নানা কারণেই ওল্ড ট্রাফোর্ড থেকে ওয়েন রুনির বিদায় হয়েছে একরকম নিরব করতালির মধ্য দিয়ে৷ কিন্তু তিনি যে ‘লাল শয়তান' শিবিরের একজন বীর যোদ্ধা এ কথা কি কেউ ভুলতে পারবে?
বিজ্ঞাপন
১৮ বছর বয়সের সেই উদ্যমী তরুণের কথা মনে আছে? ক্ষিপ্র, অপ্রতিরোধ্য৷ বল নিয়ে ছোটাই যেন তাঁর নেশা৷ এভার্টনের নীল পোশাক ছাড়িয়ে থিয়েটার অফ ড্রিমসে রক্তিম অভিবাদনে তাঁকে সিক্ত করলেন স্যার অ্যালেক্স৷ ঐ অভিবাদনের কি জবাবটাই না দিলেন সেই তরুণ৷ ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে ফেনাবাচের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে অভিষেক৷ প্রথমার্ধেই নিস্টেলরয়ের বাড়ানো বলটিকে বাঁ পায়ের জোড়ালো শটে জালে জড়িয়ে জানিয়ে দিলেন, ইতিহাস রচনা করতে এসেছেন তিনি৷ এর কিছু পর রায়ান গিগসের কাছ থেকে বল পেয়ে ডান পায়ে অসাধারণ শট৷ কোনো সুযোগ নেই গোলরক্ষকের৷ দ্বিতীয়ার্ধে স্পটকিক থেকে তৃতীয় গোল৷ তিনটি শটই ডি-বক্সের বাইরে থেকে৷ এ যেন এক স্বপ্নময় অভিষেক৷
এরপরের অংশটুকু শুধু এক ছুটতে থাকা অজেয় ইংলিশ সিংহের গল্প৷ লাল জার্সি গায়ে নামের পাশে লিখেছেন পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ, একটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, একটি ইউরোপা লিগ, একটি এফএ কাপ, তিনটি লিগ কাপ ও একটি ফিফা ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপের শিরোপা৷ জুনিয়র হিসেবেই ইংলিশ ফুটবলের সেরার মুকুট পড়েছেন দু'বার, সিনিয়র লেভেলে একবার ২০১০ সালে৷ এছাড়া ফুটবল লেখকদের ভোটেও সেরা নির্বাচিত হয়েছেন একবার৷ গেল মৌসুমেই পেরিয়েছেন ম্যানইউর পক্ষে স্যার ববি চার্লটনের ২৪৯ গোলের রেকর্ড৷ ক্লাবের পক্ষে তাঁর গোল সংখ্যা সর্বোচ্চ ২৫৩টি৷ ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘শহুরে শত্রু' ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে শূন্যে ভেসে করা তাঁর সেই বাইসাইকেল কিক গোলটি অবিস্মরণীয় করে রাখবে তাঁকে৷ কোচ ফার্গুসন তো বলেই ফেলেছেন যে তাঁর সাড়ে ছাব্বিশ বছরের ক্যারয়ারে দেখা সেরা গোল এটি৷
গেল কয়েক মৌসুমে কিছুটা ব্রাত্য হয়ে উঠেছিলেন ক্লাব ও সমর্থকদের কাছে৷ তিন তিনবার ক্লাব ছেড়ে দেবারও আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল৷ যেমন, ২০১০ সালে হঠাৎ করেই ঘোষণা দিলেন যে তাঁকে নিয়ে ক্লাবের ভবিষ্যৎ চিন্তাভাবনা সম্পর্কে ‘অনিশ্চিত' তিনি৷ গুজব রটল যে সেই ‘শহুরে শত্রু'র ঘরেই ঠাঁই করে নিচ্ছেন তিনি৷ দু'দিন পরই আবার পুরো ইউটার্ন নিয়ে ওল্ড ট্রাফোর্ডেই নতুন চুক্তি করলেন৷ সাপ্তাহিক বেতন বাড়ল দ্বিগুণ৷ প্রশ্ন উঠল, বেতন বাড়াতেই কি তাঁর এই উল্লম্ফন? মনক্ষু্ণ্ণ হলেও মেনে নিলেন সমর্থকরা৷ কিন্তু কিসের কি? আবারো এমন কান্ড করলেন ইংলিশ তারকা৷
২০১৩ সালে স্যার অ্যালেক্সের অবসর গ্রহণের পর নতুন কোচ ময়েসের সঙ্গে ঝগড়া বাধল৷ এবার চেলসিতে চলে যাবার হুমকি৷ এবারও আরেক বাম্পার ডিল তাঁকে থামিয়ে রাখল৷ সমর্থকদের ভালোবাসাও অনেকটা কমতে থাকল৷ সঙ্গে যোগ হলো বাজে পারফরম্যান্স৷ গেল কয়েক মৌসুমে গোলের দেখা পাওয়াটাই যেন কঠিন হয়ে পড়ছিল তাঁর জন্য৷
তবে এত কিছুর পরও ওল্ড ট্রাফোর্ডের সঙ্গে তাঁর ১৩ বছরের সম্পর্ক যেন এক অটুট বন্ধন৷ তাই তাঁর বিদায়ে আবেগঘন এক ভিডিও বানানো হয়েছে ক্লাবের পক্ষ থেকে৷
