সোমবার ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানান, দেশটির জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি জুন মাস থেকেই স্থানীয় শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যা মামলায় ভারতীয় সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছিল৷ এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘নিবিড়ভাবে' তথ্য বিনিময় করছে বলে মঙ্গলবার জানা যায়৷ এই তথ্যটি জানান, ক্যানাডার এক উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা৷
নাম না প্রকাশ করার শর্তে তিনি বলেন, ‘‘আমরা অ্যামেরিকার সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছি, যা গতকালের (সোমবারের) ঘোষণা থেকেও স্পষ্ট৷'' ঠিক কোন তথ্য-প্রমাণ ক্যানাডার হাতে আছে, তা ‘সঠিক সময়ে' সামনে আসবে বলেও জানান তিনি৷
জাস্টিন ট্রুডো বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলবে এই ঘটনা৷ তিনি ভারত সরকারের প্রতি ব বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে তদন্তে ক্যানাডাকে সাহায্য করার আহ্বানও জানান৷
ভারতের প্রতিক্রিয়া
সোমবারই ক্যানাডার সকল অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ক্যানাডার এক কূটনীতিককে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দেয় ভারত৷ গত কয়েক বছর ধরে ভারত-ক্যানাডা কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল৷ বর্তমান ঘটনাবলী সেই পরিস্থিতিকে আরো জটিল করছে৷
ট্রুডোর সাবেক পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক পরামর্শদাতা রোলা পারি বলেন, ‘‘আমার ধারণা, সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চালানো বেশ কঠিন হবে৷''
এদিকে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের তরফে বলা হয়, ‘‘আমরা আমাদের ক্যানাডার সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখছি৷ অভিযোগগুলি নিয়ে আমরা বেশ চিন্তিত৷ আমাদের মতে, একটি স্বচ্ছ ও সম্পূর্ণ তদন্ত হওয়া উচিত৷ ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে বলব আমরা৷''
‘শিখস অব অ্যামেরিকা' সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জেসি সিং বলেন, ‘‘শুধু এটুকুই বলা হচ্ছে যে, এই অভিযোগ ভিত্তিহীন নয়, কিন্তু এখনো কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি৷ আমার মতে, আমাদের অপেক্ষা করতে হবে, যদি কোনো প্রমাণ সামনে আসে সেই অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে৷''
এসবের মধ্যে বর্তমানে স্থগিত আছে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনা৷
হরদীপ সিং নিজ্জার ভারতে খালিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন বলে অভিযোগ করেছে ভারত৷ ২০২০ সালে তাকে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘সন্ত্রাসবাদী' আখ্যা দেয় ভারত৷
এসএস/এসিবি (রয়টার্স)
ভারত-ক্যানাডা সম্পর্কে উত্তেজনা বাড়ানো খালিস্তান আন্দোলনের আদ্যোপান্ত
ক্যানাডায় এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যায় ভারতের এজেন্টদের জড়িত থাকার ‘বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ’ রয়েছে বলে সোমবার মন্তব্য করেন ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো৷ এরপর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
ছবি: Darryl Dyck/The Canadian Press/ZUMA press/picture alliance
খালিস্তান আন্দোলন কী?
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার আলোচনার সময় শিখেরা তাদের জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করেছিলেন৷ এরপর থেকে পাঞ্জাব এলাকাটি এখন দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত৷ শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পাঞ্জাবে তাদের মাতৃভূমি ‘খালিস্তান’ (পবিত্র ভূমি) প্রতিষ্ঠা করতে চান৷ এই দাবিতে গত শতকের ৭০ ও ৮০র দশকে ভারতের পাঞ্জাবে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করেছিল৷
ছবি: Darryl Dyck/The Canadian Press/ZUMA press/picture alliance
শিখ ধর্ম
১৫ শতকের শেষদিকে পাঞ্জাবে শিখ ধর্ম প্রতিষ্ঠিত হয়৷ বিশ্বে শিখ ধর্মের অনুসারীর সংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি৷ ভারতের জনসংখ্যার মাত্র দুই শতাংশ শিখ৷
ছবি: Narinder Nanu/AFP/Getty Images
ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা
খালিস্তান আন্দোলনকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে ভারত৷ ১৯৮৪ সালে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শিখদের সবচেয়ে পবিত্র তীর্থস্থান স্বর্ণমন্দির থেকে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা জার্নাইল সিং ভিন্দ্রানওয়ালে ও তার সমর্থকদের সরাতে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন৷ এর কয়েকমাস পর নিজ নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে নিহত হন ইন্দিরা গান্ধী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান হামলা
১৯৮৫ সালে ক্যানাডা থেকে ভারতে রওয়ানা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমানে বোমা হামলার জন্য শিখ জঙ্গিদের দায়ী করা হয়৷ বিমানের ৩২৯ আরোহীর সবাই নিহত হয়েছিলেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Durand
সামরিক অভিযান
১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে সামরিক অভিযান চালিয়ে পাঞ্জাব থেকে শিখ জঙ্গিদের সরিয়ে দেয় ভারত৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/Sondeep
সমর্থন কেমন?
বর্তমানে ভারতে খালিস্তান আন্দোলনের প্রতি সামান্য সমর্থনই দেখা যায়৷ তবে পাঞ্জাবের পরে সবচেয়ে বেশি শিখের আবাস ক্যানাডা, এবং যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রে এই আন্দোলনের পক্ষে এখনও কিছুটা সমর্থন দেখা যায়৷
ছবি: AP
ভারত কেন এখন আবার চিন্তিত?
এপ্রিলে ভারত অমৃতপাল সিং নামে এক শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীকে গ্রেপ্তার করে, যিনি নতুন করে খালিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি তুলেছিলেন বলে অভিযোগ৷ এছাড়া ক্যানাডায় এক প্যারেডে ইন্দিরা গান্ধী হত্যার বিষয়টি তুলে ধরা হয়৷ এটি হতে দেওয়ায় সেই সময় ক্যানাডার সমালোচনা করেছিল ভারত৷ এদিকে, ক্যানাডা, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় দূতাবাসের সামনে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়মিত বিক্ষোভের ঘটনায়ও চিন্তিত ভারত৷
ছবি: Narinder Nanu/AFP via Getty Images
ভারত-ক্যানাডা সম্পর্কে প্রভাব
ক্যানাডায় নিযুক্ত ভারতের কূটনীতিকেরা ‘শিখ সন্ত্রাসবাদ’ নিয়ন্ত্রণে অটোয়ার ব্যর্থতার কথা বেশ কয়েকবার বলেছেন৷ এ মাসে জিটোয়েন্টি সম্মেলনের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকের সময় ক্যানাডায় শিখদের বিক্ষোভ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ এরপর ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা স্থগিত করে ক্যানাডা৷