এতদিন তাকে রাখা হয়েছিল গোপন স্থানে, এবার অং সান সু চি-কে নির্জন কারাবাসে রাখা হলো।
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারে সেনা মুখপাত্র জানিয়েছেন, এতদিন দেশের আইন অনুসারেই সু চি-কে গোপন স্থানে রাখা হয়েছিল। এবার তাকে রাজধানীর জেলে রাখা হয়েছে। তবে তিনি নির্জন কারাবাসে আছেন।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সু চি-কে গ্রেপ্তার করা হয়। নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দিয়ে সেনা তখন ক্ষমতা দখল করেছিল। প্রথমে সু চি-কে তার বাড়িতে আটক করে রাখা হয়। পরে তাকে কোনো অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। কোথায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা বলা হয়নি। তবে অনুমান করা হচ্ছিল কোনো সেনা ঘাঁটিতে আছেন সু চি।
সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৭৭ বছর বয়সি সু চি আগের মতোই মানসিক দিক থেকে শক্ত আছেন। তিনি এই ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলায় অভ্যস্ত। তাই তিনি বিচলিত নন।
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বছরপূর্তিতে হরতাল
এক বছর আগে সেনা বিদ্রোহে ক্ষমতা হারিয়েছিল মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকার৷ অভ্যুত্থানের এক বছরে প্রতিবাদে সামিল অসংখ্য মানুষ৷ তারা সামরিক আদেশ অমান্য করেছেন, হরতালে সাড়া দিয়ে ঘর থেকে বেরোননি কেউ৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে ফাঁকা ইয়াঙ্গন
স্ট্র্যান্ড রোড হলো ইয়াঙ্গনের অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা৷ মঙ্গলবারে সেটি একেবারে শুনশান ছিল৷ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে দক্ষিণ এশীয় দেশ মায়ানমারের সেনা অভ্যুত্থান ঘটেছিল এক বছর আগে৷ সামরিক অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে প্রতিবাদ জানিয়ে হরতালের ডাক দেয়া হয়েছিল মিয়ানমারে৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
ব্যবসা চালু রাখার আদেশ অমান্য
মান্দালায় রেলস্টেশনের সামনের প্লাজাটি ছিল একেবারে ফাঁকা৷ অ্যাক্টিভিস্টদের কথায়, এটি ছিল ‘নীরব হরতাল’৷ হরতালে অংশ নিলে ব্যবসা বন্ধের হুমকি দিয়েছিল জুন্টা৷ প্রতিবাদ জানালে কিংবা সেনার বিরুদ্ধে কোনওরকম মিছিল বা সমাবেশ বা প্রচার করলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়েরের হুমকি দেওয়া হয়েছিল৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
পথে নেমে প্রতিবাদ..
গ্রেপ্তারের হুমকিকে পরোয়া করেননি অনেক প্রতিবাদী৷ মান্দালায় বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল গণতন্ত্রপন্থী ব্যানার৷ তাতে লেখা ছিল, ‘জনগণের ইচ্ছার বিরোধিতা করার স্পর্ধা দেখায় কে’৷ তবে সেদিন কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
জুন্টাকে সমর্থন
মিয়ানমারের স্টেট নিউজ সার্ভিস জানিয়েছে, রাজধানী নেপিদোতে মঙ্গলবার সেনাশাসকদের সমর্থনে সমাবেশ হয়েছিল৷ জুন্টা কিছু ক্ষেত্রে সমর্থন পেলেও তাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক স্তরে যথেষ্ট প্রতিরোধ রয়েছে৷ জাতিসংঘ জানিয়েছে, একাধিক হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণ করছে জুন্টা৷ পাশাপাশি, সহিংসতার অভিযোগে জুন্টার সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা যৌথভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
বিচার চলছে সু চির
মিয়ানমারে নেত্রী অং সান সু চি সেনা অভ্যুত্থানের ফলে ক্ষমতাচ্যুত হন৷ সরিয়ে দেওয়া হয় তার দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে (এনএলডি)৷ গ্রেপ্তার করা হয় সু চিকে৷ একাধিক ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা চালু করা হয়েছে৷ এর ফলে ১৫০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে নেত্রীর! ২০২০ সালের নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে৷
ছবি: REUTERS
‘সিভিল ডিসওবেডিয়েন্স’
গত এক বছরে, বিক্ষোভকারীরা অহিংসভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছেন৷ একাধিক কর্মসূচি সংগঠিত করেছেন৷ সরকারি কর্মচারী, ব্যবসায়ী এবং একাধিক পরিষেবার কর্মীদের হরতালে সাড়া দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল৷ এর আগে সর্বশেষ দেশব্যাপী ধর্মঘট হয়েছিল গত ডিসেম্বরে৷ মিয়ানমার জুড়ে শহর ও শহরতলি ছিল একেবারে ফাঁকা৷ মঙ্গলবার ইয়াঙ্গনের বিখ্যাত শোয়েডাগন প্যাগোডার সামনে দেখুন, কোনও মানুষজন নেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
সংঘর্ষের এক বছর
