দাবি করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। একইসঙ্গে রাশিয়াকে 'সন্ত্রাসী রাষ্ট্র' বলেও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার জাতিসংঘে বক্তৃতা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। সেখানে রাশিয়াকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বলে দাবি করেন তিনি। সম্প্রতি ইউক্রেনের মলে রাশিয়ার হামলার কথা উল্লেখ করে জেলেনস্কি বলেন, ওই হামলায় বহু বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। বহু মানুষ আহত। এটা যুদ্ধও নয়, সন্ত্রাসী হামলা। বস্তুত, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনকে সরাসরি সন্ত্রাসী বলে আখ্যা দিয়েছেন জেলেনস্কি।
জাতিসংঘের কাছে এই ঘটনার তদন্তের দাবি করেছেন জেলেনস্কি। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, এই ঘটনার পর রাশিয়াকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ থেকে বহিষ্কার করা উচিত।
যুদ্ধের মাঝেই দেশে ফিরছেন যে শরণার্থীরা
02:07
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
জেলেনস্কির মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাশিয়া। জাতিসংঘে রাশিয়ার ডেপুটি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, নিরাপত্তা পরিষদ কারো পি আর ক্যাম্পেইনের জায়গা নয়। জেলেনস্কি এখানে এসে সেকাজই করছেন আরো অস্ত্র পাওয়ার জন্য। জাতিসংঘের উচিত এ কাজ বন্ধ করা।
ইউক্রেনকে আরো হাউইৎজার
ন্যাটোর বৈঠকে জার্মানি জানিয়েছে, নেদারল্যান্ডস এবং জার্মানি ইউক্রেনকে আরো হাউইৎজার পাঠাবে। মোট ছয়টি হাউইৎজার মিসাইল পাঠানো হবে বলে তারা জানিয়ছে। যা আপাতত ইউক্রেনের জন্য যথেষ্ট। জার্মানি বলেছে, প্রাথমিকভাবে তারা এধরনের অস্ত্র ইউক্রেনের হাতে তুলে দিতে চাইছিল না। কিন্তু যেভাবে ইউক্রেনের উপর হামলা চলছে, তাতে তারা বাধ্য হয়েই ইউক্রেনকে এধরনের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে। উল্লেখ্য, হাউইৎজার ৪০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে। তবে এধরনের অস্ত্র ইউক্রেনকে দেওয়ার আগে চুক্তি হয়েছিল, ইউক্রেন কোনোভাবেই এই অস্ত্র রাশিয়ার ভিতরে প্রয়োগ করতে পারবে না।
ক্যামেরায় ইউক্রেনের ধ্বংসস্তূপে আগামীর স্বপ্ন
যুদ্ধের সময়েও ইউক্রেনের মানুষ ভেঙে পড়েনি৷ তাই ধ্বংসযজ্ঞ আর মৃত্যুর মিছিলের মাঝেও চলছে স্বপ্ন রচনা৷ ফটোগ্রাফার স্তানিস্লাভ সেনিকের ক্যামেরায় চেরনিহিভের ধ্বংসস্তূপে স্কুল পরীক্ষার্থীদের ছবিগুলো সে কথাই বলে...
ছবি: Instagram/@senykstas
ধ্বংসস্তূপে অন্যরকম পরীক্ষা
যুদ্ধ শুরুর পর অনেকেই ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন৷ তবে যারা দেশ ছাড়েননি, তারা হয় দেশরক্ষার লড়াইয়ে নেমেছেন, নয়ত নিজেকে তৈরি রাখছেন, তৈরি করছেন দেশ পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখার জন্য৷ যুদ্ধের মাঝেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছে শিক্ষার্থীরা৷ ধ্বংসপ্রায় চেরনিহিভের শিক্ষার্থীরা স্কুল ফাইনালও দিয়েছে৷ তাদের কয়েকজনকে নিয়ে স্তানিস্লাভ সেনিকের ফটোশুটটাও ছিল অন্যরকম এক পরীক্ষা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
অচেনা রূপে চেনা শহর
এই দুই কিশোরীর ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর চেরনিহিভেই জন্ম, বেড়ে ওঠা৷ তাদের প্রিয় শহর আজ রুশ হামলায় ধ্বংসপ্রায়৷ তবে ধ্বংসপ্রায় শহরটিও তাদের প্রিয়৷ এই শহরকে নতুন করে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে তারা৷ স্তানিস্লাভ সেনিকের আইডিয়াটা তাই পছন্দ হয়েছে তাদের৷ বোমায় ভেঙে পড়া এক ভবনেই তাই ফটোশুটে অংশ নিয়েছে তারা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
