1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিরাপত্তা সংকট কাটেনি, অস্বস্তি নিয়ে পুলিশের কাজ শুরু

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ আগস্ট ২০২৪

দেশে এখনও নিরাপত্তা সংকট কাটেনি৷ নিজেদের নিরাপত্তা এখনও নিজেরাই নিশ্চিত করছেন সাধারণ মানুষ৷ অস্বস্তি নিয়ে পুলিশ সদস্যরা থানায় ফিরতে শুরু করলেও নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়ে মাঠে নামতে এখনও সময় লাগবে৷

ঢাকায় কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী
পুলিশের অনুপস্থিতিতে অনেকে নিজ উদ্যোগে বাসা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ দিয়েছেনছবি: DW

সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ঢাকার ৫০টি থানার মধ্যে ২৯টি থানার কার্যক্রম শুক্রবার শুরু হয়েছে৷ তবে সহিংসতা এখনও থামেনি৷ শুক্রবার কুমিল্লায় দুই ইউপি সদস্যের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হয়েছে৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে ‘মিটু চৌধুরী সড়ক' এর ফলকে থাকা ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে৷ নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ৷ শুক্রবার শাহবাগ মোড়ে তারা নিরাপত্তার দাবিতে সমাবেশ করেছেন৷

দায়িত্ব নিয়েই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘‘গত কয়েকদিন বিভিন্ন ধরনের অপরাধ হয়েছে৷ কোনো কোনো রাজনৈতিক দল দেশের বিভিন্ন এলাকায় দখলের সংস্কৃতিতে নেমেছে৷ দেশে গত কয়েকদিনে যেসব অপরাধ হয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে৷ এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে৷ কোনো ছাড় দেওয়া হবে না৷ সরকার এখন স্থিতিশীল পরিবেশ আনার বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করবে৷''

ভেঙে পড়া পুলিশি ব্যবস্থা পুনর্গঠনে কাজ শুরু হয়েছে৷ শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও থানাসহ ২৯ থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ থানার নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরা কাজ করছেন, সঙ্গে দেখা গেছে আনসার সদস্যদের৷ থানার কার্যক্রম শুরুর আগে তেজগাঁও থানা পুলিশের সহায়তায় স্থানীয়দের সঙ্গে বৈঠক করেছে সেনাবাহিনী৷ সাধারণ মানুষ থানার কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর ২৫ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট কোম্পানি অধিনায়ক শাখাওয়াত খন্দকার৷ তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের সহায়তায় সমাজের গ্রহণযোগ্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলেছি৷''

প্রত্যেক বাসার নিচে কিছু লাঠি রাখা হয়েছে, যেন সবাই লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারে: আতাউর রহমান

This browser does not support the audio element.

তেজগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘‘বিগত দিনে আমরা একসঙ্গে কাজ করেছি, এরকম অনেক সদস্য এখন নেই৷ এখন আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত৷ পুলিশে আমি আজ ২৩ বছর৷ একসঙ্গে কাজ করেছি, কিছুদিন আগেও আমার থানায় ছিল এখন সে নেই৷ আসলে আমার পুরো পুলিশ সদস্য পরিবার, সত্যিকারভাবে আমরা ট্রমাটাইজড৷ তার মধ্যেই আমরা জনগণের প্রয়োজনেই কাজ করি৷ আমাদের ব্যর্থতা আমরা অনেক সময় জনগণকে বোঝাতে পারি না৷ আজকেও ফিরে আসা জনগণের জন্যই৷ জনগণ প্রয়োজন বোধ করেছে, পুলিশ না থাকলে কী হচ্ছে, সেই প্রয়োজনেই ফিরে আসা৷ জনগণকে বলব, আমাদেরকে আস্থায় নেওয়ার জন্য৷ আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি৷ আগামী দিনে সত্যিকারে মানুষের প্রয়োজনে যাতে এই বাহিনী থাকতে পারে, আমি আমার সহকর্মীদের নিয়ে এই সেবাগুলো অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব৷''

মোহাম্মদপুর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘আমার থানাটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ আমরা টেবিল-চেয়ার পেতে থানার কাজ শুরু করেছি৷''

অপারেশনাল কাজ অর্থাৎ বাইরে নিরাপত্তা দেওয়ার কাজটি কবে নাগাদ শুরু হতে পারে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘সে জন্য একটু সময় লাগবে৷ আমরা চেষ্টা করছি, ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলছি৷ তারা যেভাবে নির্দেশনা দেবেন আমরা সেভাবেই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করব৷''

শাহবাগে বিক্ষোভ

দেশব্যাপী সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন সারা দেশের হিন্দু সমাজ৷ এ সময় নিরাপত্তার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন তারা৷ দুপুরের পর শাহবাগ ও আশেপাশের এলাকা থেকে মানুষজন এসে সেখানে ভিড় জমান৷ এ সময় আন্দোলনকারীরা ৪ দফা দাবি জানান৷

এগুলো হলো, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে, সংখ্যালঘু সুরক্ষা কমিশন গঠন করতে হবে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল প্রকার হামলা প্রতিরোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে এবং সংখ্যালঘুদের জন্য ১০ শতাংশ সংসদীয় আসন বরাদ্দ করতে হবে৷

