স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য দিয়েছে কমিশনকে। সবচেয়ে বেশি রোজগার করেছে বিজেপি।
বিজ্ঞাপন
২০১৯ সালের ১২ এপ্রিল থেকে ২০২৪ সালের ১১ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনী বন্ড থেকে সব চেয়ে বেশি অর্থ রোজগার করেছে বিজেপি। তাদের মোট রোজগারের পরিমাণ ছয় হাজার ৬০ কোটি টাকার সামান্য বেশি। দুই নম্বরেই আছে পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল। এই সময়ের মধ্যে তাদের মোট রোজগার এক হাজার ৬০৯ কোটি টাকার সামান্য বেশি। তিন নম্বরে কংগ্রেস। তাদের মোট আয়ের পরিমাণ এক হাজার ৪২১ কোটি টাকার সামান্য বেশি।
গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি টাকার নির্বাচনী বন্ড কিনেছে ফিউচার গেমিং অ্যান্ড হোটেল সার্ভিসেস। এই সংস্থাটির মূল ব্যবসা লটারি। মালিক স্যানটিয়াগো মার্টিন। দুর্নীতি এবং টাকা নয়-ছয়ের অভিযোগে একাধিকবার এই সংস্থায় হানা দিয়েছে ইডি এবং সিবিআই। স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এই সংস্থাটি গত পাঁচ বছরে এক হাজার ৩৬৮কোটি টাকার বন্ড কিনেছে। তবে বন্ড কেনার ক্ষেত্রে ভারতের প্রায় সমস্ত ছোট-বড় সংস্থার নামই মিলেছে।
লোকসভা ২০২৪: প্রচারে কী ধরনের চমক আনলেন নরেন্দ্র মোদী?
লোকসভা নির্বাচনের প্রচার কৌশল বদল করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তিনি এখন মোদী-পরিবার, মোদী-গ্যারান্টির কথা বলছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নতুন কৌশল
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এখন পুরোদমে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নেমে পড়েছেন। প্রায় প্রতিদিনই তিনি হয় জনসভা করছেন অথবা সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করছেন। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছেন মোদী। আর তিনি এবার প্রচারে নিয়ে এসেছেন নতুন বিষয়। নতুন কৌশল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোদীর গ্যারান্টি
কিছুদিন হলো মোদীর গ্যারান্টি নিয়ে ভরপুর প্রচার চলছে। এই গ্যারান্টি কি? গরিবদের আরো পাঁচ বছর বিনা পয়সায় সরকারি রেশন, পাঁচ লাখ পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিমা, কম দামে গ্যাসের সিলিন্ডার, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় বিনা পয়সায় বাড়ি, নারী স্বনিযুক্ত গোষ্ঠীকে ১৫ হাজার টাকা, বয়স্কদের পেনশন, লাখপতি দিদির মতো একগুচ্ছ প্রকল্পই হলো মোদীর গ্যারান্টি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সরকারি প্রকল্প
এ সবই সরকারি প্রকল্প। রেডিও, টিভি, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, খবরের কাগজ, পত্রিকা, পেট্রোল পাম্প সব জায়গাতে এর ভরপুর প্রচার চলছে। এই বিজ্ঞাপন কৌশল দিয়ে সাধারণ মানুষের মন জয় করতে চাইছেন মোদী। আগেরবার বলা হয়েছিল, 'মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়'। এবার বলা হচ্ছে, 'মোদী কা গ্যারান্টি হ্যায়'।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোদী-পরিবার
পশ্চিমবঙ্গে এসে মোদী এই প্রচার শুরু করেছেন। মোদী-পরিবারের প্রচার। বারাসতের সভায় তিনি বলেছেন, তরুণ বয়সে শুধু একটা ঝোলা নিয়ে তিনি গহত্যাগ করেন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় যান। সেখানকার ভাষা জানতেন না। পকেটে পয়সা নেই। কিন্তু কোনো না কোনো পরিবার তাকে ঠিক খাবার দিয়েছে । মোদীর ঘোষণা, ভারতীয়রা সকলেই মোদীর পরিবার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোদীর স্লোগান
জনসভায় মোদী বলতে থাকেন, 'আমি'। সামনে বসা মানুষ জবাব দেন 'মোদীর পরিবার'। এটাই মোদী তথা বিজেপি-র নতুন স্লোগান। বিজেপি বলছে, এটাই তাদের তুরুপের তাস হয়ে উঠতে চলেছে। জনতার সঙ্গে মোদীর একাত্মতার মোকাবিলা বিরোধীরা করতে পারবে না বলে বিজেপি নেতাদের দাবি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মোদীর নারীশক্তি
আরো বেশি করে নারীদের ভোট পেতে উদ্যোগী হয়েছেন মোদী। সংসদে ও বিধানসভায় নারীদের জন্য এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের বিল পাস হয়েছে। সেই ব্যবস্থা কার্যকর হবে ২০২৯ থেকে। মোদী গরিব মেয়েদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্বকর্মা যোজনা, ছোট ব্যবসা করার জন্য স্বনিধি যোজনার কথা বলছেন। লাখপতি দিদি নিয়ে প্রচার চলছে। মেয়েদের বিনা সুদে পাঁচ লাখ টাকা ঋণ দেয়া হচ্ছে, যাতে তারা বছরে এক লাখ টাকা রোজগার করতে পারেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নতুন ভোটারদের প্রভাবিত করতে