দুঃস্বপ্নময় বর্তমানে সুন্দর এক স্বপ্ন
স্তানিস্লাভ সেনিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ফটোশুটটা ওরা চেরননিহিভের জীর্ণ, বিবর্ণ ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে করতে রাজি হয়েছে মূলত একটি কারণে৷ বাকিদের মতো ওরাও ভেবেছে, এই ছবি থেকে যাবে স্মৃতি হয়ে৷ দিন বদলাবে৷ আসবে সুদিন৷ চেরনিহিভ একদিন আবার সেজে উঠবে নতুন সাজে৷ তখন এই দুই কিশোরী তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারবে, ‘‘দেখো, আমরা এই ধ্বংসপ্রায় শহরটাকে ভালোবেসে বেসে আবার বাঁচিয়ে তুলেছি৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ওরা আর ভয় পায় না, মন খারাপ করে না’
ছবির এই মানুষটিই স্তানিস্লাভ সেনিক৷ ছবি তোলাকে পেশা করেছেন পাঁচ বছর আগে৷ রাশিয়ার হামলায় বিধ্বস্ত চেরনিহিভ শহরে শিক্ষার্থীরা স্বতস্ফূর্তভাবে ফটোশুটে অংশ নেবে কিনা- এ নিয়ে তার অনেক সংশয় ছিল৷ কিন্তু কথা বলে বুঝলেন, শিক্ষার্থীদের ফটোশুটে কোনো আপত্তি নেই৷ আরো দেখলেন, ‘‘ওরা এখন আর ভয় পায় না, প্রিয় শহরের ধ্বংসপ্রায় রূপ দেখে খুব বেশি মন খারাপও করে না৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
দুমড়ানো-মোচড়ানো গাড়ির ছাদে ওরা পাঁচজন
স্বাভাবিক অবস্থায় এই চেহারার গাড়ি কোনো শহরেই যত্ন করে রাখা হয় না৷ যুদ্ধ শেষ হলে এই দুটোকেও হয়ত আর কোথাও দেখা যাবে না৷ তবে এই পাঁচ শিক্ষার্থীর এই ফটোশুটের কল্যাণে আগামী পৃথিবীর অনেকেই নিশ্চয়ই মনে রাখবে গাড়ি দুটোর কথা৷
ছবি: Instagram/@senykstas
‘ভুল বুঝবেন না’
ফটোশুটে অংশ নেয়া শিক্ষার্থীরা অবশ্য আগেভাগেই জানিয়ে রেখেছে, কেউ যদি ছবিগুলো দেখে মনে করেন, চেরনিহিভের ধ্বংসপ্রায় চেহারা নিয়ে শিক্ষার্থীরা গর্বিত আর এ কারণেই তারা সেখানে ফটোশুটে অংশ নিয়েছে- তাহলে খুব বড় ভুল করা হবে৷ তাদের অনুরোধ, ‘‘প্লিজ, আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আসলে এই দুঃসময়টাকে ফ্রেমে ধরে রাখতে চাই, আগামী প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে বলতে চাই ভয়ঙ্কর এই যুদ্ধের কথা৷’’
ছবি: Instagram/@senykstas
6 ছবি1 | 6
জি-৭ বৈঠকে সিদ্ধান্ত
জি-৭ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, যতদিন যুদ্ধ চলবে, ততদিন ইউক্রেনকে লাগাতার সাহায্য করে যাওয়া হবে। সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, রাশিয়ার তেলের দামে ক্যাপ বসানো হবে। অর্থাৎ, তেলের দামের ঊর্দ্বসীমা স্থির করা হবে। বিশ্ববাজারে ওর চেয়ে বেশি দামে রাশিয়া তেল বিক্রি করতে পারবে না। এর ফলে রাশিয়ার অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন জি-৭ এর নেতারা।
বালিতে রাশিয়া নেই
কিছুদিনের মধ্যেই ইন্দোনেশিয়ার বালিতে জি-২০-র বৈঠক শুরু হচ্ছে। সেখানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুটিনকে আহ্বান জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি। বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনে রাশিয়াকে না ডাকা কূটনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে ইউক্রেনের মলে রাশিয়ার মিসাইল হামলার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরো বেড়েছে। মঙ্গলবার রাতে মৃতের সংখ্যা ১৬ হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। রাশিয়া দাবি করেছে, ওই এলাকায় ইউক্রেন অস্ত্র মজুত করেছিল। সে কারণেই সেখানে হামলা চালানো হয়। কিন্তু জেলেনস্কি জানিয়েছেন, ওই মলে এমন কোনো কিছুই ছিল না।