যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ যেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা আছে সেখানে কারচুপি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে৷ ফলে ডিজিটালের পাশাপাশি অ্যানালগ পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ ব্যবস্থা অবশ্যই থাকা দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা৷
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ভোটার ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট দিয়েছেন৷ প্রায় ২০টি রাজ্যে ‘অ্যাকুভোট টিএস' এবং ‘টিএসএক্স' নামক ভোটিং মেশিন ব্যবহৃত হয়েছে৷ অথচ এসব মেশিন যে কতটা অরক্ষিত তা কয়েকবারই করে দেখিয়েছেন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক অ্যালেক্স হেল্ডারম্যান৷ মার্কিন কংগ্রেসকেও তিনি এই বিষয়টি জানিয়েছিলেন৷
২০০০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জর্জ বুশ খুবই অল্প ব্যবধানে আল গোরকে হারিয়েছিলেন৷ কিন্তু সেইসময় ব্যবহৃত হওয়া কার্ড সিস্টেম-এ ভোট দিতে গিয়ে ফ্লরিডায় এক লক্ষেরও বেশি ভোট বাতিল করতে হয়েছিল৷ তাছাড়া ভোটের ফল পেতে ৩৬ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল৷
সেই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে ২০০৪ সালে প্রথমবারের মতো কম্পিউটার সিস্টেম চালু করা হয়৷
১০ মিনিটেই হ্যাক!
বিশ্বের হ্যাকারদের এক অন্যতম মেলা ‘ডেফকন ২৬'৷ গত আগস্টে লাস ভেগাসে এটি অনুষ্ঠিত হয়৷ আয়োজকরা তরুণ হ্যাকারদের জন্য একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল৷ কে, কত কম সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইট হ্যাক করতে পারে, তা নির্ধারণ করা ছিল ঐ প্রতিযোগিতার লক্ষ্য৷ এ জন্য ফ্লরিডা, আইওয়া, মিশিগান, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ওহিও, পেনসিলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া ও উইসকনসিন রাজ্যের নির্বাচন কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটের ‘কপি' বা নকল তৈরি করা হয়েছিল৷
১১ বছরের অদ্রে জোন্স মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে এ সব ওয়েবসাইটের একটি পাতায় প্রবেশ করতে সমর্থ হয়েছিল৷ সেখানে সে তার ইচ্ছেমত প্রার্থীর নাম ও ভোটের সংখ্যা পরিবর্তন করতে পারত৷ আয়োজকরা জানান, ৩০ জনের বেশি শিশু আধ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ওয়েবসাইটগুলো হ্যাক করতে পেরেছিল৷
ইউরোপে হুমকি
শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়, ২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রান-অফের কিছুক্ষণ আগে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর দলের কয়েক হাজার গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে দেয়া হয়েছিল৷
এদিকে, জার্মানির ডার্মস্টাটের মার্টিন চিরজিশ নামে কম্পিউটার বিজ্ঞানের এর শিক্ষার্থী গতবছর জার্মান নির্বাচনের ফলাফল মূল্যায়নে ব্যবহত সফটওয়্যারের দূর্বলতা তুলে ধরেছিলেন৷ ‘পিসি-ভাল' নামের ঐ সফটওয়্যারের পাসওয়ার্ড তিনি অনলাইনে খুঁজে পেয়েছিলেন৷ ঐ সফটওয়্যারের কোড-এও তিনি প্রবেশ করতে পেরেছিলেন৷ পরবর্তীতে চিরজিশ এই দূর্বলতার কথা নির্বাচন কর্তৃপক্ষকে জানালে ঐ সফটওয়্যার ব্যবহার থেকে সরে আসে তারা৷
অ্যানালগের বিকল্প নেই!
