রিকায় শিশুদের অধিকার সম্পর্কেও অভিভাবকদের অবহিত করে তারা৷''
আকোনাসু গবেডোজিন আগে ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন৷ এখন তিনি স্কুল শিক্ষক৷ এবং ইউনিয়নের ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করেন৷ অল্পবয়সি শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলায় আমার কোনো কিছু বলার সুযোগ ছিল না৷ আমি শুধুমাত্র তাই করতাম, যা আমার বাবা-মা, সমাজ করতে বলতো৷ কেননা তখন শিশুদের কোনো সংগঠন ছিল না৷ শিশুদের অধিকার সম্পর্কে জানানোর কেউ ছিল না৷''
আকোনাসু নাইজেরিয়ার শিশুদের সমস্যা সম্পর্কে জানেন৷ তবে পরিবর্তনের গতি বড় ধীর৷