বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর৷ বঙ্গোপসাগরের কূল ঘেঁষে রয়েছে বিস্তীর্ণ উপকূলীয় অঞ্চল৷ এই বিস্তীর্ণ উপকূল জুড়েই রয়েছে বাদাবন, কাদাচর ও বালুচর৷
বিজ্ঞাপন
আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলকে তিনভাগে ভাগ করা যায় – দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল৷ পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে পড়েছে সুন্দরবন, পূর্বে কক্সবাজার, আর দক্ষিণে আছে নিঝুম দ্বীপ৷ শীতকালে, বিশেষত অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত আমাদের উপকূলে হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির আনাগোনা থাকে৷
উপকূলের উর্বর কাদাচরের প্রাণীরাই এদের মূল আকর্ষণ এবং প্রধানতম খাবার৷ জোয়ার-ভাটার নিয়ত আবর্তনে কাদাচর ডুবে আবার ভাসে৷ জোয়ারে সমস্ত কাদাচর পানিতে ডুবে গেলে জেগে থাকা বালুচর, ঘাস ও বনে এরা আশ্রয় ও বিশ্রাম নেয়৷ ভাটায় যখন পানি নেমে যায় আর কাদাচর উন্মুক্ত হয়ে পড়ে, তখন এরা খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷
পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার সংগ্রহের বিষয়টি এদের জীবন সংগ্রামের অংশ এবং বেঁচে থাকার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ৷ হাজার মাইল উড়াল দিয়ে পরিযায়ী পাখিরা বাংলাদেশের উপকূলে আসে, তারপর আবার প্রজনন ক্ষেত্রে ফিরে যায়৷ আর এই উড়ালের শক্তি জোগায় শরীরের চর্বি৷ তাই উড়ালের আগে এদের পর্যাপ্ত পরিমাণ চর্বি জমাতে হয়৷
বাংলাদেশে কেমন আছে পাখিরা
‘চন্দ্র সূর্য গ্রহ তারা, কোথায় উজল এমন ধারা...তার পাখির ডাকে ঘুমিয়ে উঠি, পাখির ডাকে জেগে৷’ দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কালজয়ী এ গানের মতোই বাংলাদেশের গ্রাম-বাংলা পাখির কলকাকলিতে মুখর ছিল একসময়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশের পাখি
উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, বাংলাদেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ৬৫০টি৷ এর মধ্যে ৩০টি বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে বিলুপ্ত৷ অবশিষ্ট ৬২০টি প্রজাতির মধ্যে ৪৭৭ প্রজাতির পাখি বাংলাদেশে নিয়মিত দেখা যায়, বাকি ১৪৩ প্রজাতি অনিয়মিত দেখা যায়৷ নিয়মিত ৪৭৭ প্রজাতির মধ্যে ৩০১টি বাংলাদেশের ‘আবাসিক’ এবং ১৭৬ প্রজাতি ‘পরিযায়ী’ পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি
বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েল৷ দেশের সব জায়গাতেই পাখিটি দেখা যায়৷ গাছের প্রাকৃতিক খোঁড়লে কিংবা ঝোঁপঝাড়ে এরা বাসা বাঁধে৷ ছোট এ পাখিটির ইংরেজি নাম ওরিয়েন্টাল ম্যাগপাই রবিন আর বৈজ্ঞানিক নাম ‘কপসিকাস সলারিস’৷
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman
বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখি
তীব্র শীত ও খাদ্যাভাব থেকে বেঁচে থাকার জন্য শীত মৌসুমে আমাদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পরিযায়ী পাখিরা সাময়িকভাবে আবাস গড়ে৷ বাংলাদেশে সাধারণত নভেম্বর মাসে পরিযায়ী পাখিরা আসতে শুরু করে এবং এপ্রিল মাস পর্যন্ত থাকে৷ বাংলাদেশে পরিযায়ী পাখির সবচেয়ে বড় কয়েকটি আবাস হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক, মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিল ও হাকালুকি হাওর, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, ফেনীর মুহুরি সেচ প্রকল্প ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
