আগামী জাতীয় নির্বাচনে তরুণ ভোটাররাই ‘মূল ফ্যাক্টর' হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। রেকর্ড সংখ্যক তরুণ ভোটার আকৃষ্ট করার ওপরই নির্বাচনের সফলতা নির্ভর করবে বলেও মনে করছেন তারা।
এক তরুণ ভোটার বলেন, "আমি তো এবার তরুণ প্রার্থীদেরই ভোট দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু তাদের দলের কাছ থেকে আমার প্রত্যাশা এখনো পুরণ হচ্ছে না। যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল, তা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। তারপরও আমি পরিবর্তন চাই। পুরনো ধারার রাজনীতি আমার পছন্দ নয়।”ছবি: Mortuza Rashed/DW
বিজ্ঞাপন
গত আগস্টে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতে দেখা গেছে, এই তালিকায় গতবারের তুলনায় নতুন ভোটার হয়েছে ৪৫ লাখ ৭১ হাজার ২১৬ জন। আর মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ জন।
২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, তারাই এই ভোটার তালিকায় আছেন। বাংলাদেশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। তালিকা থেকে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দেয়া হয়েছে।
এবার পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। নতুন ২৭ লাখ ৭৬২ জন নারী ভোটার হয়েছেন। আর নতুন পুরুষ ভোটার হয়েছেন ১৮ লাখ ৭০ হাজার ২০৩ জন। হিজড়া ভোটার হয়েছেন ২৫১ জন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তারাও আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। আগামী ৩১ অক্টোবর বা তারপরে তরুণ ভোটারদের সম্পূরক তালিকা প্রকাশ করা হবে। সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে ভোটারের সংখ্যা আরো বাড়বে।
নির্বাচনে প্রথম ভোটারদের প্রত্যাশার কথা
নির্বাচন নিয়ে সব ভোটারেরই কিছু প্রত্যাশা থাকে৷ পরবর্তী নির্বাচনে এই প্রথম যারা ভোট দেবেন, তারা কী আশা করছেন? কেমন প্রার্থী পছন্দ তাদের? এসব জানতে বিভিন্ন শ্রেণি, পেশার প্রথম ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে...
ছবি: NurPhoto/IMAGO
নির্বাচন নিয়ে আশাভঙ্গ হবার ইঙ্গিতই পাচ্ছি: ইমরান নাফিস, লেখক ও চাকুরিজীবী
বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ নিয়ে যারাই কাজ করছে বা করবে, আমার ভোটটা তাদেরই দেয়ার চিন্তা করছি। কারণ, নির্বাচিত প্রতিনিধি বাচাই করার মধ্যেই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বন্দোবস্তে একটা ব্যাপার খুবই হতাশাজনক, সেটা হলো, এখানে রাজনৈতিক বিশ্বস্ততার ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। সামনের নির্বাচনেও এমন হতে পারে।আমি আগামী নির্বাচন নিয়ে আশাভঙ্গ হবার ইঙ্গিতই পাচ্ছি।
ছবি: DW
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার সুযোগ চাই: অন্নি ইসলাম, চাকুরীজীবি
একটি স্বাধীন দেশে সরকার নির্বাচিত হবে ভোটের মাধ্যমে। সে দেশের সরকার পরিচালিত হবে আইনের শাসন এবং মেধাবীদের মাধ্যমে। এটিকে রাজনীতি বললে এটাই আমার রাজনৈতিক আদর্শ। আমি মনে করি, আগামী নির্বাচন হবে একটি উৎসবমুখর নির্বাচন, যেখানে দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন ভোটকে একটি উৎসব মনে করবে। আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো- দেশের বহুল প্রচলিত এ ধারণাকে আমি লালন করে আমার প্রথম ভোট প্রদান করবো।
ছবি: DW
নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে: আবির মিনহাজ, আইনজীবী
আমার রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ। কিন্তু শুধু দলীয় আদর্শে জাতীয়তাবাদ থাকা মুখ্য নয়, বরং জাতীয়তাবাদের আদর্শকে ধারণ করে যারা রাজনীতি করবে, তাদের পক্ষেই আমার সমর্থন। আগামী নির্বাচন নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী, কারণ, জীবনের প্রথম ভোট প্রদান করবো একটি ‘নিরপেক্ষ’ সরকারের অধীনে। তবে আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে না পারা, সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়ে যাচ্ছে।
ছবি: DW
