স্বেচ্ছামৃত্যুর অনুমতি না দেয়ায় ফ্রান্সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এক ব্যক্তি শনিবার রাত থেকে তার মৃত্যুদৃশ্য ফেসবুকে লাইভ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন৷ তবে তার সেই পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ৷
বিজ্ঞাপন
অ্যালা কক নামের ঐ ব্যক্তি জটিল এক শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন৷ যার কোনো চিকিৎসা নেই৷ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে শান্তিতে মারা যেতে চান তিনি৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাক্রোঁর কাছে সেই অনুমতি চেয়ে আবেদন জানান কক৷ কিন্তু ফিরতি চিঠিতে মাক্রোঁ জানিয়েছেন, ফরাসী আইন অনুযায়ী কাউকে এই অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই৷ ফেসবুক পেজে সেই চিঠি তুলে দিয়েছেন কক৷ চিঠিতে মাক্রোঁ তাকে লিখেছেন, ‘‘যেহেতু আমি আইনের উর্দ্ধে নই, সেহেতু আপনার অনুরোধটি রাখতে পারছি না৷’’
এই চিঠি পাওয়ার পর শুক্রবার রাত থেকে খাদ্য, পানীয় ও ঔষধ সেবন বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ৫৭ বছর বয়সি কক৷ তার ধারণা, এতে এক সপ্তাহেরও কম সময় বাঁচবেন তিনি৷ আর শনিবার থেকে নিজের সেই মৃত্যু দৃশ্য ‘ফেসবুকে লাইভস্ট্রিম’ করবেন৷ এর মধ্য দিয়ে শুধু নিজের না, তার মতো পরিস্থিতিতে থাকা সবারই সেচ্ছামৃত্যুর ইচ্ছাপূরণ কেন জরুরি সেটিও তিনি তুলে ধরতে চান৷ তিনি যে কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তা সবাই যাতে উপলব্ধি করতে পারেন এবং ভবিষ্যতে এই আইন পরিবর্তন হয় সেটি তার উদ্দেশ্য৷
পরিকল্পনা অনুযায়ী কক ফেসবুকে লাইভ শুরুও করেছিলেন৷ কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তাকে ব্লক করে দেয়া হয়৷
এর আগে শনিবারই বার্তা সংস্থাকে এএফপিকে ফেসবুকের একজন মুখপাত্র বলেছেন, জটিল এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য অ্যালা কক যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা আছে৷ কিন্তু অ্যাকাউন্ট থেকে যাতে লাইভ ব্রডকাস্ট না করা যায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷
এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ধরনের পরিস্থিতিতে যারা রয়েছেন, তাদের (স্বেচ্ছামৃত্যুর) অধিকারের জন্য ককের প্রতিশ্রুতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল মাক্রোঁ৷
রোগীদের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিতে স্বেচ্ছামৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্ক চলছে ফ্রান্সে৷ ভিনসেন্ট ল্যাম্বার্ট নামের এক ব্যক্তির মৃত্যুকে ঘিরে এ নিয়ে সবচেয়ে আলোচনা হয়েছে৷ ২০০৮ সালে তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে কোমা পরিস্থিতিতে চলে যান৷ গত বছরের জুলাইতে ডাক্তররা লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার পর মারা যান তিনি৷
তাকে বাঁচিয়ে রাখা হবে কিনা এ নিয়ে পরিবার থেকে শুরু করে গোটা দেশই বিভক্ত হয়ে পড়ে৷ ল্যাম্বার্টের বাবা-মা চেয়েছিলেন তিনি বেঁচে থাকুন৷ অন্যদিকে স্ত্রী এবং ভ্রাতুষ্পুত্ররা ছিলেন মৃত্যুবরণের সুযোগ দেয়ার পক্ষে৷ লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়ার পর বিষয়টি আদালতেও গড়িয়েছে৷ তবে আইন অনুযায়ী যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়ায় এবং তদন্তকারীদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা থেকে খালাস পান চিকিৎসকরা৷