লোকালয়ের পাখি
বাংলাদেশের লোকালয়ের আশপাশে কিছু পাখি সচরাচর দেখা যায়৷ দোয়েল, শালিক, কাক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ বাংলাদেশের সব জায়গাতেই এসব পাখি প্রচুর দেখা যায় এখনো৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বনের পাখি
বাংলাদেশের বনাঞ্চলে বেশ কিছু পাখি দেখা যায়, যেগুলো সাধারণত লোকালয়ে দেখা যায় না৷ এ ধরনের পাখির মধ্যে ধনেশ, পাহাড়ি ময়না, মদনা টিয়া, লালবুক টিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য৷ বাংলাদেশের জাতীয় উদ্যানগুলোতে এসব পাখির দেখা মেলে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
উপকূলীয় পাখি
বাংলাদেশের উপকূল ও চরাঞ্চলে নানা রকম পাখি দেখা যায়৷ এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গাঙচষা, বিভিন্ন প্রজাতির গাঙচিল, পানচিল, বাটান, গুলিন্দা উল্লেখযোগ্য৷ উপকূলীয় পাখি বিভিন্ন আবাসস্থলের মধ্যে নোয়াখালীর হাতিয়ায় দমারচর, কক্সবাজারের সোনাদিয়া দ্বীপ, পটুয়াখালীর সোনারচর ও ভোলার চরকুকরিমুকরি উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জলাশয়ের পাখি
বাংলাদেশের সব এলাকার জলাশয়গুলোতে প্রায় সারা বছরই দেখা যায় কিছু পাখি৷ খাবারের খোঁজে এসব পাখি জলাশয়ে ঘুরে বেড়ায়৷ নানারকম বক, পানকৌড়ি এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পোষা পাখি
বাড়িতে অনেকেই পাখি পোষেন৷ পোষা পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বিদেশি ঘুঘু, কবুতর, বাজরিগার, কাকাতুয়া, লাভ বার্ডসহ নানা রকমের পাখি৷ পোষা পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাজরিগার, কাকাতুয়া আর লাভ বার্ডের৷ নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেকে ময়না, টিয়া, দেশি ঘুঘু ইত্যাদিও খাঁচায় পুষে থাকেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পোষা পাখির বাজার
বাংলাদেশে পোষা পাখির সবচেয়ে বড় বাজার ঢাকার কাঁটাবনে৷ এখানকার শতাধিক দোকানে বিক্রি হয় নানা রকম খাঁচার পোষা পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বনের পাখি বিক্রি
বন্যপ্রাণি আইনে বনের পাখি বিক্রি ও পরিবহন নিষিদ্ধ হলেও খোদ ঢাকাতেই বিক্রি হয় বনের পাখি৷ অনেকে খাঁচায় পোষার জন্য কেনেন এসব পাখি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখি শিকার
বন্যপ্রাণী আইনের সঠিক বাস্তবায়ন না থাকার কারণে বাংলাদেশে পাখি শিকার হরহামেশাই হয়ে থাকে৷ গ্রামে গ্রামে পাখি শিকারের অন্যতম হাতিয়ার এয়ারগান৷ এছাড়া বিভিন্ন রকম ফাঁদ, বিষটোপ দিয়েও প্রচুর পাখি শিকার করা হয়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখি যখন খাবার
খাবার জন্য বনের পাখি শিকার নিষিদ্ধ৷ তবে বাংলাদেশে অনেকেই ফাঁদ পেতে পাখি ধরেন মাংস খাওয়ার জন্য৷ আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এসব পাখি বিক্রিও হয় বিভিন্ন জায়গায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
12 ছবি1 | 12
বছর জুড়ে বাংলাদেশে ২৩৪ প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে৷ এদের মধ্যে ২০৮ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি শীতকালে ও ১২ প্রজাতির গ্রীষ্মকালে দেখা মেলে৷ এছাড়া আরো ১৪ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি তাদের গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন আবাসস্থলে আসা- যাওয়ার পথে বাংলাদেশকে স্বল্প সময়ের জন্য ব্যবহার করে৷ পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বাংলাদেশের উপকূলে মূলত সৈকত পাখি (কাদাখোঁচা জাতীয় পাখি), সামুদ্রিক বা পেলাজিক পাখি (গাঙচিল জাতীয় পাখি) এবং হাঁসের দেখা মেলে৷