প্রায় সফটওয়্যারই আগে কিংবা পরে হ্যাক করা সম্ভব৷ তাই মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের অধ্যাপক হেল্ডারম্যান বলেন, এই ডিজিটাল যুগেও অ্যানালগ পদ্ধতিতে ভোটদানের ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও অ্যানালগ পদ্ধতির পক্ষে কথা বলেছেন৷ ‘‘এটি পুরনো ফ্যাশনের৷ কিন্তু কাগজপত্রের মাধ্যমে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা থাকা সব সময়ই ভালো,'' বলেন তিনি৷
গত বছরের এই ছবিঘরটি দেখুন
বেকায়দায় ট্রাম্প, চারিদিকে অরাজকতা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবার পরেও বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না ডোনাল্ড ট্রাম্পের৷ কখনো কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছেন, কখনো প্রশাসনের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগে জেরবার হচ্ছেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক
নির্বাচনি প্রচারের সময় থেকেই ট্রাম্প টিম-এর সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত সহ একাধিক মহলের যোগসূত্র নিয়ে জলঘোলা হচ্ছে৷ এর মধ্যে জাতীয় উপদেষ্টা হিসেবে মাইকেল ফ্লিনকে বিদায় নিতে হয়েছে৷ একাধিক তদন্তের মুখে পড়েছেন অভিযুক্তরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/D. Lovetsky
ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা
কয়েকটি মুসলিম-প্রধান দেশ থেকে অ্যামেরিকায় ভ্রমণের উপর তড়িঘড়ি নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন ট্রাম্প৷ আদালতের হস্তক্ষেপে প্রথম নির্বাহী আদেশ বাতিল হবার পর দ্বিতীয়টিও থামিয়ে দিয়েছে আদালত৷
ছবি: Getty Images/J. Sullivan
স্বাস্থ্য বিমা বিপর্যয়
তথাকথিত ‘ওবামাকেয়ার’ বা পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে স্বাস্থ বিমা খাতে যে সংস্কার চালানো হয়েছিল, তা বাতিল করতে বদ্ধপরিকর ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে রিপাবলিকান দলেরই একটা অংশ ট্রাম্প প্রশাসনের বিকল্প আইনের বিরোধিতা করায় এ যাত্রায় হাত পুড়িয়েছেন ট্রাম্প৷ তবে এখনো হাল ছাড়তে রাজি নন তিনি৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
স্বজনপোষণ
প্রচলিত বিধিনিয়ম উপেক্ষা করে জামাই ও মেয়েকে হোয়াইট হাউসে উপদেষ্টার পদ দিয়ে প্রবল বিতর্কের মধ্যে পড়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ সমালোচকদের মতে, পারিবারিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থের সংঘাত এক্ষেত্রে অনিবার্য৷ অবৈতনিক ফেডারেল কর্মী হিসেবে তাঁরা অনেক রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্যেরও নাগাল পেতে পারেন৷
ছবি: picture alliance/dpa/S. Thew/Epa
পরিবেশের ক্ষতি
বহু বছর ধরে দরকষাকষির পর জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করতে অ্যামেরিকা সহ বিশ্বের দেশগুলি প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ সেই ঐকমত্যের পেছনে ওবামা প্রশাসনের উদ্যোগ নস্যাৎ করে ট্রাম্প পরিবেশের ক্ষতি করতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Thibault Camus
ক্ষমতার অহমিকা
প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প বার বার ‘একলা চলো রে’ নীতির পথে চলার চেষ্টা করছেন৷ চটজলদি সিদ্ধান্ত নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কার্যকর করতে চান তিনি৷ নিজের মন্ত্রিসভা তো নয়ই, এমনকি রিপাবলিকান দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও সংসদের দুই কক্ষের সঙ্গেও আলোচনা এড়িয়ে চলতে পছন্দ করেন তিনি৷ এই অবস্থায় প্রশাসনের ভিতর থেকেই অনেক গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Barria
প্রশাসনে অরাজকতা
একদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, অন্যদিকে প্রশাসনের কাঠামোর মধ্যে কোনো স্পষ্ট নীতি বা বিভিন্ন বিষয়ে ধারাবাহিকতার অভাব বার বার প্রকট হয়ে উঠছে৷ এমনকি খোদ ট্রাম্প অনেক বিষয় পুরোপুরি না বুঝেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে৷ এমন অরাজক পরিস্থিতিতে কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে পড়ছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি থাকায় লোকবলের অভাবও স্পষ্ট হয়ে উঠছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/A. Harnik
জনপ্রিয়তার অভাব
সাম্প্রতিক কালে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কার্যকালের প্রথম পর্যায় জনমত সমীক্ষায় এমন বিরোধিতার সম্মুখীন হননি৷ এমনকি রিপাবলিকান দলের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তিও তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলছেন৷ বিচার বিভাগ বার বার হস্তক্ষেপ করছে৷ সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে তাঁর প্রশাসনের বৈরি সম্পর্ক পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলছে৷