1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গুজরাটের নির্বাচনে পাকিস্তান?

রাজীব চক্রবর্তী আহমেদাবাদ
১৩ ডিসেম্বর ২০১৭

এই প্রথম গুজরাটে এমন নির্বাচন হচ্ছে যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য – দু'জায়গাতেই শাসকের আসনে রয়েছে বিজেপি৷ ক্ষমতা হারালে প্রশ্নের মুখে পড়বে ‘‌গুজরাট মডেল'৷

প্রতীকী ছবি
ছবি: Reuters/A. Dave

গুজরাটের নির্বাচনে পাকিস্তান এলো কোথা থেকে?‌ প্রশ্নটা বেশ মাথাচাড়া দিয়েছে গোটা ভারতে৷ আসলে পাকিস্তানকে টেনে এনেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷ প্রবীন কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আয়ারের বাড়িতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ কাসুরির সঙ্গে গুজরাটের ভোট নিয়ে কথা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এমন অভিযোগ করেছেন৷ যার জেরে ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে৷ যদিও গুজরাটে রাজনৈতিক পালা বদলের পাকিস্তানি চক্রান্তের অভিযোগ তুলে ঘরে-বাইরে আক্রমণের মুখে পড়েছেন মোদী৷ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি পাকিস্তানকে টেনে আনায় বিজেপির শত্রুঘ্ন সিনহা এবং শরিক শিবসেনা৷ শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা'-য় লেখা হয়েছে, মোদী নাটক করছেন৷ বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার কটাক্ষ, ‘‘ভোটে জিততে কি রোজ নতুন নতুন গল্প বানাতে হবে?'' এমনকি পাকিস্তানের পক্ষেও সরব সে দেশের বিদেশ মন্ত্রক বলেছে, ‘‌নিজেদের নির্বাচনি-‌লড়াইয়ে অযথা পাকিস্তানকে টানা হেঁচড়া করা হচ্ছে কেন?‌'‌ মোদী যা-‌ই দাবি করুন, বিষয়টা হাস্যকর হয়ে উঠেছে৷

গুজরাটে এবার নির্বাচনে পরাজয় হলে মুখ পুড়বে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের৷ মনে রাখতে হবে, মোদীর কারণেই বিজেপি‌র সভাপতি করা হয়েছে শাহকে৷ তাই কোনো মতেই তাঁরা গুজরাটের শাসনভার হারাতে চাইবেন না৷ পরাজয় তো দূর প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ১০০-‌র নীচে এসে দাঁড়ালে মোদী-‌শাহদের সাধের ‘‌গুজরাট ‌মডেল'‌ প্রশ্নের মুখে পড়বে৷ তাই কয়েক দশক আগের ‘‌ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া'‌-‌র মতো গোটা গুজরাটে মোদী প্রচার করছেন ‘‌আমিই গুজরাট'‌৷ ক'‌দিন আগে বিজেপি যে ‘‌সংকল্পপত্র'‌ বা ইস্তেহার প্রকাশ করেছে তার প্রচ্ছদেও মোদীর ছবি৷ গোটা গুজরাটে নির্বাচনি প্রচারে বিপুল সংখ্যায় হোর্ডিং ও ব্যানার লাগানো হয়েছে তাতে মোদীর অনেক বড় ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে ‘‌আমিই গুজরাট'‌৷

সৌম্য বন্দোপাধ্যায়

This browser does not support the audio element.

‌কিন্তু হঠাৎ কেন এলো পাকিস্তান প্রসঙ্গ?‌ খ্যাতনামা সাংবাদিক সৌম্য বন্দোপাধ্যায় মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি যদি ১০০-‌টির কম আসন পায়, তবে, সেটা মোদী ও অমিত শাহদের নৈতিক পরাজয় হবে৷ তাঁর কথায়, ‘‌‘‌এই নির্বাচনে বার বার গোলপোস্ট বদলাতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে৷ প্রথমে উন্নয়ন বা বিকাশ প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন৷ কংগ্রেস বিকাশের দিকে আঙুল তুলতেই বিজেপি লড়াইটা নিয়ে গেল শহর বনাম গ্রামের দিকে৷ তারপর জাতপাতের দিকে৷ তাতেও যখন কাজ হলো না, তখন ধর্মের খেলা৷ সোমনাথ মন্দিরে রাহুল গান্ধীর অহিন্দু তালিকায় নাম লেখানো৷ অযোধ্যা, রামমন্দির ইস্যু খুঁচিয়ে তোলা হলো৷ কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কপিল সিবাল সুপ্রিম কোর্টে কেন রামমন্দির মামলাটি ২০১৯ পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করলেন?‌ তা তুললেন খোদ প্রধানমন্ত্রী৷ কিন্তু তাতেও কাজ হলো না৷ এবার মোদী চলে গেলেন পাকিস্তানে৷ রাষ্ট্রদ্রোহিতা বনাম রাষ্ট্রপ্রেমের লড়াইয়ে৷ এইভাবে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর পদের মর্যাদাটাকেই ছোট করলেন৷''

নরেন্দ্র মোদীকে সব থেকে শাণিত আক্রমণটি করেছেন মনমোহন সিং৷ ক্ষমা প্রার্থনার দাবি তুলে তাঁর মন্তব্য, ‘‘গুজরাটে হারের আতঙ্কে প্রধানমন্ত্রী খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চাইছেন৷ আশা করি, প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদের যোগ্য পরিণতিবোধ ও গরিমা রাখবেন৷ জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী পদের হৃত সম্মান পুনরুদ্ধার করবেন৷''

প্রদীপ ভট্টাচার্য

This browser does not support the audio element.

‌এমনি এমনিই কি পাক প্রসঙ্গ তুললেন মোদী?‌ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না৷ আসলে গুজরাটে টানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এবার ভারতীয় জনতা পার্টির পায়ের তলার জমি বেশ নড়বড় করছে৷ তাই সবকটি লুকোনো তাস খেলার পর অবশেষে ‘‌দেশপ্রেম বনাম দেশদ্রোহ'-‌এর তাসটি বের করেছেন মোদী৷

পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‌‘পাকিস্তানকে টেনে আনার পেছনে নরেন্দ্র মোদী ও ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে৷ তবে ওঁর (‌মোদীর)‌ মনে রাখা প্রয়োজন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উনি বা ওঁর দল লড়েনি৷ লড়েছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী৷ সত্যি বলতে কি উনি, এই নির্বাচনে ভীত হয়ে পড়েছেন৷ তাই এই ধরনের বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন৷ ‌রাজনীতিতে দেশের উন্নয়নের প্রসঙ্গই আসল৷ রাহুল গান্ধী বার বার সেই কথাই বলছেন৷'‌'‌

কী ঘটেছিল ৬ ডিসেম্বরের রাতে? সত্যিই কি বহিষ্কৃত কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আয়ারের বাড়িতে বসেছিল গোপন বৈঠক? সান্ধ্য আসর ছিল নিছকই এক ঘরোয়া অনুষ্ঠান৷ বেশ কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি আসবেন তা জানা ছিল প্রায় সকলেরই৷ জানত দিল্লি পুলিশও৷ কারণ অভ্যাগতদের গাড়ি রাখা বা আয়ারের বাড়ি-সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার কাজে দিল্লি ট্রাফিক পুলিসের পদস্থ অফিসার এবং কনস্টেবলেরা সন্ধে থেকেই নিযুক্ত ছিলেন৷ ছিল এসপিজি-ও৷ কারণ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে এসপিজি৷ তবে এবার গুজরাটে অর্ধসত্য, অসত্য ও আজগুবি তত্ত্বের প্রচার চলছে৷ মন্দির-‌মসজিদ, হিন্দু-‌মুসলিমের ইস্যু কাজে আসেনি৷ এখন দেখার পাকিস্তান অস্ত্র কাজে আসে কিনা৷

প্রতিবেদনটি নিয়ে আপনার কোনো মন্তব্য থাকলে লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