আশা করছি আগামী নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে: আদিবা সায়মা খান, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের বৈধতা নিয়ে ফ্যাসিবাদী সিস্টেম চালু করবে না, যে জুলাই গণহত্যার বিচারের নিশ্চিত আস্বাস দিতে পারবে এবং নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং নিপীড়িত শ্রেণির অধিকার লঙ্ঘন করবে না - আমি তাদেরই সাপোর্ট দেবো। আগামী নির্বাচন আশা করছি অংশগ্রহণমূলক হবে এবং নাগরিকরা নিজের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সঠিক প্রার্থী বেছে নেবে।
ছবি: DW
দলগুলো নিজেদের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত, তাই এখনো কারো প্রতি আশা রাখতে পারছি না: মোঃ মিরাজুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক
প্রথমবার ভোটার হিসেবে আমি আশাবাদী। আমার আদর্শ এমন দলকে সমর্থন দেওয়া, যারা খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা খাতে উন্নয়ন করবে, সেই সাথে স্বাধীন বিচার বিভাগ ও বাক স্বাধীনতা রক্ষার জন্য বাস্তবেই কাজ করবে। বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা অন্যান্য দলগুলো নিজেদের বিভিন্ন দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত৷ তারা এখন পর্যন্ত কোনো আশানুরূপ প্রতিশ্রুতি বা বাস্তবায়নের রূপরেখা দেয়নি। তাই এখন পর্যন্ত কারো প্রতি আশা রাখতে পারছি না।
ছবি: DW
নির্বাচন হোক শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতের: ম্যাগনোলিয়া মন্ডল রিয়া, শিক্ষার্থী, নটর ডেম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ
একজন নতুন ভোটার হিসেবে ভোট দেওয়ার সুযোগকে শুধু একটি অধিকার নয়, বরং দেশের ভবিষ্যৎ গড়ার দায়িত্ব মনে করি। ভোট দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে আমার অংশগ্রহণের সুযোগ। আমার কাছে রাজনীতি মানে, মানুষের কল্যাণ ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা। আমি চাই এমন প্রার্থীরা নির্বাচিত হোক, যারা সৎ, যোগ্য এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে এবং দেশের সুরক্ষা নিশ্চিতে কাজ করবে। নির্বাচন হোক শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং সমান সুযোগ নিশ্চিতের।
ছবি: DW
নির্বাচনে আমরা সকলের রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের ভোটাধিকার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রয়োগ করতে পারবো: দনওয়াই ম্রো, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
প্রথম ভোটার হিসেবে দেশের বৈচিত্র্যময় জাতিস্বত্বার অধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে আমি ডানে বাম, বামে ডান, তথা মধ্যম পন্থা বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনৈতিক আদর্শে বিশ্বাসী। চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনে, দেশের স্থিতিশীলতা অর্জনে নির্বাচন ছাড়া আমাদের আর দ্বিতীয় কোনো পথ নেই। আমি বিশ্বাস করি, বহুলপ্রত্যাশিত নির্বাচনটি হবে এবং আমরা সকলের রাষ্ট্র বিনির্মাণে আমাদের পবিত্র আমানত ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবো।
ছবি: DW
জনগণকে খুশি করাই যে রাজনীতির মূল কাজ, সেটি আশা করছি নেতা এবং নেতা হতে ইচ্ছুকগণ বুঝতে পারবেন: দীপ্তি চৌধুরী, গণমাধ্যম ও উন্নয়ন কর্মী
আমার ধারণা, এবারের নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতির মোড় ঘোরানো ঘটনা হবে। এখানে চিরকাল রাজনীতিবিদরা এলিট শ্রেণি এবং জনগণ প্রলেতারিয়েত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।দলীয় নেতা নয়, বরং জনগণকে খুশি করাই যে রাজনীতির মূল কাজ, সেটি আশা করছি নেতা এবং নেতা হতে ইচ্ছুকগণ বুঝতে পারবেন।
ছবি: DW
আশা করি নির্বাচন অবাধ, রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপহীন ও উৎসবমুখর হবে: হাবিবুর রহমান মোল্লা, চোখ হারানো জুলাই যোদ্ধা ও শিক্ষার্থী
