1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে মানবাধিকার নিয়ে বিতর্ক

১৩ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন৷ এ কারণে তারা সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী, এমনকি রাষ্ট্রপতির তোপের মুখে পড়ছেন৷

বাংলাদেশের পতাকার ছবি
সাতটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ছবি: Rajib Paul

সম্প্রতি সংগঠনগুলো হলো: রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার কনসোর্টিয়াম, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স, অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স ও এশিয়ান ফোরাম ফল হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট৷

তারা বলেছে, গত অক্টোবরের শেষে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আয়োজিত সমাবেশ ও বিক্ষোভের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক ভিন্নমত দমন করতে সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে৷ এই ক্র্যাকডাউনের ফলে এক সাংবাদিকসহ ১৭ জন নিহত হয়েছেন এবং আট হাজার ২৪৯ জন বিরোধী নেতা আহত হয়েছে৷

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, অক্টোবর মাসের শেষ থেকে বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক আকারে ধরপাকড় চালিয়ে ২০ হাজারেরও বেশি বিরোধী নেতা-কর্মীকে আটক করেছে৷ তাদের বিরুদ্ধে ৮৩৭টি বানোয়াট মামলা করা হয়েছে এবং তাদের জামিন বারবার প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে৷

এই বিবৃতি প্রসঙ্গে কথা বলেছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের এসব ইস্যু জাতিসংঘ অবগত আছে৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানাচ্ছি৷ প্রতিটি বাংলাদেশি যেন ভয়-ভীতি ছাড়াই বা কোনো প্রতিক্রিয়া ছাড়াই ভোট দিতে পারে৷''

এর আগে হিউম্যান রাইটস ওয়াচও একই ধরনের বিবৃতি দিয়েছিল৷

বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল মনে করছেন, দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের চেয়েও খারাপ হয়েছে৷ ‘‘মানবাধিকারের কথা বলতে বললে এখন বিব্রত হই৷ রাষ্ট্র পরিচালনাকারীরা নিজেদের মানবাধিকারের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড় করিয়েছেন,'' বলেন তিনি৷

সরকারের প্রতিক্রিয়া

মানবাধিকার সংস্থা ও কর্মীদের কথার জবাব দিতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘‘মানবাধিকার একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছে৷ কোনো কোনো সন্ত্রাসীর মানবাধিকার নিয়েও কেউ কেউ সোচ্চার হয়৷ কিন্তু সেই সন্ত্রাসী যে এত মানুষ মারল, সেটি নিয়ে কোনো কথাবার্তা নেই৷ পৃথিবীতে কিছু মানবাধিকার সংগঠন আছে, যেগুলো মূলত মানবাধিকারের ব্যবসা করে৷''

জোরজবরদস্তি করে এসব খর্ব করা হচ্ছে: ফারুক ফয়সাল

This browser does not support the audio element.

তিনি আরো বলেন, ‘‘যে সমস্ত বিশ্ব বেনিয়া মানবাধিকারের কথা বলে এবং বাংলাদেশেও যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন, ফিলিস্তিনে পাখি শিকার করার মতো মানুষ শিকার করা হচ্ছে, সাধারণ মানুষসহ দশ হাজারের বেশি নারী ও শিশুকে হত্যা করা হলো, কিন্তু এটি নিয়ে বড় বড় সংগঠনগুলোর কোনো কথা ও বিবৃতি নেই৷ অথচ তারা বরিশালে একজন আরেকজনকে ঘুষি মারল এবং কোথায় কিছু মানুষ একজনকে ধাওয়া করল সেজন্য বিবৃতি দিল৷''

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হয়রানি, নির্যাতন ও জেলে আটকে রাখা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে বলেন, ‘‘বিরোধী দল বা ভিন্নমতের যাদের শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে, তারা সন্ত্রাসী৷ ছবি ও ভিডিও ফুটেজে তাদের নাশকতামূলক কর্মে সম্পৃক্ততার প্রমাণ রয়েছে৷'' বাংলাদেশ থেকে অন্যদের মানবাধিকারের শিক্ষা নেওয়া দরকার বলেও মনে করেন তিনি৷

