1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচনে তরুণ ভোটাররাই পাল্টে দেবেন হিসাব

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আগামী জাতীয় নির্বাচনে তরুণ ভোটাররাই ‘মূল ফ্যাক্টর' হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। রেকর্ড সংখ্যক তরুণ ভোটার আকৃষ্ট করার ওপরই নির্বাচনের সফলতা নির্ভর করবে বলেও মনে করছেন তারা।

তিনজন তরুণ ভোটারকে দেখা যাচ্ছে ভোটের কালির দাগ থাকা আঙুল দেখাতে৷
এক তরুণ ভোটার বলেন, "আমি তো এবার তরুণ প্রার্থীদেরই ভোট দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু তাদের দলের কাছ থেকে আমার প্রত্যাশা এখনো পুরণ হচ্ছে না। যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল, তা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। তারপরও আমি পরিবর্তন চাই। পুরনো ধারার রাজনীতি আমার পছন্দ নয়।”ছবি: Mortuza Rashed/DW

গত  আগস্টে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতে দেখা গেছে, এই তালিকায় গতবারের তুলনায় নতুন ভোটার হয়েছে ৪৫ লাখ ৭১ হাজার ২১৬ জন। আর মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ জন।

২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যাদের জন্ম, তারাই এই ভোটার তালিকায় আছেন। বাংলাদেশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। তালিকা থেকে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন মৃত ভোটারের নাম বাদ দেয়া হয়েছে।

এবার পুরুষের চেয়ে নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। নতুন ২৭ লাখ ৭৬২ জন নারী ভোটার হয়েছেন। আর নতুন পুরুষ ভোটার হয়েছেন ১৮ লাখ ৭০ হাজার ২০৩ জন। হিজড়া ভোটার হয়েছেন  ২৫১ জন।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবরের  মধ্যে যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদেরও ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তারাও আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন। আগামী ৩১ অক্টোবর বা তারপরে তরুণ ভোটারদের সম্পূরক তালিকা প্রকাশ করা হবে। সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে ভোটারের সংখ্যা আরো বাড়বে।

চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ করা ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে যে  ১২ কোটি ৬২ লাখ ভোটার, তার মধ্যে ১৮ থেকে ৩৭ বছর বয়সি ভোটার প্রায় পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ, যা মোট ভোটারের প্রায় ৪৩ শতাংশ। গত এক দশকে নতুন ভোটার যুক্ত হয়েছে সোয়া তিন কোটি, যার মধ্যে একেবারে নতুন ভোটার প্রায় অর্ধকোটি।

আর ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সের ভোটারের সংখ্যা পৌনে চার কোটির কাছাকাছি, যা মোট ভোটারের ৩০ শতাংশ। বিশ্লেষকরা বলছেন, মোট ভোটারের মধ্যে নতুন ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটির মতো। তাদের কথা, গত ১৫ বছরে বড় একটি সংখ্যার ভোটার ভোট দেননি বা দিতে পারেননি। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত আরো কয়েক লাখ নতুন ভোটার যোগ হবে।

ভোটারদের নিয়ে এখন নানা ধরনের জরিপ প্রকাশিত হচ্ছে। তার মধ্যে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি)-র ‘পালস সার্ভে ৩'-এর ফলাফলে একটি চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে, আর তা হলো, ৪৮.৫ ভাগ মানুষ কাকে ভোট দেবেন, সেই সিদ্ধান্ত তারা এখনো নেননি। ওই জরিপে তাদের বয়সসীমা কী, তা বলা না হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন, এখনো যারা সিদ্ধান্ত নেননি, তাদের  অধিকাংশই তরুণ ভোটার। কারণ, তারা তাদের প্রত্যাশার জায়গা আরো দেখতে চান। আর তরুণ ভোটারদের সাথে কথা বলেও তারই আঁচ পাওয়া গেছে।

এবার তরুণ ভোটার অতীতের চেয়ে বেশি, তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের প্রত্যাশা বুঝতে হবে: জেসমিন টুলি

This browser does not support the audio element.