যারা চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস করবে না, নিজেদের নতুন করে বাহুবলী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত না করে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করবে, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ ও ২৪-এর জুলাইকে লালন করবে, জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে কাজ করবে, তাদেরকেই বিবেচনায় নেয়া হবে। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে, যেখানে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ থাকবে না, উৎসবমুখর নির্বাচন হবে বলে আশাবাদী। এর জন্য কমিশনকে নিরপেক্ষ প্রশাসনিক কাঠামোর উন্নয়নে মনযোগী হতে হবে।
ছবি: DW
9 ছবি1 | 9
চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে যে ১২ কোটি ৬২ লাখ ভোটার, তার মধ্যে ১৮ থেকে ৩৭ বছর বয়সি ভোটার প্রায় পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ, যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৩ শতাংশ। গত এক দশকে নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে সোয়া তিন কোটি, যার মধ্যে একেবারে নতুন ভোটার প্রায় অর্ধকোটি।
আর ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের ভোটারের সংখ্যা পৌনে চার কোটির কাছাকাছি, যা মোট ভোটারের ৩০ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, মোট ভোটারের মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটির মতো। তাদের কথা, গত ১৫ বছরে বড় একটি সংখ্যার ভোটার ভোট দেননি বা দিতে পারেননি। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আরো কয়েক লাখ নতুন ভোটার যোগ হবে।
ভোটারদের নিয়ে এখন নানা ধরনের জরিপ প্রকাশিত হচ্ছে। তার মধ্যে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-র ‘পালস সার্ভে ৩'-এর ফলাফলে একটি চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে, আর তা হলো, ৪৮.৫ ভাগ মানুষ কাকে ভোট দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত তারা এখনো নেননি। ওই জরিপে তাদের বয়সসীমা কী, তা বলা না হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনো যারা সিদ্ধান্ত নেননি, তাদের অধিকাংশই তরুণ ভোটার। কারণ, তারা তাদের প্রত্যাশার জায়গা আরো দেখতে চান। আর তরুণ ভোটারদের সাথে কথা বলেও তারই আঁচ পাওয়া গেছে।
এবার তরুণ ভোটার অতীতের চেয়ে বেশি, তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের প্রত্যাশা বুঝতে হবে: জেসমিন টুলি
This browser does not support the audio element.
তরুণ পেশাজীবী মাহিলা ইসলাম এখনো কাকে বা কোন দলকে ভোট দেবেন- সেই সিদ্ধান্ত নেননি। তার কথা, " আমি এবারই ভোটার হয়েছি। তবে কাকে বা কোন দলকে ভোট দেবো সেই সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি, আরো দেখার বাকি আছে। এর কারণ, এখনো তো দলগুলো ইশতেহার ও প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। আর ভোটের পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক চলছে।”
তার কথা," আমি প্রচলিত দলভিত্তিক চিন্তা করছি না। আমি একটি পরিবর্তন প্রত্যাশা করছি। পুরনো ধাঁচের রাজনীতি আর সরকার দেখতে চাই না। আমি পরিবর্তন চাই। এটা যারা করতে পারবে, তাদেরই আমি ভোট দেবো।”
"আরেকটি বিষয়, আমাদের তরুণদের কিছু আকাঙ্খা আছে, যা ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। আমি সেই প্রত্যাশা পুরণ হোক তা চাই,” বলেন তিনি।
আরেকজন তরুণ ভোটার তানজিলা তাসনিম বলেন, "আমি পরিবর্তন চাই। আগে যে দলীয় সরকার, যারা দলীয় লোকজনকে নিয়ে লুটপাট করতো, দুর্নীতি করতো, সেই ধরনের কোনো সরকার আবার চাই না। আমি চাই সরকার হবে সবার।”
"কিন্তু আমি এরই মধ্যে কিছুটা হতাশও হয়ে পড়েছি। কারণ, আমরা নির্বাচনের আগে যে সংস্কার চেয়েছিলাম, তার পুরোটা হবে বলে মনে হয় না। তারপরও আমি এমন দলকে ভোট দেবো, যারা ক্ষমতায় এসে সংস্কারগুলো করবে,” বলেন তিনি।
সংস্কার কমিশন ও সংস্কারের প্রস্তাবনা
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই রাষ্ট্রযন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অংশের সংস্কার কমিটি গঠন করেন। ছবিঘরে থাকছে সেসব সংস্কার প্রস্তাবনার সারসংক্ষেপ।
