1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানো প্রসঙ্গে আলী ইমাম মজুমদার

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ জুন ২০২৩

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন আরেকদফা বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে৷ সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ার বিষয়টি বাংলাদেশে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে৷

সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার৷ 
সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার৷ ছবি: DW/S. Hossain

দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এই সময়ে এই ধরনের উদ্যোগ কতটা যৌক্তিক? সামনে নির্বাচন, ফলে তাদের খুশি করার বিষয়টিও আলোচনা হচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে সরকার সবকিছুর সমন্বয় কীভাবে করতে পারে? এবিষয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার৷ 

ডয়চে ভেলে : বাজেটে কোন প্রস্তাবনা না থাকলেও সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ হঠাৎ করে বেতন বাড়ানোর উদ্যোগ কেন?

আলী ইমাম মজুমদার : উদ্যোগটা কিন্তু হঠাৎ করে নেওয়া হয়েছে এমন না৷ বেশ কিছুদিন ধরে আলোচনা চলছিল৷ বর্তমানে দ্রব্যমূল্য অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে৷ সীমিত আয়ের সরকারি কর্মচারীরা জীবন ধারণে অত্যন্ত চাপের মুখে ছিল৷ ফলে তাদের বেতন বৃদ্ধির দাবি ছিল৷ বেতন বৃদ্ধির জন্য বাজেটে টাকা থাকলেই হলো৷ এটা বাজেটে পাস হতে হয় না৷ সরকারের নির্বাহী আদেশে বেতন বাড়ানো হয়৷ বর্তমানে যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে কাদের দেবে? কী পরিমাণ দেবে? সেটা অস্পষ্ট৷ তবে বেতন বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে আমি মনে করি৷

নির্বাচনের আগে এটা কি সরকারের কোনো কৌশল?

নির্বাচনের আগে বলেন, পরে বলেন সরকারকে কিন্তু সরকারি কর্মচারীদের পুষতে হবে অর্থাৎ বেতন দিতে হবে৷ আপনার বাসার কাজের লোককে যেমন বেতন দিতে হয়, তেমনি সরকারকেও কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়৷ নির্বাচনের আগে সরকার সবাইকে খুশি রাখতে চায় এটা ঠিক৷ তাদের খুশি রাখার একটা প্রচেষ্টা হতেও পারে৷ এই প্রচেষ্টা শুভ বলে আমি মনে করি অন্তত সরকারি কর্মচারীদের জন্য৷ তাদের বেতন বাড়ানো দরকার৷

‘নির্বাচনের আগে সরকার সবাইকে খুশি রাখতে চায় এটা ঠিক’

This browser does not support the audio element.

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লে তো আবার জিনিসপত্রের দাম আরও এক দফা বাড়বে৷ এই সময় কী এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া ঠিক হচ্ছে?

এটা বলা হয়৷ কিন্তু উপমহাদেশের মধ্যে আমাদের দেশে সরকারি কর্মচারীদের বেতন সবচেয়ে কম৷ আমি যদি ভারতের সঙ্গেও তুলনা করি, বলা হয় ভারতের চেয়ে আমাদের মাথাপিছু আয় বেশি৷ অথচ ভারতের থেকে আমাদের উপরের পর্যায়ে বলেন আর নিচের পর্যায়ে বলেন বেতন অনেক কম৷ ভারতে একজন সচিবের বেতন ২ লাখ ২৫ হাজার রুপি৷ অথচ আমাদের দেশে একজন সচিবের বেতন ৭৪ হাজার টাকা৷ এসব বিবেচনায় আমরা বেতনের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছি৷ বেতন বাড়ানো উচিৎ বলে আমি মনে করি৷ তবে আমি যেটা শুনেছি, বর্তমানে খুব বেশি বেতন বাড়ছে না৷ প্রতি বছর তো এমনিতেই ৫ শতাংশ বেতন বাড়ে৷ সেটা ৮ থেকে ১০ শতাংশ বাড়ানোর কথা শুনেছি৷ 

সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে না৷ সেক্ষেত্রে সরকারের করণীয় কী?

