ঢাকা থেকে লন্ডনে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ বন্ধ হতে পারে ঢাকা-লন্ডন প্যাসেঞ্জার ফ্লাইটটিও৷ যুক্তরাজ্য বলছে, সুপারিশ পাঠানোর পরও ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া এক চিঠিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন জানান,‘৩১শে মার্চের মধ্যে দুই দেশের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী নিরাপত্তা জোরদারের কাজ শুরু না হলে বাংলাদেশ বিমানের যুক্তরাজ্যগামী সরাসরি যাত্রীবাহী ফ্লাইটও নিষেধাজ্ঞায় পড়তে পারে৷'
একইদিনে যুক্তরাজ্যের সরকারি ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ব্রিটেনে সরাসরি পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞার খবরটি জানানো হয়৷ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতির সাম্প্রতিক মূল্যায়নে দেখা গেছে যে, নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় কিছু শর্ত পূরণ করেনি বাংলাদেশ৷ তাই অন্তর্বর্তীকালীন পদক্ষেপের অংশ হিসেবে পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত ঢাকা থেকে সরাসরি যুক্তরাজ্যে পণ্য পরিবহন করতে দেওয়া হবে না৷'
জানা গেছে, গত অক্টোবর মাসে মিশরের শার্ম আল-শেখে রাশিয়ার একটি বিমান বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত হওয়ার পর, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ২০টি দেশের ৩৮টি বিমানবন্দরকে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলে৷ ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর তার একটি৷ বলা বাহুল্য, এই ৩৮টি বিমানবন্দর থেকে লন্ডনে সরাসরি বিমান যোগাযোগ রয়েছে৷
রাশেদ খান মেনন
এরপর নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে ব্রিটিশ এভিয়েশনের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের লিয়াজোঁ অফিসার জন লাভসে গত নভেম্বরে ও ডিসেম্বরে ঢাকায় আসেন৷ প্রথম দফায় তিনি যাত্রী নিরাপত্তা উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেন৷ দ্বিতীয় দফায় তাঁর সুপারিশ ছিল কার্গো পরিবহন বিষয়ক নিরপত্তার জোরদার করার ওপর৷
তাঁর রিপোর্টে বলা হয়, ‘ঢাকায় যাত্রীদের সঠিকভাবে স্ক্যানিং করা হয় না এবং মালামাল ট্যাগ করার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় না৷ বিমানবন্দরে যারা স্ক্যান করেন, তারা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকেন, বসে বসে টেলিফোনে কথা বলেন, গল্প করেন, তাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই৷ তাছাড়া বিমানবন্দরে এক্সপ্লোসিভ ট্রেসিং মেশিনও কাজ করে না৷'
সুপারিশে কার্গো রাখার জায়গায় ‘ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার' প্রতিষ্ঠানের বেসরকারি কর্মীদের সরিয়ে নিতে, নিরাপত্তা ট্যাগ লাগানোর মেশিন ব্যবহারের এবং কার্গো ওয়ারহাউসের বাইরের সব পণ্য ভেতরে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়৷
যুক্তরাজ্য এই রিপোর্ট দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া এককভাবে বাংলাদেশ থেকে সেখানে কার্গো সার্ভিসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে৷ আর এবার যুক্তরাজ্য নিজেই সরাসরি কর্গো বিমানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলো৷ আগামী ৩১শে মার্চ ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারো পর্যালোচনা করবে যুক্তরাজ্য৷
বেসামরিক বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা-লন্ডন বিমান সার্ভিস এখনো বন্ধ হয়নি৷ শুধুমাত্র সরাসরি কার্গো বিমান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ আমারা বিমানবন্দরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করছি৷ আমাদের সদিচ্ছার কোনো ঘাটতি নেই৷ কিন্তু আমরা যখন সাধ্যের মধ্যে সব কিছু করার চেষ্টা করছি, সেই মুহূর্তে ব্রিটেন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ আমরা এখন তাদের সঙ্গে বসে আর কী করা যায়, তা দেখছি৷ তাদের বিশেষজ্ঞরা এখনো আমাদের বিমানবন্দরে কাজ করছেন৷''
বিমান যাত্রায় যে ১০টি কাজ করবেন না
বিমানে চড়া আজকাল আর খুব বড় কোনো ব্যাপার নয়৷ কাজের প্রয়োজনে, বেড়াতে কিংবা চিকিৎসার প্রয়োজনে অনেকেই যাচ্ছেন অন্য দেশে, বিমানে৷ আর এই যাত্রায় যে দশটি জিনিস করা উচিত নয়, তা থাকছে এখানে৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
বিমানে উঠতে তাড়াহুড়া নয়
