1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
বিচার ব্যবস্থাবাংলাদেশ

‘নির্বাচন কমিশনের পথ মসৃণ করে দিতে পারে বিচার বিভাগ'

সমীর কুমার দে
৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বিচার বিভাগের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে৷ কেউ সরকারি দলে যোগ দিলে তার জামিন হয়ে যায়, অথচ একই মামলায় অন্যদের জামিন না হওয়ায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনাটা আবারও সামনে এসেছে৷

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান ফটক৷
সরকারি দলে যোগ দিলে জামিন হয়, কিন্তু একই মামলায় অন্যদের জামিন না হওয়ায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতার বিষয়টি আবার সামনে এসেছে৷ছবি: M. Uz ZamanAFP/Getty Images

প্রশ্ন উঠেছে, রাজনৈতিক মামলাগুলোতে কি বিচারকেরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন? বিচার বিভাগের উপর রাজনৈতিক প্রভাব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান৷

ডয়চে ভেলে : বাংলাদেশের বিচার বিভাগের উপর কি রাজনৈতিক প্রভাব আছে?

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান : কোন দেশে নেই? বিচার বিভাগ হলো রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ৷ রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ ও আইন সভা বা আইন বিভাগ একটার সঙ্গে আরেকটার সম্পর্ক থাকে৷ এই তিনটা হলো স্তম্ভ৷ রাষ্ট্রের কিছু দর্শন থাকে৷ সেই দর্শনের কিছু প্রভাব সব বিভাগেই থাকে৷ কেউ যদি মনে করেন কোনো স্তম্ভ স্বাধীন, তাহলে তিনি বোকার স্বর্গে বাস করছেন৷ আমাদের যে রাজনৈতিক মতবাদ বা বিজ্ঞান, সেটা ওরকম স্বাধীনতাকে সমর্থন করেন না৷ রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে সেটা সম্ভবপর নয়৷ সুতরাং রাজনীতির এক ধরনের প্রভাব অবশ্যই থাকে৷ সেই রাজনীতিটা কী ধরনের, সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন৷ সেই রাজনীতিটা কাকে সহায়তা করে, সেটা কি গণমানুষের পক্ষে কিনা? সংখ্যাগরিষ্টের পক্ষে কিনা? এই প্রশ্নগুলো যে-কোনো রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে উত্থাপিত হতেই পারে৷ বিচার বিভাগ অবশ্যই রাজনীতি দ্বারা প্রভাবিত৷ কোনো কোনো রাষ্ট্রে খুব বেশিভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকে৷ তখন অনেকের মনে হতে পারে, বিচার বিভাগের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কাজ করছে৷ আবার মনে হতে পারে, তারা তাদের রাজনৈতিক দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করছেন৷ তবে মোটামুটি তারা একটা নিরপেক্ষতা বজায় রাখে৷

একই ধরনের মামলায় কারও জামিন হচ্ছে, আবার কারও জামিন হয় না কেন?

ওই যে বললেন, একই ধরনের৷ এখন আপনি যদি ভেতরে ঢোকেন তাহলে দেখবেন প্রত্যেকটা মামলার আলাদা স্বকীয়তা আছে৷ পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ৷ অথচ একটা মানুষের সঙ্গে একটা মানুষের মিল নেই৷ কারও ফিঙ্গারের সঙ্গে কারও ফিঙ্গার মেলে না৷ প্রত্যেকটা আলাদা৷ এটা ভুলে গেলে চলবে না৷ আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় একই রকম৷ কিন্তু তার ভেতরে কিছু কিছু উপাদান থাকে যেগুলো তাদের স্বকীয়তা প্রদান করে৷ সেজন্যই যদি একই রকমের হতো তাহলে তো বিচার বিভাগের প্রয়োজন হতো না৷ তাহলে বিচার বিভাগের এত শাখা-প্রশাখা বা এত বিচারকের প্রয়োজন হতো না৷ প্রত্যেকটি ঘটনাকে আলাদা করে দেখা হয়, কারণ প্রত্যেকটির মধ্যে আদালা আলাদা উপাদান থাকে৷ যদিও চরিত্রগতভাবে মনে হতে পারে একই ধরনের মামলা৷

‘নির্বাচন কমিশনের পথ মসৃণ করে দিতে পারে বিচার বিভাগ'

This browser does not support the audio element.

