1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নির্বাচন কমিশন বিজেপির হয়ে ভোট চুরি করছে: রাহুল গান্ধী

১ আগস্ট ২০২৫

বিহারে ৯ অগাস্ট থেকে নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে চলেছেন রাহুল গান্ধী।

বিহারে জোটের নেতাদের সঙ্গে রাহুল গান্ধী।
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে সোচ্চার রাহুল গান্ধী।ছবি: Santosh Kumar/Hindustan Times/Sipa USA/picture alliance

তার আগে শুক্রবার তিনি নির্বাচন কমিশন(ইসি)-এর বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছেন। সংসদ ভবন চত্বরে রাহুল সাংবাদিকদের বলেছেন, ''ভোট চুরি হচ্ছে। এখন আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। নির্বাচন কমিশন ভোট চুরির সঙ্গে যুক্ত।''

রাহুল বলেছেন,  ''আমি কথাটা হালকাভাবে বলছি না। একশ শতাংশ তথ্যের ভিত্তিতে বলছি। যখন আমরা তথ্য জানাব, তখন দেশ জানবে ইসি ভোটার চুরি করছে। বিজেপি-র জন্য করেছে। মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের সন্দেহ হয়, লোকসভা নির্বাচনের সময় সন্দেহ হয়েছিল। মহারাষ্ট্রের ক্ষেত্রে ওরা আরো এগিয়ে যায়। আমাদের রাজ্য নেতাদের মনে হয়,  ভোট চুরি হচ্ছে। কারণ, এক কোটি ভোটারের নাম যুক্ত হয়। আমরা গভীরে যাই। নিজেরা তদন্ত করি। ছয় মাস সময় লাগে। যা পাওয়া গেছে অ্যাটম বোম। সেটা ফাটলে ইসি-কে আপনারা দেখতে পাবেন না।''

এরপর রাহুল হুমকির সুরে বলেছেন, ''যারা এই কাজ করছে, উপর থেকে নিচে পর্যন্ত, তারা মনে রাখবেন আমরা আপনাদের ছাড়ব না। আপনারা হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। এটা বিশ্বাসঘাতকতা। যেখানেই থাকুন। আমরা খুঁজে বের করব।অবসর নিলেও খুঁজে বের করব।''

কর্ণাটকে কংগ্রেস নেতারা জানিয়েছেন, রাহুল গান্ধী ৫ অগাস্ট বেঙ্গালুরু আসবেন। লোকসভা নির্বাচনের সময় বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল আসনে ভোটার তালিকায় কারচুপি হয়ছিল এমন প্রমাণ তাদের কাছে আছে। রাহুল সেটা নিয়ে বিক্ষোভ দেখাবেন। তারপর রাজ্যের নির্বাচন আধিকারিকের কাছে যাবেন।

বিহারের কর্মসূচি

রাখিবন্ধন উৎসবের পর ৯ অগাস্ট থেকে বিহারে ১৭ দিনের যাত্রা করবেন। সেই যাত্রায় আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব যোগ দেবেন। ইন্ডিয়া জোটের অন্য নেতারাও থাকবেন।

পুরো যাত্রাটাই হবে বিহারে ভোটার তালিকা সংশোধন নিয়ে।

বিহারে নিবিড় সংশোধনের পর খসড়া ভোটার তালিকা এদিন প্রথমে রাজনৈতিক দলগুলির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বিকেলে তা কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হবে।

রাহুল গান্ধী ইতিমধ্যেই লোকসভার স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে ভোটার তালিকার সংশোধন নিয়ে আলোচনা চেয়েছেন। তিনি স্পিকারের হাতে বিরোধী দলের নেতাদের সই করা একটি চিঠিও তুলে দিয়েছেন। সেখানে বিরোধী দলগুলি বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি জানিয়েছে।

কোথায় আপত্তি

বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, বিহারে লাখ লাখ ভোটারের নাম বাদ পড়েছে। তারা মূলত পরিযায়ী শ্রমিক ও গরিব মানুষ। পরিযায়ীরা অন্য রাজ্যে কাজ করতে গেছেন। তারা অতটা টেক-স্যাভি নন। তাই তারা ফর্ম ও তথ্যপ্রমাণ দিতে পারেননি। তাছাড়া গরিব পরিবারের মানুষদের পক্ষেও কমিশন যে ধরনের প্রমাণ চাইছে, অনেক সময় তা দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে তারা আশঙ্কা করছেন।

বিরোধীদের দাবি, তাদের যারা ভোট দেন, তাদের উপরেই কোপ পড়ছে। গত নির্বাচনে দেখা গেছে, পাঁচশ, হাজার বা দুই তিন হাজার ভোটের ব্যবধানে বহু আসনের ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে। ফলে তারা এই প্রয়াসকে বিরোধীদের হারানোর চক্রান্ত হিসাবেই দেখছেন।

