রোববার নির্বাচন৷ এদিন ইটালির ভোটাররা বাছাই করে নেবেন দেশের রাজনীতির আপাত ভবিষ্যত কর্ণধার৷ এরই মধ্যে শেষ প্রচারণা পর্ব৷ কিন্তু প্রচারণার শেষ দিনে যেন বোমা ফাটালেন দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী৷
বিজ্ঞাপন
প্রতিপক্ষদের ‘চরমপন্থি' বলে আখ্যায়িত করলেন মাটেও রেনজি৷
‘‘৪ মার্চ দেশের জন্য ইটালিয়ানদের যত আত্মত্যাগ সব বৃথা যাবে, যদি ‘চরমপন্থিদের' হাতে দেশের কর্তৃত্ব চলে যায়৷'' ফ্লোরেন্সে শেষদিনের প্রচারণায় বলছিলেন তিনি৷
‘‘আমি বিরোধী দলে থাকব, তবু কখনো চরমপন্থিদের মিত্র হবো না৷''
ইটালিতেও বাংলাদেশের মতো ভোটের আগের দিন কোনো ধরনের প্রচারণা চালানো যায় না৷ সে হিসেবে শুক্রবারই ছিল প্রার্থীদের প্রচারণা চালাবার শেষ দিন৷ শেষ দিনেই যেন শেষ মারণাস্ত্র দিয়ে আঘাত করলেন ইটালির গণতন্ত্রী পার্টি পিডি-র সেক্রেটারি৷
এদিকে, নির্বাচনে অতি ডান ও অতি বামপন্থিদের উত্থান নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে ইটালিজুড়ে৷
সর্বশেষ জরিপ বলছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বার্লুসকোনির মধ্য ডানপন্থি দল ফোরসা ইটালিয়া নেতৃত্বাধীন জোট ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পাবার সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আছে৷
তাঁর দল আরো তিনটি দলের সঙ্গে জোট গড়েছে, যার মধ্যে রয়েছে অতি ডানপন্থি নর্দার্ন লীগ৷ ডানপন্থিদের এবারের প্রচারণার মূল বিষয় ছিল, ৬ লাখ ‘অনিয়মিত' অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো৷ এছাড়া কর কমানোর বিষয়েও প্রচারণা চালিয়েছে তারা৷
নর্দার্ন লীগের নেতারা অনবরত অভিবাসী ফেরত পাঠানোর নীতির প্রতি তাদের সমর্থন প্রচার করে গেছেন৷ তবে উত্তেজনার পারদ চরমে ওঠে যখন গত মাসে দেশটির পূর্বাঞ্চরের একটি শহরে দলটির এক স্থানীয় ২৮ বছর বয়সি নেতা আফ্রিকান অভিবাসীদের গুলি করা শুরু করে৷ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এই গোলাগুলি চলে৷ এতে বেশ কয়েকজন আহত হন৷
এদিকে, একক দল হিসেবে ইউরোপনীতির সমালোচনাকারী অতিবামপন্থি ফাইভ স্টার মুভমেন্ট বা এমফাইভএস এগিয়ে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে৷ কিন্তু গত বছর সংস্কার হওয়া নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী তারা চাইলেই সরকার গঠন করতে পারবে না৷
তবে সবকিছুর ওপরে রেনজির মন্তব্য ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে৷ ইটালিতে অতি ডান ও অতি বামপন্থিদের উত্থানের বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী৷
২০১৬ সালে সংবিধানে সংশোধন আনতে তিনি যে রেফারেন্ডামের ডাক দিয়েছিলেন তাতে হেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন রেনজি৷
লুইস স্যান্ডার্স চতুর্থ/জেডএ
ফিরলেন সিলভিও বার্লুসকোনি
ইটালির সাবেক প্রেসিডেন্ট সিলভিও বার্লুসকোনির উপর ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারের কোনো অবস্থানে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷ তবে ইটালির রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব কমেনি৷
১৯৩৬ সালে জন্ম নেয়া বার্লুসকোনির প্রথম পেশা ছিল ক্রুজশিপে গান গাওয়া৷ এরপর তিনি নিজেকে মিডিয়া মোঘল হিসেবে গড়ে তুলতে সমর্থন হন৷ এছাড়া ১৯৮৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ইটালির অন্যতম শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব এসি মিলানের মালিক ছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/M.Gangne
ফোরসা ইটালিয়া