একই গাড়ি পোড়ানোর মামলায় একজনের জামিন হয়ে গেল, তিনি সরকারি দল থেকে নির্বাচন করবেন এই কারণে৷ কিন্তু অন্যদের জামিন হচ্ছে না? তাহলে এটা কেন হয়?

আপনিও কিন্তু দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বিষয়টা দেখছেন৷আমি জানি না যাকে জামিন দিয়েছে, কী কারণে দিল৷ জামিন পাওয়াটা যেমন অধিকার, তেমনি জামিন দেওয়াটাও আদালতের এখতিয়ার৷ আদালত কোনো ক্ষেত্রে দিচ্ছে, আর কোনো ক্ষেত্রে দিচ্ছে না৷ এখন আদালতের ওই জায়গাটা নিয়ে যদি প্রশ্ন করি, আদালত কেন দিল, কেন দিল না? এখন আপনি আর আমি দু'জনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসার জন্য দাঁড়ালাম৷ আমাকে ভিসা দিল, আপনাকে দিল না৷ আপনি কি প্রশ্ন করতে পারবেন ওনাকে দিলেন, আমাকে কেন দিলেন না? আমরা দু'জনই তো বাংলাদেশের নাগরিক৷ এটার ব্যাখ্যা যে দিতেই হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা তাদের নেই৷ তেমনি কোন ক্ষেত্রে আদালত জামিন দিয়েছে, আর কোন ক্ষেত্রে দেয়নি, সেটার ব্যাপারে আপনি যতক্ষণ পুরো ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে না জানছেন ততক্ষণ পর্যন্ত বলা মুশকিল৷ তবে মানুষের স্বাধীনতা হরণ করা খুবই স্পর্শকাতর একটা ব্যাপার৷ যখন একান্তই আর সম্ভব নয়, তখন রাষ্ট্র কারও স্বাধীনতা হরণ করতে পারে বা করা উচিত৷ তবে এর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেক নাগরিকের স্বাধীনতার প্রতি রাষ্ট্রকে অবশ্যই শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে এবং থাকা বাঞ্ছনীয়৷ সেটাই আমরা রাষ্ট্রের কাছে প্রত্যাশা করি৷ রাষ্ট্রের কাছ থেকে মানে, এই ক্ষেত্রে আদালতের কাছ থেকে৷ বিচারকেরা নিশ্চয় নির্মোহভাবে প্রত্যেকটা ঘটনা দেখবেন যেন একজন নাগরিকের স্বাধীনতা লোপ না পায়৷

রাজনৈতিক মামলাগুলোতে কি বিচারকেরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন?

এটা নির্ভর করবে বিচারকের উপর৷ বিচারকেরা স্বাধীন৷ তাদের চাকরির নিশ্চয়তা আছে৷ এরপরও আপনি যদি নিজেকে শৃঙ্খলামুক্ত না রাখতে চান, আপনি নিজেই যদি নিজেকে শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করতে চান তাহলে আপনার স্বাধীনতা কে নিশ্চিত করবে? প্রত্যেক বিচারকের নিজেদের কাছে দায়বদ্ধতা আছে, সমাজের কাছে দায়বদ্ধতা আছে, আইনের কাছে দায়বদ্ধতা আছে এবং সর্বোপরি বিবেকের কাছে দায়বদ্ধতা আছে৷ নৈতিকতার কাছে দায়বদ্ধতা আছে৷ সেই দায়বদ্ধতা একজন বিচারক কীভাবে দেখছেন সেটা তার উপর নির্ভর করবে৷ যদি কোনো বিচারক তার স্বাধীনতাকে অমূল্য সম্পদ বলে মনে করেন এবং সেই স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তার কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তাহলে নিশ্চয় এই প্রশ্নটা অবান্তর হয়ে দাঁড়াবে যে, বিচারকেরা স্বাধীন কি স্বাধীন নয়৷

রাজনৈতিক নেতাদের জামিনের ক্ষেত্রে কি বিচারকদের উপর কোনো চাপ থাকে?

