প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দলীয় নেতা কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন৷ নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে নির্বাচনি গণসংযোগ শুরু করার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি৷ বিষয়টিকে বিএনপি কীভাবে দেখছে?
বিজ্ঞাপন
প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্য কোনো জনসভায় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেননি৷ বলেছেন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে৷ বৈঠকটি ছিল রুদ্ধদ্বার৷ সেখান থেকে বের হয়ে নেতাদের কেউ কেউ প্রধানমন্ত্রীর ওই পরামর্শের কথা সংবাদমাধ্যমকে জনিয়েছেন৷
জানা গেছে, সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন থেকেই আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার জন্য এমপিদের নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘‘নির্বাচনের আর মাত্র দু’বছর তিন মাস বাকি আছে৷ তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে৷'' এ জন্য এলাকায় গিয়ে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরার পাশাপাশি জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি৷
বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ইতিহাস
স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ১১ বার সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ছবিঘরে থাকছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ সে সময় ৩০০ আসনে সরাসরি নির্বাচন হয়৷ আর সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি৷ ঐ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসেছিল ৭ এপ্রিল, তেজগাঁওয়ে অবস্থিত তখনকার জাতীয় সংসদ ভবনে৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯৩টিতে জয়লাভ করে৷ বঙ্গবন্ধু সে সময় ঢাকা-১২ আসন থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন৷
ছবি: AP
দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন, প্রথম নারী সাংসদ
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ভোটগ্রহণ হয়৷ সেবার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ৩০টি৷ তবে ঐ সংসদেই প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ ভোটে একজন নারী সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন৷ খুলনা-১৪ থেকে নির্বাচিত হন সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজ৷ প্রথম অধিবেশন বসেছিল ২ এপ্রিল৷ নির্বাচনে মাত্র মাস ছয়েক আগে প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি ২০৭টি আর আওয়ামী লীগ ৫৪টি আসন পেয়েছিল৷
ছবি: imago stock&people
তৃতীয় সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ১৯৮৬ সালের ৭ মে৷ জাতীয় পার্টি ১৫৩টি, আওয়ামী লীগ ৭৬টি আর জামায়াতে ইসলামী ১০টি আসন পায়৷ বিএনপি এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
চতুর্থ সংসদ নির্বাচন
১৯৮৮ সালের ৩ মার্চ এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ বেশ কয়েকটি দল এই নির্বাচন বর্জন করেছিল৷ জাতীয় পার্টি আসন পেয়েছিল ২৫১টি৷ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এই সংসদে মোট আসন সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷
ছবি: http://www.parliament.gov.bd
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন
তৎকালীন প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামী লীগ ৮৮টি আর জাতীয় পার্টি ৩৫টিতে জয়লাভ করে৷ এছাড়া নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের ভোটের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে ৩০ জন মহিলাকে সাংসদ নির্বাচিত করা হয়৷ অবশ্য তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাটি সংবিধানের অংশ ছিল না৷ পরের সংসদে সেই বিল পাস হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images
ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি৷ আওয়ামী লীগ সহ অধিকাংশ বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করেছিল৷ ফলে মোট ভোট গৃহীত হয়েছিল মাত্র ২১ শতাংশ৷ ৩০০টি আসনের মধ্যে বিএনপি ২৭৮টিতে জয়লাভ করেছিল৷ মাত্র চার কার্যদিবসে সংসদ বসার পর তা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়৷ এই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস হয়৷
ছবি: picture-alliance/Dinodia Photo
সপ্তম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯৬ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৪৬, বিএনপি ১১৬ ও জাতীয় পার্টি ৩২টি আসনে জয়লাভ করে৷ পরে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ৷
ছবি: Reuters
অষ্টম সংসদ নির্বাচন
ভোটগ্রহণ হয় ২০০১ সালের ১ অক্টোবর৷ অষ্টম সংসদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল ৩০০টি৷ কারণ সংরক্ষিত মহিলা আসন সংক্রান্ত আইনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শুরুতে কোনো মহিলা আসন ছিল না৷ পরে আইন করে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ এ উন্নীত করা হয়৷ নির্বাচনে বিএনপি ১৯৩ আর আওয়ামী লীগ ৬২টি আসনে জয়ী হয়েছিল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
নবম সংসদ নির্বাচন
তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত সবশেষ নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর৷ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার পেয়েছিল ২৬৩টি আসন৷ আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট পায় ৩৩টি আসন৷
ছবি: picture-alliance/A.A./N. Kumar
দশম সংসদ নির্বাচন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি৷ ফলে ১৫৩ জন সাংসদ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই সাংসদ নির্বাচিত হন৷
ছবি: DW/M. Mamun
একাদশ সংসদ নির্বাচন
বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালে৷ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে হওয়া এই নির্বাচনে সংসদের ৩০০ আসনের ২৮৮টিই পেয়েছিল ক্ষমতাসীন দল ও মহাজোট৷ সেই নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ভোট পড়েছে পাঁচ ভাগের চার ভাগ৷ ঘটেছে নজিরবিহীন ঘটনাও৷ ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে৷ প্রায় আট হাজার কেন্দ্রে পড়েছে ৯০ শতাংশের বেশি৷
ছবি: Anupam Nath/AP/picture alliance
11 ছবি1 | 11
একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সজাগ ও সতর্ক থেকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ বিরোধী জনসচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘‘দেশের সব অঞ্চলে শুধু জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি গঠন করলেই চলবে না, এ সব কমিটিকে কার্যকর করে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গি-সন্ত্রাসী ও তাদের মদদদাতাদের খুঁজে বের করতে হবে৷ সর্বত্র এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে৷''
প্রধানমন্ত্রীর এই কথায় এটা স্পষ্ট যে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে মধ্যবর্তী নির্বাচনের কোনো ইঙ্গিত তিনি দেননি৷ তিনি পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষের নির্বাচনের কথাই বলেছেন৷ তবে আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্টদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন নির্বাচন হবে পাঁচ বছরের মেয়াদের শেষ তিনমাসের মধ্যে৷
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৷ তখন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়৷ ওই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে তারা ৩০টি আসন পেয়ে ক্ষমতা হারায়৷ আর ২৩০টি আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে৷
এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হলে দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি৷ ওই নির্বাচনে ২৩৪ আসন পেয়ে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় দফা সরকার গঠন করে৷ আর জাতীয় পার্টি ৩৪টি আসন পেয়ে বিরোধী দলে পরিণত হয়৷ বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়৷ নির্বাচন বর্জন করায় সংসদের বিরোধী দলের অবস্থানও হারায় তারা৷
অন্যরকম নির্বাচন
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ১৫৩টি আসনে একক প্রার্থী থাকায় রবিবার অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণ হয়নি৷ নির্বাচনের দিনের কিছু ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M. Mamun
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে সরকার ব্যাপক নিরাপত্তা প্রস্তুতি গ্রহণ করে৷ এজন্য ৫৯ জেলায় বিভিন্ন বাহিনীর প্রায় সাড়ে চার লাখ সদস্য মোতায়েন করা হয়৷ বাকি পাঁচটি জেলায় নির্বাচনের প্রয়োজন পড়েনি৷
ছবি: DW/M. Mamun
অলস সময়
ভোটার না থাকায় ঢাকার মিরপুরের হাজী আশ্রাফ আলী হাইস্কুলে স্থাপিত ভোটকেন্দ্রের সামনে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের অলসভাবে সময় কাটাতে দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভোটারের জন্য অপেক্ষা
ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাকাডেমি ভোটকেন্দ্রের ছবি এটি৷ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে ভোটারদের জন্য বাঁশ ও দড়ি দিয়ে নির্ধারিত স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে৷ কিন্তু ভোটার নেই৷
ছবি: DW/M. Mamun
এখানেও একই অবস্থা
ছবিটি হারম্যান মাইনার কলেজ কেন্দ্রের৷ পাশাপাশি স্থাপিত কয়েকটি বুথ যেন খাঁ-খাঁ করছে৷ জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ, জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে জানান, ভোটার উপস্থিতি কম হবে এটাই স্বাভাবিক৷ কারণ এটি একটি ভিন্ন ধরনের নির্বাচন৷ একতরফার সঙ্গে আছে ব্যাপক সহিংসতা এবং বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিড়ম্বনার শিকার
নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়ে ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে অনেক ভোটার ফিরে গেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ তবে কেউ কেউ অবশ্য কষ্টটা শিকার করেই ভোট দিয়েছেন৷ ছবিতে মিরপুরের একটি কেন্দ্রে ভোটারদের সিরিয়াল নম্বর খুঁজতে দেখা যাচ্ছে৷ তাঁদের সহায়তা করছেন নির্বাচন সংশ্লিষ্টরা৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
ভোটাধিকার প্রয়োগ
ভোট দিচ্ছেন একজন ভোটার৷ অবশ্য তাঁর মতো ভাগ্যবান হতে পারেননি দেশের মোট ভোটারের শতকার ৫২ জন৷ অর্ধেকেরও বেশি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় এসব ভোটারের ভোট দেয়ার সুযোগ ছিল না৷ এই কারণে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীও ভোট দিতে পারেননি৷