এদিকে, বিশ্ব মানবাধিকার দিবসে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বলেছেন, ‘‘অ্যামেরিকা বাংলাদেশকে মানবাধিকার শেখাতে আসে৷ অথচ তাদের চেয়ে বাংলাদেশই বেশি মানবাধিকার মেনে চলে৷ ভবিষ্যতে অ্যামেরিকাকে মানবাধিকার শেখাবে বাংলাদেশ৷'' তিনি আরো বলেন, ‘‘মানবাধিকার সনদ অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে বাংলাদেশ৷''

‘মানবাধিকার একদম নিম্নতম পর্যায়ে চলে গেছে'

এই বিতর্কের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী পরিচালক ফারুক ফয়সাল বলেন, ‘‘আমাদের এখানে যারা দায়িত্বে আছেন তারা যখন কথাবার্তা বলেন তারা তখন দায়িত্বের কথা ভুলে যান৷ ফলে দায়িত্বহীনতার মতো কথা শোনা যায়৷ প্রত্যেকটা কথার একটা ভিত্তি থাকে৷ তারা যেসব কথা বলছেন তার (সরকারের মন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি) কোনোটারই ভিত্তি নেই৷ এরকম ভিত্তিহীন কথার কোনো মূল্য থাকে না৷''

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সংকুচিত হচ্ছে: নূর খান

This browser does not support the audio element.

তার কথা, ‘‘বাংলাদেশে মানবাধিকার লাল এলাকায় আছে৷ একদম নিম্নতম পর্যায়ে চলে গেছে৷ উন্নত দেশগুলো এটা নিয়ে চিন্তিত৷ দেশের মানুষও চিন্তিত৷ দেশের মানুষ ভয় পায়৷ কথা বলতে ভয় পায়৷ মত প্রকাশ করতে ভয় পায়৷ একটি দেশ এই পরিস্থিতিতে চলে গেলে তখন সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা বেশ কষ্টকর৷''

‘‘বাংলাদেশে মানবাধিকার, নাগরিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা সংকুচিত হয়ে এসেছে৷ জোরজবরদস্তি করে এসব খর্ব করা হচ্ছে,'' বলেন তিনি৷

‘বিরোধী দল ও মত দমন করা হচ্ছে'

মানবাধিকার কর্মী নূর খান বলেন, ‘‘বেশ কিছুদিন ধরে বাংলাদেশে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম দুইভাবে সংকুচিত হয়ে আসছে৷ প্রথমত: মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অর্থ ছাড়ে এমন কৌশল নেয়া হচ্ছে যাতে তারা অর্থের অভাবে কাজ করতে না পারে৷ দ্বিতীয়ত: মানবাধিকার সংগঠনের কর্মীদের ওপর নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে৷ ফলে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সংকুচিত হচ্ছে৷ তাদের কার্যক্রম তেমন দেখা যাচ্ছে না৷''

তার কথা, ‘‘এখানে নানাভাবে মানবাধিকার ও নাগরিক অধিকার সংকুচিত হচ্ছে৷ বিরোধী দল ও মতকে দমন করা হচ্ছে৷ নতুন নতুন আইন করছে দমনের জন্য৷ মৃত ব্যক্তি, বিদেশে অবস্থান করছে এমন ব্যক্তির বিরুদ্ধেও মামলা হচ্ছে৷ মামলার আসামিকে না পেয়ে তার সন্তান, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনকে ধরে নেয়া হচ্ছে৷ সাদা মাইক্রোবাস বা বিভিন্ন যানবাহনে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে৷ এই নির্যাতনে কেউ কেউ বেঁচে ফিরলেও অনেকেই মৃত্যুবরণ করছে৷ ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য সমাজে একটা ভয়ার্ত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে৷''

নূর খান বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন ও কর্মীদের পর্যবেক্ষণের বিরুদ্ধে অবস্থান না নিয়ে সরকারের উচিত পরিস্থিতির উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

বাংলাদেশ