উপ-নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুতি শুরু করেছে বিএনপি৷ সুষ্ঠু হবে না এমন আশঙ্কা করলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের সংগঠিত করতে চাইছে দলটি৷
বিজ্ঞাপন
গত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি থেকে সাত জন নির্বাচিত হন৷ সে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছিল দলটি৷ কিন্তু মহাসচিব ছাড়া বাকি ছয়জন ‘দলীয় সিদ্ধান্তে' শপথ নিয়ে সংসদে গেছেন৷ পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনগুলোতেও অংশ নিয়েছে দলটি৷
সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এমন কথা বলে আসলেও নির্বাচনে কেন অংশ নিচ্ছে বিএনপি?
বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ বলেন, ‘‘বাইরে আন্দোলন সংগ্রামের চেয়ে সংসদে কথা বলার গুরুত্ব অনেক বেশি৷ যদিও করোনাকালীন সময়ে সংসদে কথা বলার সুযোগ কম, আমরা মাত্র কয়েকজন সংসদে আছি৷ তারপরও এর প্রভাব আছে৷’’
তিনি বলেন ‘‘নির্বাচন তো একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া৷ এর মাধ্যমেই ক্ষমতার বদল হয়৷ নির্বাচনের মাধ্যমেই একদিন বাংলাদেশে ক্ষমতার বদল হবে৷ সেই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ধংস করে দেয়া হচ্ছে৷ এটা রক্ষা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, প্রশাসনের৷ সরকার চায় না ভোটাররা ভোট দিতে যাক৷ ভোটাররাও ভোটের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন৷ তারপরও আমরা ভোটের অধিকারের জন্যই নির্বাচনে যাচ্ছি৷’’
‘নির্চবানে গেলে নেতা-কর্মীরা সক্রিয় হবার সুযোগ পায়’
আগামী ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ এবং নওগাঁ-৬ আসনের উপ-নির্বাচন৷ এতে অংশ নিচ্ছে বিএনপি৷ এরপর আরো দুইটি আসন ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপ-নির্বাচন হবে৷ এর জন্যও প্রস্তুত দলটি৷
আওয়ামী লীগের সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে ঢাকা-৫, ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে নওগাঁ-৬, মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ-১ এবং সাহারা খাতুনের মৃত্যুতে ঢাকা-১৮ আসন শূন্য হয়৷
বিএনপি এই চারটি আসনের জন্যই দলীয় মনোনায়নপত্র বিক্রি শেষ করেছে৷ দুই-এক দিনের মধ্যে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে দলটি৷ দলের নেতা-কর্মীরা চান বিএনপি যেন সামনের সব নির্বাচনেই ভালোভাবে অংশ নেয়৷ করোনার কারণে যেন নামমাত্র অংশগ্রহণ না হয়৷
সংরক্ষিত আসনে বিএনপির মনোনীত এমপি ও দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, ‘‘সংসদদের একটি কথার ওজন বাইরের অনেক কথার চেয়ে বেশি৷ সেটা আমি নিজেই বুঝতে পারছি৷ যদিও আমাদের তেমন কথা বলতে দেয়া হয় না৷ তারপরও যেটুকু পারছি জনগণের জন্য কথা বলছি৷ এই সুযোগ তো অন্য কোথাও নেই৷’’
নির্বাচনে যাওয়ায় দলেরও লাভ আছে বলে মনে করেন তিনি৷ ‘‘এতে নেতা-কর্মীরা চাঙ্গা হয়, সক্রিয় হবার সুযোগ পায় আর তাতে দলের গতি বাড়ে,’’ বলেন তিনি৷
‘আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে যাচ্ছি’
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন ‘‘নির্বাচন হলো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা পরিবর্তনের একমাত্র পথ৷ একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই নির্বাচনগুলোতে আমরা অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷’’
মির্জা ফখরুল অবশ্য আশা করেন না যে নির্বাচন তেমন সুষ্ঠু হবে৷ তারপরও কেন নির্বাচনে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি৷ আমরা আন্তর্জাতিক বিশ্বের কাছে তুলে ধরার সুযোগ পাব যে এই ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশে হচ্ছে৷''
করোনার মধ্যে নির্বাচন হলেও নেতা-কর্মীদের মাঠে সক্রিয় থাকতে বলেছে দলটি৷ প্রচার শুরু হলে তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বাত্মক নির্বাচনি প্রচারও চালাতে চায়৷ শক্তিশালী অবস্থানের মাধ্যমে নামে মাত্র নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন ধারণাও দূর করতে চায় তারা৷ এর মাধ্যমে দলে একটি ইতিবাচক প্রভাব তৈরি করতে চায় আর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও বার্তা দিতে চায়৷
এর আগে বগুড়া, যশোর ও ঢাকার উপ-নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে বিএনপি৷ অংশ নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও৷