ছবি: bdnews24.com
নির্বাচন কমিশন সংস্কার
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের উদ্দেশ্যে প্রায় ১৫০টির কাছাকাছি সুপারিশ করেছে কমিশন। যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ডাকযোগে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, উচ্চ কক্ষের জন্য নির্বাচন, বিরোধী দলকে ডেপুটি স্পিকারের পদ দেয়া ও জাতীয় নির্বাচনে কোন আসনে ৪০ শতাংশের কম ভোট হলে পুনরায় নির্বাচনের সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সংবিধান সংস্কার
সংবিধান সংস্কার কমিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজকে প্রধান করা হয়। ক্ষমতার প্রাতিষ্ঠানিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমানোসহ সংবিধানে আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে কমিশন। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ, সংসদের আসন বাড়ানো, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, এক ব্যক্তির দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারার সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/M. Ponir Hossain
বিচার বিভাগ সংস্কার
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্টের স্বাধীন সচিবালয়, বিচারক নিয়োগের জন্য স্বাধীন কমিশন, হাই কোর্টের বিভাগীয় বেঞ্চ, জেলা ও উপজেলা আদালত স্থাপনসহ নানা সংস্কারের সুপারিশ করেছে। প্রধান বিচারপতি নিয়োগে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত ও সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া, বিচারকদের শৃঙ্খলা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
পুলিশ সংস্কার কমিশন
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে পুলিশ সংস্কার কমিশন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছে। বল প্রয়োগ, আটক, গ্রেপ্তার, তল্লাশি, জিজ্ঞাসাবাদ, মানবাধিকার, প্রভাবমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক বাহিনী গঠন, থানায় জিডি রেকর্ড, মামলা রুজু, তদন্ত ও ভ্যারিফিকেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের সুপারিশ করেছে পুলিশ সংস্কার কমিশন। পুলিশের সেবামূলক ও জনবান্ধব কার্যক্রম বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
ছবি: Nazmul Hasan/DW
দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন
দুদক সংস্কার কমিশনের দায়িত্ব পান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। একটি সংস্কার কমিশন গঠিত হয় এবং কমিশন দুর্নীতি প্রতিরোধে ৪৭টির মতো সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। দুদককে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা শক্তিশালীকরণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
ছবি: Mamunur Rashid/NurPhoto/picture alliance
জনপ্রশাসন সংস্কার
জনপ্রশাসন সংস্কারকে একটি চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে কমিশন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর উপর বেশ কিছু কাঠামোগত ও পদ্ধতিগত সংস্কারের সুপারিশ করেছে। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য ও যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে তথ্য ও যোগাযোগ বিভাগকে আলাদা করা, ফরিদপুর ও কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা, নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে প্রশাসনের ডিজিটাল রূপান্তর, বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের কাঠামো ও প্রক্রিয়াগত সংস্কারের উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
ছবি: bdnews24.com
6 ছবি1 | 6
তার কথা, "নারী, তরুণ, সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়গুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”