আমি ২০১৫ সাল থেকে নিঝুম দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বংলাদেশের উপকূলের পরিযায়ী পাখিদের উপর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছি৷ আমার গবেষণার বিষয়বস্তু পরিযায়ী পাখিদের পরিযায়ন, শীতকালীন আবাসস্থলের ব্যবহার, খাবার ও খাবারের প্রাচুর্য, বিপদ এবং সংখ্যা নিরূপণ৷ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূলের মধ্য থেকে নিঝুম দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পরিযায়ী পাখির জন্য গুরুত্বপূর্ণ৷
গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর পানি এই অঞ্চল হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে৷ এই তিন নদীর পানি সাথে করে নিয়ে আসে উর্বর পলি৷ তাই এলাকায় প্রায়শই নতুন চরের সন্ধান মেলে এবং পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হওয়ায় অসংখ্য জীববৈচিত্রের দেখা মেলে৷ পরিযায়ী পাখিরা উপকূলীয় বাস্তুসংস্থানের খাদ্যশৃঙ্খলসহ প্রাণ ও মাটির রাসায়নিক চক্রে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই এলাকার গুরুত্ব বিবেচনা করে বার্ডলাইফ ইন্টারন্যাশনাল ইতোমধ্যে এই এলাকাকে গুরুত্বপুর্ণ পাখি এবং জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে৷
বাংলাদেশের উপকূলে পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বিশ্বব্যাপী বিরল ও বিপন্ন কিছু প্রজাতির পাখিও দেখা যায়৷ বিশ্বব্যাপী অতি বিরল ও মহাবিপন্ন চামচঠুঁটো বাটান এদের মধ্যে অন্যতম৷ এই অতি বিরল পাখিটি আমাদের উপকূলের সোনাদিয়া, গাঙ্গুইরার চর, নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন দমার চর ও বিরবিরার চরে প্রায়শই দেখা যায়৷ পাখি বিজ্ঞানীদের ধারণা, পৃথিবীব্যাপী এই পাখির সংখ্যা মাত্র ২৫০ থেকে ৪৫৬৷ মহাবিপন্ন এই পাখির প্রজনন ক্ষেত্র রাশিয়ায় আর বংলাদেশ, মায়ানমার ও থাইল্যান্ড হচ্ছে এর প্রধান শীতকালীন আবাসস্থল৷
পরিযায়ী পাখির স্বর্গ টাঙ্গুয়ার হাওর
বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর৷ ভারতের মেঘালয়ের পাহাড়ের কোলে বিশাল এ জলাভূমি পাখিদের জন্য যেন এক স্বর্গ৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল
স্থানীয়রা টাঙ্গুয়ার হাওরকে বলেন ‘নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল’৷ সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুরের দশটি মৌজার ছোট-বড় ১২০টি বিল নিয়ে এ হাওরের বিস্তৃতি৷ দুই উপজেলার ৪৬টি গ্রামসহ পুরো টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকার আয়তন প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার, যার মধ্যে ২ লক্ষ ৮০ হাজার ২৩৬ হেক্টরই জলাভূমি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
টাঙ্গুয়ার হাওরের পাখি
বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রেজা খানের মতে, টাঙ্গুয়ার হাওরে পাখি আছে প্রায় ২৫০ প্রজাতির৷ এসব পাখির বড় একটি অংশই পরিযায়ী পাখি৷ টাঙ্গুয়ার হাওরের মতো এত বেশি পরিযায়ী পাখি দেশের অন্য কোথাও দেখা যায় না৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখির অভয়ারণ্য
টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রধান দুটি পাখির অভয়ারণ্য হলো লেউচ্ছামারা ও বেরবেড়িয়ার বিল৷ এছাড়াও যে বিলগুলোতে পাখিদের আনাগোনা বেশি থাকে, সেগুলো হলো রৌয়ার বিল, গজারিয়ার বিল, আলমের ডোয়ার, সাংসার বিল, কৈখালি বিল, ছুনখোলা বিল, জিততলার গোপ, ফইল্লার বিল, রূপাভুই বিল, সত্তার বিল, মইষের গাতা, হাতির গাতা, বালোয়ার ডোবা, আমছারের বিল, কাউয়ার বিল, আনসারের বিল, খাজুরী বিল, আইন্নার বিল, নলকাঠির বিল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাখি দেখা
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওরে পরিযায়ী পাখিরা দল বেঁধে টাঙ্গুয়ার হাওরে আসতে শুরু করে৷ এ হাওরে তাই পাখি দেখার সবচেয়ে ভালো সময় জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
তাঁবু বাস
শীত মৌসুমে পাখি দেখতে টাঙ্গুয়ার হাওরে ছুটে যান পাখিপ্রেমী মানুষেরা৷ নানান পাখির ছবি তুলতে জায়গাটিতে অনেকেই তাঁবুতেও বাস করেন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
লালঝুঁটি-ভুতিহাঁস
পাখিটি রাঙ্গামুড়ি নামেও পরিচিত৷ টাঙ্গুয়ার হাওরে আসা অতিথি পাখির বড় একটা অংশই হাঁস জাতীয় পাখি৷ এর মধ্যে দেখতে সুন্দর এই পাখিটির নাম লালঝুঁটি-ভুতিহাঁস৷ ইংরেজি নাম রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
দেশি মেটেহাঁস
এটি পাতিহাঁস নামেও পরিচিত৷ ইংরেজি নাম স্পট বিলড ডাক৷ আকারে অনেকটাই গৃহপালিত হাঁসের মতো৷ এটি অবশ্য পরিযায়ী নয়, বাংলাদেশের আবাসিক পাখি৷ তবে বাংলাদেশে সংকটাপন্ন বলে বিবেচিত এবং বন্যপ্রাণী আইনে সংরক্ষিত এই প্রজাতিটি এ হাওরেই বেশি দেখা যায়৷ পাখিটি সাধারণত স্ত্রী-পুরুষের জোড়ায় জোড়ায় দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
গিরিয়া হাঁস
পাখিটির ইংরেজি নাম গার্গানি৷ বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও ইউরোপ, আফ্রিকা, উত্তর অ্যামেরিকা, ওশেনিয়া ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা যায়৷ ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়া এদের প্রধান প্রজননস্থল৷ শীতকালে এসব অঞ্চল থেকে এরা ভারতীয় উপমহাদেশ, অস্ট্রেলেশিয়া ও আফ্রিকায় পরিযান করে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মরচে রং ভুতিহাঁস
হাঁস জাতীয় এ পাখিটির ইংরেজি নাম ফেরুজিনাস ডাক৷ এ পখিটিও অনেকটাই গৃহপালিত হাঁসের মতো৷ আকারে ৩২ থেকে ৩৮ সেন্টিমিটার হয়ে থাকে৷ পাখিটির মাথা, গলা, ঘাড়, বুক ও পিঠ ঘন তামাটে রঙের৷ লেজের নিচের অংশ সাদা৷ পুরুষের চোখ সাদা আর স্ত্রী পাখির চোখ কালচে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পিয়াং হাঁস
বাদামি রঙের এ হাঁসটিও শীতে প্রচুর দেখা যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে৷ ৩৯ থৈকে ৪৩ সেন্টিমিটার আকারের এ পাখিটি পুরুষের পিঠ কালো-বাদামি রঙের; পেট সাদা রঙের হয়৷ স্ত্রী পাখিটি দেখতে অনেকটা পুরুষ পাখিটির মতো৷ তবে এদের সারা দেহে বাদামি বর্ণের ছোপ ছোপ দেখা যায়৷ এদের ঠোঁট হলুদ সাথে কালো রঙের দাগ থাকে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
লেঞ্জা হাঁস
উত্তুরে লেঞ্জা হাঁস নামেও পরিচিত৷ এর ইংরেজি নাম নর্দান পিনটেইল৷ বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও পৃথিবীর বহু দেশে এদের দেখা যায়৷ ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর অ্যামেরিকার উত্তরাঞ্চলে এরা প্রজনন করে৷ প্রজাতিটি স্বভাবে পরিযায়ী এবং শীতকালে এর প্রজননস্থলের দক্ষিণে বিষুবীয় অঞ্চলের দিকে চলে আসে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাতারি হাঁস
