যারা নিরামিষ খান, তাদের মধ্যেও পার্থক্যের অভাব নেই৷ জার্মানিসহ অনেক দেশে ‘ভিজান'রা মাছ-মাংস-ডিমের পাশাপাশি দুধ, দই, চিজও বর্জন করেন৷ তবে পেঁয়াজ-রসুনে আপত্তি নেই৷ কোলন শহরে এমনই এক ভিজান রেস্তোরাঁর খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু৷
বিজ্ঞাপন
কোলন শহর রাইন নদীর তীরে জার্মানির মিডিয়া রাজধানী হিসেবে পরিচিত৷ শহরের এয়ারেনফেল্ড এলাকায় মূলত বিদেশি অভিবাসী ও তরুণ প্রজন্মের বসবাস৷ নাম ‘রঙিন বার্গার' হলেও সেখানে মাংস, দুধ ও চিজ বাদ দিয়ে প্রায় সবই পাওয়া যায়৷ এটাই জার্মানির প্রথম ‘ভিজান' (বানানভেদে ভেগান) বা শুদ্ধ নিরামিষ বার্গারের রেস্তোরাঁ৷ উলরিশ গ্লেমনিৎস ও মারিও বিন্ডার এই রেস্তোরাঁর মালিক৷
উলরিশ গ্লেমনিৎস বলেন, ‘‘হৃদয়ের ডাক শুনে আমি এগিয়ে গেছি৷ মারিও-ও সেটাই চেয়েছিল৷ ঠিক করলাম, শুদ্ধ নিরামিষ ভিজান খাবারের রেস্তোরাঁ খুলবো৷ তবে নামের মধ্যে ‘ভিজান' শব্দটি কিন্তু নেই৷ খাবারের স্বাদই এখানে আসল বিষয়৷''
সেই প্রয়াস কতটা সার্থক হচ্ছে, তা জানতে রেস্তোরাঁর হেঁশেলে উঁকি দিতে হয়৷ সেখানে লেটুস পাতা ধোয়া হচ্ছে এবং রাঙালুর চিপস ভাজা হচ্ছে৷ রাঁধুনী জন কাম্পানা সব কিছু সামলাচ্ছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা বেশ বড় টুকরো৷ এটা ময়দার আঠার কাটলেট৷ ময়দার আঠা আমরা নিজেরাই তৈরি করি৷ কয়েক দিন পর পর তৈরি হয়৷''
জার্মানিতে ভেগানদের জীবনযাত্রা
‘ভেগান’ আসলে ঠিক কি বা কারা, এ সম্পর্কে কয়েক বছর আগ পর্যন্তও মানুষ তেমন জানতো না৷ তবে এখন জার্মানিতে ভেগান বা উদ্ভিদভোজীদের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে৷
ছবি: Fotolia/Gorilla
ভেগান বা উদ্ভিদভোজী
কয়েক বছর আগ পর্যন্ত যারা দুধ, ডিম, মাংস খেতেন না তাদের অন্য চোখে দেখা হতো৷ সময় বদলেছে এবং এরই মধ্যে ভেগানদের সংখ্যা বেড়েছে অনেক৷ ভেগানরা শুধু নিরামিষাশী নন, তাঁরা প্রাণিজাত কোনো কিছু খান না৷ ভেগানরা শুধু স্বাস্থ্যগত কারণেই উদ্ভিদভোজী হচ্ছেন তা নয়, পরিবেশ রক্ষায়ও তাঁরা অবদান রাখতে চান৷ ভেগানদের জন্য রেস্তোরাঁ, সুপার মার্কেট, রান্নার বই, রান্নার কোর্স এসব বর্তমানে খুবই চলছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাঁধুনি আটিলা হিল্ডমান
জার্মানির খ্যাতনামা ভেগান রাঁধুনি আটিলা হিল্ডমান (বাঁয়ে)৷ ভেগান রান্না সম্পর্কে লেখা তাঁর বই তিন লাখ কপি বিক্রি হয়েছে৷ ভেগানদের জীবনধারা মানে তাঁর কাছে প্রাণিজাত খাবার পুরোপুরি বাদ দিয়ে জীবনযাপন – অর্থাৎ তাজা, টগবগে থাকা এবং কোনো ধরণের সমস্যা ছাড়াই সহজে ওজন কমানো৷
ছবি: Jenny Hoff
সুস্থ, স্লিম এবং ফিট
‘ভেগান ফর ফিট’ আটিলা হিল্ডমানের এই বইটি বেস্ট সেলারের তালিকায় ছিলো৷ সহজে, সস্তায় এবং কম সময়ে কিভাবে স্বাস্থ্যকর রান্না করা যায়, স্লিম হওয়া যায় তারই কিছু নমুনা রয়েছে বইটিতে৷ যারা স্লিম হতে আগ্রহী তাঁদের মধ্যে বইটি দারুণ সাড়া ফেলেছে৷
ছবি: Fotolia/Gorilla
পশুপাখীদের বন্দি রাখার প্রতিবাদ
