বাংলাদেশের কারাগারে বন্দি উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের কনসুলার জে.পি সিং৷ তাঁর কাছে ভারতে ফিরে যাওয়ার কথা জনিয়েছেন চেটিয়া৷
বিজ্ঞাপন
অনুপ চেটিয়াকে এখন ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে৷ বৃহস্পতিবার কাশিমপুর কারাগারে অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে দেখা করেন জে.পি সিং৷ গাজীপুরের সাংবাদিক অপূর্ব রায় ডয়চে ভেলেকে জানান, জে.পি সিংয়ের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশন অফিসের দোভাষী দীপক দেবনাথও ছিলেন৷ কারা-সুপার মো. মিজানুর রহমানের উপস্থিতিতে অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে কথা বলেন তাঁরা৷
জেলার জান্নাতুল ফরহাদ জানান, ‘‘প্রায় এক ঘণ্টা অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন৷ এ সময় কনসুলার অনুপ চেটিয়ার দেশে ফেরার কোনো আগ্রহ আছে কিনা – তা জানতে চান৷ জবাবে অনুপ চেটিয়া দেশে ফেরার সম্মতি প্রকাশ করেন৷''
এর আগে গত বছরের মে মাসে তাঁর দুই সহযোগীকে নিয়ে ভারতে ফিরতে রাজশাহী কারাগারের কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন অনুপ চেটিয়া৷ তারপরই তাঁকে রাজশাহী কারাগার থেকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়৷
১৯৯৭ সালের ২১শে ডিসেম্বর ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার একটি বাসা থেকে অনুপ চেটিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান এবং বিদেশি মুদ্রা ও একটি স্যাটেলাইট ফোন রাখার অভিযোগে মোট তিনটি মামলা হয়৷ তিনটি মামলায় তাঁকে যথাক্রমে তিন, চার ও সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত৷ ২০০৭ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি তাঁর সাজার মেয়াদ শেষ হলেও, এখনো তিনি কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে আছেন৷ বাংলাদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে ২০০৩ সালের ২৩শে আগস্ট হাইকোর্টে আবেদন করেন অনুপ চেটিয়া৷ এ কারণে তাঁকে হস্তান্তরে আইনি জটিলতা ও দুই দেশের মধ্যে বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তি না থাকার কথাও বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়৷ তবে এখন আর এ ধরণের আইনি জটিলতা নেই৷
অনুপ চেটিয়া গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা আবেদনে তাঁর সঙ্গে আটক তাঁর দুই সহচর লক্ষ্মী প্রসাদ গোস্বামী ও বাবুল শর্মাকে নিয়ে নিজ দেশে ফিরতে চাওয়ার কথা বলেন৷
জানা গেছে, কাশিমপুর কারাগারের ছয় তলাবিশিষ্ট শৈবাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় দুটি পাশাপাশি ভিআইপি সেলে অবস্থান করছেন অনুপ চেটিয়া ও লক্ষ্মী প্রসাদ গোস্বামী৷ ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের সেল পাশাপাশি দুই কক্ষ হলেও, ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চেটিয়া ও গোস্বামী এক সঙ্গেই দিন কাটান৷ তাঁদের কয়েদির পোশাকও পরতে হয় না৷ দু'জন নানাভাবে সময় কাটান, কখনও গল্প করেন, কখনও তাস খেলেন৷ আর মাঝেমধ্যে একমাত্র চ্যানেল বিটিভি দেখেন৷ কারণ কারাগারে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল দেখার সুযোগ নাই৷
জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য কিছু তথ্য
জার্মানিতে এসে যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন, তাঁদের আমলাতন্ত্রিক নানা জটিলতার মধ্যে পরতে হয়৷ ফলে তাঁরা দিশেহারা হয়ে যান৷ তাঁদের সুবিধার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবার কমিক্স আকারে এই তথ্য পুস্তিকাটি রের করেছে৷
ছবি: SMI Sachsen
কিভাবে এগোবেন
গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার ৫৭৬ জন বিদেশি জামানিতে এসে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন৷ তাঁরা যাতে কোনো রকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সম্মুখীন না হন, সেজন্য স্যাক্সনি রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জার্মানি সম্পর্কে তিনটি ভাষায় একটি তথ্যপুস্তিকা প্রকাশ করেছে৷ যাতে রয়েছে সহজ ভাষায় ডাক্তারের কাছে যাওয়া থেকে শুরু করে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো পর্যন্ত নানা তথ্য৷
ছবি: SMI Sachsen
ভদ্রভাবে চলা
বিভিন্ন অফিস-আদালত বা কতৃপক্ষকে কোনো উপহার দেওয়া এ দেশে মোটেই ভদ্রতার মধ্যে পরে না বরং তাঁরা এতে বিরক্ত বোধ করেন৷ কাজেই সে ধরণের কোনো আচরণ না করাই ভালো৷ অন্যদিকে, কতৃপক্ষ কোনো উপহার নিলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাঁদেরও শাস্তি পর্যন্ত ভোগ করতে হয়৷
ছবি: SMI Sachsen
সহানুভূতিশীল
জার্মানিতে এসে যাঁরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হন, তাঁদের থাকার জন্য আলাদা বাড়ির ব্যবস্থা রয়েছে৷ সেসব বাড়িতে অনেকে একসাথে থাকেন এবং সেখানে থাকতে তাঁদের কারও যেন কোনো অসুবিধা না হয়, সেজন্য সবাইকেই বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়৷ তথ্য পুস্তিকাটিতে বিশেষভাবে লেখা রয়েছে যে, একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে এবং নিজের কারণে যেন অন্যের অসুবিধা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷
ছবি: SMI Sachsen
সময় সচেতনতা
সময় সচেতনতা সম্পর্কে জার্মানির খ্যাতি রয়েছে৷ কারুর যদি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার নিদিষ্ট সময় দেওয়া থাকে আর তিনি যদি কোনো কারণে সে সময় সেখানে না যেতে পারেন, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারকে ফোন করে জানিয়ে দিতে হবে৷ তাছাড়া ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া আশ্রয়প্রার্থীকে জার্মানিতে থাকার জরুরি কাগজ-পত্র বা টাকাও দেওয়া হবে না৷ জার্মানরা সময় সচেতন হলেও আজকাল মাঝেমাঝেই অবশ্য ট্রেনের সঠিক সময় রক্ষা করা যাচ্ছে না৷
ছবি: SMI Sachsen
স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক
জার্মানিতে তিন বছর বয়সি প্রতিটি শিশুর কিন্ডারগার্টেনে জায়গা পাওয়ার অধিকার রয়েছে৷ রাজনৈতিক আশ্রয়পার্থীদের বাচ্চাদের স্কুলের খরচ বহন করে জার্মান সরকার৷ জার্মানিতে ছয় বছর বয়স হলে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়া বাধ্যতামূলক৷ এছাড়া, স্কুলে বিদেশি বাচ্চাদের জার্মান ভাষা শেখার জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধাও দেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: SMI Sachsen
চিকিৎসা ব্যবস্থা
রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য বিনা খরচে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থাও রয়েছে জার্মানিতে৷ সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পুরো খরচ বহন করে জার্মান সরকার৷ কোনো রকম মানসিক সমস্যা হলে তাঁদের মনোবিজ্ঞানীর কাছে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়৷ এ সব ক্ষেত্রে কারো ভাষাগত সমস্যা হলে, দোভাষীর ব্যবস্থাও করা হয়ে থাকে৷