পাতি তিলি হাঁস নামেও পরিচিত এ পাখিটির ইংরেজি নাম কমন তিল৷ পুরুষ ও স্ত্রী পাখির বর্ণে পার্থক্য রয়েছে৷ পাতি তিলিহাঁস দলবদ্ধভাবে বসবাস করে এবং অপ্রজননকালীন মৌসুমে বিশাল দলে বিচরণ করে৷ বড় সংরক্ষিত জলাশয়ে এদের সহজে দেখা যায়৷ উদ্ভিদ বীজ ও ছোট ছোট জলজ জীব এদের প্রধান খাদ্য৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পাতি কুট
ইউরেশীয় কুট নামেও পরিচিত এ পাখিটি শীত মৌসুমে প্রচুর দেখা যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে৷ প্রধানত এক ধরনের জলচর পাখি এরা৷ পাখিটির শরীর ঘন কালো, চোখ ও কপাল সাদা, পা সাদাটে৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
ধুপনি বক
টাঙ্গুয়ার হাওরসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন হাওর ও বিলে এদের দেখা যায়৷ ধূসর বক নামেও পরিচিত এ পাখিটির ইংরেজি নাম গ্রে হেরন৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বেগুনি বক
লালচে বক নামেও পরিচিত এ পাখিটির ইংরেজি নাম পার্পল হেরন৷ বেগুনি বক আফ্রিকা ছাড়াও, মধ্য এবং দক্ষিণ ইউরোপের পাশাপাশি দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় এই পাখি দেখতে পাওয়া যায়৷ ধূসর বকের মতো অনেকটা দেখতে হলেও বেগুনি বক আকারে কিছুটা ছোট৷ সাধারণত জলাশয়ের আশেপাশে এই পাখির বসবাস৷ মাছ, ব্যাঙ ও জলজ পোকা বেগুনি বকের প্রধান শিকার৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নেউ পিপি
জল কুকরা নামেও পরিচিত৷ পাখিটির ইংরেজি নাম ফেজান্ট টেইলড জ্যাকানা৷ একটি মেয়ে জল কুকরা এক সঙ্গে কয়েকটি ছেলে কুকরার সঙ্গে জোড়া বেঁধে পদ্মপাতায় ডিম পাড়ে৷ তারপর উড়ে চলে যায়৷ ডিমে তা দেয় ছেলে কুকরারা৷ পোকামাকড়ই এদের প্রধান খাদ্য৷ ৩১ সেন্টিমিটার দৈর্ঘের এ পাখি এই জলাশয়ের স্থায়ী বাসিন্দা৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
পানকৌড়ি
টাঙ্গুয়ার হাওরে শীত মৌসুমে দেখা যায় নানান প্রজাতির পানকৌড়ি৷ শীতের মধ্যেও এরা পানিতে ডুব দিয়ে মাছ শিকার করে৷ মাঝে মাঝে বিলের পাশে কিংবা ডালপালায় বসে রোদ পোহাতেও দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
বেগুনি কালেম
কালিম, কায়িম, কায়েম, সুন্দরী পাখি ইত্যাদি নানা নামেই পরিচিত পাখিটি৷ এর ইংরেজি নাম পার্পল সোয়াম্প হেন৷ পাখিটি বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেখা যায়৷ টাঙ্গুয়ার হাওরের শুকনো জলাশয়ের পাশে এদের দলে দেলে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
শিকারী পাখি
শীত মৌসুমে টাঙ্গুয়ার হাওরে দেখা যায় নানা রকম শিকারী পাখি৷ এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বড় চিত্রা ঈগল, সিন্ধু ঈগল, মাছমুরাল, শঙ্খচিল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
মেটে মাথা তিতি
টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমির আশপাশের শুকনো ঘাসের মধ্যে মেটে মাথা তিতি বেশি দেখা যায়৷ পাখিটির ইংরেজি নাম গ্রে-হেডেট ল্যাপউইং৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
জল মোরগ
পাখিটি পাতি-পান মুরগি নামেও পরচিতি৷ ইংরেজি নাম কমন মুরহেন৷ টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাশয়ের পাশের তৃণভূমিতে বেশি দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
কালো লেজ জৌরালি