আর শুভ সেন নামের এক তরুণ ভোটার বলেন, " আমি তো এবার তরুণ প্রার্থীদেরই ভোট দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু তাদের দলের কাছ থেকে আমার প্রত্যাশা এখনো পুরণ হচ্ছে না। তাদেরকে আরো এফেক্টিভ হতে হবে। আর অন্য দলগুলোও এখন নানা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল, তা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। তারপরও আমি পরিবর্তন চাই। নতুন কিছু দেখতে চাই। পুরনো ধারার রাজনীতি আমার পছন্দ নয়।”
ভোটারদের মধ্যে কোন দলের জনপ্রিয়তা বেশি তা নিয়ে নানা ধরনের জরিপ প্রকাশিত হচ্ছে। এইসব জরিপ নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনাও আছে। তা সত্ত্বেও মানুষের আলোচনাতেও আছে সেসব জরিপ।
নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম ও বিআরএআইএনড়-এর জরিপ বলছে, ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ৪১.৩ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দের দল বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেছেন ৩০.৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পছন্দ করেছেন ৪.১ শতাংশ উত্তরদাতা। ১৮.৮ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা দল আওয়ামী লীগ।
তাদের গত মার্চ মাসের জরিপে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ' বলেছিলেন ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭. ৮ শতাংশ। এই জরিপে ভোট নিয়ে সিদ্ধান্তহীন ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে।
নির্বাচনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এবার নিশ্চিতভাবেই ভোটে প্রধান নিয়ন্ত্রক হবে তরুণদের ভোট। তারাই হবে গেম চেঞ্জার। যদি তরুণ ভোটাদের সংখ্যা দেখেন তাহলে সেটা বুঝতে পারবেন । আর এই ভোটাররাই এখনো কোথায় ভোট দেবেন সেই সিদ্ধন্ত নেননি।”
তার কথা, " রজনৈতিক দলগুলো এখনো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। তারা নির্বাচন পদ্ধতিসহ নানা বিষয় নিয়ে এখনো বিতর্কে আছে। ফলে, কাকে ভোট দেবে সেটা নিয়েবড় অংশের ভোটারদের মধ্যে এখনো সিদ্ধান্তহীনতা আছে। জুলাই মুভমেন্ট-এর স্পিরিট হলো চেঞ্জ। আমার মনে হয়, এটা যারা সামনে নিয়ে আসতে পারবে, তাদেরই তরুণ ভোটাররা শেষ পর্যন্ত পছন্দ করবেন।”
নির্বাচন নিয়ে জনমনে শঙ্কা-সংশয়
ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্য ও সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েও মানুষের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয়ে ডয়চে ভেলের সাথে কথা বলেছেন রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষক, সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীরা।
জনমনে স্বস্তি ফেরেনি, নির্বাচন হবে কীভাবে?: রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাধারণ সম্পাদক, সিপিবি
নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার তিনটি কারণ আছে। প্রথমত, জনজীবনে স্বস্তি ফেরেনি, এর মধ্যে নির্বাচন হবে কীভাবে? দ্বিতীয়ত, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের আরও কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ দরকার ছিল। যেমন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনি যাত্রায় শামিল করার দরকার ছিল, যেটা তারা করেনি। তৃতীয়ত, সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনবিরোধী অবস্থান নিয়েই কথা বলছে। ফলে মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
ছবি: DW
রাজনৈতিক অনৈক্য ও নিরাপত্তাহীনতা নির্বাচনে বাধা : মনিরা শারমিন, যুগ্ম আহবায়ক, এনসিপি
মানুষের মধ্যে শঙ্কার অনেক কারণ আছে। মূলত দলগুলোর মধ্যে ঐক্য তৈরি হয়নি। এটা নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে বড় প্রভাবক। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে এখন তো সবার মাঠে থাকার কথা। বিশেষ করে একটি দল যারা শুরু থেকেই নির্বাচনের কথা বলছে তারাও কিন্তু মাঠে নামেনি। তারাও জানে, রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া নির্বাচন সম্ভব না৷ মানুষ গত তিনটা নির্বাচনে ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনহীনতার একটা সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে।
