সরকারের অবস্থান অগ্রাহ্য করে ইউরোপীয় স্তরে জার্মানির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভোট দিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষিমন্ত্রী৷ এই ঘটনার জের ধরে আগামী সরকার গঠনের উদ্যোগের উপর কালো ছায়া পড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
খোদ জার্মান চ্যান্সেলরের নির্দেশ অমান্য করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নে জার্মানির হয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ক্রিস্টিয়ান স্মিট৷ পরিবেশমন্ত্রী ও এসপিডি দলের নেত্রী বারবারা হেনড্রিক্স বার বার তাঁকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নে গ্লাইফোসেট নামের আগাছানাশক সার ব্যবহারের বিরোধী৷ তাই এই প্রশ্নে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল৷ অথচ মহাজোট সরকারের এই অবস্থান সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আরও পাঁচ বছরের জন্য গ্লাইফোসেট ব্যবহারের পক্ষে ভোট দিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী স্মিট৷ ফলে বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের এই রাজনীতিক সম্পর্কে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ পরিস্থিতি সামলাতে স্মিট কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে গ্লাইফোসেটের ব্যবহার কমানোর পদক্ষেপ নিতে চান৷
জার্মানির বিদায়ী সরকারের মধ্যে এমন অস্থিরতা আগামী সরকার গড়ার উদ্যোগের উপর কালো ছায়া ফেলছে৷ ম্যার্কেলের কর্তৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে৷ এসপিডি চায়, ম্যার্কেল যেন নিজের শিবিরের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেন৷ পরিবেশমন্ত্রী ‘আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ' হিসেবে কৃষিমন্ত্রীকে বরখাস্ত করার জন্য পরোক্ষ চাপ দিচ্ছেন৷
এই ঘটনার ফলে জার্মানিতে আবার মহাজোট সরকার গড়ার চলমান উদ্যোগ বড় ধাক্কা খেল৷ ম্যার্কেলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সরকারে যোগদানের জন্য আরও শর্ত চাপানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে এসপিডি দল৷ গ্লাইফোসেট-কেলেঙ্কারির ‘ক্ষতিপূরণ' হিসেবে এতকালের আপত্তি ছেড়ে একটি শ্রম আইন সংস্কারের দাবি মেনে নেবার প্রস্তাব দিয়েছেন এসপিডি দলের এক নেতা৷ এর আওতায় শ্রমিক-কর্মীরা পার্ট-টাইম চাকরি থেকে ফুল-টাইম চাকরিতে ফিরে যাবার আইনি অধিকার পাবেন৷ তিনিও এমন ‘আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ' নেবার দাবি করেছেন৷
ম্যার্কেল পড়েছেন উভয় সংকটে৷ স্থিতিশীল সরকার গড়তে এসপিডি-কে তিনি কাছে টানতে চান৷ অন্যদিকে তাদের চাপের মুখে একের পর এক ছাড় দিলে নিজের ইউনিয়ন শিবির তা সহজে মেনে নেবে না৷ বিশেষ করে সিএসইউ দল কৃষিমন্ত্রীর পক্ষেই অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে৷
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