এফএস/এসিবি (এএফপি)
কিশোরদের আত্মহনন ঠেকানোর সাত দাওয়াই
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বিশ্বে বছরে আট লাখ মানুষ বেছে নেয় স্বেচ্ছামৃত্যু৷ আর এই প্রবণতা বাড়ছে কিশোরদের মধ্যেও৷ তাই কৈশোরে আত্মহত্যা ঠেকানোর সাত উপায় দিলেন মনোরোগের অধ্যাপক ক্রিস্টিন হ্যাডফিল্ড৷
ছবি: Imago/Aurora Photos
মৃত্যু নিয়ে আলাপ
‘‘আমি তোমার ঝামেলা হয়ে থাকতে চাই না’’ বা ‘‘আমি আত্মহত্যা করবো’’--মজার ছলেও যদি কোনো কিশোর এসব কথা বলে, সেটা গুরুত্ব দিয়ে নিতে হবে৷ তাঁর ওপর কৌশলে দৃষ্টি রাখতে হবে৷ অনেক সময় মুখে না বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এমন কথা লিখতে পারে কিশোররা৷ সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে৷
ছবি: picture-alliance
বিধ্বংসী আচরণ
কিশোর বয়সে রাগ এক-আধটু হয়েই থাকে৷ কিন্তু রেগে গিয়ে নিজের ক্ষতি করতে চাওয়ার অর্থ হলো, আত্মহত্যা প্রবণতা দানা বাঁধতে শুরু করা৷ অভিভাবকদের সতর্ক হতে হবে৷ খেয়াল রাখতে হবে, অতিমাত্রায় ড্রাগ আর অ্যালকোহলে সেবনে কিশোরটি জড়িয়ে পড়ছে কি না৷
ছবি: Fotolia/Africa Studio
সমাজবিমুখতা
একা থাকা পরিণত বয়সেও কষ্টের৷ তাই কৈশোরে পরিবার ও বন্ধু থেকে আলাদা হয়ে থাকার মানসিকতাকে আত্মহত্যার কারণ বলছেন বিশ্লেষকরা৷ বন্ধুবান্ধব, ভাই-বোন নিয়ে যারা সামাজিক সম্পর্কে জড়িয়ে থাকে, মানসিক যন্ত্রণায় ভোগার সুযোগ তাঁদের কম৷ তাই বাবা-মাসহ পরিবার পরিজনদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা খুব জরুরি৷ কোনো কিশোর যাতে নিজেকে একা মনে না করে৷
ছবি: picture-alliance/empics/D. Cheskin
ফাঁদে পা অথবা একরাশ হতাশা
কৈশোরের উচ্ছ্বল দিনগুলোতে হতাশা কিংবা কোনো ভুলে পা দেয়া উস্কে দিতে পারে আত্মহত্যার চেষ্টাকে৷ তাই কিশোর মনের চিন্তাটা শুনতে হবে অভিভাবকদের৷ সন্তান কি বলতে চায় তা শুনতে হবে৷ কিছু বলতে গিয়ে আটকে যাচ্ছে, তাহলে অভয় দিয়ে, ভালোবেসে সেই কথাটা শুনে নিন৷
ছবি: picture-alliance/Godong
অভ্যাসে বদল
কিশোর বয়সে নিত্যদিনের জীবনে হুট করে পরিবর্তন দেখা গেলে তাকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই৷ মনে রাখতে হবে, এটা হতাশার লক্ষণ৷ বাবা-মা-কে বুঝে নিতে হবে, তাঁদের আদরের সন্তান কোনো একটা সমস্যায় ভুগছে৷ দিনে তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘুম মানে আত্মহত্যা প্রবণতা৷ আর ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ঘুমানো কিন্তু বিষণ্ণতা৷ সচেতন থাকুন৷
ছবি: picture-alliance
প্রিয় জিনিসের প্রতি অনীহা
কোনো কারণ ছাড়া প্রিয় ক্রিকেট ব্যাট ছুঁড়ে ফেললো, আব্দারের পর আব্দার করে কেনা হাতঘড়িটার দিকে উদাসীন- আপনার সন্তানের মধ্যে এমন আচরণ দেখলে সতর্ক হয়ে যান৷ মনে রাখবেন, নিজের ব্যবহারের জিনিস থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া মানে, তার মাথায় কিছু একটা চলছে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online/DP
অকারণ মেজাজ দেখানো
কৈশোরে ক্ষণে ক্ষণে মন পালটানো নতুন কিছু নয়৷ তারপরেও সতর্ক থাকতে হবে৷ পরিবারের মধ্যে আত্মহত্যা প্রবণতা আছে কিনা তা জানতে হবে৷ সবমিলিয়ে কৈশোরের উচ্ছ্বলতায় সন্তানও যেন উচ্ছ্বল থাকে, অভিভাবককে হতে হবে সবচেয়ে কাছের বন্ধু৷