বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে বিদেশিদের তৎপরতা এবং চাপ বাড়ছে। তারা এখন সংকট নিরসনে একটি রাজনৈতিক সংলাপের চেষ্টা করছেন।
বিজ্ঞাপন
আর এই তৎপরতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। তবে মার্কিন অবস্থানবিরোধী তৎপরতাও আছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য যেমন বিদেশি চাপ আছে, তেমনি এই চাপের ভেতরে-বাইরে ইন্দো-প্যাসিফিক এলাকার ভূ-রাজনীতিও আছে। তারা মনে করছেন, নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য চাপ আরো বাড়বে। আর যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই সমাধানের পথে না যায় তাহলে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
তারা মনে করেন চলতি জুলাই মাস বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি মাস। কারণ নির্বাচনের আর বেশি বাকি নেই। ফলে এই মাসে বিদেশিরা তৎপরতা আরো বাড়িয়েছে। রোববার ঢাকায় আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের(ইইউ) নির্বাচনি অনুসন্ধান টিম। এবারের জাতীয় নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে কী না সে ব্যাপারেই সিদ্ধান্ত নিতে দুই সপ্তাহের সফরে ঢাকা আসছে এই টিম।
রাজপথে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে গেলে সংঘাত-সহিংসতা অনিবার্য: শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন
২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি বাংলাদেশে। প্রতিনিধি দল তাদের সফরে বাংলাদেশে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। এই সময়ে তারা রাজনৈতিক দল ছাড়াও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলবে। জানা গেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ব্যাপারে কিছু নীতি অনুসরণ করে। তাদের বিবেচনায় তারা যদি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ না দেখে তাহলে সাধারণত তারা পর্যবেক্ষক পাঠায় না।
এদিকে আগামী ১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মন্ত্রী ডোনাল্ড লু-ও থাকবেন এই দলে। চারদিনের সফরে এই প্রতিনিধিদল আসন্ন সংসদ নির্বাচন, মানবাধিকার, রোহিঙ্গা, শ্রম অধিকার, বাণিজ্য বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করবে। আর মাসের শেষে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের অর্থনৈতিক পরিবেশ, জ্বালানি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হোসে ফার্নান্দেজের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসবে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই সফরগুলোর মূল বিষয় হলো বাংলাদেশের নির্বাচন। তাদের ঢাকা সফরের আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের তৎপরতা লক্ষ্যণীয়। তিনি আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করছেন বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে। বুধবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে দুই দফা বৈঠক করেছেন।
জানা গেছে এইসব তৎপরতা আর যোগাযোগের পেছনে আছে রাজনৈতিক সংলাপ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নীতি ঘোষণার পর এখন সংলাপেই জোর দিচ্ছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপিও আকারে ইঙ্গিতে সংলাপের কথা বলা শুরু করেছে। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন বিএনপি নির্বাচনে এলে সংলাপ করবে তারা। আর বিএনপি বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মেনে নিলে সংলাপ হতে পারে। বিদেশিরা একটি মধ্যবর্তী অবস্থানে তাদের সংলাপে রাজি করানোর চেষ্টায় আছেন।
বাংলাদেশে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে বিদেশিদের যত মন্তব্য
নির্বাচন ঘনিয়ে এলেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশি কূটনীতিকদের সরব উপস্থিতি দেখা যায়৷ ২০০০ সালের পর থেকে এমন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা থাকছে ছবিঘরে৷
২০০০ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোর প্রায় প্রত্যেকটির আগে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূতদের কথা বলতে দেখা গেছে৷ বিদেশি কূটনীতিকদের এমন আচরণকে সবসময় ক্ষমতাসীন দল ‘শিষ্টাচার লঙ্ঘন’ হিসেবে অভিহিত করে। আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে তা ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার’ পদক্ষেপ৷
ছবি: AP
‘স্টুপিড রাষ্ট্রদূত’
চার দলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষের আগে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের তৎপরতা দেখা যায়৷ তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ব্যরিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, ‘‘কিছু কিছু দালাল রাষ্ট্রদূত মহাজোটকে (আওয়ামী লীগ ও তার জোট) সংবিধান ধ্বংসের উসকানি দিচ্ছেন৷ তাদের কর্থাবার্তা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকিস্বরুপ৷’’ বাংলাদেশে মার্কিন ও ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে ‘স্টুপিড’ হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
২০ বছর পর আওয়ামী লীগের মুখেও একই সুর
