বাংলাদেশে এখন আলোচনার অন্যতম বিষয় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন৷ সময় ঘনিয়ে এলেও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে এখনো স্থির অবস্থানে আসতে পারিনি বড় দলগুলো৷ এ নিয়ে ব্লগ, ফেসবুকে চলছে নানা আলোচনা৷
বিজ্ঞাপন
নির্দলীয় নাকি সর্বদলীয় সরকার? নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার কেমন হবে – তা নিয়ে এখনো চলছে আলোচনা৷ বিরোধী দল নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে৷ অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলছেন, নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের কথা৷ এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝেই শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, ‘‘দেশের মানুষ আর কোনো অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না৷'' বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের ওপর নির্যাতন-নিপীড়নের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি একথা বলেন, জানিয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷
হরতালের আগুনে জ্বলছে বাংলাদেশ
যুদ্ধাপরাধের বিচারের প্রতিবাদে চলতি সপ্তাহে হরতালের সূচনা করে জামায়াত-শিবির৷ এএফপির হিসেবে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে ৪ই মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে সহিংসতায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ ব্যক্তি৷ হরতালের কিছু ছবি নিয়ে ছবিঘর৷
ছবি: Reuters
বরিশালে অগ্নিসংযোগ
জামায়াত-শিবিরের ডাকা হরতালের দ্বিতীয় দিন ৪ই মার্চ বরিশালে মোটর সাইকেলে অগ্নি সংযোগ করছে দলটির সমর্থকরা৷ এভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় হরতালের সময় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের উপর হামলায় অংশ নেয় জামায়াত-শিবিরের সমর্থকরা৷ উদ্দেশ্য, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করা৷
ছবি: Reuters
সহিংসতায় নিহত কমপক্ষে ৮০
ঢাকায় ৪ মার্চ হরতাল চলাকালে জামায়াতে ইসলামী কর্মী সন্দেহে এক ব্যক্তিকে আটক করছে পুলিশ৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের দাবিতে গত ২১শে জানুয়ারি থেকে জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন সহিংস কর্মসূচিতে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৮০ ব্যক্তি৷ নিহতদের মধ্যে জামায়াত-শিবিরের সদস্য ছাড়াও পুলিশ, আওয়ামী লীগ কর্মী, নিরীহ পথচারী এবং সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিকও রয়েছেন৷
ছবি: Reuters
ট্রেনে আগুন
ঢাকায় হরতাল চলাকালে ৪ মার্চ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থানরত একটি ট্রেনে আগুন লাগে৷ ছবিতে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন জনতা৷ ঢাকা থেকে নোয়াখালিগামী ট্রেনটির তিনটি বগি আগুনে পুড়ে গেছে৷ রেলমন্ত্রী মাজিবুল হক ট্রেনে অগ্নিসংযোগের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে দায়ী করেছেন৷
ছবি: Reuters
মসজিদ থেকে গ্রেপ্তার
হরতাল চলাকালে ৪ মার্চ ঢাকার একটি মসজিদ থেকে জামায়াত কর্মী সন্দেহে কয়েকজনকে আটকে করে পুলিশ৷ জামায়াতের ভাইস-প্রেসিডেন্ট দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়ার পর বাংলাদেশে সহিংসতার তীব্রতা বেড়ে যায়৷ ২৮ ফেব্রুয়ারি এই রায় ঘোষণার পর বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতায় ৪ মার্চ অবধি প্রাণ হারিয়েছেন ৬৪ ব্যক্তি৷
ছবি: Reuters
অব্যাহত অগ্নিসংযোগ
হরতালের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে অগ্নিসংযোগ৷ রাস্তায় টায়ার পোড়ানো, গাড়িতে আগুন, ট্রেনে আগুন, মার্কেটে আগুন – চলতি হরতালে সবই দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ৷ ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কল্যাণে এখন হরতালের সহিংসতার ভিডিও পৌঁছে যাচ্ছে বিশ্বের সব প্রান্তে৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ৩ মার্চ রাস্তায় অগ্নিসংযোগ করছে জামায়াতের সমর্থকরা৷
ছবি: Reuters
‘কপাল পোড়ে’ সাধারণ মানুষের...