টাঙ্গুয়ার হাওরে শীত মৌসুমে দেখা যায় কালো লেজ জৌরালির দল৷ পাখিটির ইংরেজি নাম ব্ল্যাক টেইলড গোডউইট৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
নীড়ে ফেরা
শীত মৌসুমে খুব ভালো সূর্যাস্ত দেখা যায় টাঙ্গুয়ার হাওরে৷ সূর্যাস্তের সময় পাখিদের দলে দলে নীড়ে ফিরে যাবার দৃশ্যও খুব ভালোভাবে দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M. Rahman
23 ছবি1 | 23
বিশ্বব্যাপী বিপন্ন বড় নট ও নর্ডম্যানের সবুজ পা পাখিও আমাদের উপকূলে পাওয়া যায়৷ বড় নট উত্তর-পূর্ব সাইবেরিয়া থেকে আমাদের দেশে আসে৷ এদের মূল শীতকালীন আবাস অস্ট্রেলিয়া হলেও বাংলাদেশের সোনাদিয়া ও নিঝুম দ্বীপে এদের দেখতে পাওয়া যায়৷ আর নর্ডম্যানের সবুজ পা পুর্ব রাশিয়া থেকে বাংলাদেশে আসে৷ এদের খুঁজে পাওয়া ও চিহ্নিত করা বেশ কঠিন কাজ৷ বিশ্বব্যাপী এদের শীতকালীন আবাস সম্পর্কেও পরিষ্কার ধারণা নেই৷ তবে পাতি সবুজ পা থেকে আলাদা করা কঠিন বলে এদের উপস্থিতি ও সংখ্যা সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে কম রিপোর্ট করা হয়েছে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা৷
সংকটাপন্ন দেশি গাংচষা বেশ বড় ঝাঁকে দেখতে পাওয়া যায় নিঝুম দ্বীপ ও তৎসংলগ্ন এলাকায়৷ শুধুমাত্র বাংলাদেশের উপকূলে একসময় দেশি গাংচষার পাঁচ হাজারের ঝাঁক দেখতে পাওয়া গেলেও সম্প্রতি হাজারের অধিক ঝাঁক দেখা যায় না৷ দেশি গাংচষার টিকে থাকার জন্য বাংলাদেশের উপকূল খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ এরা মূলত ভারতে প্রজনন করে এবং বাংলাদেশের উপকূলে শীত কাটায়৷ সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জে এদের প্রজনন ক্ষেত্রের সন্ধান মিলেছে৷
পৃথিবীব্যাপী প্রায় সংকটাপন্ন পাখি কালো লেজ জৌরালি, দাগি লেজ জৌরালি, এশীয় ডাউইচার, ইউরেশীয় গুলিন্দা, গুলিন্দা বাটান, লাল নট, লাল ঘাড় চা পাখি , রাঙ্গা মানিকজোড়, কালো মাথা কাস্তেচরা, ফুলুরি হাঁসও ভালো সংখ্যায় দেখতে পাওয়া যায়৷ এদের মধ্যে দাগি লেজ জৌরালির পরিযায়ন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য৷
দাগি লেজ জৌরালি আলাস্কা থেকে নিউজিল্যান্ড প্রায় ১১০০০ কিলোমিটার পথ বিরামহীনভাবে পরিযায়ন করে৷ এ পরিযায়নে তারা ৮ দিন সময় নেয় এবং এই সময়ে তারা কোনো খাবার গ্রহণ করে না৷ পাখি বিজ্ঞানীদের কাছে এই পরিযায়ন খুবই বিস্ময়কর ও কৌতূহলোদ্দীপক, কেননা, মানুষের তৈরি সবচেয়ে চমৎকার এয়ারক্রাফট ও বিরতিহীনভাবে ৮২ ঘণ্টার বেশি চলতে পারে না৷ আলাস্কা থেকে সুনির্দিষ্টভাবে কোন পথ ব্যবহার করে দাগি লেজ জৌরালি বাংলাদেশে আসে তা আমাদের অজানা হলেও নিঝুম দ্বীপ সংলগ্ন এলাকায় দাগি লেজ জৌরালির দেখা মিলে৷
বিপন্ন পরিযায়ী পাখি প্রজাতি ছাড়াও বংলাদেশে প্রচুর পরিযায়ী পাখি আসে৷ বাংলাদেশে সর্বমোট ২৩ প্রজাতির পরিযায়ী হাঁস, ৪৬ প্রজাতির পরিযায়ী সৈকত পাখি ও ১৩ প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি দেখা যায়৷ এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য চখাচখি, ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস, পিয়াং হাঁস, দাগি রাজহাঁস, ধূলি জিরিয়া, প্রশান্ত সোনাজিরিয়া, নাটা গুলিন্দা, পাকড়া উল্টোঠুঁটি, পালাসের গাংচিল, বাদামি মাথা গাংচিল বেশ ভালো সংখ্যায় দেখা যায়৷ এদের মধ্যে দাগি রাজহাঁস হিমালয় পর্বত অতিক্রম করে বাংলাদেশ ও তৎসলগ্ন এলাকায় শীতের আবাস গড়ে৷ খুব কম প্রজাতির পাখিই হিমালয়ের এত উচ্চতা (প্রায় ৩৩৩৮২ ফুট) অতিক্রম করে পরিযায়ন করতে পারে৷