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে, মিয়ানমারে একাধিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে৷ সেনাবাহিনী তাদের বিরুদ্ধে যে কোনো প্রতিরোধকে সমূলে বিনাশের চেষ্টা করেছে৷ অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে অহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল৷ সেই সময় সেনাবাহিনী বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে৷ ২০২১ সালের মার্চ মাসে বিক্ষোভের আঁচ আরও বেড়ে গিয়েছিল৷ তখনকার ছবিতে ধরা পড়েছে, ব্যারিকেডের পিছনে লুকিয়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
নথিভুক্ত হওয়া প্রথম মৃত্যু
স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলির অনুমান, মিয়ানমারে সামরিক শাসনকালে দেড় হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷ জাতিসংঘ মঙ্গলবার জানিয়েছে, তারা সাধারণ নাগরিকদের মৃত্যুর রিপোর্ট খতিয়ে দেখছে৷ গত ২১ ফেব্রুয়ারি একজন প্রতিবাদীকে হত্যা করা হয়েছিল৷ তার অন্তিমযাত্রার ছবি দেখা যাচ্ছে এখানে৷ এই মৃত্যুটি প্রথম নথিভুক্ত হয়েছিল৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
8 ছবি1 | 8
জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ বৃহস্পতিবার বলেছেন, মিয়ানমারে মানবাধিকার সংক্রান্ত পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সেনা-অভ্যুত্থানের পর বিক্ষোভ থামাতে গিয়ে গুলি চলেছে। প্রচুর মানুষ মারা গেছেন। বিরোধীদের আটক করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক দুনিয়া কিছুই করছে না। ফলে মিয়ানমারের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার ডেপুটি ডিরেক্টর ফিল রবার্টসন আলজাজিরাকে বলেছেন, সেনা শাসকরা সু চি ও তার সমর্থকদের শাস্তি দিতে চাইছে। তারা দেখাতে চাইছে, তারা খুবই কড়াভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা দেখাতে চাইছে, সু চি তার পরিচারক-পরিচারিকা এবং কুকুর নিয়ে থাকতে পারবেন না, তাকে নির্জন কারাবাসেই থাকতে হবে।
সু চি-র বিচার, সরব বিশ্ব
সোমবার মিয়ানমারের রাজধানীতে শুরু হয়েছে অং সান সু চি-র বিচার। মঙ্গলবারও অন্য একটি মামলায় শুনানি হবে তার।
ছবি: Sakchai Lalit/AP Photo/picture alliance
ওয়াকি-টকি কেস
সোমবারের মামলায় জুন্টা সরকার আদালতকে জানিয়েছে, বিদেশ থেকে বেআইনি ভাবে ওয়াকি-টকি এনেছিলেন সু চি। এ ছাড়াও তার বিরুদ্ধে অতিমারি আইনে মামলা হয়েছে। করোনার সময় তিনি ভোটের প্রচার করেছিলেন।
ছবি: REUTERS
চার মাস পর বিচার
চার মাস আগে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে সেনা। সু চি-কে গ্রেপ্তার করা হয়। এতদিন পর তার বিচার শুরু হলো।
ছবি: AFP/Getty Images
জুন্টা আদালতে বিচার
সেনা জুন্টার আদালতেই বিচার শুরু হয়েছে সু চির। তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। দেশের গোপন তথ্য বিদেশে পাচার করার অভিযোগ দায়ের হয়েছে। অর্থ তছরুপ এবং বেআইনি সোনা রাখার অভিযোগও করা হয়েছে।
ছবি: AP/dpa/picture alliance
দেশ জুড়ে বিক্ষোভ
সু চি গ্রেপ্তার হওয়ার পরেই দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। সু চি-র বিচার শুরু হওয়ার পরেও দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। বিক্ষোভে ইন্ধন জোগানোর অভিযোগ আনা হয়েছে সু চি-র বিরুদ্ধে।
ছবি: STR/AFP/Getty Images
এনএলডি-র উপর কোপ
সু চি-র দলের নাম এনএলডি। সু চি-র বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়ায়, তার দল আপাতত সরকার চালাতে পারবে না। নির্বাচনেও লড়াই করতে পারবে না।
ছবি: STR/AFP/Getty Images
অভিযোগ অস্বীকার
সু চি-র আইনজীবীরা আদালতে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। সু চি-কে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
ছবি: STR/AFP/Getty Images
আন্তর্জাতিক চাপ
জাতিসংঘ প্রথম থেকেই সু চি-র মুক্তির দাবি করছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সু চি-র বিচার প্রক্রিয়াকে অর্থহীন বলে চিহ্নিত করেছে।
ছবি: Jack Taylor/AFP/Getty Images
বানানো মামলা
আন্তর্জাতিক মহলের বক্তব্য, সু চি-র বিরুদ্ধে প্রতিটি মামলাই সাজানো। তাকে গ্রেপ্তার করার জন্যই অভিযোগ গুলি দায়ের করা হয়েছে।
ছবি: REUTERS
8 ছবি1 | 8
তার মতে, এর ফলে দেশজুড়ে সু চি-র সমর্থকদের মধ্যে সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রবল হয়েছে। কিন্তু সামরিক শাসকরা কোনো কথা শুনছে না। তারা নিজেদের মতো করে কাজ করছে। এর ফলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে।
সু চি-র বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ আছে। বিচারে তার ১৫ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।