কিছুদিন আগেই বিজেপি নেতা ও কর্মীদের মোদী নির্দেশ দিয়েছিলেন, এবার ১৮ বছর বয়সি যারা নতুন ভোটার হয়েছেন, তাদের সকলের কাছে পৌঁছাতে হবে। মোদী এবার প্রচারে যুব ও প্রথমবারের ভোটদাতাদের মন পেতে তাদের জন্য তিনি কী করেছেন, তা বিস্তারিতভাবে বলবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ধারণা তৈরির খেলা
এবার মোদীর আরেকটি স্লোগান হলো, আব কি বার, চারশ পার। অর্থাৎ, এবার চারশ পার করে যাবে এনডিএ। বিজেপি পাবে অন্তত ৩৭০টি আসন। এবার এনডিএ-র পরিধি বাড়ানো হয়েছে। চন্দ্রবাবু নাইডু আবার এনডিএ-তে ফিরেছেন। বিজু জনতা দলের নেতা নবীন পট্টনায়েকের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করা নিয়ে বিজেপি-র আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে। মোদী একটা ধারণা তৈরি করতে চাইছেন, তিনি জিতবেনই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
মতুয়াদের সিএএ-উপহার
পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদহ ও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রচুর মানুষ আছেন। তারা সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ও বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আসা নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ। বনগাঁও-সহ তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে তারাই ভোটের ফল নির্ধারণ করেন। তাদের ভোটাধিকার থাকলেও আনুষ্ঠানিকভাবে নাগরিক স্বীকৃতি নেই। সিএএ চালু করে তাদের নাগরিক হওয়ার পথ সুগম করা হলো বলে বিজেপি প্রচারে নেমে গেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন বারবার পশ্চিমবঙ্গে?
পশ্চিমবঙ্গে গত দুই সপ্তাহে তিনবার এসেছেন মোদী। জনসভা করেছেন আরামবাগ, বারাসত, শিলিগুড়িতে। মেট্রো রেল সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। পড়ুয়াদের সঙ্গে নিয়ে মেট্রো সফর করেছেন। সন্দেশখালির নারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। গতবার ১৮টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। এবার সেই সংখ্যা ধরে রেখে একটা হলেও আসন বাড়াতে চায় তারা। তাই এত ঘনঘন মোদীর পশ্চিমবঙ্গ সফর।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নতুন মুখ নিয়ে আসা
মোদীর নির্বাচনী কৌশলের একটা অঙ্গ হলো, নতুনদের প্রার্থী করা। পুরনোদের মধ্যে যাদের জয় নিয়ে তিলমাত্র সন্দেহ আছে, তাদের বাদ দিয়ে দেয়া। এবারো সেই পথে হেঁটেছেন মোদী। দিল্লিতে পাঁচটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। চারটিতে নতুন প্রার্থীকে সুযোগ দেয়া হয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
11 ছবি1 | 11
২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদীর সরকার ঘোষণা করেছিল, রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান বা চাঁদা দেওয়ার জন্য এসবিআই থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড কিনতে পারবে বিভিন্ন সংস্থা। সেই বন্ড দেওয়া যাবে রাজনৈতিক দলগুলিকে। রাজনৈতিক দলগুলি সেই বন্ড ভাঙিয়ে টাকা তুলে নিতে পারবে। এই লেনদেন সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।
মোদী সরকারের এই নিয়ম আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট এই বন্ডকে অসাংবিধানিক এবং ক্ষতিকারক বলে ব্যাখ্যা দেয়। এরপরেই সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এসবিআই-কে নির্দেশ দেন, নির্বাচন কমিশনের হাতে বন্ড সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য তুলে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়, ১৫ মার্চ বিকেল ৫টার মধ্যে সব তথ্য তাদের ওয়েব সাইটে দিয়ে দিতে হবে। সেই মতো ১৪ তারিখ সন্ধেতেই নির্বাচন কমিশন সমস্ত তথ্য ওয়েবসাইটে তুলে দেয়। সেখান থেকেই এই তথ্য মিলেছে।
ক্ষুব্ধ সুপ্রিম কোর্ট
এদিকে শুক্রবার শীর্ষ আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের বক্তব্য, এসবিআই যে তথ্য জমা দিয়েছে, তা অসম্পূর্ণ। বন্ডের নম্বর উল্লেখ করা হয়নি। সেই নম্বরও জানাতে হবে। বন্ডের নম্বর জানতে পারলে রাজনৈতিক দল এবং অনুদানকারীর সম্পর্ক স্পষ্ট হবে।
বস্তুত, যে সংস্থাগুলির নাম এই ঘটনায় উঠে এসেছে। যারা সবচেয়ে বেশি নির্বাচনী বন্ড কিনেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলিকে দিয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম ৩০টির ১৪টি সংস্থায় কখনো না কখনো ইডি অথবা সিবিআই তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। অর্থাৎ, সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তাদের অর্থ রাজনৈতিক দলগুলি ব্যবহার করেছে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলিও দুর্নীতির অর্থ ব্যবহার করেছে। এই আশঙ্কাই প্রকাশ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট।