অনেক জার্মানের কাছে ফ্রাউকে পেট্রি হচ্ছেন দেশটির ডানপন্থি পপুলিজমের প্রতীক৷ অথচ বুধবার তিনি জানিয়ে দিলেন, জার্মানির আসন্ন সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে চান না তিনি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ডানপন্থি পপুলিস্ট অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) দলের কো-চেয়ারম্যান এবং দলের সবচেয়ে পরিচিত মুখ ফ্রাউকে পেট্রি দলের মুখ্য প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে কার্যত এক বোমা ফাটিয়েছেন৷ ফেসবুকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তিনি পরিষ্কারভাবে তাঁর এই অনীহার কথা প্রকাশ করেন৷ তিনি আরো বলেন যে, এএফডি-র মতো একটি দল, নির্বাচনে অংশ নিলেও যাদের শেষ পর্যন্ত বিরোধী দলের সঙ্গে জোট করা ছাড়া গতি নেই, তাদের আদৌ কোনো মুখ্য প্রার্থীর দরকার আছে কিনা – তা নিয়ে সন্দিহান তিনি৷ তবে আগামী সপ্তাহান্তে কোলনে দলটির বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি৷
কিছুদিন আগে নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের ভবিষ্যত নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব রেখে নিজ দলের মধ্যে সমালোচিত হন পেট্রি৷ এরপর তাঁকে দলের মধ্যেই কিছুটা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়৷ তাঁর প্রস্তাব দৃশ্যত দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যকার ক্ষমতার ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বকে আরো উসকে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা৷
পেট্রির দলের অনেকে মনে করেন, তিনি এতটাই মূলধারার রাজনীতি করতে চাইছেন এবং ক্ষমতার জন্য ক্ষুধার্ত যে, দলের অভিবাসী-বিরোধী, এমনকি ইইউ-বিরোধী শক্ত অবস্থান থেকেও সরে আসতে চাইছেন তিনি৷ তা-ও আবার অপেক্ষাকৃত মডারেট ভোটারদের সমর্থন পেতে৷
ভিডিও বিবৃতিতে নিজের প্রস্তাব নিয়েও কথা বলেছেন এএফডি-র এই পরিচিত মুখ৷ দলের ডেলিগেটদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আমার প্রস্তাবের সমালোচকরা বলতে চাচ্ছেন যে, আমি দলকে দুই ক্যাম্পে বিভিক্ত করে ফেলছি৷ অন্যরা ভয় পাচ্ছেন যে, গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্ধারিত একটি সর্বজনীন কৌশল দলের কিছু অংশকে এবং দলের অবস্থানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে৷''
পেট্রি দাবি করেন, ভবিষ্যতে জার্মানির অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল সিডিইউ-এর সঙ্গে তিনি জোট বাঁধতে পারেন, এমনটা যাঁরা বলছেন, তাঁরা ঠিক বলছেন না৷
উল্লেখ্য, ৪১ বছর বয়সি ফ্রাউকে পেট্রি এই মুহূর্তে অন্তঃসত্ত্বা৷ এ রকম অবস্থায় দলের নির্বাচনি প্রচারণায় পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়ত তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়৷ এছাড়া এএফডি-র শীর্ষ প্রার্থী হিসেবে সরে গেলেও দলে নিজের অবস্থান থেকে সরার কোনো ঘোষণাও দেননি জার্মানির এই উঠতি রাজনীতিবিদ৷
জেফারসন চেস/এআই
এএফডি নেতাদের আপত্তিকর যত মন্তব্য
জার্মানির ডানপন্থি পপুলিস্ট পার্টি অল্টারনেটিভ ফর জার্মানির (এএফডি) নেতারা গত কয়েকমাস ধরে একের পর এক উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন৷ তাদের সেরকম কয়েকটি বক্তব্য এখানে তুলে ধরা হলো৷
ছবি: picture alliance/ZB/H. Schmidt
ফ্রাউকে পেট্রি
‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে গুলি ছোড়া উচিত জার্মানির বর্ডার পুলিশের’, বলেছিলেন এএফডি’র কো-চেয়ার৷ ২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে তিনি জানান, পুলিশ অফিসাররা সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে প্রয়োজনে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতে পারে৷ সর্বশেষ সাবেক কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানির নেতা এরিক হ্যোনেকার এ ধরনের কথা বলেছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
বও্যর্ন হ্যোকে
জার্মানির থ্যুরিঙ্গা রাজ্যের এএফডির প্রধান বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মন্যুমেন্ট অফ শেইম’ আখ্যা দিয়ে জার্মানিতে নাৎসি অতীতের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷ গুরুত্বপূর্ণ এক নির্বাচনের বছরে এই মন্তব্য করায় তাকে বহিস্কার করার পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন এএফডির সদস্যরা৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সান্ডার গাউলান্ড গতবছর বলেন, জার্মানির জাতীয় ফুটবল দলের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় জ্যেরম বোয়াটেংকে তাঁর পারফর্মেন্সের জন্য অনেকে প্রশংসা করলেও, তাঁর মতো কাউকে কেউ প্রতিবেশী হিসেবে চাইবে না৷ কৃষ্ণাঙ্গ বোয়াটেংকে নিয়ে এমন মন্তব্য সমালোচনার ঝড় তোলে জার্মানিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
বিট্রিক্স ফন স্টর্চ
প্রাথমিকভাবে এএফডি ইউরো এবং বেইলআউটের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল৷ কিন্তু পরবর্তীতে দ্রুতই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় দলটি৷ ইউরোপের এই আইনপ্রণেতা বলেছেন, ‘‘যারা সীমান্তে আমাদের থামার নির্দেশ গ্রহণ করে না, তারা আক্রমণকারী৷ আর সেসব আক্রমণকারীকে প্রতিহত করতে হবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
মার্কুস প্রেতজেল
এএফডির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফেলিয়া রাজ্যের চেয়ারম্যান মার্কুস প্রেতজেল৷ ফ্রাউকে পেট্রির নতুন স্বামীও তিনি৷ বার্লিনে গত বছর ক্রিসমাস মার্কেটে প্রাণঘাতি হামলার পর তার মন্তব্য, ‘‘ম্যার্কেলের কারণেই প্রাণ হারিয়েছে এরা৷’’
ছবি: picture alliance/dpa/M. Murat
আন্দ্রে ভেন্ডট
স্যাক্সনি রাজ্যের সাংসদ সম্প্রতি জানতে চেয়েছেন অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থীর পেছনে রাষ্ট্র কতটা খরচ বহন করবে৷ তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা হয়েছে৷ গত বছরের জুলাই অবধি ৫২,০০০ অভিভাবকহীন অপ্রাপ্তবয়স্ক শরণার্থী জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছে৷