আর সতীর্থরাও নিরব টুইটারে স্মরণ করছেন তাঁকে৷ জানাচ্ছেন অভিবাদন৷
‘‘ও আমার দেখা ইউনাইটেডের সেরা স্ট্রাইকার৷'' নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে এই টুইটটি করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড লিজেন্ড গ্যারি নেভিল৷
ওল্ড ট্রাফোর্ডের আরেক সেনসেশন অ্যান্ডার হেরেরা লিখেছেন, ‘‘একদিন আমি আমার নাতি-নাতনিদের কাছে গল্প করতে পারব যে, আমি তোমার সাথে খেলেছি৷ অনেক শুভকামনা এবং ধন্যবাদ৷''
ক্লাবে থেকে যাওয়া ২০০৮ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ দলের একমাত্র সদস্য মাইকেল ক্যারিক লিখেছেন, ‘‘প্রথম দিন থেকেই তিনি আমাকে মুগ্ধ করেছেন৷ অনন্যসাধারণ৷ চড়াই উৎড়াই ছিল৷ তবে কী অসাধারণ পথচলা! তাঁকে খুব মিস করব৷ শুভকামনা বন্ধু ও লিজেন্ড৷''
হয়ত ফিটনেস ও কলাকৌশলে মেসি-রোনালদোর কাঁতারে কখনোই দাঁড়াতে পারেননি৷ কিন্তু ফুটবল বিশ্ব জানে, ওল্ড ট্রাফোর্ড জানে, তিনি ক্ষণজন্মা৷ গুডিসন পার্কে যেই নীল জার্সি পড়েছিলেন ছোটবেলায়, যেই জার্সি খুলিয়ে রক্তিম অভিবাদন জানিয়েছিলেন ফার্গি, সেই লাল জার্সি খুলে ৩১ বছর বয়সে আবারো ছেলেবেলার গুডিসন পার্কেই ফিরেছেন এই ইংলিশ মায়েস্ত্রো৷
বিশ্বের শীর্ষ দশ ধনী ফুটবল ক্লাব
টাকা মানেই কি সাফল্য? সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়রাই তো সবচেয়ে বেশি টাকা কামান৷ কিন্তু তা সবসময় সত্য না-ও হতে পারে৷ ফুটবলের বড় বড় ধনী ক্লাবগুলো সবসময় কিন্তু সফল নয়৷ চলুন শীর্ষ দশ ধনী ক্লাবগুলোকে সফলতার মানদণ্ডে যাচাই করি৷
ছবি: picture-alliance/empics/M. Egerton
১০. টটেনহাম হটস্পার
আগামী মৌসুমে এক লাফে ৩২,০০০ থেকে ৬১,০০০ ধারণ ক্ষমতায় পৌঁছে যাচ্ছে হোয়াইট হার্ট লেনে ইংলিশ ক্লাবটির ঘরের স্টেডিয়ামটি৷ নির্মাণ কাজের জন্য লম্বা সময় ধরে স্টেডিয়ামটি বন্ধ থাকলেও অর্থ কিন্তু কম কামাই করছে না স্পাররা৷ ফোর্বস ম্যাগাজিনের হিসেবে ক্লাবটির দাম ৯৪৫ মিলিয়ন ইউরো বা ৮ হাজার কোটি টাকা৷ এ মৌসুমে পয়েন্ট টেবিলের দুই নম্বরে থেকে প্রিমিয়ার লিগ শেষ করেছে তারা, পৌঁছেছে ইউরোপা লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
৯. জুভেন্টাস
এবারো ইউরোপসেরা হওয়া হলো না জুভদের৷ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল মাদ্রিদের কাছে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হয়েছে তাদের৷ তবে টানা ছয়বারের মতো সিরি আ’তে সেরা হয়েই মৌসুম শেষ করেছে তারা৷ তবে একটু ভাটা পড়েছে তাদের আয়ে৷ গেলোবারের চেয়ে কমেছে ৩ ভাগ৷ ক্লাবের আর্থিক মূল্যমান ১.১২ বিলিয়ন ইউরো বা প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Monteforte
৮. লিভারপুল
লিগ টেবিলে চার নম্বরে থেকে কোনোমতে পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকিট পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী ইংলিশ ক্লাব লিভারপুল৷ এফএ কাপেও ছিটকে পড়েছে শুরুতেই৷ তারপরও ১.৩৩ বিলিয়ন ইউরোর (প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা) অলরেডরা রয়ে গেছে সবচেয়ে ধনী ফুটবল ক্লাবের তালিকার আট নম্বরে৷
ছবি: picture-alliance/empics/N. French
৭. চেলসি