তরুণ পেশাজীবী মাহিলা ইসলাম এখনো কাকে বা কোন দলকে ভোট দেবেন- সেই সিদ্ধান্ত নেননি। তার কথা, " আমি এবারই ভোটার হয়েছি। তবে কাকে বা কোন দলকে ভোট দেবো সেই সিদ্ধান্ত এখনো নেইনি, আরো দেখার বাকি আছে। এর কারণ, এখনো তো দলগুলো ইশতেহার ও প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। আর ভোটের পদ্ধতি নিয়েও বিতর্ক চলছে।”

তার কথা," আমি প্রচলিত দলভিত্তিক চিন্তা করছি না। আমি একটি পরিবর্তন প্রত্যাশা করছি। পুরনো ধাঁচের রাজনীতি আর সরকার দেখতে চাই না। আমি পরিবর্তন চাই। এটা যারা করতে পারবে, তাদেরই আমি ভোট দেবো।”

"আরেকটি বিষয়, আমাদের তরুণদের কিছু আকাঙ্খা আছে, যা ২০২৪-এর গণঅভ্যুত্থানে মাধ্যমে প্রকাশ করেছি। আমি সেই প্রত্যাশা পুরণ হোক তা চাই,” বলেন তিনি।

আরেকজন তরুণ ভোটার তানজিলা তাসনিম বলেন, "আমি পরিবর্তন চাই। আগে যে দলীয় সরকার, যারা দলীয় লোকজনকে নিয়ে লুটপাট করতো, দুর্নীতি করতো, সেই ধরনের কোনো সরকার আবার চাই না। আমি চাই সরকার হবে সবার।”

"কিন্তু আমি এরই মধ্যে কিছুটা হতাশও হয়ে পড়েছি। কারণ, আমরা নির্বাচনের আগে যে সংস্কার চেয়েছিলাম, তার পুরোটা হবে বলে মনে হয় না। তারপরও আমি এমন দলকে ভোট দেবো, যারা ক্ষমতায় এসে সংস্কারগুলো করবে,” বলেন তিনি।

তার কথা, "নারী, তরুণ, সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়গুলো আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।”

আর শুভ সেন নামের এক তরুণ ভোটার বলেন, " আমি তো এবার তরুণ প্রার্থীদেরই ভোট দেবো ভেবেছিলাম। কিন্তু তাদের দলের কাছ থেকে আমার প্রত্যাশা এখনো পুরণ হচ্ছে না। তাদেরকে আরো এফেক্টিভ হতে হবে। আর অন্য দলগুলোও এখন নানা দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছে। যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা ছিল, তা এখনো দেখতে পাচ্ছি না। তারপরও আমি পরিবর্তন চাই। নতুন কিছু দেখতে চাই। পুরনো ধারার রাজনীতি আমার পছন্দ নয়।”

ভোটারদের মধ্যে কোন দলের জনপ্রিয়তা বেশি তা নিয়ে নানা ধরনের জরিপ প্রকাশিত হচ্ছে। এইসব জরিপ নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনাও আছে। তা সত্ত্বেও মানুষের আলোচনাতেও আছে সেসব জরিপ।

নাগরিক প্ল্যাটফর্ম ভয়েস ফর রিফর্ম ও বিআরএআইএনড়-এর জরিপ বলছে, ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে ৪১.৩ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দের দল বিএনপি। জামায়াতে ইসলামীকে পছন্দ করেছেন ৩০.৩ শতাংশ উত্তরদাতা। আর জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) পছন্দ করেছেন ৪.১ শতাংশ উত্তরদাতা। ১৮.৮ শতাংশ উত্তরদাতার পছন্দ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা দল আওয়ামী লীগ।

তাদের গত মার্চ মাসের জরিপে ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ' বলেছিলেন ৬২ শতাংশ উত্তরদাতা। সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৫৭. ৮ শতাংশ। এই জরিপে ভোট নিয়ে সিদ্ধান্তহীন ভোটারের সংখ্যা বাড়ছে।