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছে ভিসা নীতি। কথা বলছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকেরাও। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের শামিল বা বিতর্ক সৃষ্টি করে এমন বিষয় বা অনুষ্ঠান থেকে কূটনীতিবিদেরা বিরত থাকবেন বলে আশা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর৷
ছবি: DW
২০০১ সালের নির্বাচনের আগে ঢাকায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট
২০০১ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে আগস্টে ঢাকায় আসেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে সুসংহত‘ করতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনায় বসেন তিনি৷ ঢাকা ত্যাগের আগে সংবাদ সম্মেলনে কার্টার জানান, ১) সংসদ বর্জন নয় ২) হরতাল নয় ৩) সন্ত্রাস নয় ৪) ভোটকেন্দ্রে স্থানীয় পর্যবেক্ষক এবং ৫) কমপক্ষে ৬০জন নারী এমপি, এই পাঁচ প্রশ্নে একমত হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি৷
ছবি: John Amis/REUTERS
‘বাংলাদেশ ট্রাবলসাম হয়ে উঠেছে’
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সারাদেশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা, জঙ্গিবাদের উথ্থানে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আলোচনায় আসে বাংলাদেশ৷ এমন প্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পরররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইসের এক বক্তব্য বেশ আলোড়ন তোলে৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশ বেশ ট্রাবলসাম বা সমস্যাসংকুল হয়ে উঠেছে এবং এ ব্যাপারে আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত) কিছু করতে হবে।’’
ছবি: DW/O. Sawizky
বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের চিঠি
সম্প্রতি বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে লেখা ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে৷ এমন ঘটনা নতুন নয়৷ ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ১৬ বা ১৮ জন মার্কিন কংগ্রেসম্যান-সিনেটর পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিৎসা রাইসকে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বুশের কাছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহিংস জঙ্গিবাদের ব্যাপারটি উথ্থাপন করার অনুরোধ জানান৷
ছবি: Anna Moneymaker/Getty Images
এক-এগারো সরকার ও কূটনীতিকেরা
চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হবার আগেই বাংলাদেশে শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিরতা৷ তত্ত্বাবধায়ক সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইত্যাদি বিষয়ে সম্পূর্ণ দুই মেরুতে অবস্থান নেয় সেসময় ক্ষমতায় থাকা বিএনপি ও প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগ। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের আগে থেকেই তৎপরতা শুরু করে কূটনীতিকেরা।
ছবি: DW
সরব পশ্চিমারা
চারদলীয় জোটের সময়কালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে বেশ তৎপরতা দেখা যায় পশ্চিমা কূটনীতিকদের৷ ২০০৬ সালের ৮ ডিসেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে ফোন করেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি নিকোলাস বার্নসে৷ সব দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে পরামর্শ দেন৷
ছবি: Jakub Porzycki/NurPhot/picture alliance
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের 'কফি গ্রুপ’
সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ঢাকাস্থ পশ্চিমা কূটনীতিকেরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য নিজেদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠক করতেন। যার নাম দেয়া হয়েছিল ‘কফি গ্রুপ’। এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল অ্যামেরিকা, ব্রিটেন, ক্যানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি ও জাতিসংঘের প্রতিনিধি। এই গ্রুপে জাপানকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উইকিলিকসে প্রকাশিত তথ্য এমন ইঙ্গিত দেয়।
ছবি: DW
চাকরির নিশ্চয়তা চান সেনাপ্রধান
বাংলাদেশের সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদ সেসময়ের ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির কাছে চাকরির নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন। পরে ভারতের রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত প্রণব মুখার্জি ‘দ্য কোয়ালিশন ইয়ার্স’ এ জানান, মইন উ আহমেদের আশঙ্কা ছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে তাকে চাকুরিচ্যুত করা হবে। তার চাকরির দায়িত্ব প্রণব মুখার্জি ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন।
ছবি: DW / Samir Kumar Dey
সুজাতা সিংয়ের বিতর্কিত সফর
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান বিরোধী বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না এমন অবস্থানে অনড়৷ সেবছরের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা নির্বাচন৷ ঠিক এক মাস আগে ঢাকা সফর করেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং। অনকের দাবি, সুজাতা সিং জাতীয় পার্টির প্রধান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে নির্বাচনে আসতে অনুরোধ জানান৷ এর ফলে বিএনপিকে ছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচন আয়োজন সহজ হয়৷
