1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনি প্রচারণায় বিরোধীরা সমান সুযোগ পাবে কবে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২৩ ডিসেম্বর ২০১৮

এক সপ্তাহ পরই বাংলাদেশে নির্বাচন৷ কিন্তু নির্বাচনে বিরোধীরা সমান সুযোগ পাচ্ছেন না - এই অভিযোগের কোনো সুরাহা এখনো হয়নি৷ প্রচার-প্রচারণায় আওয়ামী লীগ সরব থাকলেও বিএনপি এবং অন্যান্য দল এখনো মাঠে দাঁড়াতে পারছে না বলে অভিযোগ৷

ছবি: bdnews24.com

বাংলাদেশে নির্বাচনি সহিংসতা আর বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের খবরে উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টেফানে ডুজারিক বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে নির্বাচনি সহিংসতা এবং বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের খবরে জাতিসংঘ বেশ উদ্বিগ্ন৷’’ 
নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং-এ ডুজারিক বলেন, ‘‘অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যাপারটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা এর স্টেক হোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷ নিরাপত্তা বাহিনীর কাজ হলো সব প্রার্থীর জন্য অবাধ ও নিরঙ্কুশ প্রচারণা নিশ্চিত করা৷’’ 

‘বিরোধীরা প্রচার প্রচারণায় তেমন নামতে পারছেনা’

This browser does not support the audio element.

এর আগে জাতিসংঘের আটজন মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এক যৌথ বিবৃতিতেও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷ তাঁরা বলেন, ‘‘বিরোধী রাজনীতিক ও ভিন্নমত প্রকাশকারীরা নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর হাতে গ্রেপ্তার ও ভীতি’র সম্মুখীন হচ্ছেন৷ বিরোধী দলগুলোর সদস্য ও সমর্থকেরা গ্রেপ্তার, হত্যা ও গুমের শিকার হয়েছেন৷ কোনো কোনো ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকেরা জড়িত৷’’ 

এছাড়া, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) দাবি করেছে, ‘‘বাংলাদেশে নির্বাচনের আগে বিরোধী নেতাকর্মীরা হামলা ও হুমকির মুখে পড়ছেন৷’’ 

এইচআরডাব্লিউ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস দাবি করেছেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকার স্বাধীন ও বিরোধী কণ্ঠকে দমন করছে৷ পূর্ণ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পথে যাতে কেউ বাধা না হয় - এটাই তাদের উদ্দেশ্য৷ সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দলের সমর্থক ও নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার, খুন ও গুমের শিকার হচ্ছেন৷ এর ফলে এমন এক ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে যা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিপন্থি৷’’ 

বিএনপির বরাত দিয়ে এইচআরডাব্লিউ লিখেছে, ‘‘সেপ্টেম্বর থেকে এপর্যন্ত বিএনপি’র তিন লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে৷ এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত৷ এইসব মামলায় কয়েক হাজার বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে৷’’ 

এদিকে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়নে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র৷ রবিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জাতীয় দায়িত্ব পালনরত নির্বাচন কমিশন জনগণের প্রত্যাশা পূরণে এবং সব দলের প্রার্থীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না৷ এছাড়া গত কয়েকদিনে দেশের কয়েকটি জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা ও আগুনের ঘটনা ঘটেছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক৷ এর পাশাপাশি প্রতিমা ভাংচুরের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটেছে৷’’ 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্নস্থানে সহিংসতার সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের বা জোটের প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ, তাদের নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা দেওয়া এবং নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে৷ পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বিভিন্ন প্রার্থী ও কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার, নানাভাবে হয়রানি ও আইনি জটিলতায় ফেলছেন বলে অভিযোগ উঠেছে৷ ফলে অনেক এলাকাতেই প্রার্থীরা ঠিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণা চালাতে পারছেন না৷’’

বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ‘‘গত ১১ নভেম্বর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩৪টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে৷ এসব ঘটনায় আটজন নিহত ও ২ হাজার ১৫২ জন আহত হয়েছে৷ এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা আশংকা ও ভীতি কাজ করছে৷’’ 
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে নির্বাচনি প্রচারণার যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট ও ১৪ দল নির্বাচনি প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছে পুরো মাত্রায়৷ অন্যদিকে, বিরোধীরা বা বিএনপি’র প্রাধান্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তেমন সুযোগ পাচ্ছে না৷ তারা হামলা ও ভীতির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷ এমনকি তারা অধিকাংশ জায়গায় নির্বাচনি পোস্টারও লাগাতে পারছেন না বলে অভিযোগ৷ 

‘নির্বাচন কমিশন তার ভূমিকা ঠিকমত পালন করছে না’

This browser does not support the audio element.

মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেতে তাঁর সরেজমিন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘‘আমি গত কয়েকদিনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কয়েকটি নির্বাচনি এলাকা ঘুরেছি৷ তাতে দেখেছি, এখন গায়েবি মামলায় বিরোধী নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে৷ হামলা হচ্ছে৷ বিরোধীরা প্রচার প্রচারণায় তেমন নামতে পারছেনা৷ আওয়ামী লীগের দু’জন নির্বাচনি সহিংসতায় নিহত হয়েছেন৷ আমার মনে হয়েছে নির্বাচনের আগে যে ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তাতে ভোটাররা স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবেন না বা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না৷’’
অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমান সুযোগ বলতে আমরা যা বুঝি তা পুরোপুরি দেখতে পাচ্ছি না৷ বাংলাদেশে ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচন দেখেছি৷ সেখানে সব দল যেভাবে সমান সুযোগ পেয়েছে, এবারের নির্বাচন তার থেকে অনেক দূরে রয়েছে৷ নির্বাচন কমিশন তার ভূমিকা ঠিকমত পালন করছে না৷’’

তবে, আওয়ামী লীগরে জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম রবিবার এক সংবাদ সম্মলেনে দাবি করেন, ‘‘নির্বাচনের আগে নীলনকশা অনুযায়ী বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট জোট সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে৷ তারা গণতান্ত্রিক রীতিনীত অনুযায়ী নির্বাচনের মাঠে না থেকে দেশের সবখানে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও হামলা পরিচালনা করছে৷ আওয়ামী লীগ এবং অন্য সব গণতান্ত্রিক দল ও জোটের অফিস ভাঙচুর, মিছিলে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করছে৷ এসব করে তারাই আবার তাদের ওপর হামলার অপপ্রচার চালাচ্ছে৷’’ তিনি নির্বাচন কমিশনকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান৷ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