জার্মানির নির্বাচনি প্রচার অভিযানে সবুজ দলের বিরুদ্ধে আপত্তিকর পোস্টারের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতারা৷ চরম দক্ষিণপন্থি শিবিরের ইন্ধনে এমন কুরুচিকর প্রচারের নিন্দা করছেন তারা৷
ছবি: Revierfoto/dpa/picture alliance
বিজ্ঞাপন
নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দল নানা পদ্ধতিতে প্রচার চালিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করবে, গণতান্ত্রিক দেশে সেটাই তো স্বাভাবিক৷ ২৬শে সেপ্টেম্বর জার্মানির সাধারণ নির্বাচনের আগেও দেশজুড়ে পার্টির পোস্টারে প্রার্থীদের মুখ ও দলীয় স্লোগান ভরে গেছে৷
এরই মধ্যে দেশের বড় শহরগুলিতে অত্যন্ত কুরুচিকর একটি পোস্টার চরম অস্বস্তি ও ক্ষোভ সৃষ্টি করছে৷ কোনো দলের পক্ষ থেকে নয়, বরং বিশেষ একটি দলের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচার অভিযান অন্তত জার্মানিতে বিরল ঘটনা৷ জনসভা বা টেলিভিশন বিতর্কে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা সমালোচনা শোনা গেলেও শালিনতার সীমা সাধারণত অতিক্রম করা হয় না৷ ফলে এমন ঘটনার জের ধরে রাজনৈতিক মতবিরোধ সরিয়ে রেখে অন্যান্য কিছু দলও এমন উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করছে৷
বার্লিনে নির্বাচনের আমেজ, সাঁটা শুরু পোস্টার
বার্লিনে আঞ্চলিক এবং জাতীয় নির্বাচন শুরু হতে আর দুই মাসও বাকি নেই৷ ফলে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে৷ রাস্তাঘাটে দেখা যাচ্ছে প্ল্যাকার্ড৷ নির্বাচনি স্লোগানেও উঠে আসছে নানা বড় ইস্যু৷ বাকিটা থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু
জার্মানিতে নির্বাচনি প্রচারণা এভাবেই নির্বাচনের তারিখের প্রায় ছয় সপ্তাহ আগে হঠাৎ করে শুরু হয়৷ বিভিন্ন দল এবং প্রার্থীরা সেসময় রাস্তাঘাটে প্ল্যাকার্ড ঝুলানোর অনুমতি পায়৷ ২৬ সেপ্টেম্বর বার্লিনের জেলাগুলোতে স্থানীয় নির্বাচন এবং বিভিন্ন শহরের জনপ্রতিনিধি ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তাই আগামী কয়েক সপ্তাহ রাস্তাঘাট শত শত হাসিমুখের পোস্টারে ভরে থাকবে৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
‘বিচার চায়’ খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী এবং সবুজরা
নির্বাচনি পোস্টারে জটিল বিষয়গুলো এক লাইনের স্লোগানে প্রকাশ করতে হয়৷ ন্যয়েকোল্ন-এর এক থানার সামনে মধ্যডানপন্থি খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল (সিডিইউ)-র পোস্টারে জনমতে সাম্প্রতিক পু্লিশবিরোধী মনোভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে৷ দলটি লিখেছে, ‘‘কারণ, আমরা তোমাকে ভালোবাসি, বার্লিন পুলিশ৷’’ অন্যদিকে, সবুজ দলের ভাবনা জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে৷ তাদের স্লোগান, ‘‘জলবায়ু নিরাপত্তা ইস্যুতে ন্যায়বিচার প্রয়োজন৷’’
ছবি: Elliot Douglas/DW
এসপিডি-র মুখ ওলাফ শ্যলস
‘‘স্থিতিশীল পেনশন-এর জন্য ভোট দিন’’ - লেখা হয়েছে মধ্যবামপন্থি সামাজিক গণতন্ত্রী দল (এসপিডি)-র পোস্টারে৷ আর তাতে শোভা পাচ্ছে দলটির চ্যান্সেলর প্রার্থী ওলাফ শ্যলস-এর ছবি৷ বার্লিন হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস-এ সবচেয়ে বড় দল এসপিডি৷ জার্মান সংসদ বুন্ডেসটাগ-এ তারা দ্বিতীয় বড় দল৷ তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নির্বাচনে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি দলটি৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
এএফডি’র আকর্ষণীয় স্লোগান
জার্মানির উগ্রডানপন্থি পপুলিস্ট দল জার্মানির জন্য বিকল্প (এএফডি) নির্বাচনী স্লোগানে লিখেছে ‘‘বার্লিন কিন্তু স্বাভাবিক’’৷ দলটি করোনা বিধিনিষেধের বিরোধী৷ এমনকি অনেক দল যখন পরিবেশ বাঁচাতে শহরের মধ্যে গতিসীমা চালু ও বিভিন্নস্থানে গাড়ি নিষিদ্ধের পক্ষে, দলটি নিয়েছে পুরো উল্টো অবস্থান৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বাম দল
