নিজেদের সিদ্ধান্তই মানছেন না বাস মালিকরা
১০ আগস্ট ২০১৮পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সমিতিগুলোর নেতারা মাঠে নেমে এগুলো পরীক্ষা করছেন, তারপরও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷ তবে শ্রমিক নেতারা বলছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে পুরো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে৷
ঢাকা পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কাজ শুরু হয়ে গেছে৷ পর্যায়ক্রমে সব বন্ধ হয়ে যাবে৷''
এখনো তো অনেক মালিক চালকের সঙ্গে চুক্তিতে বাস চালাচ্ছেন? জবাবে এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘‘যারা চালাচ্ছে তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না৷ আমরা গতকালই পাঁচটি পরিবহণের সদস্যপদ বাতিল করেছি৷ প্রয়োজনে যারা সিদ্ধান্ত মানবে না, তাদের সবার সদস্যপদ বাতিল করা হবে৷ আমরা এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবই৷ এর জন্য যা করা দরকার তার সবই করা হবে৷''
মালিক সমিতি থেকে যে সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে সেটা কি চালকদের জোর করে মানাতে হচ্ছে নাকি তারা স্বেচ্ছায় মেনে নিচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আলিফ পরিবহণের চালক সালাহউদ্দিন আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বেতনেই চালাতে চাই৷ আমরা চাই দৈনিক ভিত্তিতে মজুরি৷ কারণ আমাদের দিন এনে দিন খেয়ে সংসার চলে৷ আমাদের পরিবহণ মালিকরা এখনো সিদ্ধান্ত নেননি যে তারা মাসিক ভিত্তিতে না দৈনিক ভিত্তিতে বেতন দেবেন৷ এখন গাড়ি চলছে, কিন্তু বেতনের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷''
সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনার চেষ্টায় বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে চালকদের সঙ্গে দৈনিক চুক্তি বা জমার ভিত্তিতে বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত বুধবার নিয়েছিল মালিকপক্ষ৷ শুক্রবারও দেখা গেছে অনেক পরিবহণ কোম্পানি চুক্তিতেই বাস চালাচ্ছে৷ সদরঘাট গাজীপুর রুটের সুপ্রভাত পরিবহণের অনেক বাসকেও একইভাবে চলতে দেখা যায়৷
একটি গাড়ির চালক বিজন কুমার সাহা জানান যে, দৈনিক সাড়ে তিন হাজার টাকা চুক্তিতে বাস চালান তিনি৷ তাদের রুটের বেশিরভাগ বাস টার্গেটে চলে৷ এখনও নতুন নিয়মের কথা তারা জানেন না৷ তিনি নিজেও চান তাদের মাসিক বা দৈনিক ভিত্তিতে বেতন দেয়া হোক৷ তাহলে আপত্তি নেই৷ একইভাবে তুরাগ পরিবহণের বাসও চুক্তিতে চালাতে দেখা গেছে৷ এই পরিবহণ কোম্পানির প্রতিটি বাস প্রতিদিন দুই হাজার টাকা জমায় চলে৷ অনাবিল পরিবহণের বাসও একইভাবে চুক্তিতে চলাচল করেছে বলে জানা গেছে৷
ঢাকা পরিবহণ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল আমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের একাধিক টিম মাঠে থেকে এই কাজগুলো দেখছে৷ আমরা চাই দৈনিক জমার ভিত্তিতে নয়, মজুরির ভিত্তিতে আমার চালকরা গাড়ি চালাবে৷ এতে করে পরিবহণ সেক্টরে নৈরাজ্য অনেকটাই কমে যাবে৷ সিরিয়াল অনুযায়ী বাস চলবে৷ যে যাত্রী পাবে সে যে বেতন পাবে, যার যাত্রী কম থাকবে তারও একই বেতন হবে৷ এতে করে চালকরা যাত্রী ওঠানোর জন্য প্রতিযোগিতায় নামবে না৷ আশা করি ১০ দিনের মধ্যেই আমরা পুরো ঢাকায় এটা বাস্তবায়ন করতে পারব৷''
এদিকে এই মুহূর্তে পুলিশের ট্রাফিক সপ্তাহও চলছে৷ গত পাঁচ দিনে ট্রাফিক আইন অমান্যকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৩৮ হাজার ৩২৮টি৷ এছাড়া গত চার দিনে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৪১ হাজার ৩৪২ টাকা৷ ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছেন, মানুষ আইন ভাঙছে৷ মানুষ সচেতন হলে মামলার সংখ্যা কমে আসবে৷
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি সিগন্যালে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ পুলিশ সদস্যরাও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন৷ মামলা দেওয়ার পাশাপাশি তারা সচেতনতা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন৷ ‘খোকাবাবু যায়, হেলমেট কোথায়?', ‘অযথা হর্ন বাজাবেন না', ‘চলন্ত গাড়িতে ওঠা-নামা করবেন না', ‘নির্ধারিত স্থান ছাড়া বাস থামাবেন না', ‘যত্রতত্র রাস্তা পারাপার করবেন না' – রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে পথচারী ও চালকদের উদ্দেশে এ সব বার্তা প্রচার করা হচ্ছে৷