1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে মাংস খাওয়ার প্রবণতা

প্রিয়া এসেলবর্ন/আরবি২১ জানুয়ারি ২০১৩

ভারতকে নিরামিষাশীদের দেশ বলেই মনে করা হয়৷ কিন্তু সেখানেও মাংস খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে৷ গত দশ বছরে মাংসভোজীর হার দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে৷ সেই সাথে দেখা দিচ্ছে নানা রকম রোগ ব্যাধিও৷

In this June 5, 2011, photograph, guests pack the meat dish in a plastic bag to take home during a lunch at a marriage ceremony in Srinagar, India. As the ranks of the wealthy surge with India's economic growth, many families are staging extravagant displays of food, often at their children's weddings, to show off their newfound affluence. But the extravagant waste that follows has horrified many in a nation where tens of millions of young children are malnourished. (AP Photo/Dar Yasin)
ছবি: AP

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে নিরামিষ ভোজীর হার ৪০ শতাংশ৷ এই দিক দিয়ে বিশ্বের সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে ভারত৷ কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে অন্যরকম হাওয়া বইতে শুরু করেছে সেখানে৷

ফাস্ট ফুডের বিস্তার

বিশেষকরে শহরগুলিতে ফাস্ট ফুড রেস্তোঁরা গজিয়ে উঠছে যেন ছত্রাকের মতো৷ আলোকোজ্জ্বল বিজ্ঞাপন দিয়ে বিশেষ করে তরুণদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে তারা৷ দিল্লি, মুম্বই ও কলকাতার মতো বড় বড় শহরগুলিতে সপ্তাহান্তে মানুষের ভিড় লেগেই থাকে সেসব খাওয়ার জায়গায়৷ পরিবার পরিজন নিয়ে কোকাকোলা, বার্গার ও ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খাওয়ার ধুম পড়ে যায়৷ এ প্রসঙ্গে নতুন দিল্লির ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ ডা. সঞ্জয় সানাধ্যায় বলেন, ‘‘ভারতের মানুষরা পশ্চিমা বিশ্বের জীবনধারা অনুকরণ করছে চিন্তাভাবনা না করেই৷ লক্ষ্য করা যায়, কীভাবে তারা নিজের সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছে৷ এছাড়া বিশ্বায়নের এই যুগে বিভিন্ন দেশে যাতায়াত বেড়ে যাওয়ার কারণেও মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলাচ্ছে৷''

ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণি, বিশেষ করে অল্পবয়সীরা মাংস খাওয়াকে মুক্ত মনের পরিচায়ক বলে মনে করে৷ এছাড়া মাংসের পদ নিরামিষের চেয়ে দামি বলে এক ধরনের বিত্ত বৈভবের পরিচয়ও তুলে ধরে তারা৷

ভারতে ফাস্ট ফুড জনপ্রিয় করতে চেষ্টার অন্ত নেইছবি: Strdel/AFP/Getty Images

রক্ষণশীলতা কাটিয়ে উঠছে তরুণরা

তরুণ ছাত্র যসপ্রিত সিং অনেক বছর ধরেই মাছ মাংস খাচ্ছেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি শরীরের জন্য যথেষ্ট প্রোটিন গ্রহণ করার চেষ্টা করি৷ মুরগি ও ভেড়ার মাংস এবং মাছ খাওয়ার অভ্যাস আছে আমার৷ সব সময় স্বাদের না হলেও আমি সব কিছুই চেখে দেখতে চাই৷ সবাইকে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলা উচিত৷''

সহপাঠী নেহা চৌহান নিরামিষাশী হলেও তার বোন ও বাবা মাংস খান৷ নেহা জানান, ‘‘আমার বোন দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে৷ তাই তার সে সব জায়গার সঙ্গে তাকে খাপ খাইয়ে চলতে হয়৷ আমাকে এটা করতে হয়নি৷ আমাকে অন্য কোনো দেশে বসবাস করতে হলে সেখানকার সমাজের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে হয়তো মাংসও খেতে হতো৷''