আজকাল ভেগান বা উদ্ভিদভোজী হওয়ার ব্যাপারটা অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ বড় শহরগুলোতে ব্যাঙের ছাতার মতো ভেগান রেস্তোরাঁ, সুপার মার্কেট গজিয়ে উঠছে৷ জার্মানির ভেজিটারিয়ান সমিতির হিসেব অনুযায়ী, জার্মানিতে বর্তমানে ভেগানের সংখ্যা আট লক্ষ এবং ক্রমেই তা আরো বাড়ছে৷
ছবি: picture alliance/Augenklick/Kunz
সুপার মার্কেটে সয়া মিল্ক
সয়ার তৈরি কাটলেট কিংবা দুধ ছাড়া পনির, এমনকি কুকুর বেড়ালের জন্যও ভেগান খাবার পাওয়া যাচ্ছে আজকাল৷ সাধারণ ডিসকাউন্ট শপগুলোতেও সয়া মিল্ক রাখা হয়৷ ভেগান জীবনধারা, মানে শুধু খাওয়া দাওয়ার দিক দিয়ে নয়, কাপড়-চোপড়ের ব্যাপারেও ভেগানদের জীবনদর্শন পুরোপুরি আলাদা৷ অর্থাৎ চামড়া বা প্রাণিজাত সবকিছুই পরিহার করা৷
ছবি: imago
বিশ্ব জুড়ে ভেগান আলোচনা
সারা বিশ্বেই রয়েছে অনেক ভেগান৷ অ্যামেরিকা এবং ইংল্যান্ডে ঐতিহ্যগতভাবেই ভেগানের প্রভাব অনেক বেশি৷ একথা বলেন জার্মানির ভেজিটারিয়ান সমিতির প্রধান সেবাস্টিয়ান৷ তাঁর মতে, জার্মানি ধীরে ধীরে ভেগানদের নেতৃত্ব দেওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ তাছাড়া ইউরোপ এবং অ্যাংলোঅ্যামেরিকান দেশগুলোর বাইরে ব্রাজিল এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশগুলোতে ভেগান আন্দোলন বর্তমানে খুব শক্তিশালী৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আদর্শ, তবে ধর্ম নয়
ভেগান জীবনধারা সত্যিই স্বাস্থ্যকর কিনা এনিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য৷ তবে ভেগানরা তুলনামূলকভাবে অসুস্থ হন কম – বিশেষ করে ডাযয়েবেটিস-২ এর মতো অসুখে৷ রাঁধুনি আটিলা হিল্ডমান বলেন, ভেগান জীবনধারা পুরোপুরি মেনে চলা সম্ভব নয়, যতটা সম্ভব ততটাই নেবো৷ তবে ভেগান জীবনযাপন করা মানে কিন্তু কোনো কিছু থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়৷ শুধু এটাই যে খাবারের বিকল্পধারাকে মানুষের সামনে তুলে ধরা৷
ছবি: Eilís O'Neill
ভেগান খাওয়াও উপভোগ করা যায়
মাছ, মাংস বাদ মানেই সবকিছু থেকে বঞ্চিত নয়, বরং বেগুন, শাক-সবজি বা ডালের মজার মজার খাবার এবং নানা ধরনের সালাদে মজাদার ড্রেসিং দিয়ে আরো মজা পাওয়া সম্ভব৷ গত কয়েক বছর ধরে খাবারকে একটু অন্যভাবে তৈরি করে আরো সুস্বাদু করা হয়েছে৷
ছবি: Fotolia/koi88
8 ছবি1 | 8
চীনা ও জাপানি জেন-বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা মাংসের বিকল্প হিসেবে ময়দার আঠা তৈরি করেছিলেন৷ জন কাম্পানা বলেন, ‘‘প্রথমে ইটালিয়ান পেস্টো সস দিয়ে শুরু করছি৷ তাতে রয়েছে তাজা পার্সলি পাতা, মিষ্টি কাসুন্দি, সূর্যমুখী ফুলের বীজ৷ তার উপর তাজা স্থানীয় লেটুস পাতা৷''
সঙ্গে শসা ও বিট-ও থাকে৷ কাম্পানা বলেন, ‘‘প্রতিদিনই এখানে এমন সব মানুষ আসেন, যারা বড়সড় হ্যামবার্গারের লোভে ভুল করে ঢুকে পড়েন৷ কিন্তু এখানে তো সেটা পাওয়া যায় না৷ তখন আমরা তাদের এই বার্গার খেতে বলি, কারণ এটির মধ্যেই সবচেয়ে বেশি মাংসের মতো স্বাদ পাওয়া যায়৷ কোনো মাংসাসী এখনো পর্যন্ত এটি না খেয়ে চলে যাননি৷''
একটু চিনি দিয়ে লাল পেঁয়াজ ভেজে মচমচে করে নেওয়া হয়৷ তার উপর আরও একটু শুকনো ভাজা পেঁয়াজ পড়ে৷ ব্যস, খাবার প্রস্তুত৷