তুরস্কের নতুন ‘ডিইনফরমেশন ল' মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ এই আইনে সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা অনলাইনে ভুল তথ্য ছড়ানোর জন্য সর্বোচ্চ তিন বছরের জন্য জেলে যেতে পারেন৷
বিজ্ঞাপন
গত বছর অক্টোবরে পাস হয় তুরস্কের ভুয়া তথ্য আইন বা ডিসইনফরমেশন ল৷ তখন থেকেই এই আইন নির্বাচনকে সামনে রেখে পাস করা হচ্ছে এবং তা বিরোধী মত দমন করতে ব্যবহৃত হতে পারে বলে সমালোচনা হয়েছিল৷ আগামী রোববার প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন৷ এ অবস্থায় অনেকেই এই আইনের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷
সমালোচকরা শুরু থেকেই বলছেন যে, আইনে ভুয়া তথ্য বলতে কী বোঝানো হচ্ছে তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই৷ এই আইনে সামাজিক মাধ্যমকেও তুরস্ক কর্তৃপক্ষ চাইলে ব্যবহারকারীর তথ্য দানে বাধ্য করা হয়েছে৷
টুইটার ও মেটা এখন পর্যন্ত তথ্য চাওয়ার আবেদনে সাড়া দেয়নি৷ ফেব্রুয়ারি মাসে তুর্কি পুলিশ ভূমিকম্প নিয়ে উসকানিমূলক পোস্ট দেবার অভিযোগে ৭৮ জনকে গ্রেফতার করে৷ ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৫০ হাজার মানুষ মারা যান৷
তুরস্কের ফ্রিডম রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশনের প্রকল্প কর্মকর্তা শাগিন এরোলু বলেন, মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি৷ কিন্তু সরকারি তথ্যকে প্রশ্ন করা হলে তার ফল ভালো নাও হতে পারে৷
‘‘আপনি বলতে পারবেন না যে আমরা আমাদের হিসেব করেছি... আপনাকে সরকারের ভাষ্যের সঙ্গে সুর মেলাতে হবে,'' বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে ফোনে বলেন তিনি৷
এ সপ্তাহে দেয়া এক বিবৃতিতে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, নির্বাচনকে সামনে রেখে তুর্কি সরকার অনলাইনে ভিন্নমত দমন বাড়িয়েছে৷ সংস্থাটির গবেষক ডেবোরাহ ব্রাউন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘নির্বাচনের আগে তুরস্কের সরকার সামাজিক মাধ্যম ও স্বাধীন অনলাইন মাধ্যমগুলোর ওপর সেন্সরশিপ বাড়িয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ আরো শক্ত করেছে৷''
সরকারের তথ্যের সমালোচনা করায় গত মাসে এমনকি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমগুলোর কোনো কোনোটিকে জরিমানাও করেছে সরকার৷ বিরোধীপক্ষের একমাত্র মুখপাত্র ফক্সটিভিকে তাদের মাসিক আয়ের ৩ ভাগ ফাইন করা হয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে রিসোর্স সেন্টার অন মিডিয়া ফ্রিডম ইন ইউরোপ৷
এর্দোয়ানের যেসব নীতি বদলাতে চায় বিরোধীরা
১৪ মের নির্বাচনে জয়ী হলে এর্দোয়ানের অনেক নীতির আমুল পরিবর্তন ঘটাতে চায় বিরোধী জোট ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স৷ সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে টানতে চাইছে তারা৷
ছবি: Umit Turhan Coskun/NurPhoto/picture alliance
১০০ দিনের পরিকল্পনা
ক্ষমতায় এলে প্রথম ১০০ দিনে কী করবেন গত মাসে তার একটি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ছয় দলীয় বিরোধী জোটের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কেমাল কিরিচদারোলু৷ তার মধ্যে ‘ডে লাইট সেভিং’, কর ও বিমার হার পরিবর্তন এবং সরকারি সব চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া চালুসহ আছে নানা প্রতিশ্রুতি৷
ছবি: Alp Eren Kaya/Depo Photos/ABACA/picture alliance
সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রত্যাবর্তন
২০১৮ সালে তুরস্কে প্রেসিডেন্সিয়াল ব্যবস্থা চালু করেন এর্দোয়ান৷ বিরোধীরা তা পরিবর্তন করে দেশটিকে আবারো সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চান৷ এর মাধ্যমে এর্দোয়ানের ডিক্রিতে বিলুপ্ত প্রধানমন্ত্রীর পদ পুনর্বহাল করা হবে৷ এক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা হবে ‘নিরপেক্ষ’, কেড়ে নেয়া হবে তার আইনে ভেটো দেয়া কিংবা ডিক্রি জারির ক্ষমতা৷
ছবি: Hakan Nural/AA/picture alliance
সরকারি ব্যয়ের সংকোচন
গত কয়েক বছর ধরে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তুরস্ক ৷ বিরোধীরা দেশটির মূল্যস্ফীতিকে এক অঙ্কের ঘরে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা এপ্রিলেও ৪৪ শতাংশ ছিল৷ নতুন আইন পাসের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়ার অঙ্গীকার তাদের৷ প্রেসিডেন্টের অধীনে থাকা বিমানের সংখ্যা কমানো, সরকারি চাকরিজীবীদের গাড়ির সংখ্যা হ্রাস ও সরকারি ভবন বিক্রি করে খরচ কমানোর প্রতিশ্রুতিও আছে৷
ছবি: DesignIt/Zoonar/picture alliance
পররাষ্ট্রনীতির বদল
‘দেশে ও বিশ্বে শান্তি’ এমন স্লোগানে তুরস্কের পররাষ্ট্রনীতিকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য কাজ করার পাশাপাশি ২০১৬ সালের শরণার্থী চুক্তি পর্যালোচনার কথাও বলছে তারা৷ একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক আস্থার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়া, অন্যদিকে সমতার ভিত্তিতে ও গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক বজায় রাখার পরিকল্পনা তাদের৷
ছবি: Susan Walsh/AP/picture alliance
স্বাধীন বিচার বিভাগ
বিরোধী মত দমনে বিচার বিভাগকে ব্যবহার নিয়ে এর্দোয়ান সরকারের সমালোচনা রয়েছে৷ বিরোধী জোট বিচার বিভাগের স্বাধীনতা পুরোপুরি ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে৷ আদালতে রায়ের ক্ষেত্রে সংসদীয় আদালত ও ইউরোপীয় কোর্ট অব হিউম্যান রাইটসকে উৎসাহিত করা হবে৷ যেসব বিচারক ও প্রসিকিউটর অধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে বিবেচিত হবেন তাদের জরিমানা করা হবে৷ বর্তমান সরকারের সমালোচিত বিচারপূর্ব আটকের ঘটনা বন্ধেরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারা৷