বয়স মাত্র ২৪ বছর৷ অথচ এরই মধ্যে ১৬টি সন্তানের জনক তিনি৷ তাও আবার বিভিন্ন নারীর গর্ভ ভাড়া করে৷ নাম – মিতসুকোটি শিগেতা৷ এ মুহূর্তে পলাতক থাকলেও, ভবিষ্যতে নির্বাচনে জয় লাভের জন্য তিনি এ কাজ করেছেন বলে জিনিয়েছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
থাইল্যান্ডের এক নারী অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেখেন যে, এক দম্পতি সন্তান চান এবং তাঁদের সন্তান গর্ভধারণ করলে সেই নারীকে ১০ হাজার মার্কিন ডলার দেয়া হবে৷ বস্তিবাসী ওয়াসানা অর্থের বিনিময়ে কোনো শর্ত ছাড়াই নয় মাসের জন্য গর্ভ ভাড়া দিতে রাজি হন৷ এবং যথাসময়ে একটি ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দেন৷
অনলাইনে এই বিজ্ঞাপনটি দেন মিতসুটোকি শিগেতা৷ তিনি জাপানের এক কোটিপতির সন্তান৷ পুলিশ জানিয়েছে, শিগেতা কেবল ওয়াসানার গর্ভেই নয়, থাইল্যান্ডের আরো ১০ জন নারীর গর্ভ ভাড়া করেন সন্তান উৎপাদনের জন্য৷ প্রায় ৫ লাখ ডলার খরচ করে ১৬টি শিশু জন্ম দেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি৷
বলা বাহুল্য, সংবাদ মাধ্যমে এমন একটা খবর আসার পর, ‘সারোগেট' মা নিয়ে রীতিমত গুজব শুরু হয়েছে দেশ জুড়ে৷ ফলে থাইল্যান্ডের সামরিক সেনা সরকার এই ব্যবসা বন্ধ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে৷ ওয়াসানা তাঁর জীবনের কাহিনি জানিয়েছেন সংবাদ সংস্থা এপিকে৷ তবে শর্ত ছিল তাঁর পদবী যাতে উল্লেখ করা না হয়, কারণ এর ফলে তাঁর পরিবারের সম্মানহানি হতে পারে৷
এদিকে এরই মধ্যে থাই পুলিশ শিগেতার বিরুদ্ধে মানব পাচার ও শিশু হয়রানির তদন্ত করেছে৷ তবে পুলিশের কথায়, এখনো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ ওদিকে এ মুহূর্তে পলাতক ২৪ বছর বয়সি শিগেতা তাঁর আইনজীবীকে জানিয়েছেন যে, একটা বৃহৎ পরিবারের স্বপ্ন তাঁর৷ আর সে কারণেই এ কাজটি করছেন তিনি৷ সেই সাথে নিজের ১২টি সন্তানকে ফেরতও চেয়েছেন৷ শিগেতার ১৬টি সন্তানের মধ্যে ১২টি এখন মানবাধিকার কর্মীদের হেফাজতে রয়েছে৷ এই শিশুদের ডিএনএ পরীক্ষা করে জানা গেছে যে, শিগেতাই তাদের বাবা৷ তবে ওয়াসানা ছাড়া বাকি শিশুদের মা কারা এ সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেনি পুলিশ৷
ওয়াসা কেন বেছে নিলেন এই পথ?