পৃথিবীব্যাপী সমস্ত পরিযায়ী পাখি সর্বমোট ৮ টি উড়াল পথ ধরে যাতায়াত করে থাকে৷ বাংলাদেশ পূর্ব এশীয়-অষ্ট্রালেশীয় ও মধ্য এশীয় এই দুইটি উড়াল পথের মধ্যে পড়েছে এবং এই দুইটি উড়াল পথের পাখিরাই বাংলাদেশে আসে৷ বিবর্তনের ধারায় লক্ষ বছরে পরিযায়ী পাখিরা দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণের নানান কৌশল রপ্ত করেছে৷ যেমন দাগী লেজ জৌরালির মতন কেউ এক্সপ্রেস সার্ভিসের মতো বিরামহীনভাবে ১১০০০ কিলোমিটার উড়ে যায়, দাগি রাজহাঁসের মতন কেউ হিমালয় অতিক্রম করে, চামচ ঠুঁটো বাটানের মতো কেউ মাঝপথে বিশ্রাম নেয় আবার কেউ লোকাল সার্ভিসের মতো ছোট ছোট দূরত্ব অতিক্রম করে তার প্রজনন ক্ষেত্র থেকে শীতকালীন ক্ষেত্রে পৌঁছায়৷ পরিযায়ী পাখিরা যেহেতু দীর্ঘ পথ পরিভ্রমণ করে, সেহেতু এদের নানান বাধা বিপত্তির সন্মুখীন হতে হয়৷ উড়াল পথের সম্মিলিত আবাসস্থলের পরিবর্তন ও ধ্বংস, জলবায়ুর পরিবর্তন ও শিকারের কারণে পরিযায়ী পাখিরা অধিকাংশই হুমকির সন্মুখীন৷ লক্ষ বছর ধরে এরা পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকলেও আজ বেশিরভাগ পরিযায়ী পাখিই অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে৷
পরিযায়ী পাখিদের সংরক্ষণে পৃথিবীব্যাপী সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন, কেননা, এরা টিকে থাকার স্বার্থে বছরজুড়ে পৃথিবী পরিভ্রমণ করে ও বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে নানান দেশে বসবাস করে৷ তাই পরিযায়ী পাখিদের উড়াল পথের সমস্ত জায়গায় নিরাপত্তা ও সংরক্ষণ জরুরি৷ দীর্ঘ পরিযায়ন শেষে বাংলাদেশের উপকূলে পৌঁছানো হাজার হাজার পরিযায়ী পাখির খাবার, বিশ্রাম ও নিরাপত্তা অতি গুরুত্বপুর্ণ৷ প্রজনন ক্ষেত্রে তীব্র শীত ও খাবার সংকট এড়াতে এরা আমাদের উপকূলে আসে৷
কিন্তু এখানে এসে এরা নানান উপদ্রবের মুখোমুখি হয়৷ তাই আমাদের উপকূলে যে সমস্ত এলাকায় পরিযায়ী পাখি শীতকালীন সময়ে আবাস করে, সে সমস্ত এলাকায় উপকূলের মানুষের উপদ্রব কমানো ও গতিবিধি সংরক্ষিত করা প্রয়োজন৷ এছাড়া পরিযায়ী পাখিশিকারীদের রোধে সম্যক সচেতনতা ও আইনি ব্যবস্থা জোরদার করা প্রয়োজন৷ পরিযায়ী পাখিরা হারিয়ে গেলে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে৷ এর ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষেরা প্রকৃতির কাছ থেকে প্রাপ্ত অনেক সেবা থেকে বঞ্চিত হবে৷
পরিযায়ী পাখিরা আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশ ও প্রতিবেশে যে ভূমিকা রাখছে, তার সুনির্দিষ্ট গবেষণা প্রয়োজন৷ উপকূলীয় বাস্তুসংস্থানে পরিযায়ী পাখির সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রভাব ও ফলাফল সম্পর্কে আমাদের সুনির্দিষ্ট গবেষণার অভাব রয়েছে৷ এদের সংরক্ষণে তাই আমাদের সচেতন হতে হবে ও সকলের এগিয়ে আসতে হবে৷
দিলীপ দাশ বিসর্গ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক
নোয়াখালী জেলার ছোট্ট একটি দ্বীপ নিঝুম দ্বীপ৷ সেখানকার জাতীয় উদ্যানে আছে অসংখ্য চিত্রা হরিণ৷ দেশের অন্য কোনো বনে এত বেশি চিত্রা হরিণ দেখা যায় না৷ নানান পাখিও দেখা যায় এই দ্বীপে৷ ছবিঘরে দেখে নিন অপূর্ব কিছু দৃশ্য৷
ছবি: DW/M. Mamun
চর ওসমান
হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণাংশে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ছোট্ট দ্বীপ এটি৷ শোনা যায়, ওসমান নামে এক ব্যক্তি তাঁর মহিষের বাথান নিয়ে এ দ্বীপে বসতি গড়ার পর এটি পরিচিতি পায় ‘চর ওসমান’ নামে৷ পরে নাম হয় নিঝুম দ্বীপ৷ বল্লার চর, কামলার চর, চর ওসমান ও চর মুরি নামের প্রধান চারটি দ্বীপ ও ছোট ছোট কয়েকটি চর নিয়েই এ দ্বীপ৷ উত্তর-দক্ষিণে এ দ্বীপ প্রায় নয় কিলোমিটার লম্বা আর পূর্ব পশ্চিমে প্রায় সাত কিলোমিটার চওড়া৷