ইটালির সাবেক প্রেসিডেন্ট বেনিটো ক্রাক্সির সঙ্গে বার্লুসকোনির ভালো সম্পর্ক ছিল৷ তারপর এক দুর্নীতি কেলেংকারিতে রাজনীতি থেকে ক্রাক্সির সরে যাওয়ার পর রাজনীতিতে প্রবেশ করেন বার্লুসকোনি৷ ১৯৯৩ সালে তিনি গড়ে তোলেন ‘ফোরসা ইটালিয়া’ নামের একটি দল৷
ছবি: picture-alliance/Ropi/Luigi Mistrulli
প্রধানমন্ত্রী
ফোরসা ইটালিয়া দলের হয়ে ১৯৯৪ সালে সংসদে প্রবেশ করেন তিনি৷ সেই বছরই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন বার্লুসকোনি৷ ছিলেন ২০১১ সাল পর্যন্ত৷ ক্ষমতায় থাকাকালে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মিত দুর্নীতি ও স্বৈরশাসনের অভিযোগ উঠেছিল৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
প্রভাবশালী বন্ধু
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মধ্যে যে নেতাদের নিজের মতো মনে করেছেন তাঁদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন বার্লুসকোনি৷ যেমন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন৷ তবে যে নেতারা তাঁর সমালোচনা করতেন তাঁদের সঙ্গে বার্লুসকোনির সুসম্পর্ক ছিল না৷ যেমন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Metzel
বুঙ্গা বুঙ্গা
ঘুস দেয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর ফাঁকি ইত্যাদি অভিযোগে ২০১১ সালে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন বার্লুসকোনি৷ তাঁর বিরুদ্ধে ‘বুঙ্গা বুঙ্গা’ পার্টি আয়োজনেরও অভিযোগ উঠেছিল৷ এসব পার্টিতে নাকি অপ্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে যৌনসম্পর্ক স্থাপন করা হতো৷ ছবিতে যাঁকে দেখছেন তাঁর নাম করিমা এল-মাহরুগ৷ তাঁকে ঘিরে একটি কেলেংকারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন বার্লুসকোনি৷ প্রথমে অপরাধী প্রমাণিত হলেও ২০১৪ সালে অভিযোগ থেকে মুক্তি পান তিনি৷
ছবি: Getty Images
অভিযুক্ত
২০১৩ সালে কর ফাঁকির মামলায় অভিযুক্ত হন বার্লুসকোনি৷ রায়ে তাঁর বিরুদ্ধে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সরকারি কোনো পদে আসীন হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ মামলার রায়ের সময় তাঁর বয়স সত্তরের বেশি ছিল৷ তাই জেলে যাওয়ার পরিবর্তে তাঁকে কমিউনিটি সেবায় অংশ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়৷ এখন তিনি সপ্তাহে চার ঘণ্টা বয়স্ক ডিমেনশিয়া রোগীদের সেবায় কাটান৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সক্রিয় রাজনীতি
ইটালির রাজনীতিতে বার্লুসকোনির দলের প্রভাব এখনো আছে৷ তাঁর দলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে অভিবাসন ও ইউরোপবিরোধী দল লেগা নর্ড৷ ফলে মার্চের ৪ তারিখে অনুষ্ঠেয় সাধারণ নির্বাচনের আগে পরিচালিত এক জরিপে বার্লুসকোনির দল ও লেগা নর্ডের জোট এগিয়ে আছে৷
ছবি: Reuters/S. Rellandini
আবার নির্বাচন
ইতিমধ্যে বার্লুসকোনি জানিয়েছেন, তিনি রাজনীতি থেকে অবসরে যাবেন না৷ তাই ২০১৯ সালে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর আবারও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি৷
ইউরোপীয় অতীত; স্থাপত্য ও চিত্রকলা; ভেনিস, ফ্লোরেন্স, রোমের মতো শহর, অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য, সমুদ্রসৈকত – কি নেই এই আশ্চর্য দেশটিতে!
ছবি: picture-alliance/robertharding/N. Clark
ডলোমাইট্স, ইটালির আল্প্স
দক্ষিণ-পূর্ব ইটালির এই চুনাপাথর পর্বতমালা তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যে কোনো পর্যটককে মুগ্ধ করার ক্ষমতা রাখে৷ গোটা এলাকাটি ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট৷ এখানে গ্রীষ্মে হাইকিং, সাইক্লিং অথবা বেস জাম্পিং, শীতকালে স্কি করা যায়৷
ছবি: Fotolia/Krasnevsky
পাহাড়ের কোলে হ্রদ...
