1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নিরাপদ সড়ক, আইন না মানা ও অবহেলার কাহন

২৫ নভেম্বর ২০২১

তিন বছর পর ঢাকার রাস্তায় আবারও একই ছবি দেখা যাচ্ছে৷ রাজপথে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন৷ গাড়ি আটকে কাগজপত্রও দেখছেন৷ ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর এই ছবি প্রথম দেখা গিয়েছিল৷

Autonfall  Faridpur Bangladesch
ফাইল ফটোছবি: bdnews24.com

সেদিন ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দ্রুতগতির দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ঐ দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়েছিলেন৷ এরপর নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমেছিলেন৷

আর এবার প্রাণ হারিয়েছেন নটর ডেম কলেজে তিনি উচ্চমাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র নাঈম হাসান৷ বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গুলিস্তান হল মার্কেটের সামনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান ১৭ বছরের এই তরুণ৷ ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ময়লার ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন চালকের সহকারী৷ চালক নাকি গাড়িটি তাকে দিয়ে বাসায় চলে গিয়েছিলেন৷ চালকের সহকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷

নাঈম হাসানের মৃত্যুর প্রতিবাদে তার প্রতিষ্ঠান নটর ডেম ছাড়াও ঢাকার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন৷ তারা বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবি জানিয়েছেন৷

২০১৮ সালে রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরও নিরাপদ সড়কের দাবি জানানো হয়েছিল৷ ঐ দাবি মেনে ২০ সেপ্টেম্বর সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ পাস করা হয়েছিল৷ সেখানে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু দুর্ঘটনা কমেনি৷

যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে, ২০২০ সালে সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজার ৬৮৬ জন৷ এদের মধ্যে শিক্ষার্থী ৭০৬ জন, শিক্ষক নিহত হয়েছেন ১০৪ জন৷ আর পুলিশের দেয়া তথ্য উল্লেখ করে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান চার হাজার ৩৫৮ জন৷

নীচের টাইমলাইনটি পড়লে সড়ক দুর্ঘটনা না কমার কারণগুলো স্পষ্ট হতে পারে:

  • ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮: সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ পাস
  • ৮ অক্টোবর, ২০১৮: গেজেট জারি
  • ফেব্রুয়ারি, ২০১৯: আইন পাসের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও সেটি কার্যকর করা যায়নি৷ কারণ আইনটিতে পরিবর্তন আনার দাবি জানিয়েছিলেন পরিবহন শ্রমিকরা৷ এ লক্ষ্যে তারা ধর্মঘটও করেছেন৷ তাই আইনটি কীভাবে প্রয়োগ করা যায় তা নিয়ে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীর সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল৷
  • ১ নভেম্বর, ২০১৯: আইন পাসের এক বছরেরও বেশি সময় পর আইনটি কার্যকর হয়৷ তবে আইনের কিছু ধারা শিথিল করার কথা ট্রাফিক পুলিশকে জানানো হয়৷
  • ১৩ মে, ২০২১: পরিবহন শ্রমিকদের চাপের মুখে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়৷ সংশোধিত আইনের খসড়া তৈরি করে সেটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের ওয়েবাইটে দেয়া হয়৷ ঐ খসড়ার উপর মতামত দেয়ার শেষ সময় ছিল ১৩ মে৷
  • ২৫ নভেম্বের, ২০২১: খসড়াটি মন্ত্রিসভায় তোলা হবে৷ এরপর সংসদে পাঠানো হবে৷
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW

টাইমলাইন থেকে বোঝা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পর দাবি মেনে আইন করা হলেও সেটি পুরোপুরি কার্যকর করা যায়নি৷ বরং সেটিকে দুর্বল করার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ কারণ পরিবহন শ্রমিকরা আইনের ১২৬টি ধারার মধ্যে ৩৪টি ধারা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন৷ এর মধ্যে কমপক্ষে ২৯টি ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে৷

বর্তমানে সড়ক পরিবহন আইনের সবচেয়ে কঠোর ধারা তিনটি - ৮৪, ৯৮ ও ১০৫৷ এগুলো অজামিনযোগ্য অপরাধ৷

  • ৮৪ ধারায় অবৈধভাবে মোটরযানের আকৃতি পরিবর্তনে শাস্তির কথা বলা হয়েছে৷
  • ৯৮ নম্বর ধারায় ওভারলোডিং বা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে গাড়ি চালানোর শাস্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে৷
  • ১০৫ নম্বর ধারায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে৷

সংশোধনী খসড়ায় যা বলা হয়েছে:

  • ৮৪ ও ৯৮ ধারাকে জামিনযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচনার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এছাড়া ৯৮ ধারাকে আপোষযোগ্য বলা হয়েছে৷
  • ১০৫ ধারায় জরিমানা তিন লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ তবে পাঁচ বছর কারাদণ্ডের বিষয়টি রাখা হয়েছে৷ খসড়ায় বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীর পরিবারকে জরিমানার টাকা সম্পূর্ণ বা আংশিক পরিশোধের জন্য আদালত আদেশ দিতে পারবে৷

আইন দিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করা হয়ত সম্ভব নয়৷ তবে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করা গেলে দুর্ঘটনা কমানো যেতে পারে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