জীবিকার তাগিদে রাস্তায় নেমেছিলেন এই অটোরিকশা চালক৷ ২ মার্চ ঢাকায় জামায়াতের কর্মীদের ছোড়া ইটের টুকরায় গুরুতর আহত হন তিনি৷ অটোরিকশাও ভেঙ্গে গেছে৷ রাজনৈতিক সহিংসতায় এভাবেই ‘কপাল পোড়ে’ সাধারণ মানুষের৷
ছবি: Reuters
শরিক জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি’র তাণ্ডব
দুই মার্চ ঢাকায় এভাবেই গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র কর্মীরা৷ সেদিন ঢাকায় মিছিল করেছিল বিএনপি এবং জামায়াতের সমর্থকরা৷ পুলিশ অবশ্য বিরোধীদের কঠোর হাতে মোকাবিলার চেষ্টা করছে৷
ছবি: Reuters
রাবার বুলেট, বুলেট
২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলাকালে বন্দুকে রাবার বুলেট ‘লোড’ করছেন এক পুলিশ কর্মকর্তা৷ তবে এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, সেদিন সংঘর্ষ চলাকালে সত্যিকারের বুলেটও ব্যবহার করে পুলিশ৷ এছাড়া হরতাল চলাকালে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ আত্মরক্ষায় বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে৷
ছবি: Reuters
চোখের সামনে জ্বলছে আগুন
২ মার্চ ঢাকায় বিএনপি সমর্থকরা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে৷ ছবিতে পুলিশ একটি জ্বলন্ত গাড়ি দেখছে৷ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে জামায়াত-শিবিরকে সমর্থন জানিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি৷
ছবি: Reuters
একদিনে নিহত কমপক্ষে ৩৪
২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে ফাঁসির রায় ঘোষণার দিনে সহিংসতায় বাংলাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ৩৪ ব্যক্তি৷ এদের মধ্যের ২৩ জন পুলিশ এবং ইসলামপন্থিদের মধ্যে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হন৷ স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে একদিনে এত সহিংসতা দেখেনি বাংলাদেশ৷
ছবি: AFP/Getty Images
10 ছবি1 | 10
জয়ের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় আল আমিন লিখেছেন, ‘‘আমার মনে হয় না অনির্বাচিত সরকার কোনো ভালো মানুষের উপর অত্যাচার করেছে৷'' ডয়চে ভেলের এই অনুসারীর মন্তব্য পছন্দ করেছেন অনেকে৷ আরেক পাঠক ওয়াহেদুজ্জামান নান্না লিখেছেন, ‘‘দেশের বেশির ভাগ মানুষ নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে মত৷''
ঢাকা মাওয়া সড়কে এক পথসভায় করা জয়ের মন্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে ফেসবুকে বি এম আজগর আলী লিখেছেন, ‘‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি অন্যায়ভাবে নির্যাতন করত, তাহলে তাঁর মা শেখ হাসিনার সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারতেন৷''
এদিকে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে ব্লগে বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করছেন ব্লগাররা৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে মোস্তাক খসরু লিখেছেন, ‘‘সমাধানের সহজ রাস্তা একটাই৷ সরকারি দলের পাঁচ/আট জন আর বিরোধী দলের পাঁচ/আট জন (যাঁরা এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পরবেন না) এমন ১০/১৬ জন নির্বাচিত সংসদ অন্তরবর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবেন৷ সরকার প্রধানতো রাষ্ট্রপতি আছেনই৷''
একই ব্লগ সাইটে আরেক ব্লগার এম ই জাভেদ লিখেছেন, ‘‘সবচেয়ে বড় কথা একটি শক্তিশালী, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে পারলে রাজনৈতিক মহলে বিদ্যমান পারস্পরিক সন্দেহ, অবিশ্বাস আর আস্থার সংকট অনেকটাই কেটে যাবে বলে প্রতীয়মান৷ তার জন্য আমাদের আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে কে জানে?''