৩২ বছর বয়সি ওয়াসানা ব্যাংককের একটি বস্তিতে বসবাস করেন৷ থাই মিষ্টি বিক্রি করে তাঁর দিন চলে৷ প্রতিদিন কমপক্ষে ৬ ডলার আয় হয় তাঁর৷ বাবার চিকিৎসার কারণে নেয়া ঋণের বোঝা মেটাতে না পারায় ঘর ছেড়ে বস্তিতে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাঁকে৷ ২০১২ সালে তাঁর বোন সারোগেট মাদারের বিজ্ঞাপনটির ব্যাপারে তাঁকে জানায়৷
বার্তা সংস্থা এপিকে ওয়াসানা জানান, ‘‘আমার মনে হয়েছিল এ দম্পতির হয়ত সন্তান হয় না, তাই যে কোনো মূল্যেই তাঁরা সন্তান চান৷ এজেন্টও আমাকে বলেছিল যে, এই বিদেশি দম্পতি সন্তান চায়৷ তবে চিকিৎসক আমার ডিম্বানু না অন্য কোনো নারীর ডিম্বানু ব্যবহার করেছিল – তা আমার জানা নেই৷''
পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় মা
ভালোবাসার মানুষ মায়ের প্রতি বিশেষ সম্মান জানাতেই ‘মা’ দিবসের সূচনা৷ দিনটির প্রচলন প্রথম শুরু হয় প্রাচীন গ্রিসে৷ জার্মানিতে বিশেষ এই দিনটি পালনের ছবি ও তথ্য নিয়ে সাজানো হয়েছে এই ছবিঘর৷
ছবি: SARI GUSTAFSSON/AFP/Getty Images
বিশ্ব মা দিবস
প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিশ্ব মা দিবস পালিত হয়৷ নানা সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রথম মা দিবস উদযাপন শুরু হয় গ্রিসে৷ গ্রিকরা তাদের মাতা-দেবি ‘রেয়া’র নামে পূজা করত৷ ১৯১৩ সালে অ্যামেরিকান কংগ্রেস মা দিবসকে সরকারিভাবে পালনের অনুমতি দেয়৷ তারপর থেকেই বিভিন্ন দেশে মা দিবস উদযাপন শুরু হয়৷ তবে মা দিবস উদযাপনের প্রথম ভাবনাটি এসেছে অ্যামেরিকান সমাজকর্মী জুলিয়া ওয়ার্ডের মাথা থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সকাল থেকেই শুরু
জার্মানিতে ‘মা’ দিবসে মা’কে কোনো কাজ করতে দেয়া হয় না৷ বাবাসহ বাচ্চারা সকালের নাস্তা তৈরি করে মায়ের জন্য উপহার সহ টেবিলে সাজিয়ে রাখে৷ সঙ্গে অবশ্যই থাকে ফুল৷ পরে মাকে নিয়ে যাওয়া হয় কোনো রেস্তোরাঁয়৷ তবে সব পরিবারেই যে এমনটা হয় তা কিন্তু নয়৷
ছবি: Fotolia/Tatyana Gladskih
উপহার
পৃথিবীতে সবচেয়ে মধুর এবং প্রিয় শব্দ ‘মা’৷ তবে কারো কারো প্রশ্ন মা’কে ভালোবাসা দেখানোর জন্য ঘটা করে ‘মা দিবস’ পালন করার কি তেমন কোনো প্রয়োজন আছে? কেউ মনে করেন প্রয়োজন নেই, আবার অনেকের মতে উপহার দিয়ে একটি বিশেষ দিনে মা’কে ভালোবাসা দেখানোর পরিকল্পনাটা খারাপ না৷
ছোটবেলা থেকেই শেখা
‘মা’ দিবস আসার আগে থেকেই জার্মানিতে একেবারে ছোট বেলা অর্থাৎ কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাদের মায়েদের জন্য নিজ হাতে কিছু না কিছু উপহার তৈরি করতে হয় বা ছবি আঁকতে হয়৷ একটু বড় বাচ্চারা কেউ কেউ আগে থেকেই নিজেদের হাত খরচ থেকে মায়ের জন্য উপহার কিনতে কিছু পয়সা জমিয়ে রাখে৷
ছবি: DW
মায়েদের ভাবনা
জার্মানিতে মা দিবস উদযাপন শুরু হয় ১৯২২ সাল থেকে৷ জার্মান মা’দের, বিশেষ করে বয়স্ক মায়েদের প্রায়ই বলতে শোনা যায় শুধু বিশেষ দিনে নয়, তাঁদের সন্তানরা যেন সময় সুযোগ পেলেই মায়েদের সাথে যোগাযোগ রাখে, মায়ের কথা মনে করে৷
ছবি: Fotolia/Fotowerk
বাণিজ্যিক দিক
মা দিবস উপলক্ষ্যে প্রতি বছরই কিছু না কিছু নতুন জিনিস বাজারে আসে৷ ফুলের ব্যবসা দারুণ জমজমাট হয়ে ওঠে৷ কত ভাবেই না সাজানো ফুল পাওয়া যায় এই দিনে৷ অন্যান্য উপহারের সাথে প্রিয় মায়ের জন্য এক গুচ্ছ ফুল সব ছেলে-মেয়ের হাতেই যেন থাকে৷
ছবি: DW/H. Sirat
দিনটা অবশ্যই রবিবার
