ছুরি হামলায় নিহত হয়েছে এক জার্মান কিশোরী৷ অভিযোগের আঙুল আফগানিস্তান থেকে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশী এক কিশোরের দিকে৷ তা নিয়েই উত্তপ্ত জার্মানির ছোট্ট একটি শহর৷ অভিবাসীরা এখন নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির খুবই ছোট এক শহর কান্ডেল৷ মাত্র আট হাজার মানুষের বাস সেখানে৷ গত ২৭ ডিসেম্বর সেই শহরের এক ওষুধের দোকানের সামনে রান্নাঘরের ছুরি নিয়ে হামলা চালানো হয় মিয়া ভি. নামের এক কিশোরীর ওপর৷ উপর্যুপরি ছুরির আঘাতে মারা যায় সেই কিশোরী৷
১৫ বছর বয়সি মেয়েটির পরিবার বলছে, হত্যাকারী ২০১৬ সালে আফগানিস্তান থেকে আসা এক কিশোর৷ তার বয়সও ১৫৷ মিয়া ভি-র সঙ্গে তার প্রেম হয়েছিল৷ কয়েক মাস পর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়৷ তারপর থেকেই ছেলেটি মিয়া ভি.-কে উত্যক্ত করছিল বলে অভিযোগ৷ মিয়া এবং তার বাবা-মা ছেলেটির বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগও করেছিল৷
গত সপ্তাহান্তে আট হাজার অধিবাসীর শহরটি যেন দু'ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়৷ শহরের প্রাণ কেন্দ্রে বিক্ষোভ শুরু করে হাজার খানেক মানুষ৷ এক পক্ষ মিয়া ভি হত্যার প্রতিবাদ জানায়, স্লোগান দেয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে৷ অন্যপক্ষের ব্যানারে, ফেস্টুনে ছিল অভিবাসীবিরোধীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা৷
সন্দেহভাজন বিদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাবে জার্মানি
সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে কোনো বিদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাতে কোনো আইনি বাঁধা নেই বলে রায় দিয়েছে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত৷ তবে সমালোচকরা একে সংবিধানবিরোধী বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আদালতের রায়
বৃহস্পতিবার কার্লসরুয়াতে সাংবিধানিক আদালত বলেছেন যে, যদি কোনো সন্ত্রাসের ঝুঁকি থাকে, তাহলে কোনো বিদেশিকে ফেরত পাঠাতে আইনি কোনো বাঁধা দেখছেন না৷ বিচারকদের রায় অনুযায়ী, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অভিবাসী আইনেই আছে
দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্দেহভাজনদের ফেরত পাঠানোর জন্য জার্মান অভিবাসী আইনের একটি অনুচ্ছেদের রেফারেন্স দিয়ে বিচারকরা বলেছেন যে, ‘জার্মানির নিরাপত্তায় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হলেই’ তা ঠেকাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ওয়ান ইলেভেনের প্রভাব
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর জার্মানির সংবিধানে এই ধারাটি ঢোকানো হয়েছিল৷ এতদিন এটি নিয়ে কোনো কথা হয়নি৷ গত ডিসেম্বর মাসে বার্লিনে ক্রিস্টমাস মার্কেটে হামলার পর বিষয়টি আবারো সামনে আসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
জার্মানিতে জন্ম, কিন্তু বিদেশি
গেল ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যে এক আলজেরিয়ান ও এক নাইজেরিয়ানকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করে৷ তাদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলে আইনের আশ্রয় নেন তারা৷ তারা লাইপসিগে ফেডারেল প্রশাসনিক কোর্টে আবেদন করলে সাময়িক আইনি সুরক্ষা পান৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Dedert
প্রশাসনের হুঁশিয়ারি
গেল মার্চে লোয়ার স্যাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন যে, যারা সন্ত্রাসী হামলার মতো উন্মাদ আচরণ করতে চায়, তাদের এক সেন্টিমিটারও ছাড় দেয়া হবে না৷ তিনি আরো বলেন যে, তারা যে দেশেরই হোন না কেন, আইনের কড়া প্রয়োগ করা হবে তাদের বিরুদ্ধে৷
ছবি: Getty Images/P.Stollarz
ফেরত পাঠানোর পরিসংখ্যান
গত নভেম্বরে প্রকাশ হওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের প্রথম নয় মাসে ১৯,৯১৪ জনকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি৷ পুরো ২০১৫ সালে ২০,৮৮৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Roland
6 ছবি1 | 6
প্রতিবাদী অভিবাসীদরা একটি ব্যানারে লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের এবং আমাদের সন্তানদের নিরাপত্তা চাই৷'' আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল, ‘‘সব জায়গাই এখন কান্ডেল৷'' এ সময় বর্ণবাদ রোধের আহ্বানও জানান বিক্ষোভে অংশ নেয়া অভিবাসীরা৷
পুলিশ বলছে, ফ্রান্স সীমান্তের কাছের শহরটিতে সেদিন যারা অভিবাসীবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে, তাদের বেশিরভা্গই বহিরাগত৷
পুলিশের মুখপাত্র সেবাস্টিয়ান বুরখার্ড ডয়চে ভেলেকে জানান, জার্মানির বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা কিছু মানুষ কান্ডেলকে অভিবাসীবিরোধী প্রচারণার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে বলে তাঁদের ধারণা৷
মিয়া ভি. হত্যার ঘটনায় অনেকেরই জার্মানির আরেক শহর ফ্রাইবুর্গে ঘটে যাওয়া আরেকটি হত্যাকাণ্ডের কথা মনে পড়ছে৷ সেখানে এক মেডিক্যাল শিক্ষার্থীকে হত্যার অভিযোগে এক আফগান অভিবাসনপ্রত্যাশীর বিচার চলছে৷