রাষ্ট্রের সীমায় এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট অবতরণ করতে বাধা দিয়েছে টিউনিশিয়া৷ বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার নামে টিউনিশিয় নারীদের টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষিতে এ ব্যবস্থা নিলো দেশটি৷
বিজ্ঞাপন
টিউনিশিয়ার পরিবহন মন্ত্রী রোববার এক ঘোষণায় বলেন, উত্তর আফ্রিকার দেশ থেকে আসা ইউনাইটেড আরব এমিরেটস-এর একটি বিমান রাষ্ট্রের সীমায় অবতরণ করতে দেয়া হয়নি৷ ঘোষণায় আরো জানানো হয়, এমিরেটস-এর কোনো ফ্লাইটই আপাতত রাজধানী টিউনিসে অবতরণ করতে দেয়া হবে না৷ এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক আইন ও চুক্তি মেনে ফ্লাইট পরিচালনা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেয়া পর্যন্ত এ স্থগিতাদেশ থাকবে বলেও জানানো হয়৷ টিউনিশিয়ার পরিবহন মন্ত্রীর ফেসবুক পেজে এ ঘোষণা জানানো হলেও এ সিদ্ধান্তের কোনো কারণ জানানো হয়নি এতে৷ এমিরেটস এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে টুইটারে জানানো হয়েছে, টিউনিশিয়ার কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুবাই থেকে টিউনিস পর্যন্ত এমিরেটস-এর সব ফ্লাইট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ সোমবার থেকে কার্যকর হচ্ছে এ সিদ্ধান্ত৷
এ ঘটনার দু'দিন আগে কয়েকজন টিউনিশীয় নারী অভিযোগ তোলেন, টিউনিস এয়ারপোর্ট থেকে দুবাইগামী এমিরেটস-এর ফ্লাইটে উঠতে দেয়া হয়নি তাঁদের৷ তাঁরা জানান, কারো কারো ক্ষেত্রে কোনো কারণ না দেখিয়েই যাত্রা বিঘ্নিত করা হয়েছে, আবার অনেকের ক্ষেত্রে ভিসা পরীক্ষা করা দেখা হয়েছে অহেতুক৷ এ তথ্য প্রকাশিত হবার পর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে শুরু করে গণমাধ্যম – সব খানেই ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় টিউনিশিয়ার বাসিন্দারা৷
নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলাতে কতটা প্রস্তুত কাতার?
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর প্রবল চাপ বজায় রাখছে৷ সে দেশ তাদের শর্ত পূরণ না করায় উত্তেজনা কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না৷ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্যান্য পদক্ষেপের মুখে সে দেশ কতকাল মাথা উঁচু করে থাকতে পারবে?
ছবি: Getty Images/ANOC/M. Runnacles
একঘরে করে রাখার প্রচেষ্টা
জুন মাসের শুরুতেই কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ও পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন করেছিল সৌদি আরব, বাহরিন, সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ সন্ত্রাসবাদে মদত সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে কাতারের বিরুদ্ধে৷ কাতার অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Jaafar
শর্ত মানতে অস্বীকার
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের কাছে ১৩টি শর্ত পেশ করেছিল৷ আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া, ইরান ও তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্কের মাত্রা কমানো সহ একাধিক দাবি পেশ করা হয়েছে৷ কিন্তু কাতার অনেক অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়েছে, বাকিগুলির ক্ষেত্রে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa/T.Brakemeier
নিষেধাজ্ঞার মোকাবিলা
সৌদি আরবের সঙ্গে স্থলপথে পরিবহণ যোগাযোগ ছিন্ন হবার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে টান পড়েছে৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে কাতার দ্রুত সমুদ্রপথে পণ্য সরবরাহের নতুন ব্যবস্থা করে ফেলে৷ ফলে অভাব-অনটন দেখা যায়নি৷ তবে আমদানি সংক্রান্ত ব্যয় অবশ্যই বেড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/shalome05
আর্থিক ও অর্থনৈতিক প্রস্তুতি
আচমকা নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশের আর্থিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোয় কিছু রদবদল করতে হয়েছে কাতারকে৷ স্থানীয় ব্যাংকে কোটি কোটি ডলার জমা দিয়ে এবং এলএনজি গ্যাসের উৎপাদন ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে আপাতত পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে ছোট্ট অথচ বিত্তশালী এই দেশটি৷ অতএব অদূর ভবিষ্যতে নিষেধাজ্ঞার ফলে তেমন ক্ষতির আশঙ্কা নেই৷
ছবি: imago/Photoshot/Construction Photography
নতুন নিষেধাজ্ঞার কালো ছায়া
সৌদি নেতৃত্বে জোট কাতারের উপর বাড়তি নিষেধাজ্ঞার ইঙ্গিত দিয়েছে৷ এর আওতায় ব্যাংকিং সম্পর্ক ছিন্ন করা হতে পারে৷ তাছাড়া যে সব কোম্পানি কাতারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে এই জোট৷ কাতার সেই ধাক্কা সামলানোরও প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ এক্ষেত্রে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ডাব্লিউটিও কাতারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে পারে৷
ছবি: Imago/H. Sobik
নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য পরিণতি
বিপুল অংকের অর্থ ও সম্পদের ফলে কাতার প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷ গ্যাস ও অন্যান্য পণ্য বিক্রির পথে বাধা না এলে কিছু ধাক্কা সত্ত্বেও কাতারের অর্থনীতিও চালু থাকবে বলে তাঁদের ধারণা৷ সে দেশের সরকার এখন থেকেই নানা পদক্ষেপের কথা ভাবছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Munoz Alvarez
ব্যাংকিং ব্যবস্থায় ঝুঁকি
বর্তমান সংকটের ফলে কাতারের ব্যাংকিং ব্যবস্থা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে৷ কারণ ব্যাংকগুলি অর্থের জন্য বিদেশের উপর বড় নির্ভরশীল৷ গত মে মাসে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলির প্রায় ৩৬ শতাংশ লায়াবিলিটি ছিল বিদেশিদের হাতে৷ সেই অর্থে টান পড়লে কাতারকে নানাভাবে ঘাটতি পূরণ করতে হবে৷ বিশেষ করে বিদেশে কাতারের কিছু সম্পত্তি বিক্রি করতে হতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
7 ছবি1 | 7
অন্যদিকে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কিছু জানানো না হলেও বলা হয়েছে ‘নিরাপত্তা' সংক্রান্ত কারণেই এ যাত্রা বিরতি ঘটেছে৷ ইউএই-এর পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ এক টুইট বার্তায় জানান, ‘‘নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্যের বিষয়ে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আমরা টিইনিশিয়ার ভাইদের সাথে যোগাযোগ করছে৷ টিউনিশীয় নারীদের আমরা মূল্য দেই এবং তাঁদের সম্মান করি৷''
শুক্রবার টিউনিশিয়ার সরকারের পক্ষ থেকে ইউএই-এর রাষ্ট্রদূতের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়৷ টিউনিশিয়ার বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে এ অবমাননাকর ও বর্ণবাদী এ আচরণের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ দাবি করা হয়৷ ২০১১ সালে উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে বিদ্রোহের পর থেকে ইউএই-এর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করে আসছে টিউনিশিয়া৷ ক্ষমতাশীন ইসলামি দল আল-নাহদার সাথে কাতারের সুসম্পর্ক রয়েছে যার ফলে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ইউএই, সৌদি আরব, বাহরাইন ও মিশরের সাথে৷ এ চার দেশই কাতারকে ‘সন্ত্রাসী' রাষ্ট্র হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছিল যা বরাবরই অস্বীকার করে আসছে কাতার৷