প্রতিবছরই তারিখের একটু এদিক সেদিক হলেও বারটি থাকে রবিবার অর্থাৎ ছুটির দিন৷ ফলে অনেক সন্তান কাছে এসে তাদের প্রিয় মা’কে ভালোবাসা জানাতে পারে৷ অনেক বৃদ্ধা মা শুধুমাত্র এই দিনটির জন্য সারা বছর অপেক্ষাও করে থাকেন, বিশেষ করে যাঁরা বৃদ্ধাশ্রমে থাকেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিদেশি পরিবার
জার্মানিতে বিদেশিদের মধ্যে তুর্কি বংশোদ্ভূত পরিবারের সংখ্যা সবচয়ে বেশি৷ তাছাড়া ওরা উপমহাদেশের পরিবারগুলোর মতো একসাথে মিলেমিশে থাকতেই পছন্দ করে, যে-কোনো উপলক্ষ্যে তো অবশ্যই৷ তাই ‘মা’ দিবসও এর ব্যতিক্রম নয়৷
ছবি: DW/K. Jäger
নিরাপদ আশ্রয়
মানুষ যখন ভয় পায়, অসুস্থ হয়, কোনো সমস্যা বা বিপদে পড়ে তখন তারা মায়ের কাছেই ভয়ার্ত শিশুর মতোই আশ্রয় খোঁজে, আকড়ে ধরে৷ মাকেই তখন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় বলে মনে হয়৷ আর তা যে-কোনো দেশের সন্তান এবং মায়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য৷
ছবি: imago/imagebroker
মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী সারা বিশ্বে মাতৃমৃত্যুর হার ১৯৯০ সাল থেকে শতকরা ৪৫ ভাগ কমেছে৷ তবে দুঃখের ব্যাপার হলো, যেসব মা প্রসবকালীন সময়ে মারা যান তাদের মধ্যে বেশিরভাগেরই ছিল ডায়েবেটিস বা মেদবহুল শরীর৷
ছবি: DW/S. Schlindwein
ফিনল্যান্ডের অবস্থা সবচেয়ে ভালো
শিশু সাহায্য সংস্থা ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’-এর এক সমীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে উত্তর ইউরোপের দেশ ফিনল্যান্ডের মায়েদের অবস্থা সবচেয়ে ভালো৷ অর্থাৎ সেখানে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, লেখাপড়া, মায়েদের আয় এবং সামাজিক অবস্থান অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে ওপরে৷ সেখানে শিশুর জন্মের পর মা ও শিশুকে বিশেষভাবে যত্ন নেওয়া হয়ে থাকে৷
ছবি: SARI GUSTAFSSON/AFP/Getty Images
11 ছবি1 | 11
২০১৩ সালের ২০শে জুন ওয়াসানা একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন৷ সেখান থেকেই এজেন্ট ছেলেটিকে নিয়ে যায় এবং ছয়দিন পর ওয়াসানা তাঁর বাড়িতে ফিরে আসে৷ হাসপাতালে শিগেতার সাথে দু'বার দেখা হয়েছিল তাঁর৷ তবে কোনো কথা হয়নি৷ এমনকি শিগেতা তাঁকে ধন্যবাদ পর্যন্ত দেননি৷ এর এক মাস পর আইনজীবী তাঁকে শিশুর অভিভিবকত্ব হস্তান্তরের জন্য আদালতে যেতে বলেন৷ থাই আইন অনুযায়ী, এ ধরণের শিশুর ক্ষেত্রে সারোগেট মা ও তাঁর স্বামী থাকলে দু'জনেরই অনুমতি লাগে৷
বৃহৎ পরিবারের স্বপ্ন, নাকি অন্য কারণ?
পরবর্তীতে একই ব্যক্তির নামে অনেকগুলো ফাইল জমা পড়লে, তা নিয়ে থাই গণমাধ্যমে হৈ চৈ পড়ে যায়৷ তবে জাপানে এই সংবাদ প্রচার না করার জন্য শিগেতার বাবা চাপ দেন৷ সেখানকার বিশিষ্ট আইনজীবী স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোকে ‘লিগাল নোটিস' পাঠান৷ এরপরও প্রথমসারির বেশ কয়েকটি জাপানি পত্রিকা জাপানের প্রভাবশালী ধন্যাঢ্য ইয়াসুমিতশু শিগেতার নাম উলেখ করে তাঁর পুত্রের কাহিনি ছাপিয়ে দেয়৷ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ইয়াসুমিতশু-র কাছে এ বিষযে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
নিউ লাইপ নামে এক পত্রিকাকে শিগেতা জানিয়েছেন, তিনি নির্বাচনে দাঁড়াতে চান৷ তাই অনেক ব্যক্তির সমর্থন তাঁর দরকার৷ আর সেটা যদি পরিবার থেকে পাওয়া যায়, তাহলে মন্দ কী? তাই তিনি প্রতি বছর ১০ থেকে ১৫টি সন্তান চান৷ এবং নিজের মৃত্যু পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাবেন৷