1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিজের পছন্দমতো ভোট দেয়া কি অপরাধ?

৬ জানুয়ারি ২০১৯

পছন্দের দলকে ভোট দেয়ার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশে কয়েকটি হামলা হয়েছে৷ যদিও এমন হামলা অতীতের তুলনায় কম, তাসত্ত্বেও তা উদ্বেগের৷ মোটের উপর সর্বশেষ নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার কতটা নিশ্চিত হয়েছে সেটাও এক প্রশ্ন হয়ে থাকবে৷

ছবি: DW/A. Islam

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতি এক দিক দিয়ে বেশ ভোটারকেন্দ্রিক৷ সর্বশেষ নির্বাচনের কথাই ধরুন৷ ভোটগ্রহণের আগে-পরে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ কিংবা খুবই মন্থর গতির করা হয়েছিল৷ কিন্তু যখনই মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলো, অসংখ্য ভোটার নিজেদের ভোট দিতে না পারার কথা তুলে ধরলেন৷ কেউ বলছেন, ভোটকেন্দ্রে যেতে দেয়া হয়নি, কেউ বলছেন কেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমার ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিয়েছেন, কেউবা বাধ্য হয়েছেন নির্দিষ্ট একটি প্রতীকে ভোট দিতে৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় অসংখ্য ভোটার এমন অভিযোগ করেছেন৷ কেউ কেউ অবশ্য ঠিকভাবে ভোট দিতে পেরেছেন বলে জানিয়েছেন, তবে সেই সংখ্যাটা বেশ সীমিত৷ 

আবার ভোটগ্রহণের আগের রাতে প্রশাসনের সহায়তায় অনেক কেন্দ্রে ‘ত্রিশ থেকে ষাট শতাংশ' জাল ভোট দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী জোট ঐক্যফ্রন্ট৷ এরকম ‘ভোট ডাকাতির' কিছু তথ্যপ্রমাণ ফেসবুকেও রয়েছে৷ আর একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম তো দিব্যি এক ভোটকেন্দ্রে ভোট শুরুর আগেই ব্যালটবক্স ভর্তি করা হয়েছে - এমন ভিডিও প্রকাশ করেছে৷ ডয়চে ভেলের প্রকাশিত এক ভিডিওতে খুলনার একটি আসনে মোট ভোটারের চেয়ে বেশি ভোট প্রাপ্তির ঘোষণা দিতে দেখা গেছে৷পরে তা সংশোধন করা হলেও ভোটারের চেয়ে বেশি ভোট প্রাপ্তির ঘোষণার খবর প্রকাশ করায় এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারও করা হয়৷এখন তিনি জামিনে মুক্ত৷ 

ভোটের চিত্র যখন এমন, তখনও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট এমন ‘বিপুল ভোটে জয়' জনগণই নিশ্চিত করেছে বলে দাবি করেছে৷ তাদের বক্তব্য হচ্ছে, জনগণের ভোটে পুনরায় ক্ষমতায় এসেছেন তারা৷ যদিও সেই জনগণের মধ্যে যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন, তাদের এক বড় অংশেরই বক্তব্য ভিন্ন৷

আবার ঐক্যফ্রন্টের কথাই ধরুন৷ তারা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে জনগণের ভোটের অধিকার ফেরাতে আন্দোলনের কথা বলছেন৷ কেননা, তারা মনে করেন, প্রকৃত ভোটাররা আসলে ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি৷ সুযোগ পেলে নির্বাচনের ফলাফল এতটা একপেশে হতো না৷ 

মিথ্যা বলছেন খুলনার রিটার্নিং কর্মকর্তা?

01:50

This browser does not support the video element.

