সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা জানিয়েছেন৷কিন্তু বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে আগের দাবিতে এখনো অনড় আছে৷
বিজ্ঞাপন
বুধবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে৷ নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট হবে৷ তবে বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক৷ সে নির্বাচনে অনেক দলই অংশ নেবে৷ বিএনপি না এলেও সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যে কেন সংশয় প্রকাশ করছে, তা আমার বোধগম্য নয়৷ কারণ, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে তো বিএনপি অংশ নিচ্ছে৷ কুমিল্লায় জিতেছে, খুলনায় অংশ নিয়েছে, গাজীপুরে অংশ নিচ্ছে৷ বরিশাল এবং রাজশাহীতেও অংশ নিবে৷ সেখানে তাদের প্রার্থী আছে৷ এই সমস্ত নির্বাচনে যদি তারা অংশ নিতে পারে, তবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে কোথায় তাদের ভয়, সে বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়৷''
‘সরকার সংবিধানের বাইরে একচুলও হাঁটবে না''
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘স্থানীয় নির্বাচনে সরকারের প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে, তবে জাতীয় নির্বাচনে তো সরকারের কোনো প্রভাবই থাকবে না৷ তারপরেও নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের কেন সংশয়, সেটা তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করুন৷ আর আন্দোলন করে কোনো কিছু করার শক্তি-সামর্থ্য বিএনপির নেই৷''
বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশরারফ হোসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথার জবাবে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দাবি হলো নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার৷ এখন আমরা দেখি তারা কী করে৷ আমাদের আরো দাবি হলো: সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন, নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েন৷ এগুলো সব মিলিয়ে নির্বাচন করতে হবে৷ সে (ওবায়দুল কাদের) হয়তো এককভাবে একটা কথা বলেছে৷ আমরা দেখি বাস্তবে কী হয়৷ যখন গঠন হবে, তখন আমরা দেখবো৷ আর ছোট-বড় কোনো কথা নয়, কথা হলো নির্বাচরকালীন সরকার নিরপেক্ষ হতে হবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন৷ এর মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয় না৷ আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন, সরকার পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন৷ তাই দুই নির্বাচন কোনোভাবেই একই মানদণ্ডে বিচার করা যায় না৷ তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে হলে এটা প্রভাবমুক্ত হবে না৷ নিরপেক্ষ হবে না৷ সুষ্ঠু হবে না৷ এটা ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা সরকার সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে৷ আমাদের নতুন করে বলতে হবে না৷''
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে৷ ওই নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোট বর্জন করে৷ তাদের দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আর ওই নির্বাচন হয় দলীয় সরকারের অধীনে৷ এর আগে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়৷
‘‘আমাদের দাবি নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার’
বর্তমন আওয়ামী লীগ সকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের জানুযারি মাসে৷ আর মেয়াদের মধ্যেই সরকার নির্বাচন দিতে চায়৷ তাই নির্বাচন হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের মতোই (২০১৪ সাল) আছে৷ এটার এক্তিয়ার পুরোপুরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর৷ এখানে যদি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়, সেটা প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে৷ আকার ছোট হবে৷ সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন৷ এবং তিনিই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন৷''
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরো বলেন, ‘‘বিএনপি যা-ই দাবি করুক না কেন, সরকার সংবিধানের বাইরে একচুলও হাঁটবে না৷''
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ বার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সে সময় ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়৷ আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি৷ ঐ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৭ এপ্রিল, তেজগাঁওয়ে অবস্থিত তখনকার জাতীয় সংসদ ভবনে৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয়লাভ করে৷ বঙ্গবন্ধু সে সময় ঢাকা-১২ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রথম নারী সাংসদ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয়৷ সেবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ৩০টি৷ তবে ঐ সংসদেই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে একজন নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ খুলনা-১৪ থেকে নির্বাচিত হন সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ৷ প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২ এপ্রিল৷ নির্বাচনে মাত্র মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ২০৭টি আর আওয়ামী লীগ ৫৪টি আসন পেয়েছিল৷
ছবি: imago stock&people
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে৷ জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
চতুর্থ সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ জাতীয় পার্টি আসন পেয়েছিল ২৫১টি৷ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সংসদে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আর জাতীয় পার্টি ৩৫টিতে জয়লাভ করে৷ এছাড়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ৩০ জন মহিলাকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়৷ অবশ্য তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি সংবিধানের অংশ ছিল না৷ পরের সংসদে সেই বিল পাস হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ আওয়ামী লীগ সহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল৷ ফলে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশ৷ ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয়লাভ করেছিল৷ মাত্র চার কার্যদিবসে সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়৷ এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo
সপ্তম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬ ও জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে৷ পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷
ছবি: Reuters
অষ্টম সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর৷ অষ্টম সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷ কারণ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শুরুতে কোনো মহিলা আসন ছিল না৷ পরে আইন করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ এ উন্নীত করা হয়৷ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ আর আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
নবম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত সবশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পেয়েছিল ২৬৩টি আসন৷ আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পায় ৩৩টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar
দশম সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি৷ ফলে ১৫৩ জন সাংসদ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সাংসদ নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাদশ সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া এই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের ২৮৮টিই পেয়েছিল ক্ষমতাসীন দল ও মহাজোট৷ সেই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট পড়েছে পাঁচ ভাগের চার ভাগ৷ ঘটেছে নজিরবিহীন ঘটনাও৷ ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে৷ প্রায় আট হাজার কেন্দ্রে পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি৷