ছবি: DW/M. Mamun
নারী ভোটার
ঢাকার একটি কেন্দ্রে ভোট প্রয়োগের অপেক্ষায় কয়েকজন নারী ভোটার৷
ছবি: DW/M. Mamun
উৎসাহে কমতি নেই
আব্দুল হাকিম নামে ৮৯ বছরের এই ভোটার দুই ব্যক্তির সহায়তায় ঢাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সেনা সদস্যদের পাহারা
দুজন ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন৷ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় সেখানে ছিলেন সেনা সদস্যরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
9 ছবি1 | 9
তবে তারপর বিএনপি স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিয়েছে৷ সেসব নির্বাচনেও তারা প্রাধান্য অর্জন করতে পারেনি৷ আওয়ামী লীগই প্রাধান্য বজায় রেখেছে৷
২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনের পর সরকারের ওপর মধ্যতর্বী নির্বাচনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করে বিএনপি৷ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সব দলের অংশগ্রহণে নতুন একটি নির্বাচনের কথা বলতে থাকে৷ কিন্তু এরইমধ্যে এই সরকারের প্রায় আড়াই বছর, অর্থাৎ অর্ধেক মেয়াদ পার হয়ে গেছে৷ মেয়াদ শেষে যদি নির্বাচন হয়, তা হবে ২০১৯ সালে৷
তবে বিএনপির নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন এখন তাদের দাবির মধ্যেই সীমাবদ্ধ আছে৷ তারা আন্দোলনে নেই৷ যুদ্ধাপরাধের বিচার এবং সর্বশেষ গুলশান হামলার পর বিএনপির রাজনীতিতে পরিবর্তনের আভাসও পাওয়া যাচ্ছে৷
বিএনপির একটি অংশ চাইছে জামায়াতকে জোটের বাইরে রেখে সুবিধা নিতে৷ আর দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান দণ্ডিত হওয়ায় বেশ বেকায়দায় পড়েছে দলটি৷ তারেক রহমান দেশে ফিরে আপিল না করলে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন না৷ বিএনপির সর্বশেষ কার্যকরী পরিষদ গঠন করার পর তা নিয়ে দলে আছে নানা অসন্তোষ৷
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আহমেদ আযম খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনের কয়েক মাসের মধ্যে আরেকটি নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু আড়াই বছর হয়ে গেলেও সেই নির্বাচন হয়নি৷ আমরা মনে করি, দ্রুত নির্বাচন দেয়া উচিত, কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী তাঁর দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন৷ কিন্তু সেটা মেয়াদ শেষের নির্বাচন৷ আমরা চাই এখনই নির্বাচন হোক এবং তার জন্য বিএনপি প্রস্তুত আছে৷''
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা এখন ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন৷ তারা মনে করেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ইতিমধ্যে সরকারের নেয়া পদক্ষেপগুলো জনগণের ভেতরে আস্থা-বিশ্বাস সৃষ্টি করেছে৷ জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে আওয়ামী লীগ৷ এর ভেতর দিয়ে একটি ম্যাসেজ পেয়েছে আওয়ামী লীগ, তা হলো, সরকারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে অনেকগুন৷ এই মুহূর্তে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ ৬০-৭০ ভাগ আসনে জয়ী হবে বলে মনে করে ক্ষমতাসীনরা৷ তাই নির্বাচনের জন্যে জোরালো কোনো দাবি উত্থাপন করা হলে এই হিসাবে নির্বাচনের পথে পা বাড়াতেও পারে দলটি৷
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করেন, জঙ্গি ইস্যু যেভাবে সরকার মোকাবেলা করেছে তাতে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা এখন ঊর্ধমুখী৷ জঙ্গি-সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ এগিয়েছে৷ এই ধারাবহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচনের ফল আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে৷ আর এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী সকল নেতা-কর্মীকে নিজ নিজ এলাকায় জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে বলেছেন৷
এ এস এম ফিরোজ
গত ২৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠকে নেতা-কর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেছিলেন শেখা হাসিনা৷ সেই সভায় উপস্থিত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী মেয়াদ শেষের নির্বাচনের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন৷ আগাম বা মধ্যবর্তী কোনো নির্বাচনের কথা তিনি বলেননি৷ দেশে এমন কোনো সংকট হয়নি যে মধ্যবর্তী নির্বাচনের প্রয়োজন হবে৷ আর মেয়াদ শেষে সেই নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী৷ সংবিধানের বাইরে কোনো ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন হবে না৷ আমরা চাই এবং আশা করি সব দল সেই নির্বাচনে অংশ নেবে৷''
আওয়ামী লীগের সিনিয়র এই নেতা আরো বলেন, ‘‘দলীয় সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন হবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে৷ আমরা আগে বলেছি, এখনো বলছি৷ বিএনপি আগের নির্বাচনি ট্রেন মিস করেছে৷ এবার আশা করি মিস করবে না৷ আমরা চাইলে সবাই মিলে নির্বাচন কমিশনকে আরো শক্তিশালী করতে পারি৷ সবাই মিলে আরো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারি৷ কিন্তু পুরনো চিন্তা থেকে বের হয়ে আসতে হবে৷''
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