ছবি: DW
পুলিশ রাতে ব্যালট ভর্তি করেছে: জাপানের রাষ্ট্রদূত
দ্বাদশ নির্বাচনের আগে হঠাৎ করেই একাদশ নির্বাচন নিয়ে মন্তব্য করে আলোচনায় আসেন জাপানের সাবেক রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে গত নির্বাচনে (২০১৮ নির্বাচনে) পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যালট বাক্স ভর্তি করার যে অভিযোগ উঠেছে, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে কখনোই এমনটা শুনিনি। আশা করি আগামী নির্বাচনে এ ধরনের ঘটনা ঘটবে না। জাপান আশা করে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক হবে।’’
ছবি: U.S. Embassy Dhaka
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি
সম্প্রতি বাংলাদেশের নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ৷ ২৪ মে ঘোষিত ওই ভিসানীতিতে বলা হয়েছে, সুষ্ঠু নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করলে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হতে পারে৷ এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি চ্যানেল 24-কে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ইউরোপের বাজারে ‘জিএসপি প্লাস’ সুবিধার দুয়ার খুলতে পারে।
সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি সমুন্নত রাখার প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রতি চীনের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন। অবশ্য এক সপ্তাগ আগে গত শুত্রবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছে ঢাকার চীনা দূতাবাস।
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/L. Zheng
14 ছবি1 | 14
এদিকে ইইউর নির্বাচন অনুসন্ধান টিমের ঢাকা সফরের ঠিক আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল এক চিঠিতে বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশে নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা সৃষ্টির জন্য সব অংশীজনকে ভূমিকা রাখতে হবে। আর সে জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অর্থবহ সংলাপ এবং নাগরিক সমাজের কাজের ক্ষেত্র নিশ্চিত করতে হবে।” তিনি স্লোভাকিয়ার প্রতিনিধিত্বকারী ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টিফেনেককে লেখা চিঠিতে এ কথা বলেছেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মো, হুমায়ুন কবির বলেন," আমাদের উন্নয়ন সহযোগীরা যে কথা বলতে চাইছে তা অবজ্ঞা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বাংলাদেশের জন্য একটি সুষ্ঠু এবং অংশগ্রণমূলক নির্বাচন দরকার। এটা সবাই অনুভব করছেন। এটা সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে অনুধাবন করতে হবে।”
তিনি বলছেন," মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সবাই সুষ্ঠু ও অংশহণমূলক নির্বাচনের কথা বলছে। তারা রাজনৈতিক সংলাপ চায়। কিন্তু আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত না চাইবো ততক্ষণ পর্যন্ত কিছু হবে না। তবে বিদেশি চাপ বাড়তে থাকবে। বিশেষ করে এই জুলাই মাসটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। রাজনৈতিক সমাধানের জন্য আর বেশি সময় নেই।”
"যদি রাজনৈতিক সমাধান না আসে তাহলে তা আমাদের জন্য হবে খুবই দুঃখজনক,” বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। তিনি বলেন," রাজপথে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে গেলে সংঘাত-সহিংসতা অনিবার্য। তাই আমাদের উচিত এখন রাজনৈতিক সংলাপের মাধ্যমে পথ বের করা। সবাইকে ছাড় দিতে হবে। অনঢ় অবস্থানে কোনো সমাধান আসবে না।”
উন্নয়ন সহযোগীরা যা বলছে তা অবজ্ঞা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না: মো. হুমায়ুন কবির
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ মনে করেন, ‘‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে বলেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশিদের বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে। তাদের অনেকের এখানে বিনিয়োগ আছে। অনেকের আরো অনেক হিসাব আছে। তাই তারা যার যার অবস্থান থেকে নিজেকে প্রকাশ করছে। এর সবটা যে সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য আমি তা মনে করি না।”
তার প্রশ্ন, ‘‘মার্কিন ভিসা নীতি কি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য বাড়িয়েছে, না বিভাজন আরো বাড়িয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর পেলেই অনেক কিছু বোঝা যাবে। এখানে লাখ লাখ লোক রাস্তায় না নামলে কোনো পরিবর্তন আসে না। বিদেশি তৎপরতায় অতীতে কিছু হয়েছে? না হলেও নির্বাচন পর্যন্ত তাদের তৎপরতা আরো বাড়বে। কারণ তারা তাদের অবস্থান দেখতে চায়।”
অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এক বিবৃতিতে বলেছে,"বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের আহ্বান জানিয়ে ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকদের লেখা কিছু চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। এ বিষয়টি রাশিয়ার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এটা হলো নব্য উপনিবেশ এবং একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরেকটি নগ্ন হস্তক্ষেপ।”