দেদারসে টাকা ঢালছেন রাশিয়ান ধনকুবের রোমান আব্রামোভিচ৷ তাই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে এখন বড় বড় তারকাদের মেলা৷ গেল এক যুগ ধরেই প্রিমিয়ার লিগে সেরা একটি নাম চেলসি৷ বেড়েছে আয়ও৷ লেগে আছে স্পন্সরদের ভিড়৷ ক্লাবের দাম এখন ১.৬৫ বিলিয়ন ইউরো বা সাড়ে চৌদ্দ হাজার কোটি টাকা৷ সাফল্যও আসছে ক্রমাগত৷ এক মৌসুম পর আবারো শিরোপা ঘরে তুলেছে দলটি৷
ছবি: picture alliance/C. Wilson/Offside
৬. আর্সেনাল
এক পয়েন্টের জন্য আগামী মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের টিকেট হাতছাড়া হয়ে গেল আর্সেনালের৷ কারণ, পাঁচ-এ থেকে প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম শেষ করেছে তারা৷ এর আগে এ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও বিদায় নিয়েছে শেষ ষোল থেকে৷ ফলে ক্লাবের দাম ৪ ভাগ কমে হয়েছে ১.৭২ বিলিয়ন ইউরো বা সোয়া ১৫ হাজার কোটি টাকা৷
ছবি: Reuters/H. McKay
৫. ম্যানচেস্টার সিটি
এক দশক আগে আবুধাবির ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ বদলে দিয়েছে সিটিকে৷ ক্লাব জড়ো করেছে নামি-দামি খেলোয়াড়দের৷ যদিও গেল মৌসুমটা বলার মতো কিছু করে দেখাতে পারেনি ম্যানচেস্টারের ক্লাবটি৷ লিগে তৃতীয় স্থান আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলতে পৌঁছেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের৷ তারপরও ক্লাবের দাম ধরা হচ্ছে ১.৮৫ বিলিয়ন ইউরো বা সাড়ে ষোল হাজার কোটি টাকা৷
ছবি: Reuters/L. Smith
৪. বায়ার্ন মিউনিখ
মিউনিখের ক্লাবটি শীর্ষ দশ ধনীর তালিকায় একমাত্র জার্মান ক্লাব৷ টানা পাঁচবার বুন্ডেস লিগার শীর্ষস্থান দখল করে তারা জাতীয় পর্যায়ে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে গেছে৷ পাঁচবারের ইউরোপসেরা বায়ার্ন এখন সেরা তিনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ২.৪১ বিলিয়ন ইউরো বা সাড়ে ২১ হাজার কোটি টাকা মূল্যমান নিয়ে৷
ছবি: Bongarts/Getty Images
৩. রেয়াল মাদ্রিদ
অবাক লাগার মতোই ব্যাপার৷ তারকা খেলোয়াড়দের ভিড়, স্পেন ও ইউরোপসেরা হবার পরও গ্যালাকটিকোদের জন্য তিন নম্বর স্থানটি বরাদ্দ করেছে ফোর্বস৷ এর একটি কারণ হতে পারে ‘বুড়ো’ খেলোয়াড়দের আধিক্য (গড় বয়স ২৭.৩ বছর)৷ এছাড়া কম বয়সি যাঁরা আছেন, তাঁদের ট্রান্সফার ফি-ও অনেক বেশি৷ মাদ্রিদের ক্লাবটির মূল্যমান ৩.১৮ বিলিয়ন ইউরো বা সাড়ে আটাশ হাজার কোটি টাকা৷
ছবি: Reuters/C. Recine Livepic
২. বার্সেলোনা
মেসি, নেইমারদের মতো তারকাদের নিয়েও এ মৌসুমে আশানুরূপ ফল করতে পারেনি বার্সা৷ লিগে দ্বিতীয় আর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ চারে পৌঁছেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের৷ অবশ্য কোপা দেল রে’তে সান্তনার শিরোপা জিতেছে তারা৷ সব মিলিয়ে কাতালানদের মূল্যমান এখন ৩.২৪ বিলিয়ন ইউরো বা ২৯ হাজার কোটি টাকা৷
ছবি: Getty Images/S. Botterill
১. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
লিগ কিংবা ইউরোপ– গেল কয়েক মৌসুমে কোথাও যেন নিজেদের ঠিক মেলে ধরতে পারছিল না রেড ডেভিলরা৷ এ মৌসুমেও ইউরোপা লিগের শিরোপা ঝুলিতে নিয়ে সান্ত্বনা খুঁজছেন কোচ মোরিনিয়ো৷ ৩.২৮ বিলিয়ন ইউরো বা সাড়ে ২৯ হাজার কোটি টাকা দামের ইংলিশ ক্লাবটি তারপরও সবচেয়ে ধনী৷