নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার
১১ জুলাই ২০১৩![](https://static.dw.com/image/16884869_800.webp)
ওদিকে নির্বাচন কমিশন বলছে, আগামী নির্বাচনগুলোতে তারা ধর্মের অপব্যবহার রোধে আইন প্রয়োগ করবে৷
সর্বশেষ গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধর্মের অপব্যবহার ছিল লক্ষ্যণীয়৷ বিশেষ করে হেফাজতে ইসলামকে ব্যবহার করা হয়েছে ব্যাপকভাবে৷ তবে হেফাজতে ইসলামকে নিজেদের দিকে টানতে বিরোধী দল তো বটেই, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি দলও চেষ্টা করেছে৷ গাজীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আফম মোজাম্মেল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, বিরোধী দল হেফাজত ইস্যুসহ নানা ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে৷ তিনি দাবি করেন, এই অপপ্রচার কাজে লেগেছে৷ সাধারণ মানুষের একাংশ তা বিশ্বাস করেছে৷ এমনকি তাঁরা এটাকে নাস্তিক আর আস্তিকের নির্বাচনি লড়াই হিসবেও তুলে ধরেছে৷ লিফলেট ছড়িয়েছে, প্রচার-পত্র বিলি করেছে৷
ওদিকে নির্বাচনে বিজয়ী এম এ মান্নান বলেছেন, জাতীয় নানা ইস্যু এই নির্বাচনে কাজ করেছে৷ স্বাভাবিকভাবেই মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশের ওপর হামলা ধর্মপ্রাণ মুসলামনরা মেনে নেননি৷ নির্বাচনে তার জবাব দেয়া হয়েছে৷
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ বা জানিপপ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, শুধু গাজীপুর নয়, এর আগে দেশের চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও ধর্ম, বিশেষ করে হেফাজতে ইসলাম এবং নাস্তিক-আস্তিক ইস্যু কাজ করেছে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, এটাকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে৷ ব্যক্তিগত পর্যায়ে কারুর ধর্মীয় বিশ্বাস তাঁর অধিকার৷ কেউ যদি সেই বিশ্বাস থেকে ভোট দেন, তাহলে কিছু করার নেই৷ আর তিনি যদি নির্বাচনে গোপনে তা প্রচারও করেন, তাহলেও তা ধরার উপায় নেই৷ কিন্তু নির্বাচনে যদি কেউ ধর্মকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে প্রকাশ্যেই ব্যবহার করে, অপ্রচার চালায়, তাহলে তা আইনের লঙ্ঘন৷ নির্বাচনি আচরণ-বিধির লঙ্ঘন৷ তবে এটাও সত্য যে বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল বৈধ৷ আবার যারা ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈকি দল নয়, তারাও ধর্মের কথা বলে৷ তাই কেউ যদি প্রচার চালায় যে তাদের হাতে ধর্ম নিরাপদ, তাহলে কি করার আছে? অবশ্য কেউ যদি প্রচার চালায় যে অন্যের হাতে ধর্ম নিরাপদ নয়, তাহলে অবশ্যই এখানে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব আছে৷
অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ধর্মের অপব্যবহার রোধে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনি আইন আছে৷ শুধু নির্বচনের সময় নয়, এই আইন নিয়ে সব সময়ই কমিশনের কাজ করা উচিত৷ তাঁর মতে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে ধর্ম আরো জেঁকে বসতে পারে৷ ধর্মভিত্তিক নানা ইস্যুর হতে পারে অপব্যবহার৷ তাই আইনটি কমিশনের কঠোরভাবে প্রয়োগ করা উচিত৷
নির্বাচন কমিশনও এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে৷ বিশেষ করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেসব ধর্মীয় ইস্যু ব্যবহার করা হয়েছে, তা তাদের ভাবিয়ে তুলছে৷ সংসদ নির্বাচনের আচরণ-বিধিতে ধর্মের অপব্যবহারের মতো অপরাধের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে৷ এছাড়া, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে এই অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও আছে কমিশনের৷
এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ধর্ম ব্যবহার অবরাধ নয়, কিন্তু ধর্মের অপব্যবহার বা ধর্মকে ব্যবহার করে নির্বাচনকে প্রভাবিত করা অপরাধ৷ তিনি জানান, গাজীপুরসহ সদ্য শেষ হওয়া পাঁচটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনেকেই ধর্মের ব্যবহার করেছেন৷ কেউ কেউ আবার ধর্মের অপব্যবহারের অভিযোগও করেছেন৷ নানা সীমাবদ্ধতার কারণে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারেনি৷ কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কমিশন ধর্মকে ব্যবহার করে অথবা আঘাত করে সুবিধা আদায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে৷ সেক্ষেত্রে ধর্মকে অপব্যবহারের অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যেতে পারে৷