...আর হ্রদের গা ঘেঁষে বাগান ঘেরা প্রাসাদ৷ ইংরেজ রোম্যান্টিক কবি শেলি কোমো হ্রদের ধারে এমনই একটি ‘ভিলা’ কিনেছিলেন৷ উত্তর ইটালির এই সব হ্রদ আর লাগোয়া জনপদে টুরিস্টদের না থেমে উপায় নেই৷
ছবি: Picture-alliance/P. Barritt
শপিং করতে হলে যেতে হবে মিলান
ইটালীয় ফ্যাশন দেখতে চান তো মিলানের দ্বিতীয় ভিত্তোরিও এমানুয়েল মল-এ চলে আসুন৷ এই শপিং মলটি খোলা হয় ১৮৭৭ সালে! ভ্যালেন্তিনো, ভেরসাচে, প্রাদা ও আরমানি-র মতো বড় বড় লেবেলের হেডকোয়ার্টার্স এই মিলান শহরে৷
ছবি: Getty Images/V. Z. Celotto
পৃথিবীর আশ্চর্যতম শহর ভেনিস
রাস্তার বদলে খাল, দু’ধারে গথিক প্রাসাদ, খালের জলে ভাসছে গন্ডোলা – আর কার্নিভালের মরশুম হলে প্রাচীন সব সাজগোজ আর ভেনিসের সুবিখ্যাত মুখোশের ভিড়৷ সারা দুনিয়ার মানুষ ভেনিসে আসার স্বপ্ন দেখে৷ প্রতিবছর সে স্বপ্ন সফল করেন লক্ষ লক্ষ পর্যটক৷
ছবি: picture alliance/Robert Harding World Imagery
মিকেলাঞ্জেলোর শহর ফ্লোরেন্স
পিয়াৎসালে মিকোলাঞ্জেলো চত্বর থেকে আর্নো নদীর ধারে অবস্থিত গোটা শহরটিকে দেখা যায়৷ রেনেসাঁসের জন্মই যে শহরে, তার মধ্যমণি হলো ব্রুনেলেস্কির গম্বুজ দেওয়া ডুওমো গির্জা৷ এই শহরেই রয়েছে মিকেলাঞ্জেলোর ১৭ ফুট উঁচু শ্বেতপাথরের ডেভিড মূর্তি৷
ছবি: Picture-alliance/D. Kalker
টাস্কানির আঙুরখেত
মধ্য ইটালির এই অঞ্চলে ‘কিয়ান্তি’-র মতো নানা নামকরা ওয়াইন তৈরি হয়৷ তবে এখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য টাস্কানির নিজস্ব, সেই সঙ্গে রয়েছে সিয়েনা বা পিসার মতো বিশ্ববিখ্যাত শহরের টান৷ পিসার হেলানো টাওয়ারের কথা মনে আছে তো?
ছবি: Picture-alliance/Arco Images/J. Moreno
‘সব পথ যেখানে গিয়ে শেষ হয়’
রোম আজও ইটালির রাজধানী৷ অপরদিকে পোপের বাসও এখানে, ভ্যাটিকানে (ছবিতে সেন্ট পিটার্স ক্যাথিড্রাল)৷ পর্যটকরা রোমে আসেন দু’ হাজার বছর আগের রোমক সভ্যতার নিদর্শন দেখতে: কলোসিয়াম, প্যান্থিওন, রোমান ফোরাম৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/N. Clark
পিৎসা মার্গেরিটার জন্ম যেখানে
নেপলসের পিৎসা নির্মাতা রাফায়েলো এস্পোসিতো ১৮৮৯ সালের ১১ই জুন তারিখে এই পিৎসার রেসিপিটি সৃষ্টি করেন ইটালির রানি, মার্ঘেরিতা অফ স্যাভয়-এর সম্মানে৷ আজ সেই পিৎসা দুনিয়ার সর্বত্র এবং বিশেষ করে কচিকাঁচাদের ফেবারিট৷
ছবি: picture alliance / Pacific Press
আমাল্ফি উপকূল
সাগরের ধার ঘেঁষে পাহাড়, মাঝেমধ্যে নেমে এসেছে একটি ঝর্না৷ কোন সুদূর অতীতে সেই পাহাড়ের গা আঁকড়ে গড়ে উঠেছে একটির পর একটি জেলেদের গ্রাম৷ আজ দেখলে মনে হবে যেন কোনো চিত্রকর সোজা পাহাড়ের গায়ে ছবি আঁকার চেষ্টা করেছিলেন৷
ছবি: Samaneh
সিসিলি বলতে শুধু মাফিয়া বোঝায় না
না বেশি ঠান্ডা, না বেশি গরম, সিসিলি সারা বছর ধরে পর্যটকদের টানে৷ পালের্মো, তাওরমিনা বা সিরাকিউজের মতো শহরে যদি মন না মানে, তাহলে আছে মাউন্ট এটনা, ইউরোপের ‘জাগ্রত’ আগ্নেয়গিরিগুলোর মধ্যে অন্যতম!