1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘নির্বাচন কারো উৎসব, আমাদের আতঙ্ক’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

যে কোনো নির্বাচন এলেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন৷ নির্বাচনের আগে, নির্বাচনের সময় এবং পরে নির্যাতিত হন তাঁরা৷ ১৯৯১ সাল থেকে এমনই হয়ে আসছে৷ এ অবস্থার অবসান চেয়ে মহাসমাবেশ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ৷

ফাইল ছবিছবি: bdnews24.com

এবার আগে থেকেই ধর্মীয় সংখ্যালঘু নেতারা নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে উদ্যোগ নিয়েছেন৷ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গত ৬ মাস ধরে দফায় দফায় বৈঠকের পর শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ৷ সেখানে পরিষদের পক্ষ থেকে ৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে যাঁরা মনোনয়ন দেবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে ঐক্য পরিষদ৷ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে মনোনয়ন না দেয়ার আহবান জানিয়েছেন নেতারা৷

শুক্রবার সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান৷ বক্তব্য রেখেছেন মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, লেখক, সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, আদিবাসী পরিষদের সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, খ্রিষ্টান পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিওসহ অনেকেই৷ ঘোষণাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক নিম চন্দ্র ভৌমিক৷ আর ঐক্য পরিষদের পক্ষে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত৷ অনুষ্ঠানের সঞ্চালকের দায়িত্বে ছিলেন পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি৷

রানা দাশগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচন তো রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য উৎসবের, কিন্তু আমাদের জন্য আতঙ্কের৷ যখনই নির্বাচন হয়েছে তারপরই আমরা দেখেছি, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন নেমে এসেছে৷ আমরা আর নির্যাতিত হতে চাই না৷ তাই এবার নির্বাচনের আগেই সবগুলো রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ৬ মাস ধরে বৈঠক করেছি৷ আজ সমাবেশ করলাম৷ আমরা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহবান জানিয়েছি, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে যেন কোনোভাবেই নির্বাচনের সুযোগ দেয়া না হয়৷''

নির্বাচন দলগুলোর জন্য উৎসবের, কিন্তু আমাদের জন্য আতঙ্কের: রানা দাশগুপ্ত

This browser does not support the audio element.

সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘‘আজ এখান থেকে যে দাবিগুলো উত্থাপিত হয়েছে, তার সঙ্গে আমি একমত পোষণ করছি৷ আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কোনো বৈষম্যমূলক সমাজের জন্য হয়নি৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে৷'' সুলতানা কামালও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান৷ সমাবেশে অন্য অতিথিরা বলেন, এই প্রতিবাদ সমাবেশ মানবিকতা রক্ষা করার জন্য আয়োজন করা হয়েছে৷ সংখ্যালঘুরা এই দেশ থেকে দিন দিন  কেন কমে যাচ্ছে, তার জবাব সরকারকে দিতে হবে৷ এই সরকারের আমলেই সাঁওতালদের বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে এবং তিন সাঁওতালকে হত্যা করা হয়েছে৷ তার বিচার এখনো হয়নি৷ রামুতে এবং পাহাড়ের পাদদেশে রক্তের হোলি খেলা চলছে এগুলো বন্ধ করতে হবে৷ সবগুলো হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন বক্তারা৷

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এই সমাবেশে ২২টি সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী যোগ দেন৷ দুপুর একটায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুটোর দিকে শুরু হয়েছে৷ সমাবেশ শেষে হিন্দু সাংবাদিকদের সংগঠন ‘স্বজন'-এর সভাপতি সন্তোষ শর্মা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আর বসে থাকতে পারি না৷ বারবার নির্যাতিত হবো, এটা হতে পারে না৷ এবার আমরা বলেছি, নির্বাচনের আগে বা পরে যদি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নেমে আসে, তাহলে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাবো৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমরা অনুরোধ করেছি, সাম্প্রদায়িক কাউকে মনোনয়ন না দিতে৷ আমরা আশা করি, তিনি আমাদের কথা শুনবেন৷''

প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা অনুরোধ করেছি, সাম্প্রদায়িক কাউকে মনোনয়ন না দিতে: সন্তোষ শর্মা

This browser does not support the audio element.

বক্তারা বলেন, ‘‘নির্বাচন আমাদের কাছে উৎসব না৷ বিপর্যয়ের শঙ্কা নিয়ে আসে৷ তখন আমরা প্রশাসন, রাজনৈতিক দল এবং রাষ্ট্রের নির্বিকার ভূমিকা সব সময় লক্ষ্য করি৷'' সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহবান জানানো হয় সমাবেশ থেকে৷ সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবানও জানান তাঁরা৷

ঐক্য পরিষদের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কাজল দেবনাথ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ এই সমাবেশে এসেছেন৷ তাঁরা বলেছেন, আমরা দ্বিজাতি তত্বের জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি৷ সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম থাকবে সেটার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি৷ এমনকি বঙ্গবন্ধুও এই জন্য মুক্তিমুদ্ধ করেননি৷ এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকেই বঙ্গবন্ধু সাম্যের কথা বলেছিলেন৷ এমন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু চাননি, শেখ হাসিনার কাছ থেকেও আমরা প্রত্যাশা করি না৷ এখানে সব মানুষের সমান অধিকার থাকবে, সেটাই প্রত্যাশা৷''

এমন বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু চাননি, শেখ হাসিনার কাছ থেকেও আমরা প্রত্যাশা করি না: কাজল দেবনাথ

This browser does not support the audio element.

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে৷ ২০১২ সালের অক্টোবরে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ওপর বড় ধরনের হামলা হয়৷ ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসির নগরে হিন্দুদের শতাধিক বাড়ি-ঘরে হামলা-ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়৷ অন্তত ১০টি মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়৷ হিন্দু পল্লিতে নারী-পুরুষকে বেধড়ক পেটানো হয়৷ ২০১৭ সালের নভেম্বরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয় রংপুরের গঙ্গাচড়ার ঠাকুরপড়া এলাকায়৷ ওই ঘটনার পর সারাদেশে আরো অন্তত পাঁচটি মন্দিরে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে৷

প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেবেন না: নির্মল চ্যাটার্জি

This browser does not support the audio element.

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ) তাদের প্রতিবেদনে  জানায়, ‘‘বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা বেড়েছে৷'' সংস্থাটি বলেছে, ‘‘‘ভূমি দখলের ক্ষেত্রে  হিন্দু ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা আক্রমনের শিকার হন৷ ২০১৪  সালের জাতীয়  নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বার বার আক্রমনের শিকার হয়েছেন৷ সামনে নির্বাচন নিয়ে তাই আতঙ্কে আছেন তাঁরা৷''

বাংলাদেশ পূজা উৎযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন৷ এই দিনে আমরা সমাবেশ করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেবেন না৷ নির্বাচনে মনোনয়ন দেবেন না৷ এদের বিরুদ্ধে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকতে চাই৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