সাধারণ মানুষের যে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে না, সেক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারের কিছু করণীয় আছে৷ জিনিসপত্রের মূল্য যাতে সহনশীল হয়, সেক্ষেত্রে সরকার সময়মতো পদক্ষেপ নেবে এবং মানুষ তাতে সুফল পাবে৷ যেমন পেঁয়াজের দাম নিয়ে কিছুদিন যেটা চলল, সরকার বা সবাই দেখল পেঁয়াজের দাম অনায্যভাবে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে৷ প্রতি কেজি ৪০-৪৫ টাকা হলেই কৃষকের জন্য যৌক্তিক হয়৷ সেটা ১০০ টাকায় উঠে গেল৷ যখন ৭০ টাকা উঠল তখন প্রতিবেশি দেশ ভারতে ১৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে৷ তখনই কিন্তু আমদানির অনুমতি দেওয়ার প্রয়োজন ছিল৷ এখন আমদানির অনুমতি দিয়েছে, দেখেন কত টাকা কমে গেছে৷ সাধারণ ভোক্তাদের এটা উপকারে আসবে৷ এভাবে সাধারণ মানুষের জন্য সরকারকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে৷

প্রস্তাবনায় না থাকলেও সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ে৷ কিন্তু সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা না চাপানোর ঘোষণা থাকার পরও সেটা বাড়ছে৷ এই বৈপরিত্য কেন?

কর কিন্তু সরকারি কর্মচারীরাও দেয়৷ আমরা যারা অবসরপ্রাপ্ত মানুষ আমরা কর দেই৷ হ্যাঁ, পেনশনের উপর কর নেই৷ কিন্তু অন্যান্য খাতে অর্থাৎ আমি যে ফ্ল্যাটের ভাড়া পাই সেটার জন্য কর দিতে হয়৷ পরোক্ষ কর যেটা আছে, সেটা আমরা দেই৷ আপনার মতো আমিও বাজার করতে যাই৷ বাজারে যা কিছুই আছে তার সব কিছুই আপনার মতো আমি কর দিয়ে কিনি৷ আমাদের জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই৷ দাম বাড়লে ভুক্তভোগী আমরাও হই৷

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লে কতভাগ মানুষ উপকৃত হন?

আমাদের বর্তমানে ১৬ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছে৷ একটা পরিবারে যদি ৫ জন ধরেন তাহলে ৮০ লাখ মানুষ সরাসরি উপকৃত হন৷ তাদের ক্রয়ক্ষমতাটা কিন্তু মার্কেটে হিট করবে৷ তারা যখন বাজারে যাবেন তখন বেচাকেনা বাড়বে৷ যারা বিক্রেতা তাদেরও আয় বাড়বে৷ মার্কেটটা প্রাণবন্ত হবে৷ সেক্ষেত্রে টাকার প্রবাহ বাড়বে৷ ব্যবসা বাণিজ্যও বাড়বে৷

বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ এমন পরিস্থিতিতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়লে সংকট আরও বাড়বে কিনা?