নির্বাচনের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. আব্দুল আলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এবার নিশ্চিতভাবেই ভোটে প্রধান নিয়ন্ত্রক হবে তরুণদের ভোট। তারাই হবে গেম চেঞ্জার। যদি তরুণ ভোটাদের সংখ্যা দেখেন তাহলে সেটা বুঝতে পারবেন । আর এই ভোটাররাই এখনো কোথায় ভোট দেবেন সেই সিদ্ধন্ত নেননি।”

তার কথা, " রজনৈতিক দলগুলো এখনো তাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেনি। তারা নির্বাচন পদ্ধতিসহ নানা বিষয় নিয়ে এখনো বিতর্কে আছে। ফলে, কাকে ভোট দেবে সেটা নিয়েবড় অংশের ভোটারদের মধ্যে এখনো সিদ্ধান্তহীনতা আছে। জুলাই মুভমেন্ট-এর স্পিরিট হলো চেঞ্জ।  আমার মনে হয়, এটা যারা সামনে নিয়ে আসতে পারবে, তাদেরই তরুণ ভোটাররা শেষ পর্যন্ত পছন্দ করবেন।”

আর ‘ইলেকশন ডায়াসের' প্রধান নির্বাহী ড. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, " আমার মনে হচ্ছে, এবার তরুণ ভোটারার আগের ট্রেন্ড ভেঙে দেবে।  আগে যে মার্কা দেখে ভোট হতো, বাবা বিএনপি তাই ছেলেও বিএনপিকে ভোট দেবে, সেরকম হবে না। আর এইরকম ট্রেন্ড পরিবর্তনপ্রত্যাশী তরুণ ভোটার প্রায় ছয় কেটি।”

তার কথা, "কেরালায় দেখেছি, বেকার ভাতা, মেয়েদের জন্য বাসভাড়া ফ্রি করে দেয়া এই বিষয়গুলো পুরো ভোটের হিসাব চেঞ্জ করে দেয়। আমাদের তরুণরাও দেখবে, তাদের  জন্য কোন দল কী করবে। এলাকায় রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ নয়, তরুণদের জন্য কী করা হবে সেটা দেখেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে। তারা চাইবে কর্মসংস্থান, হেলথ কার্ড। রাজনৈতিক দলগুলো প্রার্থীতায় তরুণদের জায়গা দেবে বলছে। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তরুণদের জন্য তারা কী করবে।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনার জেসমিন টুলি বলেন, " ২০২৪ সালের যে পরিবর্তন, এবারের ভোটটাও পরিবর্তনের ভোট। আর তরুণরা সেখানে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। কারণ, এবার তরুণ ভোটার অতীতের যে-কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে তরুণদের প্রত্যাশা বুঝতে হবে।”

কাকে ভোট দেবে সেটা নিয়ে বড় অংশের ভোটারদের মধ্যে এখনো সিদ্ধান্তহীনতা আছে: ড. আব্দুল আলিম

This browser does not support the audio element.

তার কথা, "বিএনপি, জামায়াত বা অন্য দলের ভোট ব্যাংক আছে। এই ভোট ব্যাংকের বাইরে অনেক ভোটার আছে। যারা তরুণ এবং বিগত কয়েকটি নির্বাচনে ভোট দেয়নি। তারাই আসলে এবারের নির্বাচনে মূল ফ্যাক্টর হবে। তারাই তরুণ। ”

"এই তরুণরা প্রার্থী দেখবে, দলগুলোর নির্বাচনি ইশতেহার দেখবে। তারা দণগুলোর কর্মসূচি দেখবে। তরুণরাই তো ৫ আগস্টের পরিবর্তনটা এনেছে। তারা সেই পরিবর্তনটাও দেখতে চাইবে। আর এই কারণেই ভোট কোন দলে দেবে সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি অনেক ভোটার,” বলেন তিনি।

আর নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, " এবার তরুণ ভোটার অনেক। ফলে, তারা যে দিকে ঝুঁকবেন সেদিকেই যাবে ভোটের ফলাফল। তারা তাদের পরিবর্তনের প্রত্যাশা পুরণ করতে চাইবে।”

"আমার মনে হয়, ডাকসু নির্বাচনে তরুণদের পছন্দের প্রার্থী বা নেতৃত্ব সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া গেছে। তবে জাতীয় নির্বাচনে তারা কী পছন্দ করবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