নিজের ফ্ল্যাটে কার ছুরিকাঘাতে আহত হলেন সাইফ?
১৬ জানুয়ারি ২০২৫বলিউডের তারকা সাইফ আলি খান থাকেন মুম্বইয়ের বান্দ্রায় একটি আবাসনে। সেখানে চারটি ফ্ল্যাট আছে তার। পুলিশ জানিয়েছে, সাইফ ১৩ তলার যে ফ্ল্যাটে থাকেন, সেখানে বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা নাগাদ একজনকে দেখতে পায় বাড়ির এক পরিচারিকা। তার চিৎকারে ঘুম ভেঙে ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সাইফ। তারপরই ওই ব্যক্তির সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় তার। কিছু সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সাইফের স্ত্রী অভিনেত্রী করিনা কাপুর খান পার্টি সেরে বাড়ি ফেরার পর ওই ব্যক্তিকে দেখতে পান ও চিৎকার করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ব্যক্তি ছুরি বের করে সাইফের ওপর হামলা চালায়। ছুরি দিয়ে মোট ছয়টি জায়গায় সাইফকে আঘাত করা হয়। তারমধ্যে একটি আঘাত মেরুদণ্ডের কাছে। ছুরির প্রায় তিন ইঞ্চির ফলা সেখানে ঢুকে যায়। অন্য দুইটি গভীর আঘাত ছিল ঘাড়ে ও বাম হাতে।
সাইফকে ছুরি মেরে আততায়ী পালায়। তারপর আহত বলিউড তারকাকে নিয়ে তার ছেলে ইব্রাহিম লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই সময় সাইফের গাড়ি আসতে দেরি হচ্ছিল। একটা অটোতে চাপিয়েই নবাব পরিবারের সন্তান সাইফকে দুই কিলোমিটার দূরের লীলাবতী হাসপাতালে নেয়া হয়।
চিকিৎসকরা যা জানিয়েছেন
লীলাবতী হাসপাতালের সিওও নীরজ উত্তামানি জানিয়েছেন, সাইফ আলি খানের দেহে আড়াই ঘণ্টা ধরে অস্ত্রোপচার ও প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে।
লীলাবতী হাসপাতালের চিকিৎসক নীতীন ডাঙ্গে জানিয়েছেন, বলিউড তারকাকে রাত দুইটা নাগাদ হাসপাতালে আনা হয়। তিনি থোরাটিক স্পাইনাল কর্ডে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন। ছুরির টুকরো সেখানে ঢুকেছিল। অস্ত্রোপচার করে তা বের করা হয়েছে। মেরুদণ্ড থেকে ফ্লুইড লিক করছিল, সেটাও ঠিক করা হয়েছে। বাম হাত ও ঘাড়ে প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়েছে। তিনি বিপদমুক্ত। তার অবস্থা স্থিতিশীল।
কে এই আততায়ী?
