ক’দিন পর, জুন মাসে, বাংলাদেশে নতুন অর্থনেতিক বাজেট ঘোষণা করা হবে৷ ইতিমধ্যেই এডিপি ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই বাজেট নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক বিচেনায় না করে অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে করা উচিত বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা৷
বিজ্ঞাপন
নতুন অর্থ বছরের এডিপি হবে প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকার৷ এটা আগের বছরের তুলনায় ২১ হাজার কোটি টাকা বেশি হলেও তার মধ্যে কিছু ফাঁক আছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, বাস্তবে এডিপি-র আকার বাড়ছে মাত্র ৬ হাজার কোটি টাকার৷ কারণ শিক্ষা ও পদ্মা সেতু – এই দুটি খাত এর অন্তর্ভুক্ত করায় ১৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে৷ যা আগেও ছিল৷ তিনি বলেন, এবার এডিপি-তে ৫০টি নতুন প্রকল্প যুক্ত হয়েছে৷ আর পুরনো প্রকল্পগুলোই নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
মুহাম্মদ ইউনূসের আরেকটি অর্জন
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস৷ বুধবার ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় ইউনূসের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন জন বোয়েনার৷
ছবি: Getty Images
যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা
বাংলাদেশের প্রথম এবং একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঝুড়িতে আরেকটি সম্মাননা যোগ হলো৷ বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক গ্রহণ করেছেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা৷ তবে নিজের দেশে বর্তমানে বেশ চাপের মধ্যে আছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী অধ্যাপক ইউনূস৷
ছবি: Getty Images
সম্মাননা গ্রহণ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উভয় কক্ষের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনের রোটান্ডায় অধ্যাপক ইউনূসের হাতে সম্মাননা তুলে দেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার জন বোয়েনার৷ এসময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট নেতা ন্যান্সি পেলোসি (বামে)৷
ছবি: Getty Images
বাংলাদেশের মানুষকে উৎসর্গ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা কংগ্রেশনাল গ্রহণ করার পর ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘‘সকলে আমার কাজে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়েছেন বলেই ক্ষুদ্রঋণের ধারণাটি আজ বিশ্বব্যাপী সমাদৃত৷ আমি এ সম্মান বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্যে উৎসর্গ করলাম৷’’
ছবি: Getty Images
‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’
এর আগে ২০০৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি মর্যাদাশীল সম্মাননা অর্জন করেন ইউনূস৷ ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য বিমোচনে কাজ করায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘প্রেসিডেন্ট স্বর্ণপদক’ পান ড. ইউনূস৷ সাধারণত মার্কিন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী এই সম্মাননা দেওয়া হয়৷
ছবি: AP
অন্য উচ্চতায় ইউনূস
বলাইবাহুল্য, ইউনূস হচ্ছেন প্রথম এবং একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি নোবেল পুরস্কার জয়ের পাশাপাশি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দুটি মর্যাদাশীল সম্মাননা অর্জন করেছেন৷ গোটা বিশ্বে মাত্র সাতজন জীবদ্দশায় এই তিনটি সম্মাননা পেয়েছেন৷ এরা হচ্ছেন নরম্যান বারলগ, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, এলি উইসেল, অং সান সু চি, মাদার টেরেসা এবং সর্বশেষ মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা
গরিব মানুষ বিশেষ করে নারীদের ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার জন্য ১৯৭৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন মুহাম্মদ ইউনূস৷ আধুনিক ক্ষুদ্রঋণের জনক বলা হয় তাঁকে৷ গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্ষুদ্রঋণকে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন তিনি৷ ক্ষুদ্রঋণের এই ধারণা অধ্যাপক ইউনূসকে গোটা বিশ্বেই সম্মানজনক পরিচিতি এনে দিয়েছে৷
ছবি: AP
শান্তিতে নোবেল জয়
২০০৬ সালের যৌথভাবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ সেবছরের ডিসেম্বরে নরওয়ের রাজধানী অসলো’র টাউন হলে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন অধ্যাপক ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি তসলিমা বেগম৷
ছবি: AP
রাজনীতির ইচ্ছা এবং বিড়ম্বনা
শান্তিতে নোবেল জয়ের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশের ঘোষণা দেন অধ্যাপক ইউনূস৷ তবে এই সিদ্ধান্ত থেকে দ্রুতই সরে আসেন তিনি৷ কিন্তু অনেকেই মনে করেন, রাজনীতিতে নামার এই বাসনার কারণে পরবর্তীতে অনেক রাজনীতিবিদের চক্ষুঃশূল হন তিনি৷
ছবি: AP
গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ‘বিদায়’
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ বেশ খানিকটা চাপের মধ্যে রয়েছেন৷ বয়সসীমা অতিক্রান্ত হওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইউনূসকে অব্যাহতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক৷ এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়েছেন ইউনূস৷ এখন (১৮.০৪.১৩) পর্যন্ত ব্যাংকটিতে নতুন কোন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ সম্ভব হয়নি৷
ছবি: dapd
রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ?
যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনো অধ্যাপক ইউনূসকে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে স্বীকার করেননি৷ তবে একথা বহুদিন ধরে চালু যে, অধ্যাপক ইউনূসের উপর কোন কারণে নাখোশ শেখ হাসিনা৷ যেকারণে চলতি সরকারের মেয়াদে নিজ দেশ বিভিন্ন ইস্যুতে চাপে আছেন মুহাম্মদ ইউনূস৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, এতে আবারও প্রামাণ হলো এডিপি বাস্তবায়নে আমাদের সক্ষমতায় আগের মতোই ঘাটতি রয়েছে৷ এছা়ডা, নির্বাচনের আগে এডিপি-তে খরচ না বাড়িয়ে সরকার হয়ত দুর্নীতিমুক্ত আছে, তেমন একটা আবহ সৃষ্টি করতে চাইবে৷ কিন্তু পুরনো প্রকল্পেও দুর্নীতি সম্ভব৷ আর বাজেটে থোক বরাদ্দ তো থাকবেই৷ তাই এই থোক বরাদ্দ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷
তিনি বলেন, দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেছে৷ কমছে রপ্তানিও৷ এ জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না৷ তাই বাজেট হতে হবে প্রধানত এই তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে৷ নয়ত প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব হবে না৷ বিদেশি বিনিয়োগ কমে গেলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে হয়৷ বাড়াতে হয় সরকারি বিনিয়োগ৷ সেজন্য প্রয়োজন অর্থ৷ সেই অর্থ সরকার অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে জোগাড় করে৷ ঋণ নেয়৷ এতে মুদ্রাস্ফিতি কিছুটা বেড়ে যেতে পারে৷ কিন্তু নির্বাচনের আগে সরকার সেই ঝুঁকি নেবে কিনা সন্দেহ আছে৷ কিন্ত সেটা নেয়া প্রয়োজন৷
সরকারের চলতি বাজেটের আকার ১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকার৷ এই বাজেটের ধারাবাহিকতা এবারের নতুন বাজেটেও থাকতে হবে বলে মনে করেন অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন৷ তিনি বলেন, চলতি ও নতুন বাজেটসহ দুটি বাজেটই নির্বাচনী বাজেট৷ কিন্তু দেখা গেছে দুটি বাজেটের বৈশিষ্ট্য দু'রকম হয়৷ নির্বাচনের এক দেড় বছর আগের বাজেটের আকার হয় বড়৷ আর ঠিক নির্বাচনের আগের বাজেট হয় অনকেটা রক্ষনশীল৷ কারণ এই বাজেট নির্বাচন পরবর্তী সরকারও পাবে৷ তাই অনেকটা দোদুল্যমানতায় থাকে সরকার৷ কিন্তু এরকম হওয়া উচিত নয়৷ এতে বাজেটের ধারাবহিকতা থাকে না৷ এবং অর্থনীতিকে এর মাশুল গুনতে হয়৷