প্রটোকল ভেঙে বিমানবন্দরে এসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বাগত জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ ভারতের গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাসিনার সফর নিয়ে রয়েছে জানা-অজানা নানা তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
ভারতের রাষ্ট্রপ্রতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্ক কতটা গভীর তা নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কলকাতার টেলিগ্রাফ পত্রিকা৷ এতে দাবি করা হয়েছে, অতীতে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে হাসিনাকে সরাতে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন যে চেষ্টা করেছিলেন, তাতে বাধ সেধেছিলেন প্রণব৷ বিস্তারিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের রাজনীতির নানা দিক এবং হাসিনার সঙ্গে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূসের বিরোধের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে৷
এদিকে, ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়া লিখেছে, আগামী নির্বাচনে প্রবেশের আগে শেষ বারের মতো ভারত সফর করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ পত্রিকাটির প্রতিবেদনে হাসিনার সফরের সময় বহুল আলোচিত তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানানো হয়েছে৷ ‘‘এটা পানিবিহীন সফর'' - পত্রিকাটি নিজস্ব সূত্রগুলো থেকে এমনটাই জেনেছে বলে লেখা হয়েছে৷
তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারতীয়রা যা ভাবছেন
শেখ হাসিনা ভারতে এলেও তিস্তা চুক্তি আপাতত হচ্ছে না৷ তারপরেও তিস্তার দিকে চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ আশা-আকাঙ্খায় দিন গুনছে বহু মানুষ৷ চলুন জেনে নেওয়া যাক ভারতের কয়েকজন সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে কী ভাবছেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
সুস্মিতা সর্বাধিকারী, কবি ও সমাজসেবী
তিস্তা নদী ভারতের যে যে রাজ্যের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে জলবণ্টন চুক্তিতে সেই রাজ্যগুলির স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে আন্তর্জাতিক স্তরে চুক্তিবদ্ধ হওয়া আবশ্যক৷ তা না হলে অন্যান্য জলচুক্তির ক্ষেত্রে ভারত যে শিক্ষা পেয়েছে, এক্ষেত্রেও তা-ই হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অবস্থান সাধুবাদের যোগ্য৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
মলয় হালদার, পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন প্রশাসনিক কর্তা
নদীর গতিপথ যখন প্রাকৃতিকভাবে নিয়ন্ত্রিত হতো, তখন কোনো দেশের একক সিদ্ধান্ত কার্যকর করা সহজ হতো না৷ এখন ভাটির দেশকে নির্ভর করতে হয় উজান দেশের মনোভাবের ওপর৷ তিস্তার জল যেমন ভারতের, তেমনি বাংলাদেশেরও৷ শুধু উত্তরবঙ্গের কথা বলে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্বকে বলি দেওয়া সমীচীন নয়৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
পাপন মালাকার, বেসরকারি সংস্থার কর্মী
বাংলাদেশের সঙ্গে কোথায় যেন আত্মার টান অনুভব করি৷ আমরা জল অপচয় করব আর প্রতিবেশী দেশের ভাই-বোনেরা জলের অভাবে কষ্ট পাবে এটা মন থেকে মেনে নিতে পারি না৷ তবে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে যুক্তি দেখিয়েছেন তা নিয়েও আলোচনা প্রয়োজন৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
কমলিকা ভট্টাচার্য, চাকুরিজীবী
তিস্তা একটি আন্তর্জাতিক নদী৷ এই ধরনের নদীতে কোনো একটি দেশ বা রাজ্যের একছত্র অধিকার থাকে না৷ সিকিম থেকে গজলডোবা পর্যন্ত তিস্তার ওপর বেশ কয়েকটি বাঁধ নির্মাণের কারণে বাংলাদেশের রংপুর-রাজশাহী অঞ্চল মরুর চেহারা নিচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে নদী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে প্রতি বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শুখা মরশুমে দুই দেশের মধ্যে সমবন্টনের নীতি গ্রহন করা উটিত৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
অসীম দাস, সমাজসেবী
নদীর জল আটকে রাখার চেষ্টা, নিজের অধিকারের এক্তিয়ার বলে মনে করা নেহাৎ মুর্খামি৷ ভারত বা বাংলাদেশ উভয়েই কৃষিপ্রধান দেশ৷ কৃষিকাজ না হলে দুর্ভিক্ষ নেমে আসবে৷ বাংলাদেশকে তিস্তার জল না দিয়ে ভারত যদি শুধুমাত্র নিজের স্বার্থ দেখে, তাহলে ভবিষ্যতে নেপাল যদি ভারতকে ব্রহ্মপুত্র নদীর জল দিতে অস্বীকার করে, কী হবে তখন?
