নির্বাচনের পরিবেশ বুঝতে ইইউ প্রতিনিধি দলের বৈঠক শুরু
১০ জুলাই ২০২৩
নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়ন করতে ২ সপ্তাহের সফরে বাংলাদেশে এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-র ৬ সদস্যের ইলেকশন এক্সপ্লোরেটরি মিশন৷ আজ (সোমবার) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন তারা৷
বিজ্ঞাপন
পরে মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও বৈঠক করার কথা রয়েছে তাদের৷
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ডয়চে ভেলের কনটেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আজ সকাল ১০টায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন৷
এ ছাড়া আজ ইইউ প্রতিনিধিদলের মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও বৈঠকের কথা রয়েছে৷
গত শনিবার ঢাকায় আসা মিশনটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা কূটনীতিকদের সঙ্গে ইতোমধ্যে বৈঠক করেছে৷
একটি কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, ইইউ মিশনটি ঢাকায় ইইউ দূত, কানাডা, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতদের কাছে জানতে চেয়েছিল বর্তমানে তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কীভাবে দেখছেন৷
সরকার, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন কমিশন, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে তাদের বৈঠকের কথা রয়েছে৷
বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি এর আগে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, 'তারা (প্রতিনিধি দল) সিদ্ধান্ত নেবেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ মিশন এখানে পাঠানোর উপযোগী, সুপারিশযোগ্য এবং সম্ভব কি না৷'
ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেপ বোরেলের কাছে তারা যে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেবেন, তার ওপর ভিত্তি করে চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনের আগে এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন (ইওএম) পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে৷
এদিকে, নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মিশনের মূল্যায়ন অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্যেও মানদণ্ড হিসেবে কাজ করবে—তারাও নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে আসবে কি না৷
এর আগে ২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে নির্বাচনী পর্যবেক্ষক পাঠায়নি৷
এনএস/এসিবি (দ্য ডেইলি স্টার)
বাংলাদেশে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের যত মন্তব্য
নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়৷ ২০০০ সালের পর থেকে এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা থাকছে ছবিঘরে৷
২০০০ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোর প্রায় প্রত্যেকটির আগে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূতদের কথা বলতে দেখা গেছে৷ বিদেশি কূটনীতিকদের এমন আচরণকে সবসময় ক্ষমতাসীন দল ‘শিষ্টাচার লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করে। আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে তা ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ পদক্ষেপ৷
ছবি: AP
‘স্টুপিড রাষ্ট্রদূত’
চার দলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের তৎপরতা দেখা যায়৷ তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যরিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, ‘‘কিছু কিছু দালাল রাষ্ট্রদূত মহাজোটকে (আওয়ামী লীগ ও তার জোট) সংবিধান ধ্বংসের উসকানি দিচ্ছেন৷ তাদের কর্থাবার্তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরুপ৷’’ বাংলাদেশে মার্কিন ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে ‘স্টুপিড’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
২০ বছর পর আওয়ামী লীগের মুখেও একই সুর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে ভিসা নীতি। কথা বলছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকেরাও। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বা বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন বিষয় বা অনুষ্ঠান থেকে কূটনীতিবিদেরা বিরত থাকবেন বলে আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর৷
ছবি: DW
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট
২০০১ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আগস্টে ঢাকায় আসেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত‘ করতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসেন তিনি৷ ঢাকা ত্যাগের আগে সংবাদ সম্মেলনে কার্টার জানান, ১) সংসদ বর্জন নয় ২) হরতাল নয় ৩) সন্ত্রাস নয় ৪) ভোটকেন্দ্রে স্থানীয় পর্যবেক্ষক এবং ৫) কমপক্ষে ৬০জন নারী এমপি, এই পাঁচ প্রশ্নে একমত হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি৷
ছবি: John Amis/REUTERS
‘বাংলাদেশ ট্রাবলসাম হয়ে উঠেছে’
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা, জঙ্গিবাদের উথ্থানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় আসে বাংলাদেশ৷ এমন প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইসের এক বক্তব্য বেশ আলোড়ন তোলে৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ বেশ ট্রাবলসাম বা সমস্যাসংকুল হয়ে উঠেছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত) কিছু করতে হবে।’’
ছবি: DW/O. Sawizky
বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠি
সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে লেখা ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে৷ এমন ঘটনা নতুন নয়৷ ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ১৬ বা ১৮ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান-সিনেটর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইসকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংস জঙ্গিবাদের ব্যাপারটি উথ্থাপন করার অনুরোধ জানান৷
ছবি: Anna Moneymaker/Getty Images
এক-এগারো সরকার ও কূটনীতিকেরা
চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হবার আগেই বাংলাদেশে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ দুই মেরুতে অবস্থান নেয় সেসময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি ও প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে থেকেই তৎপরতা শুরু করে কূটনীতিকেরা।
ছবি: DW
সরব পশ্চিমারা
চারদলীয় জোটের সময়কালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে বেশ তৎপরতা দেখা যায় পশ্চিমা কূটনীতিকদের৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে ফোন করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি নিকোলাস বার্নসে৷ সব দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhot/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের 'কফি গ্রুপ’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকাস্থ পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য নিজেদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক করতেন। যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘কফি গ্রুপ’। এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও জাতিসংঘের প্রতিনিধি। এই গ্রুপে জাপানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উইকিলিকসে প্রকাশিত তথ্য এমন ইঙ্গিত দেয়।
ছবি: DW
চাকরির নিশ্চয়তা চান সেনাপ্রধান
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ সেসময়ের ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির কাছে চাকরির নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত প্রণব মুখার্জি ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স’ এ জানান, মইন উ আহমেদের আশঙ্কা ছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হবে। তার চাকরির দায়িত্ব প্রণব মুখার্জি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
ছবি: DW / Samir Kumar Dey
সুজাতা সিংয়ের বিতর্কিত সফর
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এমন অবস্থানে অনড়৷ সেবছরের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নির্বাচন৷ ঠিক এক মাস আগে ঢাকা সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। অনকের দাবি, সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে আসতে অনুরোধ জানান৷ এর ফলে বিএনপিকে ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন সহজ হয়৷
ছবি: DW
পুলিশ রাতে ব্যালট ভর্তি করেছে: জাপানের রাষ্ট্রদূত
দ্বাদশ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই একাদশ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গত নির্বাচনে (২০১৮ নির্বাচনে) পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার যে অভিযোগ উঠেছে, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে কখনোই এমনটা শুনিনি। আশা করি আগামী নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। জাপান আশা করে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে।’’
ছবি: U.S. Embassy Dhaka
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি
সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ৷ ২৪ মে ঘোষিত ওই ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে৷ এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি চ্যানেল 24-কে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইউরোপের বাজারে ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধার দুয়ার খুলতে পারে।
সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখার প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রতি চীনের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। অবশ্য এক সপ্তাগ আগে গত শুত্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।