ছবি: Privat
জামায়াত-এনসিপির শর্ত শঙ্কা তৈরি করেছে : ডা. জাহেদ উর রহমান, রাজনৈতিক বিশ্লেষক
কতগুলো যৌক্তিক কারণেই সংশয় তৈরি হয়েছে। এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। মূল দল জামায়াত ও এনসিপি নানা ধরনের শর্ত দিচ্ছে নির্বাচন নিয়ে। যেগুলো দেখে মনে হতে পারে তারা নির্বাচন চায় না। এটাই মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি করেছে। এই মুহূর্তে সবার নির্বাচনের মাঠে থাকার কথা। কিন্তু জামায়াত-এনসিপি যেসব শর্ত দিচ্ছে সেগুলো পূরণ না হলে তারা নির্বাচন করবে না। ফলে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা তো আছেই।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্বাচন ছাড়া সরকারের বিকল্প নেই : রোকসানা খন্দকার, আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব দেখা যাচ্ছে। কয়েকটি দল শর্ত দিচ্ছে, এটা না হলে, ওটা না হলে তারা নির্বাচনে যাবে না। এই শর্তের কারণে মানুষের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে যতই শঙ্কা থাক, বর্তমান সরকার কিন্তু বুঝতে পেরেছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বিনিয়োগ নেই, কর্মসংস্থান নেই এতে মানুষ দারুনভাবে ক্ষুব্ধ। ফলে যত শঙ্কাই থাক না কেন, নির্বাচন দেওয়া ছাড়া এই সরকারের কোন বিকল্প নেই।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
আইন শৃঙ্খলা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ: মোস্তফা ফিরোজ, সিনিয়র সাংবাদিক
তিনটা দলকে গুরুত্ব দেন ড. ইউনূস। এর মধ্যে জামায়াত ও এনসিপি পিআর সিস্টেমে নির্বাচন চায়। তাদের এই দাবির কারণে এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। আর বিএনপিও অগোছালো। তারেক রহমান দেশে নেই, প্রার্থী বাছাই করে যে তারা মাঠে নামবে সেটাও দেখা যাচ্ছে না। এসব কারণে অনিশ্চয়তা। আর আইনশৃঙ্খলা হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ। পুলিশ আসলে প্রস্তুত না। সেনাবাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। এই কারণেও শঙ্কা বেড়েছে।
ছবি: Privat
নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে : সাইদুর রহমান, রাজনীতি ও নির্বাচন বিষয়ক সম্পাদক, ইত্তেফাক
ভোট ব্যবস্থাপনার প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা আছে। ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত নিশ্চিত করার পাশাপাশি আরেকটি চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনকে কঠিন সংকটের মুখোমুখী ফেলতে পারে। সেটি হল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিস-ইনফরমেশন এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি বা ভিডিও বানিয়ে ছড়িয়ে দেয়া। ভোট না হওয়া পর্যন্ত শঙ্কা থাকবে। এখনো নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ চাই : অর্পিতা সাহা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে আমি চাই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে। এই নির্বাচন যেন সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক হয়। যেখানে প্রতিটি দল সমান সুযোগ পাবে। আমার প্রত্যাশা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এমন সরকার নির্বাচিত হবে, যারা সত্যি জনগণের আশা ও কল্যাণ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবে। বর্তমান সরকারের প্রতি জনগণের অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু সেই প্রত্যাশাগুলো পূরণ হয়নি। তাই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
নির্ভয়ে ভোট দিতে চাই : রাতুল হাসান রাফি, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জনগণ ভেবেছিল অন্তর্বর্তীকালীন সরকারই হবে পরিবর্তনের প্রতীক। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, দুর্নীতি কমাবে, উন্নয়নের গতি বাড়াবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল ব্যর্থতাই বেশি। জনগণের আস্থা টিকিয়ে রাখতে হলে আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন হতে হবে। একেবারেই স্বচ্ছ ও প্রতিযোগিতামূলক, যেখানে কোনো দল বিশেষ সুবিধা না পায়। জীবনের প্রথম ভোট হিসেবে আমি নির্ভয়ে যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই।