ছবি: DW/R. Chakraborty
বনশ্রী কোনার, হোম মেকার
দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ‘ইগো’ নিয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এমনটা কখনওই কাম্য নয়৷ দেশ তথা সার্বিক স্বার্থকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া উচিত৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
অভিজিৎ চ্যাটার্জি, প্রকাশনী সংস্থার কর্মী
তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি হোক বা না হোক, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে নিজের রাজ্যে রাজনীতি করতেই হবে৷ তাই তাঁকে রাজ্যবাসীর স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করতে হয়৷ নদীর জলে কোনোরকম নিয়ন্ত্রণ না রেখে উত্তরবঙ্গকে বঞ্চিত করে বাংলাদেশকে জল দেওয়ার মধ্যে কোনও মহত্ব নেই৷ বরং সবার আগে রাজ্যবাসীর দিকে তাকানো উচিত৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
মানবেন্দু সরকার, কলেজ শিক্ষক
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আসছেন৷ তিস্তা জলবণ্টন চুক্তি নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করে প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর এটাই উপযুক্ত সময়৷ হাসিনা চাইছেন, নরেন্দ্র মোদী চাইছেন৷ সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীও চাইছেন৷ বেঁকে বসেছেন মমতা ব্যানার্জি৷ এটা সৌহার্দ্যের ছবি নয়৷ ভুল বার্তা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
রাখী বিশ্বাস, কলেজ ছাত্রী
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে তিস্তাচুক্তি নিয়ে আলোচনা চললেও তা ফলপ্রসূ হয়নি৷ ফলে তিস্তার জলের দিকে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ মমতা ব্যানার্জিকেই ঠিক করতে হবে, উনি রাজনীতি করবেন, নাকি দেশের স্বার্থে প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়াবেন৷
ছবি: DW/R. Chakraborty
9 ছবি1 | 9
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গে সর্বাধিক পঠিত বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের শিরোনাম, ‘‘দিল্লি পৌঁছলেন হাসিনা, প্রোটোকল ভেঙে নিজেই বিমানবন্দরে হাজির মোদী৷'' ভারতের বর্তমান শাসকদলের সঙ্গে হাসিনা সরকারের সম্পর্কের গভীরতা বোঝাতে একই ধরনের শিরোনাম ব্যবহার করেছে আরো কয়েকটি পত্রিকা৷ ভারতের সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছে যে, হাসিনাকে স্বাগত জানাতে মোদী তাঁর বাসভবন থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার সময় দিল্লির কোনো রাস্তায় ট্রাফিক বন্ধ করা হয়নি, যা সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর চলাচলের সময় করা হয়ে থাকে৷
প্রধানমন্ত্রী মোদীর টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকেও হাসিনাকে স্বাগত জানানোর কথা বলা হয়েছে৷ এক টুইটে তিনি লিখেছেন, ‘‘দু'দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷''
তবে ভারতে নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিন টুইটারে দাবি করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে দেয়া পার্টিতে তাঁকে চাকুরি হারানোর ভয়ে নতুন দিল্লিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা আমন্ত্রণ জানাননি৷ তাঁকে দেশে ফিরিয়ে নিতে হাসিনা কোনো উদ্যোগ নেননি বলেও লিখেছেন নাসরিন৷
উল্লেখ্য, চারদিনের ভারত সফর শেষে আগামী ১০ এপ্রিল দেশে ফিরে যাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