বাম দল হচ্ছে কয়েকটি দলের একটি, যারা বহুসংস্কৃতির শহর বার্লিনে জার্মান ভাষা ছাড়াও আরো কয়েকটি ভাষায় নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছে৷ এই পোস্টারে দলটি আরবি ভাষায় লিখেছে, ‘‘ভাড়াটেদের রক্ষা করুন!’’৷ তবে জার্মানির এক তৃতীয়াংশ বাসিন্দাই নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না, কেননা শুধু জার্মান পাসপোর্টধারীরাই জার্মানির জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন৷ আঞ্চলিক জেলা নির্বাচনে অবশ্য ইইউ নাগরিকরাও ভোট দিতে পারেন৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
এফডিপি-র আহ্বান ব্যবসায়ীদের প্রতি
মুক্তবাজারের পক্ষের দল মুক্ত গণতন্ত্রী (এফডিপি) এবারের নির্বাচনে নিজেদেরকে অর্থনৈতিক ভিত্তি মজবুত করার দল হিসেবে ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণীয় হতে চাচ্ছে৷ দলটির একটি পোস্টারে লেখা হয়েছে ‘‘কেন্দ্রেরও প্রতিরক্ষা দেয়াল দরকার’’৷ এর অর্থ হচ্ছে বার্লিনের কেন্দ্রীয় জেলা মিটে-তে অবস্থানরত অনেক ব্যবসায়ীর জন্যও নিরাপত্তা দরকার৷
ছবি: Carsten Koall/dpa/picture alliance
ছোট দলগুলোও প্রচারণা চালাচ্ছে
বর্তমানে সংসদে প্রতিনিধিত্ব থাকা ছয়টি দলের বাইরেও বেশ কয়েকটি ছোট দল নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে৷ কমিউনিস্ট মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট জার্মান পার্টি তাদের একটি৷ দলটির স্লোগান হচ্ছে ‘‘১০০০ আশা, একটি পরিণতি: বিদ্রোহ’’৷ তবে যেহেতু জার্মান সংসদে প্রবেশ করতে অন্তত পাঁচ শতাংশ ভোটের প্রয়োজন হয়, এসব দলের তাই সংসদে প্রবেশের সম্ভাবনা খুব কম৷
ছবি: Revierfoto/dpa/picture alliance
নাগরিক উদ্যোগ
বার্লিনের নাগরিকদের উদ্যোগে গড়া ‘ডিসপোজেস ডয়চে ভোনেন উন্ড কো.’ বার্লিনের বড় বাড়িওয়ালাদের একটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আহ্বান জানিয়েছে যাতে ‘বার্লিনবাসী ঘরে থাকতে পারেন’৷ চলতি বছরের শুরুতে আদালত বাড়িওয়ালাদের ভাড়া বাড়ানোর সুযোগ দেয়, যা বেশ কিছু বছর বন্ধ ছিল৷ সেই ঘটনায় বার্লিনের নাগরিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: Elliot Douglas/DW
8 ছবি1 | 8
নজর কাড়া এই পোস্টারে সবুজ দলের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কদর্য ভাষায় আক্রমণ চালানো হচ্ছে৷ ‘সবুজ জঞ্জাল ২০২১' শিরোনামের আড়ালে দলের কর্মসূচির বিরোধিতা করা হচ্ছে৷ পোস্টারের রং অবিকল সবুজ দলের মতো৷ তাতে শুধু প্রতীকী চিহ্ন হিসেবে সূর্যমুখী ফুলের অবস্থা বেহাল৷ সবুজ দলের বিরুদ্ধে ‘সমৃদ্ধি ধ্বংস', ‘জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নামে সমাজতন্ত্র', ‘পরিবেশবাদী সন্ত্রাসবাদ' ইত্যাদি অভিযোগ আনা হয়েছে৷ বেসরকারি এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছেন বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের প্রাক্তন সদস্য ডাভিড বেন্ডেলসের ‘কনসারভেয়ার কমিউনিকেশনস' কোম্পানি৷ তাঁর দাবি, সবুজ দল জার্মানির জন্য বিশাল হুমকি৷ তাই তিনি ভোটারদের সে বিষয়ে সতর্ক করে দিচ্ছেন৷ উল্লেখ্য, বেন্ডেলস নিজে এক দক্ষিণপন্থি রক্ষণশীল সংগঠনের সভাপতি৷ এই সংগঠন অতীতে চরম দক্ষণিপন্থি এএফডি দলের সমর্থনে অনেক প্রচার চালিয়েছে৷ তবে সবুজ দলের বিরুদ্ধে প্রচারের সঙ্গে এএফডি দলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে তিনি দাবি করেছেন৷
আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সিডিইউ এবং জোটসঙ্গী সামাজিক গণতন্ত্রী এসপিডি দল সবুজ দলের বিরুদ্ধে এমন সুপরিকল্পিত কুৎসার তীব্র সমালোচনা করেছে৷ সিডিইউ দলের সাধারণ সম্পাদক পাউল সিমিয়াক বলেছেন, ন্যায্য নির্বাচনি প্রচারযুদ্ধে প্রয়োজনে অন্য দলের পক্ষেও মুখ খুলতে হয়৷ এএফডি ও এনপিডি দলের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে সবুজ দলের বিরুদ্ধে বর্তমানে যে নোংরামি চলছে, তা অত্যন্ত ঘৃণ্য৷
এমন পোস্টারকে ‘চরম দক্ষিণপন্থি জঞ্জাল' হিসেবে বর্ণনা করে গণতান্ত্রিক দল হিসেবে সবুজ দলের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন এসপিডি দলের সাধারণ সম্পাদক লার্স ক্লিংবাইল৷ দলের অন্য অনেক নেতাও এমন আপত্তিকর প্রচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলে সবুজ দলের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ সবুজ দলের এক নেতাও টুইটারে এমন সংহতি ও সমর্থনের জন্য টুইটারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন৷