জাতীয় নির্বাচনে একজন তরুণ ভোটার হিসাবে আমার প্রধান প্রত্যাশা হলো সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব পাওয়া। আমি চাই শিক্ষা, কর্মসংস্থান প্রযুক্তিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হোক। দুর্নীতি কমানোসহ নারী হিসাবে আমার সমান সুযোগ ও নিরাপদ পরিবেশ প্রত্যাশা করি। সবশেষে, আমি এমন নেতৃত্ব চাই যারা ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়বে।
ছবি: Privat
নির্বাচন যেন অবাধ সুষ্ঠু হয় : আবু বকর অনিক, শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
আমি এখনও কোন নির্বাচনে ভোট দেইনি। জীবনে প্রথম ভোট দেবো রাকসু নির্বাচনে। আর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিতে চাই। সেই নির্বাচনটি যেন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়। যাতে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত করতে পারে এবং একজন প্রকৃত স্বদেশপ্রেমী প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদে তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হয়।
ছবি: Samir Kumar Dey/DW
10 ছবি1 | 10
আর ‘ইলেকশন ডায়াসের' প্রধান নির্বাহী ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, " আমার মনে হচ্ছে, এবার তরুণ ভোটারার আগের ট্রেন্ড ভেঙে দেবে। আগে যে মার্কা দেখে ভোট হতো, বাবা বিএনপি তাই ছেলেও বিএনপিকে ভোট দেবে, সেরকম হবে না। আর এইরকম ট্রেন্ড পরিবর্তনপ্রত্যাশী তরুণ ভোটার প্রায় ছয় কেটি।”
তার কথা, "কেরালায় দেখেছি, বেকার ভাতা, মেয়েদের জন্য বাসভাড়া ফ্রি করে দেয়া এই বিষয়গুলো পুরো ভোটের হিসাব চেঞ্জ করে দেয়। আমাদের তরুণরাও দেখবে, তাদের জন্য কোন দল কী করবে। এলাকায় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ নয়, তরুণদের জন্য কী করা হবে সেটা দেখেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে। তারা চাইবে কর্মসংস্থান, হেলথ কার্ড। রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থীতায় তরুণদের জায়গা দেবে বলছে। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তরুণদের জন্য তারা কী করবে।”
সাবেক নির্বাচন কমিশনার জেসমিন টুলি বলেন, " ২০২৪ সালের যে পরিবর্তন, এবারের ভোটটাও পরিবর্তনের ভোট। আর তরুণরা সেখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। কারণ, এবার তরুণ ভোটার অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের প্রত্যাশা বুঝতে হবে।”
কাকে ভোট দেবে সেটা নিয়ে বড় অংশের ভোটারদের মধ্যে এখনো সিদ্ধান্তহীনতা আছে: ড. আব্দুল আলিম
This browser does not support the audio element.
তার কথা, "বিএনপি, জামায়াত বা অন্য দলের ভোট ব্যাংক আছে। এই ভোট ব্যাংকের বাইরে অনেক ভোটার আছে। যারা তরুণ এবং বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট দেয়নি। তারাই আসলে এবারের নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হবে। তারাই তরুণ। ”
"এই তরুণরা প্রার্থী দেখবে, দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহার দেখবে। তারা দণগুলোর কর্মসূচি দেখবে। তরুণরাই তো ৫ আগস্টের পরিবর্তনটা এনেছে। তারা সেই পরিবর্তনটাও দেখতে চাইবে। আর এই কারণেই ভোট কোন দলে দেবে সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অনেক ভোটার,” বলেন তিনি।
আর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, " এবার তরুণ ভোটার অনেক। ফলে, তারা যে দিকে ঝুঁকবেন সেদিকেই যাবে ভোটের ফলাফল। তারা তাদের পরিবর্তনের প্রত্যাশা পুরণ করতে চাইবে।”
"আমার মনে হয়, ডাকসু নির্বাচনে তরুণদের পছন্দের প্রার্থী বা নেতৃত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে তারা কী পছন্দ করবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।