দক্ষিণ এশিয়ার নির্বাচন কমিশনগুলো
বাংলাদেশ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা উঠে যাবার পর দক্ষিণ এশিয়াতে কেবল পাকিস্তানেই এটি চালু আছে৷ তবে এ অঞ্চলে যেমন রাজতন্ত্র আছে, তেমনি আছে এশিয়ার সবচেয়ে পুরনো গণতন্ত্রও৷
ছবি: Wakil Kohsar/AFP/Getty Images
বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন
বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১৯ অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন, ভোটার তালিকা তৈরি, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচন ও আনুষঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন কমিশনের দায়িত্ব৷ কমিশন স্বাধীন এবং কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা সকল কর্তৃপক্ষের কর্তব্য।
ছবি: DW/M. M. Rahman
ভারতের নির্বাচন কমিশন
ভারতের নির্বাচন কমিশন পাঁচটি স্বায়ত্ত্বশাসিত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের একটি৷ মূলত লোক সভা, রাজ্য সভা, রাজ্যের বিধানসভা, প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আয়োজন করার দায়িত্ব কমিশনের৷ এছাড়া কোনো বিশেষ সময়ে যখন বিদ্যমান আইনে সুরাহা হচ্ছে না, তখন নির্বাচন কমিশনের সেখানে ‘যথাযথ উপায়ে’ ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা আছে৷
ছবি: A.K Chatterjee
পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচন হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে৷ কোনো সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হবার পর বা কোনো কারণে সংসদ বিলুপ্তির পর এই সরকার দায়িত্ব নেয়৷ তারা একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে৷ তবে নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷ কমিশন জাতীয়, প্রাদেশিক ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজন করে৷
ছবি: AAMIR QURESHI/AFP/Getty Images
শ্রীলঙ্কার নির্বাচন কমিশন
এশিয়ার সবচেয়ে পুরোনো গণতন্ত্র হলো শ্রীলঙ্কা৷ সেখানেও রাষ্ট্রপতি, সংসদ, প্রাদেশিক ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷
ছবি: AP
মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন
মালদ্বীপে আলাদা নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছে মাত্র এক দশক আগে৷ ২০০৮ সালের আগষ্টে এই স্বাধীন কমিশন প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয় নির্বাচন আয়োজন করত৷ পরে এই অফিসটি রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অধীনে চলে যায়৷ রাষ্ট্রপতিই কমিশনার নিয়োগ দিতেন৷
ছবি: ADAM SIREII/AFP/Getty Images
নেপালের নির্বাচন কমিশন
১৯৫০ সালের নেপাল বিপ্লবের মধ্য দিয়ে নেপালের নির্বাচন কমিশনের জন্ম৷ এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান৷ শুধু জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠানই নয়, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের নিবন্ধন করার দায়িত্ব রয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশনের কাঁধে৷ ছয় জন কমিশনারের সমন্বয়ে গঠিত কমিশন ছয় বছর ধরে দায়িত্ব পালন করে৷
ছবি: PRAKASH MATHEMA/AFP/Getty Images
ভূটানের নির্বাচন কমিশন
ভূটানে রাজতন্ত্র আছে৷ তবে সংসদও আছে৷ সংসদের নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচন কমিশন৷ প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, সংসদের স্পিকার, জাতীয় কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলের প্রধানের দেয়া তালিকা থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও দুইজন কমিশনারকে নিয়োগ দেন রাজা৷ কমিশনের ক্ষমতাও অনেক৷ নির্বাচন ছাড়াও বিধি তৈরি, নির্বাচন পদ্ধতি রিভিউ করাসহ যে কাউকে তলব, তদন্ত ও কিছু অ্যাডজান্কটিভ ক্ষমতা রয়েছে৷
ছবি: AP
আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশন
যুদ্ধ-বিগ্রহ আর সহিংসতার কারণে আফগানিস্তানে ক্ষমতা বারবার পরিবর্তিত হয়েছে৷ সে অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষমতাতেও তার প্রভাব পড়েছে৷ তবে সংবিধান অনুযায়ী, রেফারেন্ডাম, রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে একেবারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের৷