সাইফকে আক্রমণ করার পর ওই আততায়ী পালায়। পুলিশ এখনো তাকে ধরতে পারেনি। তাকে ধরার জন্য পুলিশের ১৫টি টিম গঠন করা হয়েছে। তারা মুম্বই ও তার বাইরে অভিযুক্তের খোঁজ করছে।
অভিযুক্তর পরিচয় পুলিশ জানায়নি। প্রথমে বলা হয়, সাইফের ১৩ তলার ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ক্যামেরায় কোনো হামলাকারীর ছবি ধরা পড়েনি। বিকেলের দিকে পুলিশ সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ছবি দেয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এক যুবক লোহার সিঁড়িতে বসে। ওই ব্যক্তিই সাইফের ঘরে ঢুকেছিল বলে পুলিশের ধারণা।
পুলিশ এর আগে জানিয়েছিল, সাইফের ফ্ল্যাট যে বহুতলে, তার পাশের বাড়ির মধ্যে যে পাঁচিল আছে, তা টপকে ওই যুবক সাইফের আবাসনে ঢোকে। তারপর সে বাড়ির পিছনের লোহার সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়। সেখানে সে ফায়ার এক্সিট দিয়ে সাইফের ফ্ল্যাটে ঢোকে।
মুম্বই পুলিশের ডিসিপি দীক্ষিত গেদাম বলেছেন, আগুন লাগলে যে সিঁড়ি ব্যবহার করে বাসিন্দাদের নিচে নামার কথা, সেটা ব্যবহার করেই হামলাকারী সাইফ আলি খানের বাড়িতে ঢোকে।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত চুরির জন্য ঠিক সময়ের অপেক্ষা করছিল।
পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে কিছু সংবাদমাধ্যম দাবি করেছে, ওই ব্যক্তিকে সাইফের বাড়ির এক পরিচারিকা দরজা খুলে দিয়েছিল। বাড়ির তিন পরিচারিকাকে পুলিশ জেরা করছে।
অভিনেতা রাজা মুরাদ সাইফ আলী খানের ওপর এ হামলার ঘটনায় হতবাক৷ তিনি জানিয়েছেন, সাইফের বাড়িতে ঢোকার ক্ষেত্রে তিন-চারটি নিরাপত্তা বলয় আছে। তার বাড়িতে কোনো ব্যক্তির ঢুকে পড়া একেবারেই সহজ বিষয় নয়। রেজিস্টারে সই করতে হয়, মোবাইল নম্বর দিতে হয়, সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। তার ওপর সাইফের মতো তারকার নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থাও থাকবে। অভিযুক্ত সব নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে ঢুকে পড়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রাজা মুরাদ৷
এরপরই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ওই ব্যক্তি সাইফ বা তার পরিবারের চেনা? সাইফের স্ত্রী ও বলিউড অভিনেত্রাী কারিনা কাপুর খান বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, মিডিয়া ও ফ্যানদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তারা যেন কোনো জল্পনার মধ্যে না যান, মুম্বই পুলিশ পুরো বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।
নীরজ উত্তামনি বলেছেন, সাইফ আলি খানকে একজন অজানা মানুষ ছুরি মেরেছে।
সাইফের প্রচারের সঙ্গে যুক্ত টিমের এক সদস্য বলেছেন, চুরির উদ্দেশ্য নিয়েই ওই ব্যক্তি সইফের বাড়িতে ঢুকে থাকতে পারে৷
এদিকে এক সূত্রকে উদ্ধৃত করে এনডিটিভি জানাচ্ছে, সাইফের বাড়িতে ঢুকে ওই ব্যক্তি এক কোটি টাকা দাবি করেছিল।
মুম্বই কি নিরাপদ, শুরু বিতর্ক
সাইফকে আক্রমণ করার ঘটনা সামনে আসার পর এই বিতর্ক শুরু হয়েছে, মুম্বই কি আদৌ নিরাপদ শহর? শিবসেনা (উদ্ধব ঠাকরে) নেত্রী ও রাজ্যসভা সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী জানিয়েছেন, ''তারকারাই যেখানে নিরাপদ নন, সেই শহরকে কি নিরাপদ বলা যায়?'' তিনি বলেছেন, ''অক্টোবরে বাবা সিদ্দিকিকে হত্যা করা হলো, তার আগে এপ্রিলে অভিনেতা সলমন খানের বাড়ির সামনে গুলি চলেছিল।''
তবে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস বলেছেন, ''দেশের মহানগরগুলির মধ্যে মুম্বই সবচেয়ে নিরাপদ। একটা ঘটনা ঘটেছে বলে তাকে নিরাপদ নয়, এসব যারা বলেন, তারা মুম্বইয়ের ভাবমূর্তির ক্ষতি করছেন। তবে সরকার এই ঘটনাগুলিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। মুম্বইকে আরো নিরাপদ করতে সরকার ব্যবস্থা নেবে।''
জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, এএনআই)