এখানে দেখার বিষয় হচ্ছে, ক্ষমতাসীন জোট বা বিরোধী জোট - উভয়েই অন্তত মৌখিক বিবেচনায় জনগণকে তাদের শক্তির উৎস ভাবেন৷ তবে বাস্তবে সেটা হয়ত ভিন্ন৷ আওয়ামী লীগ দল হিসেবে যতই ভালো কাজ করুক, এবার যে তারা জনগণের উপর ঠিক ভরসা করতে পারেনি, সেটা নানা অভিযোগ থেকে বোঝা যায়৷ অন্যদিকে বিরোধী জোট জনগণের উপর যতটা ভরসা করেছিল, বাস্তবে আসলে তেমন একটা প্রতিদান পায়নি৷ অনেকে ভোট দিতে না পারার অভিযোগ করলেও তার প্রতিবাদে কোনো কিছু করেনি৷ 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সর্বশেষ নির্বাচনের সুদূর প্রসারী প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটা এখনই বলা দুষ্কর৷ তবে, জনগণের স্বাধীনভাবে ভোট দেয়ার অধিকার যে এবার নানাভাবে খর্বিত হয়েছে সেটা পরিষ্কার এবং উদ্বেগের বিষয়৷ গত প্রায় তিন দশকে আয়োজিত অধিকাংশ জাতীয় নির্বাচনে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছিল৷ সেই বিবেচনায় এবারের নির্বাচনে সেই অধিকারের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেকটা পিছিয়ে গেল৷

রাজশাহীর কালমা গ্রামের কথা চিন্তা করুন৷ সেই গ্রামে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট পড়েছিল বেশি৷ এজন্য পুরো গ্রামকে নির্বাচনের পর থেকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে দাবি করেছেন সেই গ্রামের বাসিন্দারা৷ যদিও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বক্তব্য ভিন্ন, তা সত্ত্বেও গ্রামটি যে অবরুদ্ধ হয়ে আছে, সেটা সেই গ্রাম পরিদর্শন করে আসা সাংবাদিকদের বক্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে৷ 

নতুন সরকারকে স্বীকৃতি না দেয়ার আহ্বান ড. কামালের

01:55

This browser does not support the video element.

আবার শুধু যে ধানের শীষে ভোট দেয়া ‘অপরাধ' হয়েছে এমন না৷ ফরিদপুরের ভাঙায় নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ায় সংখ্যালঘুসহ বেশ কয়েকটি পরিবার হামলার শিকার হয়েছেন৷ এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ বিএনপি বা জামায়াত নয়৷ হামলাকারীরা সেখানকার এক স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক বলেই গণমাধ্যমে উঠে এসেছে৷ সেই হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কয়েকজনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ৷ তবে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক ঢুকে গেছে৷ সেই আতঙ্কে অনেকেই এখন বাড়িছাড়া৷ 

অনেকেই বর্তমানের সঙ্গে অতীতের তুলনা করে বর্তমানের অপরাধের গুরুত্ব কমানোর চেষ্টা করেন৷ কিংবা বোঝাতে চান, আগের চেয়ে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে৷ সেটা অনেকক্ষেত্রে হয়েছে বৈ কি৷ তবে অতীতের সেসব ঘটনার প্রতিবাদ হয়েছে বলেই বর্তমানটা আগের চেয়ে ভালো৷ আর এই বর্তমানের অনিয়মের প্রতিবাদ ভবিষ্যৎটা আরো সুন্দর করতে পারে৷ 

আরাফাতুল ইসলাম, ডয়চে ভেলে

সেই বিবেচনায় নোয়াখালীতে ধানের শীষে ভোট দেয়ায় গণধর্ষণের শিকার নারীর কথা বলা যেতে পারে৷ যে পাশবিক নির্যাতনের শিকার তিনি হয়েছেন, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়৷ তবে, আশার কথা হচ্ছে, ধর্ষণের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে সন্দিহানদের গ্রেপ্তারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ৷ মূল অভিযোগ যার বিরুদ্ধে, তিনি ক্ষমতাসীন দলের কর্মী হওয়া সত্ত্বেও রেহাই পাননি৷ এখন দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত হলে তা বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিপরীতে এক চমৎকার উদাহরণ হবে৷

আমি মনে করি, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরী৷ ভোট দেয়া কোনো অপরাধ হতে পারে না৷ বরং এই অধিকার যদি হরণ হয়, সেটা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে৷ আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর তাই উচিত হবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে বা ক্ষমতায় যেতে জনগণকে সন্তুষ্ট করে তাদের ভোট আদায়ে সচেষ্ট হওয়া৷ নতুবা সরকার দেশের উন্নতি যতই করুক, ক্রমশ সেটি স্বৈরতন্ত্র হিসেবে পরিচিতি পাবে৷ 

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