আন্দোলনে অংশ নেওয়া নয়ন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘দেশটা তো সবার৷ এখানে আমাদের নিরাপত্তা চাই৷ জামায়াত বা অন্য যে কেউ ক্ষমতায় আসুক আমাদের সমস্যা নেই৷ কিন্তু আমাদের বাসস্থান ও ধর্মীয় স্থাপনার নিরাপত্তা চাই৷ সারাদেশ থেকে আমরা একত্রিত হয়েছি৷ অতিদ্রুত আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হোক৷''

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও মন্দিরে হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার শাহবাগে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন সারা দেশের হিন্দু সমাজছবি: Fatima Tuj Johora/REUTERS

ডাকাতি

নিরাপত্তা নিয়ে দেশের মানুষ এখনও শঙ্কায়৷ বৃহস্পতিবার রাতেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির খবর পাওয়া গেছে৷ এছাড়া শুক্রবারও কুমিল্লায় দুই জন ইউপি সদস্যের বাড়িতে হামলা লুটপাট হয়েছে৷ চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার নাচোল বাসস্ট্যান্ডে ‘মিটু চৌধুরী সড়ক' এর ফলকে থাকা ম্যুরাল ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা৷ মিটু চৌধুরী নাচোল উপজেলা পরিষদের দু'বারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান ও নাচোল পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র ছিলেন৷ এলাকাবাসীর কাছে তিনি জনপ্রিয়৷ প্রয়াত মিটু চৌধুরী নাচোল ডিগ্রি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ৷

রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ার আদর্শ বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি আতাউর রহমান বলেন, ‘‘ডাকাতের উপদ্রব অনেক বেড়েছে৷ ফলে আমরা নিজেরাই বাড়ি পাহারা দিচ্ছি৷ আমরা রাস্তার প্রবেশমুখগুলোতে দ্রুতই গেইট স্থাপনের চেষ্টা করছি৷ প্রত্যেকটি বাড়িতে সিকিউরিটি গার্ডের কাছে একটি বাঁশি দেওয়া হয়েছে৷ কেউ আক্রান্ত হলে তিনি বাঁশিতে ফু দিলেই অন্যরা নেমে পড়বেন৷ প্রত্যেক বাসার নিচে কিছু লাঠি রাখা হয়েছে৷ যেন সবাই লাঠি নিয়ে রাস্তায় নামতে পারবে৷ এই পরিস্থিতিতে আমাদের এই বাইরে তো আর কিছু করার নেই৷''

‘পুলিশের মনোবল ভেঙে গেছে'

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, ‘‘পুলিশের যে মনোবল ভেঙে গেছে, সেটা ফিরিয়ে আনতে এখন অফিসারদের সামনে আসতে হবে৷ তাদের অধস্তনদের বোঝাতে হবে৷ দ্রুতভিত্তিতে থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে৷ রিকুইজিশন করে আপাতত কিছু গাড়ির ব্যবস্থা পুলিশকে করে দিতে হবে৷ এভাবেই পুলিশের কাজ শুরু করতে হবে৷ তাদের কোনো দাবি থাকতে পারে, সেগুলো কাজে যোগ দেওয়ার পরে বলতে হবে৷''

কারাগারে বিদ্রোহ

এদিকে উদ্ভুত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মধ্যে জামালপুর ও চট্টগ্রাম কারাগারে বিদ্রোহ হয়েছে৷ জামালপুরে ১০ ঘণ্টা পর জেলা কারাগারের বন্দিদের বিদ্রোহ নিয়ন্ত্রণে এনেছে কারা কর্তৃপক্ষ৷ এ ঘটনায় ছয় বন্দি নিহত এবং জেলার, কারারক্ষী ও বন্দিসহ আহত হয়েছেন ১৯ জন৷

টেবিল-চেয়ার পেতে থানার কাজ শুরু করেছি: দীপক চন্দ্র সাহা

This browser does not support the audio element.

শুক্রবার দুপুরে কারাগারের জেলার আবু ফাত্তাহ জানান, ‘‘৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গ্রেফতার ব্যক্তিদের সরকার মুক্তি দেয়৷ সে সময় অন্য বন্দিরা মুক্তি দাবি করেন৷ বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে বেশ কিছু কয়েদি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে মারামারি করেন৷ একটি গ্রুপের কয়েদিরা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য তার কাছে এসে কারা ফটকের চাবি চায়৷ তিনি চাবি দিতে না চাইলে তার ওপর হামলা করে৷ তাকে ও ১৩ কারারক্ষীকে জিম্মি করে মারধর করে কারাগারের ভেতরের ফটক ভেঙে বের হওয়ার চেষ্টা করেন বন্দিরা৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারারক্ষীরা গোলাগুলি শুরু করেন৷ মুহুর্মুহু গুলির শব্দে পার্শ্ববর্তী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ প্রায় দুই ঘণ্টা থেমে থেমে ব্যাপক গোলাগুলি হয়৷ এতে ৬ বন্দি নিহত হন৷ সেনাবাহিনীর সদস্যরা কয়েদিদের শান্ত থাকা ও পালিয়ে না যাওয়ার জন্য আহ্বান জানান৷''

এছাড়া চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক বন্দিরা বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে৷ সেনাবাহিনীর একটি টিম পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে৷

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মুহাম্মদ মঞ্জুর হোসেন বলেন, ‘‘কারাগারে কিছু বন্দি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়৷ ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করে সেনাবাহিনী৷'' কারাগার থেকে কোনো বন্দি পালিয়েছেন কিনা কিংবা কেউ হতাহত হয়েছেন কিনা সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি জানাতে পারেনি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