'অতীতের সংঘাত থেকে আলাদা'

ভারতে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলির সংঘাতের একটা ইতিহাস আছে। টি এন শেসন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হওয়ার পর তার সঙ্গে বিভিন্ন দল ও সরকারের বিরোধ সামনে এসেছিল। তারপরেও অনেকবার রাজনৈতিক দলগুলি কমিশনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছে।

কিন্তু প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''অতীতের সঙ্গে এবারের সংঘাতের একটা মূলগত তফাৎ আছে। এবার কমিশনের বিরুদ্ধে একটা অনাস্থার কথা সামনে আসছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে, টিভি চ্যানেলে মানুষের প্রতিক্রিয়ায় সেই অনাস্থা বিষয়টি এসেছে।''

দ্য ওয়্যারের রিপোর্ট জানাচ্ছে, ন্যাশনাল কনফেডারেশন অফ দলিত ও আদিবাসী দলিতদের দিয়ে বিহারে দলিত ভোটারদের মতামত জানতে চেয়েছিল। ৭১ শতাংশ দলিতের আশঙ্কা, তাদের নাম বাদ পড়বে। ২৭ শতাংশের বেশি দলিত বলেছেন, তাদের কমিশনের উপর ভরসা নেই।

শুভাশিস বলেছেন, ''হয়ত দলিতদের আশঙ্কা মিলবে না। তাদের নাম থাকবে। কিন্তু তাদের মনোভাব থেকে অনাস্থার বিষয়টি সামনে আসছে।''

দ্য ওয়্যারের আরেকটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ''স্ট্যান্ডার্ড ওয়ার্কার্স অ্যাকশন নেটওয়ার্কের সাম্প্রতিক রিপোর্ট বলছে, তারা ১৯  থেকে ২১ বছর বয়সি ৩৩৮জন পরিযায়ী শ্রমিকের কাছ থেকে ভোটার তালিকার সংশোধনের বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৯০ শতাংশ মানুষই এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। ৭৫ শতাংশ মানুষ এটাও জানেন না, নির্বাচন কমিশনের অনলাইন পোর্টাল আছে, সেখানে তথ্য আপলোড করতে হবে। এক শতাংশেরও কম মানুষ অনলাইনে তথ্য দিয়েছেন।''

শুভাশিস জানিয়েছেন, ''এই সব ঘটনাই বলে দিচ্ছে, এবার সংঘাতের চরিত্রটা আলাদা। এর ফলে কী হবে, কে রাজনৈতিক সুবিধা পাবে, সেটা পরে বোঝা যাবে, কিন্তু বিষয়টি এখনই যে পরিমাণ বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তাকে অগ্রাহ্য করা যাবে না।''

ভোটকুশলী যোগেন্দ্র যাদব ও রাহুল শাস্ত্রী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে একটি পোস্ট এডিটে লিখেছেন, বিহারে এই সংশোধনের ফলে ৯৪ লাখ ভোটারের নাম বাদ পড়তে পারে। ভারতে কোনো রাজ্যে এত বেশি মানুষের নাম এর আগে ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়েনি। তাদের মতে, এই নিবিড় সংশোধন করা হয়েছে ভোটারদের নাম বাদ দিতে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার অশোক লাভাসা বলেছেন, ''ভোটার তালিকার সংশোধন নিয়মিত প্রক্রিয়া। কিন্তু এবার বিহারে যে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন করা হচ্ছে, তা একেবারে আলাদা। ভোটের কিছুদিন আগে করা হচ্ছে। আর এখানে রাজ্যের সাত কোটি ৭৯ লাখ ভোটদাতাকে বলা হচ্ছে, ফর্ম জমা দিতে। ফর্ম জমা না দিলে ভোটার তালিকা থেকে নাম দেওয়া হবে। এছাড়া ২০০৩ পর্যন্ত ভোটার তালিকায় নাম থাকা ভোটার ও তার পরের ভোটারদের মধ্যে একটা তফাৎ করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিষন আগে কখনো এরকম তফাৎ করেনি। সকলেই একই প্রক্রিয়ায় ভোটার হয়েছেন।

অশোক লাভাসা বলেছেন, ''কমিশনের কাছে কি যথেষ্ট সময় ছিল মানুষকে জানানোর? কোটি কোটি মানুষকে নিয়ে এই সংশোধন প্রক্রিয়া চলেছে।  খুব কম সময় দিয়ে এই সংশোধনের কাজ করা হয়েছে।''

জিএইচ/এসিবি 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