ছবি: DW/M. Mamun
শ্বাসমূলীয় বন
নিঝুম দ্বীপে আছে বড়সড় একটি শ্বাসমূলীয় বন৷ ৭০ এর দশকে বন বিভাগ এ দ্বীপে কেওড়া, ওড়া জাতীয় শ্বাসমূলীয় গাছ রোপণ করে৷ সেই গাছপালাই এখন বিশাল মহীরূহে পরিণত হয়েছে৷ ২০০১ সালে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের মর্যাদা পায়৷
ছবি: DW/M. Mamun
চিত্রা হরিণ
১৯৭৪ সালে এ বনে সর্বপ্রথম সুন্দরবন থেকে এনে চার জোড়া চিত্রা হরিণ ছেড়ে দেয়া হয়৷ ওই চারটি হরিণের বংশ বিস্তারের ফলে এ বনে হরিণের সংখ্যা এখন বিশ হাজারেরও বেশি৷ নিঝুম দ্বীপের প্রধান পর্যটন আকর্ষণ চিত্রা হরিণ৷
ছবি: DW/M. Mamun
প্রধান প্রাণী
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের প্রধান প্রাণী চিত্রা হরিণ৷ এ ছাড়াও এ বনে আরো আছে উদ্বিড়াল, মেছো বাঘ, খেকশিয়াল ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
খুব কাছ থেকে হরিণ দেখা
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানে গাছের আড়ালে দুটি চিত্রা হরিণ৷ দেখতে সুন্দরবনের মতো হলেও তেমন কোনো হিংস্র বন্যপ্রাণী নেই এ বনে৷ তাই নিঝুম দ্বীপে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা খুব কাছাকাছি থেকেই চিত্রা হরিণের দল দেখতে পারেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
হরিণের দল
নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের পশ্চিম পাশে বিশাল বিশাল খোলা মাঠে পড়ন্ত বিকেলে হরিণের দল৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিঝুম দ্বীপে সূর্যাস্ত
মনোরম এ দৃশ্য দেখতে হলে যেতে হবে নিঝুম দ্বীপের নামা বাজারের পশ্চিম পাশে৷
ছবি: DW/M. Mamun
নদী ভাঙন
নদী ভাঙনের কারণে বিলীন হচ্ছে নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের উত্তরাংশের জঙ্গল৷ গত তিন বছরে এ জঙ্গলের বড় একটা অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চৌধুরী খাল
নিঝুম দ্বীপের পশ্চিম-দক্ষিণ প্রান্তে চৌধুরীর খাল এলাকা৷ নৌকায় চড়ে নামা বাজারের পাশের খাল ধরে যেতে হবে জায়গাটিতে৷ এ খালটি একেবারে জঙ্গলের গহীনে চলে গেছে৷ নৌকায় কিংবা বনের পাশে কোথাও নিজেদের আড়াল করে চুপচাপ বসে থাকলে প্রচুর হরিণ দেখা সম্ভব৷
ছবি: DW/M. Mamun
অপূর্ব জৌড়ালি
নিঝুম দ্বীপে নদীর চরে এক ঝাঁক জৌড়ালি৷ এ দ্বীপে দেখতে পাওয়া নানান পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নিশি বক, কানিবক, গোবক, পানকৌড়ি, ধূসর বক, কাদাখোঁচা, বালিহাঁস, লালপা, নানান জাতের মাছরাঙ্গাসহ বিভিন্ন রকম পরিযায়ী পাখি ইত্যাদি৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিপন্ন দেশি গাঙচষা
নিঝুম দ্বীপের পূর্ব পাশে জেগে ওঠা দমার চরের আকাশে এক ঝাঁক ইন্ডিয়ান স্কিমার বা দেশী গাঙচষা৷ জলচর নানান পাখির নিরাপদ আবাসস্থল এই চর৷ তবে দমার চরের প্রধান আকর্ষণ এই দেশী গাঙচষা৷ এই চরই মহা বিপন্ন এই পাখিটির বাংলাদেশে অন্যতম আবাসস্থল৷
ছবি: DW/M. Mamun
কালো মাথা কাস্তেচরা
নিঝুম দ্বীপের চরে ব্ল্যাক হেডেড আইবিস, বাংলায় পাখিটির নাম ‘কালো মাথা কাস্তেচরা’৷ বিরল এই পাখিটিও নিঝুম দ্বীপের চরে দেখা যায় শীতকালে৷
ছবি: DW/M. Mamun
সরকারি নজরদারির অভাব
জনপ্রিয় এই পর্যটন কেন্দ্রটিতে সরকারি নজরদারি নেই বললেই চলে৷