ধর্মীয় বিধিনিষেধ

অন্যদিকে, মাংস খাওয়ার ব্যাপারে নানা রকম ধর্মীয় বিধিনিষেধও রয়েছে৷ ভারতের ৮০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ তারা গরুর মাংস খান না, মুসলমানরা শুয়োরের মাংস থেকে দূরে থাকেন৷ ম্যাক ডোনাল্ডস-এর মতো ফাস্ট ফুড রেস্তঁরাগুলিতে ভারতীয় সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে গরুর মাংসের বার্গার বিক্রি করা হয় না৷ তার বদলে পরিবেশন করা হয় ‘চিকেন মহারাজা বার্গার'-এর মতো বার্গার৷ বিজ্ঞাপনে বলা হয়, এইবার্গার খেলে নিজেকে মহারাজার মতোই মনে হবে৷

এইভাবে এইসব রেস্তোঁরা বলিউড বা ক্রিকেট তারকাদের নিয়ে প্রচারণা চালিয়ে বিশেষ করে তরুণ জনগোষ্ঠীকে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করে৷ তৈলাক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবারের পাশাপাশি শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণও কমে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে৷ যেমন অফিসে চেয়ারে বসেই কাজ করতে হয় অনেকটা সময়, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যকর খাবারের সুযোগ সুবিধাও কম৷ পুষ্টিকর খাদ্য দ্রব্য ও রান্নাবান্নার সময়ও পান না অনেকে৷ একটু স্বচ্ছল হলেই গাড়ি কেনার প্রবণতা থাকে৷ ঘরকন্নার সাহায্যে থাকে কাজের লোকজন৷

ম্যাক ডোনাল্ডস-এর মতো ফাস্ট ফুড রেস্তঁরাগুলিতে ভারতীয় সমাজের সঙ্গে খাপ খাইয়ে গরুর মাংসের বার্গার বিক্রি করা হয় নাছবি: DW

‘লাইফ স্টাইল' নিয়ে সমস্যা, রোগের প্রকোপ

এর ফলে দেখা দিচ্ছে নানা রকম রোগ ব্যাধি৷ চিকিত্সক ও ডায়বেটিস বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় সানাধ্যায় এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘লাইফ স্টাইল-এর একটা বিরাট প্রভাব পড়ছে মানুষের উপর৷ যেমন হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়বেটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগ ব্যাধি আগের চেয়ে অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে৷ গত তিন দশকে এইসব রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা যেন এক লাফে তুঙ্গে উঠেছে৷ আমার ধারণা অবস্থা আরো খারাপের দিকে যাবে৷''

এমনিতেই ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ম্যালেরিয়া, পোলিও, যক্ষ্মা, লেপ্রা ইত্যাদির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে৷ স্বাস্থ্য বিমা এখনও বেশির ভাগ মানুষের দ্বারে পৌঁছাতে পারেনি৷ তার ওপর হৃদরোগ, বহুমূত্র ও উচ্চরক্তচাপের মতো অসুখ বিসুখের হার বৃদ্ধি পেতে থাকলে স্বাস্থ্য পরিষেবাকে হিমশিম খেতে হবে৷

গবেষক ও চিকিত্সক ড . কে . কে . আগরওয়াল এই প্রসঙ্গে মন্তব্য করেন, ‘‘ভারতে ডায়বেটিস রোগটি মহামারির আকার নিতে থাকলে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অন্ধ, হৃদরোগও অঙ্গহীন মানুষের বাসস্থান হবে দেশটি৷ দুর্ভাগ্যবশত এখন পর্যন্ত ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণের তেমন কোনো কর্মসূচি নেই ভারতে৷ হৃদরোগের রক্ত সঞ্চালন ও মেদ জনিত অসুখ বিসুখের ব্যাপারে কিছু কিছু প্রকল্পের উদ্যোগ নেয়া হলেও এক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে৷ আর তা না হলে এ ব্যাপারে পরিবর্তন আসবে না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