এটা আমার পক্ষে বলা মুশকিল৷ কারণ আমি তো নির্বাহী বিভাগের অংশ নই৷ চাপটা কোন জায়গা থেকে আসতে পারে? জামিন দেওয়া যাবে কি যাবে না, সেই কথাটা যদি বাইরে থেকে কেউ বলে সেটা আমার কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য? আমি কেন শুনব সেই কথা৷ কোনো বিচারক যদি স্বাধীন থাকতে চান তাহলে এমন কিছু নেই যে, তাকে পরাধীন করতে পারে৷ একজন বিচারক তার স্বাধীনতাকে কতটা মূল্য দিয়ে থাকেন সেটা তার ব্যাপার৷ কোনো বিচারক যদি স্বাধীন থাকতে চান, তাহলে তাকে পরাধীন করার মতো কোনো অস্ত্র বা আইন আমাদের আইনি ব্যবস্থাতে নেই৷

নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশনের কোনো সিদ্ধান্ত যদি পুলিশ বা প্রশাসন না শোনে তাহলে বিচার বিভাগ কী ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে?

নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের হাতে অনেক ক্ষমতা থাকে৷ বস্তুত তারাই নির্বাহীর কাজ করে থাকেন৷ সেই ক্ষেত্রে তাদের কোনো নির্দেশনা যদি কেউ অমান্য করে তাহলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়াটা খুবই প্রয়োজন৷ সেক্ষেত্রে বিচার বিভাগ আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন৷ যাকে যে শাস্তি দেওয়া দরকার সেটা দেবেন বা প্রতিকারের ব্যবস্থা করবেন৷ এটিই তো আমরা প্রত্যাশা করি৷

স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তাদের উপর কি রাজনৈতিক নেতাদের কোনো প্রভাব থাকে?

তারা তো স্বাধীন৷ তাদের দায়বদ্ধতা শুধু নির্বাচন কমিশনের প্রতি৷ এর বাইরে অন্য কারও প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা নেই৷ তারা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করবেন৷ কোনো দল বা নেতৃত্বের প্রতি যদি তাদের কোনো ধরনের দুর্বলতা প্রকাশ পায় সেটা ব্যক্তির দুর্বলতা৷ এমন ব্যক্তির উপর এই দায়িত্ব অর্পণ করা কতটা সমীচীন হয়েছে সেটা নির্বাচন কমিশন দেখবে৷ নিশ্চয় সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া নির্বাচন কমিশনের উচিত৷

কোনো নির্বাচন কর্মকর্তা যদি নিশ্চিত হতে পারেন, নির্বাচনের পর কোন দল ক্ষমতায় আসবে তাহলে তার পক্ষে কতটা নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব? কারণ নির্বাচনের পর ওই কর্মকর্তাকে তো ওই দলের সরকারের অধীনে চাকরি করতে হবে?

আমি এখনও জানি না স্বতন্ত্র কতজন নির্বাচিত হয়ে আসবে৷ সবকিছু নির্ভর করবে আমি নির্বাচনের দিনে বুথের মধ্যে আমার স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে পারছি কিনা তার উপর? সেটা যদি হয় তাহলে আগে থেকে বলা সম্ভব নয়, ফলাফল কী হবে?

নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে বিচার বিভাগের কি কোনো ধরনের ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে?

বিচার বিভাগ অনেক সময় স্বপ্রণোদিত হয়ে অনেক কিছুই করে৷ আমরা চাই না বিচার বিভাগ নির্বাহীর মতো আচরণ করুক৷ এখন বিচার বিভাগ যদি নির্বাহী বিভাগের মতো আচরণ শুরু করে তাহলে বিচার বিভাগের সঙ্গে নির্বাহী বিভাগের যে পার্থক্য, সেটা আর থাকবে না৷ সেটা গণতন্ত্রের জন্য বা সুশাসনের জন্য একটা ভয়াবহ দুঃসংবাদ বা বার্তা বহন করে৷ কিন্তু যে কাজটি বিচার বিভাগ করতে পারে, যখনই কোনো ব্যত্যয় ঘটবে এবং সেই নালিশ নিয়ে যদি কেউ তাদের দ্বারস্থ হন তাহলে তারা নির্মোহভাবে, নিরপেক্ষভাবে বিচার করবেন, এটাই কাম্য৷ যেন নির্বাচন কমিশন সঠিকভাবে তাদের দায়িত্বটা পালন করতে পারে৷ নির্বাচন কমিশনের পথটাকে মসৃণ করে দিতে পারে বিচার বিভাগের কর্মকান্ড৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