সরকারি কর্মচারীরা কিন্তু সরকারের প্রয়োজনীয় অংশ৷ সরকার যদি কাউকে অতিরিক্ত মনে করে, তাদের কিন্তু বাদ দিতে পারে৷ তবে যতক্ষন থাকবে তাকে উপযুক্ত বেতন দিতে হবে৷ এই যে নিম্নপদস্থ কর্মচারী যারা আছে তারা তো দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছেন৷ যারা গ্রেড-১৯ বা ২০-এ বেতন পায় তারা তো ৮ হাজার টাকা পায়৷ সব মিলিয়ে ১২-১৩ হাজার টাকা পায়৷ দারিদ্র্য সীমা হলো যার প্রতিদিনের আয় ১ দশমিক ৯ ডলারের নিচে৷ ধরেন নিম্নপদস্থ একজন কর্মচারীর মাসে যদি আয় ১৫ হাজার টাকাও হয় এবং তার পরিবারের সদস্য যদি হয় পাঁচ জন তাহলে প্রতিজনের জন্য বরাদ্দ তিন হাজার টাকা৷ ১ দশমিক ৯ ডলার প্রতিদিনের আয় হলে সেখান থেকে এটা কত কম দেখেন? অর্থাৎ তারা দারিদ্র্য সীমার নিচেই বসবাস করছে৷ সরকারি চাকরি করে একজন দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করবে এটা নিশ্চয় আপনারা চাইবেন না? আমি মনে করি, আমাদের চাওয়া উচিৎ তারা স্বচ্ছল থাকুক৷ তবে তারা যেন মানুষকে যথাযথ সেবা দেয় এবং দুর্নীতিমুক্ত থাকে৷ তার জন্য যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সেটা নেওয়া উচিৎ৷

সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের সমন্বয় করে বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সরকারের করণীয় কী?

বেসরকারি খাতে কিন্তু দুইটা শ্রেণী আছে৷ গার্মেন্টস সেক্টর যদি ধরেন সেখানে কর্মকর্তা পর্যায়ে যারা আছেন তাদের বেতন কিন্তু অনেক বেশি৷ ব্যাংকগুলোতে একটু সিনিয়র যারা আছেন তাদের বেতনও অনেক বেশি৷ ব্যাংকে একজন জিএমের বেতন তিন লাখ টাকা৷ একজন এমডির বেতন ৭-৮ লাখ টাকা৷ ক্ষেত্রবিশেষ ২০-২২ লাখ টাকাও আছে৷ ইসলামী ব্যাংকের এমডি মনে হয় ২০ লাখ টাকার উপর বেতন পান৷ সে হিসেবে সরকারি কর্মচারীদের বেতন কমই৷ তবে হ্যাঁ বেসরকারি খাতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন অত্যন্ত কম৷ তাদের বেতন যৌক্তিক পরিমাণে আরও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি৷

করের আওতা বাড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উপর ভ্যাট কমিয়ে সরকার দাম একটু কমাতে পারে কিনা?

করের বিষয়টা একটু জটিল৷ এবার দেখেন বাজেটে যেটা করা হয়েছে, যাদের টিন আছে তাদের সবাইকে ন্যূনতম কর দুই হাজার টাকা দিতে হবে৷ যাদের আয় নেই তাদেরও৷ এটা গ্রহণযোগ্য ব্যাপার বলে আমার মনে হয় না৷ সরকারের এটা বাদ দেওয়া উচিৎ৷ আর বেসরকারি পর্যায়ের বেতন বাড়ানোর জন্য সরকারের যে মেকানিজম আছে সেটা কাজে লাগাতে হবে৷ যেমন ধরেন সাংবাদিকদের জন্য ওয়েজবোর্ড বলে একটা ব্যবস্থা আছে৷ এই ওয়েজবোর্ড অনুসারে সংবাদপত্রের মালিকেরা যেন সাংবাদিকদের বেতন দেন সে ব্যাপারে সরকারের নজর দেওয়া উচিৎ বা বাধ্য করা উচিৎ৷ সরকার যখন তাদের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে তখন এই বিষয়গুলো লক্ষ্য করা উচিৎ৷ পাশাপাশি শ্রমিক যারা আছেন তাদের জন্যও কিন্তু ন্যূনতম মজুরি বোর্ড আছে৷ সেখানেও মাঝে মধ্যে পরীক্ষা নিরিক্ষা করে সমন্বয় করা দরকার৷ সেটাও অত্যন্ত কম৷ বর্তমান বাজারদরের সঙ্গে মিল রেখে সেটা পুনঃনির্ধারণ করা উচিৎ বলেই আমি মনে করি৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