একটি বিমানে একসঙ্গে কয়েকশত যাত্রী আরোহণ করেন৷ যাত্রীদের ঠিকভাবে তুলতে তাই বিমান সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন গ্রুপ নম্বরে যাত্রীদের ভাগ করে ফেলেন৷ এরপর সেই নম্বর অনুযায়ী যাত্রীদের বিমানে উঠতে বলা হয়৷ সমস্যা হয়, যখন নম্বরের তোয়াক্কা না করেই অনেকে বিমানে উঠতে ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন৷ এটা খুবই বিরক্তিকর ব্যাপার৷ অনেক সময় শুধুমাত্র এ জন্য বিমান ছাড়তে দেরি হয়৷
ছবি: Fotolia/Andres Rodriguez
বিমানে ওঠার আগে শেষ টান
বিমানের মধ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ৷ অনেকে তাই বিমানে ওঠার আগ মুহূর্তে সিগারেটে দু’টো টান দিয়ে নেন৷ সমস্যা হচ্ছে, বিমানের ভেতরটা আবদ্ধ৷ তাই সেখানে আপনার সিগারেটের গন্ধ অন্য আরোহীকে বিরক্ত করতে পারে৷ তাই সম্ভব হলে বিমান ওঠার আগ মুহূর্তে ধূমপান পরিহার করুন৷ আর বিমানে ধুমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামনের সিটে ধাক্কা বা লাথি নয়
বিমানের সিটগুলো হয় হালকা ধরনের৷ মূলত তেল খরচ বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা৷ তাই এসব সিটে পেছন দিক দিয়ে ধাক্কা দিলে, তা সিটে বসা আরোহীকে আঘাত করতে পারে৷ সুতরাং কোনো অবস্থাতেই সামনের সিটে ধাক্কা বা লাথি দেবেন না৷
ছবি: dapd
হাতল দখলের লড়াই
বিমানের সিটগুলোতে খুব বেশি জায়গা থাকে না৷ একটি সিটের সঙ্গে আরেকটি সিট লাগানো থাকে এবং হাতল থাকে একটা৷ কেউ কেউ তাই কনুই দিয়ে অপর যাত্রীকে গুতা দিয়ে কিংবা হাত শক্ত করে হাতলে রেখে সেটা দখলে রাখার চেষ্টা করে৷ এমনটা করা মোটেই উচিত নয়৷
ছবি: dapd
নগ্ন পায়ে ঘোরা নয়
অনেকেই বিমানে উঠে জুতা, এমনকি মোজাও খুলে ফেলেন৷ এটা অনেকের জন্যই বিরক্তিকর৷ আর খালি পায়ে বিমানের টয়লেট ব্যবহার করলে রোগজীবাণু আক্রান্তের আশঙ্কা বেড়ে যায়৷ সুতরাং বিমানে জুতা পরেই থাকুন৷
ছবি: Fotolia/Zeit4men
শব্দ বন্ধ না করেই গেম খেলা
আজকাল স্মার্টফোন, ট্যাবলেটে সহজেই ভিডিও গেম খেলা যায়৷ এতে অবশ্য খারাপ কিছু নেই৷ কিন্তু বিমানে বসে শব্দ বন্ধ না করে গেম খেললে তা অন্য আরোহীদের বিরক্ত করতে পারে৷ তাই শব্দ বন্ধ করে গেম খেলা ভদ্র ব্যাপার৷
ছবি: imago/Westend61
পেছনের লোকের আগে নামার লড়াই
বিমান ল্যান্ড করার পর তার দরজা খোলার আগেই অনেকে নামার জন্য তাড়াহুড়া শুরু করে৷ পারলে সামনের যাত্রীকে ডিঙিয়ে যাওয়ার চেষ্টা৷ এটা খুবই অশোভন আচরণ৷ বিমান যখন অবতরণ করেছে, তখন সব যাত্রীকেই নামাবে৷ তাই নিশ্চিন্তে বসে অপেক্ষা করুন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘হ্যালো, রানওয়েতে আছি’
বিমান অবতরণের সঙ্গে সঙ্গেই অনেকে ফোন করতে শুরু করেন৷ এমনকি নেটওয়ার্ক না পাওয়া গেলে চলে নিরন্তন চিৎকার: হ্যালো, এইমাত্র ল্যান্ড করলাম, শুনতে পাচ্ছো? আসলে এভাবে তাড়াহুড়া করা ভালো নয়৷ বিমানবন্দরে অপেক্ষারতরা বিভিন্ন ডিসপ্লে ঘোষণার মাধ্যমে এমনিতেই বিমান অবতরণের খবর জানতে পারেন৷ তাই প্রিয়জনকে সেটা জানাতে তাড়াহুড়া না করলেও সমস্যা নেই৷
ছবি: picture alliance / Arco Images GmbH
ভ্রমণ করছেন, কিন্তু নড়ছেন না
বড় বিমানবন্দরগুলোতে বিশেষ ধরনের ‘মুভিং ওয়াকওয়ে’ থাকে৷ এটা অনবরত সামনের দিকে যেতে থাকে৷ ফলে কেউ ‘মুভিং ওয়াকওয়েতে’ দাঁড়ালে এমনিতেই সামনের দিকে যেতে পারবেন৷ তাই অনেকে এতে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ এটা আসলে ঠিক নয়৷ বরং মুভিং ওয়াকওয়েতে আপনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটলে অন্য যাত্রীদের সুবিধা হবে৷
ছবি: Reuters
লাগেজ নেয়ার তাড়া
বিশ্বের সব বিমানবন্দরেই লাগেজ নেয়ার জন্য বিশেষ জায়গা আছে৷ সেখানে বেল্টের উপরে লাগেজগুলো একের পর এক দেয়া হয়৷ সেই বেল্ট অনবরত ঘুরতে থাকে৷ অনেক সময় বিমান থেকে নেমেই মানুষ সেই বেল্ট ঘিরে বড় জটলা তৈরি করে ফেলেন৷ এটা অনর্থক৷ বরং একটু দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলে আপনার লাগেজ দেখা সহজ হবে৷ এরপর সময়মত সেটি বেল্ট থেকে সরিয়ে নিলেই হলো৷
ছবি: peshkova - Fotolia.com
10 ছবি1 | 10
তিনি আরো বলেন, ‘‘আগামী ৩১শে মার্চের পর্যালোচনা বৈঠকে আশা করি আমরা বিষয়টি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে পারবো৷''
প্রসঙ্গত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন ধরে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য অনুরোধ করে আসছিল৷ পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া ঢাকা বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য যুক্তরাজ্যকে দায়িত্ব দেয়৷ তাই যুক্তরাজ্যের সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়াকেও প্রভাবিত করতে পারে৷